ফারাক্কার ১০৯ গেট খোলা, বন্যার আশঙ্কা কতটা
১ অক্টোবর ২০১৯পদ্মা তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে৷ তবে এটা ভয়াবহ বন্যার রূপ নেবে না বলে আশা করছেন আবহাওয়াবিদ ও বিশ্লেষকরা৷
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পদ্মার পানি রাজবাড়ির গোয়ালন্দ ও শরিয়তপুরের সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে আর ফরিদপুরের কামারখালী পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ অন্যান্য এলকায় পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে৷
আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও ভাগ্যকুল পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে৷
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম জানান, ‘‘এখনো রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি৷ তবে আগামী সাত-আট দিনে অতিক্রম করতে পারে৷ পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, পাবনা, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারিপুর মানিকগঞ্জসহ আরো কিছু এলাকা প্লাবিত হতে পারে৷''
তিনি বলেন, ‘‘এবার ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে৷ পাটনা, বিহার, পশ্চিমবঙ্গসহ বেশ কিছু এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে৷ আর সেই পানি এখন নেমে আসছে৷ সেখানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিম্ন ও চরাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে৷ তবে বড় কোনো বন্যার আশঙ্কা এখনো নেই৷ ২০১৭ সালে পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপরে গিয়েছিল৷ তখন পরিস্থিতি খারাপ হয়েছিল৷''
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. ইনামুল হক বলেন, ‘‘যে পানি ফারাক্কা হয়ে বাংলাদেশে আসছে তা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই৷ নদীতেই থাকবে৷ এটা বিপদসীমার নীচেই থাকবে বা কিছুটা বেড়ে যেতে পারে৷''
তিনি বলেন, ‘‘এই সময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে ওখানে বন্যা হচ্ছে৷ তাই গেট খুলে দেয়া হয়েছে৷ এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া৷ গেট খুলে দেয়া মানে নদীটাকে খুলে দেয়া৷ এর মধ্যে খারাপ কিছু নেই৷ মিষ্টি পানি আসছে৷ এই পানি শেষ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে নেমে যাবে৷ এতে আমাদের জমিতে পলি পড়বে৷''
এদিকে বাংলাদেশও প্রায় প্রতিদিনই ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে৷ এর ফলেও নদ-নদীর পানি কিছুটা বাড়ছে৷ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, এই বৃষ্টিপাত আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে৷ বাংলাদেশের কয়েকটি জায়গায় গত ২৪ ঘন্টায় ৫২ থেকে ১৯০ মি.মি. বৃষ্টি হয়েছে৷ সুনামগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে৷''
বন্যা পূবাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া এটাকে ‘স্বাভাবিক বন্যা' বলে অভিহিত করেছেন৷ তিনি মনে করেন, আরো সাত দিন পানি কিছুটা বাড়বে বা অপরিবর্তিত থাকবে৷ এরপর মধ্যাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়বে৷ তখন দেশের মধ্যাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে৷ তবে এটা সাত থেকে ১০ দিনের বেশি স্থায়ী হবে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘উজানে বিহারে প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়েছে৷ সেই পানির প্রভাবে এখন নদ-নদীর পানি বাড়ছে৷ এটা ফারাক্কার গেট খুলে দেয়ার কারণে হয়েছে এমন নয়৷ আগামী চার-পাঁচদিন পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হয়ে উন্নতির দিকে যাবে৷''