ফাতিমার স্কুল জীবন এখনো শেষ হয়নি৷ এরইমধ্যে পৃথিবীর নির্মম কিছু বাস্তবতা দেখা হয়ে গেছে তার৷ দেশ ছেড়ে বহুদূরে এখন সে৷ কিভাবে কাটছে তার দিন?
বিজ্ঞাপন
ফাতিমাদের গল্প জানায় এক হ্যাশট্যাগ৷ ইংরেজিতে #আইএমএমাইগ্রেন্ট হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে অভিবাসীদের সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে৷ উদ্দেশ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত অভিবাসীদের নিজেদের কথা অন্যদের জানাতে উৎসাহ দেয়া৷
ফাতিমা এখন আছে বার্লিনে৷ ভালো আছে সে৷ কিভাবে? সেটা দেখে নিন এই ভিডিওতে:
আইএমএমাইগ্রেন্ট ডটঅর্গ প্রচারণার শুরু হয় গত ডিসেম্বরে, যখন শরণার্থী নিয়ে ইউরোপে ব্যাপক আলোচনা চলছিল৷ ইতোমধ্যে এই প্রচারণা ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে৷ অনেকেই টুইটারে শেয়ার করেছেন তাদের গল্প৷
আন্তর্জাতিক অভিবাসন অর্গানাইজেশন আইওএম সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অভিবাসী বিষয়ক এই প্রচারণা শুরু করে৷ পরবর্তীতে ফেসবুক জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সহায়তায় এগিয়ে আসে৷ ফেসবুক প্রচারণাটির জন্য বিজ্ঞাপনের জায়গা ছেড়ে দিয়েছে, যাতে করে অনেক মানুষকে তাতে সম্পৃক্ত করা যায়৷
#আইএমএমাইগ্রেন্ট প্রচারণা পৌঁছেছে বাংলাদেশেও৷ মুসলিমপ্রধান দেশটির অনেক নাগরিক মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেসহ ইউরোপ, অ্যামেরিকায় বসবাস করছেন৷ ফলে প্রচারণাটি সেদেশেও গুরুত্ব পাচ্ছে৷
উল্লেখ্য, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের কারণে গত কয়েকমাসে অসংখ্য শরণার্থী ইউরোপে প্রবেশ করেছেন৷ এসময় অনেক সাগরে ডুবে মারাও গেছেন৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম তাদের সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে৷
যুদ্ধবিক্ষুব্ধ কোনো দেশ থেকে কীভাবে ইউরোপে আসছে লক্ষ লক্ষ মানুষ? সবাই কি স্থায়ীভাবে ইউরোপে থাকতে চান? থাকতে হলে কী করতে হবে? কী করছেন তাঁরা? কয়েকজন শরণার্থীর জীবন দেখে একটু ধারণা নেয়া যাক৷
চিকিৎসক থেকে শরণার্থী
সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্কে চিকিৎসক হিসেবে ভালোই ছিলেন হামবার আল-ইসা৷ কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর জন্মভূমির সব সুখ ছেড়ে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে হয় তাঁকে৷
অনেক পথ পেরিয়ে...
মেসিডোনিয়ায় পৌঁছানোর পর সার্বিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত যেতে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়েছে হামবারকে৷ হেঁটে কোনো শহরে পৌঁছালেই শুরু হতো ইন্টারনেট ক্যাফে খুঁজে বের করার চেষ্টা৷ পেলে প্রথম কাজ কোথায় আছেন, কেমন আছেন সে সম্পর্কে পরিবারকে বিস্তারিত জানানো৷ একা এসেছেন, তাই স্বজনদের তাঁর জন্য খুব চিন্তা৷ তাঁদের চিন্তা দূর করা ও তাঁদের সম্পর্কে জেনে নিজেকে নিশ্চিন্ত রাখতেই পছন্দ করেন হামবার৷
অবশেষে জার্মানিতে...
অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে জার্মানিতে পৌঁছেছেন হামবার৷ সিরিয়াতে সার্জন হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও নতুন দেশে চাইলেই তো আর চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করা যায় না৷ জার্মান ভাষা শিখে নিজেকে তৈরি করতে হবে সবার আগে৷ সেই চেষ্টা চলছে৷ পাশাপাশি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনুবাদকের কাজও করছেন৷ তাঁর স্বপ্ন অবশ্য জার্মানিতে বসবাস করা নয়৷ সুসময় ফিরে এলে নিজের দেশেই ফিরতে চান হামবার৷
দেশান্তরী এক আফগান কিশোরী
তোবার বয়স এখন ১৬ বছর৷ আফগানিস্তানের হেরাত থেকে জার্মানিতে এসেছে সে৷ হেরাতে নিয়মিত স্কুলে যেত সে৷ লেখাপড়া করেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নও দেখতো৷ কিন্তু তালেবান বেছে বেছে মেয়েদের স্কুলে হামলা শুরু করায় তোবার পক্ষেও আর দেশে থাকা সম্ভব হয়নি৷
সপরিবারে জার্মানিতে
আফগানিস্তান থেকে জার্মানিতে অবশ্য একা আসেনি তোবা৷ দুই বোন এবং তাঁদের স্বামীও এসেছেন সঙ্গে৷ কাছের এই মানুষগুলো সঙ্গে থাকার কারণেই ইরান, তুরস্ক, গ্রিস এবং বলকান অঞ্চল হয়ে জার্মানিতে পৌঁছাতে পেরেছে তোবা৷
দুঃস্বপ্নে পোড়া স্কুল, স্বপ্নে সুন্দর আগামী
তালেবান হামলা থেকে বাঁচতে আফগানিস্তান ছেড়ে এলেও স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন কিন্তু ছাড়েনি তোবা৷ নিজেকে নতুন করে তৈরি করছে সে৷ জার্মান ভাষা শিখছে৷ স্বাবলম্বী হতে হলে জার্মানিতে ভাষা শেখাটা তো সবার জন্যই জরুরি৷
এক সাংবাদিকের পরিবার
ওপরের ছবির তিনজন জার্মানিতে এসেছেন সিরিয়ার ইদলিব থেকে৷ আহমেদ (মাঝখানে)-এর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী হেবা এবং বন্ধু সালেহ৷ সিরিয়ায় সাংবাদিক হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন আহমেদ৷
শৈশবেই প্রবাসী
আহমেদ-হেবা দম্পতির এই মেয়েটিও এসেছে জার্মানিতে৷ মাত্র এক বছর বয়সেই শুরু হয়েছে তার প্রবাসজীবন৷ ওর বাবা অবশ্য যুদ্ধ থামলেই ফিরে যেতে চায় সিরিয়ায়৷