ইরাকের ফালুজা শহরকে আইএস-মুক্ত করতে সেনাবাহিনীর অভিযানের জের ধরে দুরবস্থার মুখে পড়ছে সাধারণ মানুষ৷ বিশেষ করে শিশুদের দুর্দশা নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করছে জাতিসংঘ৷
বিজ্ঞাপন
Iraq: the battle for Fallujah shifts to city centre
00:40
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) গত কয়েক মাসে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়লেও তাদের শক্তি এখনো পুরোপুরি লোপ পায়নি৷ গত প্রায় ১০ দিন ধরে ইরাকের সেনাবাহিনী ফালুজা শহর থেকে আইএস জঙ্গিদের তাড়াতে যে অভিযান চালাচ্ছে, তা প্রতিরোধ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আইএস৷
দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাঝে চরম দুরবস্থায় পড়েছে শহরের নিরীহ মানুষ৷ বিশেষ করে শিশুদের অবস্থা নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে৷ প্রায় ২০ হাজার শিশু বর্তমান পরিস্থিতির শিকার বলে অনুমান করা হচ্ছে৷
শহরের তিন দিক থেকে হামলা চালাচ্ছে ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনী৷ মার্কিন নেতৃত্বে কোয়ালিশন বাহিনী আকাশ থেকে বোমা বর্ষণ করে ইরাকি বাহিনীর সহায়তা করছে৷ তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রও স্বীকার করেছেন, ফালুজা পুনর্দখলের অভিযান বেশ কঠিন৷
মরিয়া হয়ে আইএস নিরীহ মানুষকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠছে৷ কিছু মানুষ শহর ছেড়ে পালাতে সক্ষম হয়েছে৷ তাদের মুখেই শহরের ভয়াবহ পরিস্থিতির খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ আইএস জঙ্গিরা মানুষকে শহরের কেন্দ্রে জমা হতে বাধ্য করছে বলে খবর এসেছে জাতিসংঘের কাছে৷ তাছাড়া খাদ্য, পানীয়, ওষুধপত্রের অভাব প্রকট হয়ে উঠছে৷ বিদ্যুৎ সরবরাহেও বিঘ্ন ঘটছে৷
শেষ পর্যন্ত ফালুজা শহর দখল করতে পারলেও ইরাকি প্রশাসনের পক্ষে সেখানকার সুন্নি অধিবাসীদের আশ্বস্ত করা সহজ হবে না বলে মনে করছেন কিছু পর্যবেক্ষক৷ সে ক্ষেত্রে ইরাকের নাজুক সাম্প্রদায়িক বিভাজন আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে৷
কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে আইএস?
পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতি, অধিকৃত এলাকায় কর চাপানো এবং প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি করে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট প্রায় ২০০ কোটি ডলার একত্র করেছে৷ তাতে তাদের আরও ২ বছর চলে যাবার কথা৷
ছবি: picture alliance/abaca
বেআইনি তেল বিক্রি
বেআইনি ভাবে পেট্রোলিয়াম বিক্রি আইএস-এর আয়ের প্রধান উৎস৷ সিরিয়া ও ইরাকে বেশ কিছু বড় তৈলকূপ আপাতত তাদের দখলে৷ মূলত তুরস্কের মধ্য দিয়েই তারা চোরাচালানের কাজ চালিয়ে থাকে৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, কালোবাজারে তেল বিক্রি করে আইএস-এর মাসে প্রায় ৪ কোটি ডলার আয় হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
ব্যাংক ডাকাতি
সিরিয়া ও ইরাকে কোনো এলাকা দখলের পর আইএস সবার আগে ব্যাংকগুলি কবজা করে ফেলে৷ মার্কিন প্রশাসনের ধারণা, এভাবে তারা ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে৷ শুধু মোসুল শহর দখল করেই তারা নাকি ৬২ কোটি ডলার লুট করেছিল৷ বছরে প্রায় ৫০,০০০ জিহাদি কর্মীর বেতন দিতে এই অর্থ যথেষ্ট৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
কর আদায় ও চাঁদাবাজি
আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষকে ৫ থেকে ১৩ শতাংশ আয়কর দিতে হয়৷ জার্মান সরকারের সূত্র অনুযায়ী, আইএস অ-মুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া করও আদায় করে৷ তাছাড়া চাঁদাবাজিও তাদের আয়ের আরেকটি উৎস৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি
‘জিহাদিরা’ আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস করতে অভ্যস্ত৷ তবে বেশি দামি অ্যান্টিক সম্পদ সযত্নে সরিয়ে ফেলে কালোবাজারে বিক্রি করে তারা৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করতে পিছপা হয় না এই গোষ্ঠী৷ তবে বিক্রিমূল্যের সঠিক অঙ্ক জানা নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মুক্তিপণ ও প্রচারণা
মানুষজনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় আইএস-এর দু-মুখী চাল৷ একদিকে এটা আয়ের একটা উৎস, অন্যদিকে এর মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রচারণার কাজও হয়ে যায়৷ কিছু ‘মূল্যবান’ জিম্মির শিরশ্ছেদ করে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপুল সাফল্য পায় আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সহানুভূতি দেখাতে চাঁদা
আইএস-এর প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ মানুষ গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ তারা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তহবিলে আর্থিক অবদান রাখে৷ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সূত্র অনুযায়ী সৌদি আরবে ২০১০ সাল থেকে ৮৬০ জন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের কাজে আর্থিক সাহায্য দেবার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে ১০০ জনের শাস্তি হয়েছে৷