দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ফাতাহ ও হামাস একটি সম্প্রীতি চুক্তির ব্যাপারে সমঝোতার কথা বলেছে৷ উভয় পক্ষ গাজা ও পশ্চিম তীরে একটি ঐক্যের সরকার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে কায়রোয় কথাবার্তা বলেছে৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার হামাস ও ফাতাহ সম্প্রীতি আলাপ-আলোচনায় লক্ষণীয় প্রগতির কথা ঘোষণা করে – এমনকি হামাস বলে যে, দু'পক্ষের মধ্যে আপোশ সম্ভব হয়েছে৷
হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ে একটি বিবৃতিতে বলেন, ‘‘আজ ভোরে ফাতাহ ও হামাস মিশরের মধ্যস্থতায় ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়৷'' হানিয়ে আর কোনো খুঁটিনাটি না দিলেও, কায়রোয় দু'পক্ষের কর্মকর্তারা শীঘ্রই বিশদ জানাবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে৷
প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের কিছু ছবি
১৯৬৭ সালের ছ’দিনের যুদ্ধে জয়ের পর, তথাকথিত ‘উইপিং ওয়াল’ বা ওয়েস্টার্ন ওয়ালের কাছে জড়ো হয়েছিল ইসরায়েলি সেনারা৷ ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করেন ফটো সাংবাদিক ডেভিড রুবিংগার৷ দেখুন সদ্য প্রয়াত সেই ফটোগ্রাফারের কিছু বিখ্যাত ছবি৷
ছবি: Getty Images/Newsmakers/GPO/David Rubinger
১৯৬৭ সাল: গাজা স্ট্রিপ
১৯২৪ সালে ভিয়েনায় জন্মগ্রহণ করেন ডেভিড রুবিংগার৷ কিন্তু নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচতে প্যালেস্টাইনে পালিয়ে গিয়েছিলেন৷ নিজে বাঁচলেও, মা মারা যান হলোকস্টে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলন, সে সময়ই তাঁর মধ্যে ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়, পরবর্তীতে ফটোসাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ছ’দিনের সেই যুদ্ধে ইসরায়েলি সেনারা কীভাবে মিশরের সেনা ও ফিলিস্তিনিদের আটক করছে৷
ছবি: Getty Images/GPO/David Rubinger
ওয়েস্টার্ন ওয়ালে একত্রিত প্যারাট্রুপাররা
ডেভিড রুবিংগারের সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ এটি৷ এখানে ইসরায়েলি সেনাদের জেরুজালেমের তথাকথিত ‘উইপিং ওয়াল’ বা ওয়েস্টার্ন ওয়ালের ওপর দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৬৭ সালের ছ’দিনের যুদ্ধে প্রথমবারের মতো পশ্চিম তীর এবং গাজা স্ট্রিপ দখল করতে সক্ষম হয় ইসরায়েল৷ রুবিংগার এই ছবিটি তোলেন যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে৷ ইসরায়েলি সরকার খুব কম দামে সকলের কাছে এই ছবিটি বিক্রি করে৷ ফলে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় ছবিটি৷
ছবি: Getty Images/Newsmakers/GPO/David Rubinger
যুদ্ধের সময় আরিয়েল শারন
এই ছবিটি সাবেক ইসরায়েলি সেনা প্রধান আরিয়েল শারনকে (মাঝে) দেখা যাচ্ছে অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে, ১৯৬৭ সালের ১ জুন ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে৷ ছ’দিনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার দিন চারেক আগে তোলা এই ছবিটি৷ শারন পরবর্তীতে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন৷ ২০১৪ সালে মারা যান তিনি৷
ছবি: Getty Images/GPO/Newsmakers/David Rubinger
দ্বন্দ্ব সংঘাতের ইতিহাসের প্রামাণ্যচিত্র
এ ছবিতে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তের দিকে চলেছে ইসরায়েলি সেনারা৷ ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে সিরিয়া যখন গোলান উপত্যকায় হামলা চালায়৷ রুবিংগার সেসময় জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ১০টি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে গিয়ে ছবি তোলেন৷ ২০০৭ সালে নিজের বইটিতে তিনি লেখেন, ‘‘এই ছবিগুলোর দিকে তাকালে মনে হয়, আমি সত্যিই ভাগ্যবান ছিলাম৷ তাই বেঁচে ফিরতে পেরেছি৷’’ তাঁর বইটির নাম ‘ইসরায়েল থ্রু মাই লেন্স: একজন ফটোসাংবাদিক হিসেবে ৬০ বছর’৷
ছবি: Getty Images/AFP/GPO/David Rubinger
১৯৭৩ সালে ইয়ুম কিপুর যুদ্ধ
১৯৭৩ সালে ইয়ুম কিপুর যুদ্ধে সিরিয়ার সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ইসরায়েল৷ এ যুদ্ধ অক্টোবর যুদ্ধ নামেও পরিচিত৷ রুবিংগারের এই ছবিতে গোলান উপত্যকায় ইসরায়েলি ট্যাংকের বহর আর সিরীয় সেনাদের দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথমবারের মতো পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিও ফুটে উঠেছে ছবিতে৷ আশির দশকেও এ অঞ্চলে উচ্ছ্বসিত ইসরায়েলি সেনা আর বিষাদগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের ছবি তুলেছিলেন রুবিংগার৷
ছবি: Getty Images/AFP/GPO/David Rubinger
জাতি নিমার্ণের আলোকচিত্রী
ডেভিড রুবিংগার তাঁর জীবনের দীর্ঘ ৫০ বছর ফটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন৷ ইসরায়েলের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেস ডেভিডকে রুবিংগারকে ‘একটি জাতি তৈরির আলোকচিত্রী’ হিসেবে গণ্য করেছিলেন৷
২০০৬ সালের নির্বাচনে হামাসের বিপুল জয়ের পর দু'পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, যার ফলে একটি দুর্বল জোট সরকার ভেঙে যায়৷ তখন থেকে হামাস গাজা স্ট্রিপে ও ফাতাহ পশ্চিম তীরে শাসন চালিয়ে আসছে৷
কায়রোর আলাপ-আলোচনায় সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি এএফপি সংবাদ সংস্থাকে জানান যে, বৃহস্পতিবারের আপোশের ফলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গাজা ও মিশরের মধ্যে একাধিক সীমান্ত পারাপার কেন্দ্রের দায়িত্ব নেবে৷
হামাস ও ফাতাহ-র সমঝোতা অনুযায়ী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি) পয়লা ডিসেম্বর তারিখের মধ্যে গাজা স্ট্রিপে ‘‘পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব’’ পালন করার অবস্থায় আসবেন, বলে মিশরের সরকারি প্রেস সেন্টারের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসলামপন্থি হামাস দলকে একটি সন্ত্রাসবাদি গোষ্ঠী বলে বিবেচনা করে৷ গত সেপ্টেম্বরে হামাস গাজায় বিশেষ বিশেষ ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহ-সমর্থিত সরকারের হাতে তুলে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়৷
দু'পক্ষের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের ভিত্তিতে একটি ঐক্যের সরকার সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মিশর অতীতে একাধিকবার ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতায় সাহায্য করেছে৷ ২০১৪ সালে ফাতাহ ও হামাস একটি জাতীয় সম্প্রীতির সরকার গঠন সম্পর্কে একমত হয়, কিন্তু এই চুক্তি সত্ত্বেও হামাসের অদৃশ্য সরকার গাজা স্ট্রিপে শাসন চালিয়ে যায়৷