প্রতিবেশী দেশ ফিনল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেছে রাশিয়া৷ বার্তা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গ্যাসের দাম রাশিয়ান মুদ্রায় পরিশোধ না করায় মস্কো এই ব্যবস্থা নিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর যে দেশগুলো রাশিয়াকে সমর্থন করেনি তারা ‘বন্ধু নয়' বলে তালিকা প্রকাশ করেছিল রাশিয়া৷ এরপর এ সকল দেশকে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানির টাকা দেশটির স্থানীয় মুদ্রা অর্থাৎ রুবলে পরিশোধের দাবি জানায় ক্রেমলিন৷
মূলত ইউক্রেন হামলার পর পশ্চিমা দেশগুলোর অবরোধের জবাবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মস্কো৷
রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংস্থা গ্যাজপ্রোম শনিবার জানায়, তারা ফিনল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে কেননা দেশটির সরকারের জ্বালানি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান গাসুম ২০ মে অর্থাৎ শুক্রবারের কর্মদিবসের শেষ সময় পর্যন্ত রুবলে গ্যাসের টাকা পরিশোধ করেনি৷
ক্রেমলিনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ফিনল্যান্ডে রাশিয়ার রপ্তানিকৃত গ্যাসের পরিমাণ ছিল ১৪৯ কোটি কিউবিক মিটার, যা দেশটির বাৎসরিক চাহিদার এক তৃতীয়াংশ৷
তবে রাশিয়ার গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর ফিনল্যান্ড জানায়, ঘাটতি পূরণে তারা অ্যনান্য উৎস থেকে গ্যাস আমদানি করবে৷ এর মধ্যে বালটিককানেক্টর পাইপলাইন দিয়ে এস্তোনিয়া থেকে গ্যাস আমাদানির পরিকল্পনা করেছে দেশটি৷ এর মাধ্যমে ফিলিং স্টেশনগুলোতে কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকবে বলে দাবি ফিনল্যান্ডের৷
রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরতা যেভাবে কমাবে ইউরোপ
২০২৭ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার ওপর থেকে তাদের জ্বালানির নির্ভরতা শূন্যে নামিয়ে আনতে চাইছে৷ গত বুধবার এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় এই জোট৷
ছবি: Jean-Francois Badias/AP/picture alliance
রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা
এখন পর্যন্ত রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪০ ভাগ গ্যাস ও ২৭ ভাগ তেলের চাহিদা মেটাচ্ছে৷ ইউরোপজুড়ে এই জ্বালানি ঘর গরম রাখতে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে এবং শিল্পে ব্যবহৃত হয়৷ এতটা নির্ভরশীলতা হুট করে কমানো সম্ভব নয়৷ তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ইউরোপকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে৷ অবশ্য এই নির্ভরশীলতা কাটাতে অন্তত আরো পাঁচ বছর প্রয়োজন৷
ছবি: Kremlin Pool/ZUMAPRESS/picture alliance
নবায়নযোগ্যে ভরসা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল৷ কিন্তু ইউরোপীয় কমিশন সেই পরিকল্পনাকে আরো ত্বরান্বিত করতে চাইছে এখন৷ আগের প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্যের পরিকল্পনাকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করতে চাইছে তারা৷ ২০২০ সালের হিসেবে, তাদের ২২ শতাংশ জ্বালানি আসে বায়ু, সৌর ও জৈবশক্তি থেকে৷
ছবি: picture alliance / Zoonar
আইনে পরিবর্তন
লক্ষ্যে পৌঁছাতে ইউরোপীয় কমিশন আইনে পরিবর্তন আনার ঘোষণাও দিয়েছে৷ কড়া বিধিনিষেধের কারণে অনেক প্রকল্প পাস হতে সময় লাগে৷ সেগুলো কিছুটা শিথিলের উদ্যোগ নেয়া হবে৷ এছাড়া বড় বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনগুলোর ওপর সৌর প্যানেল বসানো বাধ্যতামূলক করার নিয়মও করা হবে৷
ছবি: Philip Reynaers/BELGA/dpa/picture alliance
জ্বালানি সাশ্রয়
কমিশন ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি সাশ্রয়ও ১৩ ভাগ কমাতে চায়৷ আগের প্রস্তাবে তা ছিল ৯ শতাংশ৷ এর জন্য অনেক ভবনকে সংস্কার করা হবে, যেন সেগুলোতে কম জ্বালানি খরচ হয়৷ তাদের হিসেব বলছে, মানুষ চাইলে নিজ উদ্যোগে তাদের জ্বালানি খরচ কমাতে পারে৷ এতে করে অন্তত পাঁচ শতাংশ গ্যাসের চাহিদা কমানো সম্ভব৷
ছবি: David McNew/Getty Images
গ্যাসের নতুন অবকাঠামো
ইউরোপ রাশিয়া থেকে বছরে ১৫৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস আমদানি করে থাকে৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার ও জ্বালানি সাশ্রয় করে এর বিকল্প তৈরি সম্ভব৷ কিন্তু স্বল্পমেয়াদে ইউরোপ এখন সেই গ্যাসের বিকল্প উৎস খুঁজছে৷ সেক্ষেত্রে হাইড্রোজেন গ্যাস এর বিকল্প হতে পারে৷ কিন্তু এর অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে৷ কারণ যে-কোনো সময় রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে বিপদ তৈরি হবে, যেমনটি তারা পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ার ক্ষেত্রে করেছে৷
ছবি: Joerg Boethling/imago images
অর্থায়ন
সবমিলিয়ে জ্বালানি খাতে ২০২৭ সালের মধ্যে ২১০ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করতে চায় ইইউ৷ ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৩০০ বিলিয়ন হবে৷ এর মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য ৮৬ বিলিয়ন, হাইড্রোজেন অবকাঠামোর জন্য ২৭ বিলিয়ন ইউরো, ২৯ বিলিয়ন ইউরো বিদ্যুৎ গ্রিড উন্নয়নে ও ৫৬ বিলিয়ন ইউরো জ্বালানি সাশ্রয় অবকাঠামো ও হিট পাম্প তৈরিতে খরচ হবে৷
ছবি: Christoph Hardt/Geisler-Fotopress/picture alliance
6 ছবি1 | 6
তার আগে শুক্রবার ফিনল্যান্ড জানায়, রাশিয়ার উপর জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জির সাথে এলএনজি আমদানির বিষয়ে দশ বছরের একটি চুক্তি সাক্ষর করেছে৷
কূটনৈতিক তৎপরতায় যুদ্ধ বন্ধের সমাধান দেখছেন জেলনেস্কি
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, শুধু কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমেই যুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব৷
দেশটির একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধ রক্তাক্ত হবে৷ যুদ্ধ চলবে তবে শুধু কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমেই তা বন্ধ হবে৷’’
তিনি আরো বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে নিশ্চয়ই আলোচনা চলবে৷ তবে তা কীভাবে অর্থাৎ কোনো মধ্যস্ততাকারী থাকবে কি না বা প্রসিডেন্ট পর্যায়ে হবে কি না তা আমি জানি না৷’’
তার মতে, ‘‘এমন কিছু বিষয় আছে যা শুধু আলোচনার টেবিলে বসেই সমাধান সম্ভব৷ আমরা সবকিছুই ফেরত চাই৷ কিন্তু রাশিয়া সেটা চায় না৷’’