অভিযানের তৃতীয় দিনেও ইরাকি সেনাবাহিনী গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে৷ আশিটিরও বেশি পরিবার ফালুজা থেকে পালাতে পেরেছে বলে খবর৷ বাকি পঞ্চাশ হাজার বাসিন্দার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ৷
ছবি: Getty Images/AFP/Ahmad Al-Rubaye
বিজ্ঞাপন
২০ মে যাবৎ ফালুজা ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন মানুষজন, কিন্তু ‘দায়েশ' বা আইএস এখনও কারফিউ জারি করে চলেছে, এছাড়া চারদিকে স্নাইপার, বলে প্রকাশ৷ কিছু নারী ও শিশু এভাবে প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর৷
ইরাক অথবা সিরিয়ার অন্য যে কোনো শহরের চেয়ে বেশিদিন আইএস-এর হাতে রয়েছে রাজধানী বাগদাদের মাত্র ৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত সুন্নি অধ্যুষিত শহর ফালুজা৷ ২০১৪ সালের গোড়ায় আইএস ফালুজা দখল করে৷ গত বছর থেকেই ইরাকি সেনাবাহিনী শহরটিকে ঘিরে রেখেছে; মাঝেমধ্যে গোলাবর্ষণ করছে ও শহরটি পুনর্দখল করার চেষ্টা চলেছে৷
এবার দৃশ্যত ইরাক সরকার ফালুজাকে মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর৷ তাই ‘ব্রেক টেররিজম' নাম দিয়ে এই ‘গ্রাউন্ড অপারেশন' শুরু করা হয়েছে৷ গত রবি বার ইরাকি সৈন্যদের ফালুজার উপকণ্ঠ থেকে ‘সেলফি' তুলতে ও পাঠাতে দেখা যায়৷
সোমবার ইরাকের প্রধানমন্ত্রী ফালুজা অভিযান শুরু হওয়ার কথা ঘোষণা করেন৷
মঙ্গলবারই কুর্দি-আরব সেনাবাহিনী সিরিয়ার রাকা প্রদেশে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে একটি বড় আকারের অভিযান শুরু করে৷ ‘সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস' এদিন রাকা সিটি-র বিরুদ্ধে তাদের এ পর্যন্ত বৃহত্তম অভিযানের কথা ঘোষণা করেছে৷ এসডিএফ-এর এই যোদ্ধারা নাকি আংশিকভাবে মার্কিন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও মার্কিন অস্ত্রসজ্জিত৷ এছাড়া মার্কিন জঙ্গি বিমান অভিযানে এয়ার সাপোর্ট দেবে বলেও প্রকাশ৷
অপরদিকে ফালুজা অভিযানে ইরাকি সেনাবাহিনী ছাড়াও হাশেদ আল-শাবি নামধারী একটি আধা সামরিক সংগঠনের যোদ্ধারা বিশেষভাবে সক্রিয়৷ এই সংগঠনে তেহরান-সমর্থিত শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির প্রাধান্যই বেশি৷ কাজেই একদিকে সুন্নি আইএস, অন্যদিকে শিয়া ও কুর্দি – এভাবেই দু'টি পৃথক রণাঙ্গণে গুরুতর চাপের মুখে পড়েছে ইসলামিক স্টেট৷
এসি/এসিবি (রয়টার্স, এপি, এএফপি)
কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে আইএস?
পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতি, অধিকৃত এলাকায় কর চাপানো এবং প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি করে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট প্রায় ২০০ কোটি ডলার একত্র করেছে৷ তাতে তাদের আরও ২ বছর চলে যাবার কথা৷
ছবি: picture alliance/abaca
বেআইনি তেল বিক্রি
বেআইনি ভাবে পেট্রোলিয়াম বিক্রি আইএস-এর আয়ের প্রধান উৎস৷ সিরিয়া ও ইরাকে বেশ কিছু বড় তৈলকূপ আপাতত তাদের দখলে৷ মূলত তুরস্কের মধ্য দিয়েই তারা চোরাচালানের কাজ চালিয়ে থাকে৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, কালোবাজারে তেল বিক্রি করে আইএস-এর মাসে প্রায় ৪ কোটি ডলার আয় হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
ব্যাংক ডাকাতি
সিরিয়া ও ইরাকে কোনো এলাকা দখলের পর আইএস সবার আগে ব্যাংকগুলি কবজা করে ফেলে৷ মার্কিন প্রশাসনের ধারণা, এভাবে তারা ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে৷ শুধু মোসুল শহর দখল করেই তারা নাকি ৬২ কোটি ডলার লুট করেছিল৷ বছরে প্রায় ৫০,০০০ জিহাদি কর্মীর বেতন দিতে এই অর্থ যথেষ্ট৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
কর আদায় ও চাঁদাবাজি
আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষকে ৫ থেকে ১৩ শতাংশ আয়কর দিতে হয়৷ জার্মান সরকারের সূত্র অনুযায়ী, আইএস অ-মুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া করও আদায় করে৷ তাছাড়া চাঁদাবাজিও তাদের আয়ের আরেকটি উৎস৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি
‘জিহাদিরা’ আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস করতে অভ্যস্ত৷ তবে বেশি দামি অ্যান্টিক সম্পদ সযত্নে সরিয়ে ফেলে কালোবাজারে বিক্রি করে তারা৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করতে পিছপা হয় না এই গোষ্ঠী৷ তবে বিক্রিমূল্যের সঠিক অঙ্ক জানা নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মুক্তিপণ ও প্রচারণা
মানুষজনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় আইএস-এর দু-মুখী চাল৷ একদিকে এটা আয়ের একটা উৎস, অন্যদিকে এর মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রচারণার কাজও হয়ে যায়৷ কিছু ‘মূল্যবান’ জিম্মির শিরশ্ছেদ করে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপুল সাফল্য পায় আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সহানুভূতি দেখাতে চাঁদা
আইএস-এর প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ মানুষ গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ তারা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তহবিলে আর্থিক অবদান রাখে৷ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সূত্র অনুযায়ী সৌদি আরবে ২০১০ সাল থেকে ৮৬০ জন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের কাজে আর্থিক সাহায্য দেবার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে ১০০ জনের শাস্তি হয়েছে৷