অনেকেই সাঁতার কাটতে ভয় পান৷ বিশেষ করে পানি ঠাণ্ডা হলে সাঁতারুরাও ইতস্তত করে৷ ফিনল্যান্ডের এক শহরে বরফগলা পানিতে অভিনব প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়৷ ডিডাব্লিইউ-র এক কর্মীর হাতেকলমে সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Shemetov
বিজ্ঞাপন
ফিনল্যান্ডের ইওয়েনসু শহরে বরফের মাঝে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে৷ বাইরের তাপমাত্রা মাইনাস ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ তা সত্ত্বেও অংশগ্রহণকারীরা দিব্যি পানিতে নামছেন৷ ডিডাব্লিইউ-র এক কর্মী মাক্স মেরিল জানালেন, ‘‘ইউরোপের নানা অদ্ভুত ঐতিহ্যের সন্ধানে ফিনল্যান্ডের ইওয়েনসু শহরে এসেছি৷ এখানে বরফগলা পানিতে সাঁতারের প্রতিযোগিতা চলছে৷ আমিও সাহস করে কনকনে ঠাণ্ডা পানিতে নামছি৷ সত্যি ফিনল্যান্ডের মানুষ পাগল৷''
বাইরের মানুষ হিসেবে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে মাক্স একদিন আগেই এখানে পৌঁছেছেন৷ স্থানীয় সাঁতারু সংঘের দপ্তরের সামনে প্রতিযোগিতার অন্যতম আয়োজক কির্সি হালটিয়ার সঙ্গে তাঁর দেখা হলো৷ মাক্স সবার আগে সত্যি জানতে চাইলেন, ফিনল্যান্ডের মানুষ কেন বরফগলা পানিতে নামে?
কির্সি জানালেন, ‘‘এটা শরীরকে শক্তি দেয়, এন্ডোরফিন হরমোন দেয়৷ দ্রুত ভালো মানের এন্ডোরফিন পাবার উপায় এটা৷ জগিং করার প্রয়োজন নেই৷ কয়েকবার বরফগলা কনকনে শীতল পানিতে নামলেই হবে৷ তখন সেই অনুভূতি পাওয়া যাবে৷’’
বরফগলা পানিতে সাঁতার
03:24
This browser does not support the video element.
বড় এই প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বয়সের প্রতিযোগীদের জন্য আলাদা ইভেন্ট রয়েছে৷ অংশগ্রহণকারী হিসেবে একমাত্র হলের মধ্যে শরীর গরম করার নিয়ম রয়েছে৷ প্রতিযোগিতার আগে সাউনার কোনো ব্যবস্থা নেই৷ শেষবারের মতো নির্দেশ শুনে নিয়ে পানিতে নামার পালা৷ নিজেকে যেন বক্সার মনে হচ্ছে৷ জীবনের সবচেয়ে কঠিন সংগ্রামে চলেছেন মাক্স৷ বরফগলা পানির উপর ২৫ মিটার সাঁতার কাটতে হবে৷
সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ডাঙার উপরে অপেক্ষা করছে না৷ সেটা হলো শীত ও পানির প্রতি তাঁর সমীহ বা শ্রদ্ধাবোধ৷ ২৩ সেকেন্ড পর সাঁতার শেষ হলো৷ শীতের ফলে ভীষণ ব্যথা হচ্ছে৷ তবে সেই ব্যথা দ্রুত ভুলে যাওয়ার কারণ পাওয়া গেল৷ মাক্স সম্ভবত তৃতীয় স্থান পেয়েছেন, তবে এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন৷ কির্সি উৎসাহ দিয়ে বলেন, ‘‘খুব ভালো করেছো, দারুণ৷ গতকালের আগে কখনো এমন সাঁতার না কেটেও আজ যা করলে, তা সত্যি অসাধারণ৷’’
বরফগলা পানিতে সাঁতারের পর বাথটবের গরম পানিতে নামার আনন্দই আলাদা৷
মাইকে ক্র্যুগার/এসবি
সুইমিং পুলে যাওয়ার আগে আপনার যা জানা উচিত
জার্মানিতে গ্রীষ্মে সারাদিন কাটানোর এক চমৎকার স্থান সুইমিং পুল৷ তবে সেসব পুলে ঝাঁপ দেয়ার আগে কয়েকটি বিষয় জেনে নেয়া ভালো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Arnold
‘ফ্রাইবাড’ কিন্তু ফ্রি নয়
জার্মানিতে আউটডোর সুইমিং পুল বোঝাতে ‘ফ্রাইবাড’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়৷ যদিও এই শব্দের ইংরেজি অর্থ ‘ফ্রি বাথ’, কিন্তু ফ্রাইবাডে যেতে আপনাকে ঠিকই প্রবেশ মূল্য দিতে হবে৷ আরো কয়েক ধরনের সুইমিং পুল রয়েছে৷ যেমন, ‘সমারবাড’, মানে শুধুমাত্র গ্রীষ্মে যে সুইমিং পুল চালু থাকে৷ ‘ভাল্ডবাড’ হচ্ছে জঙ্গল ঘেরা স্থানের কোনো সুইমিং পুল৷ আর ‘কম্বিবাড’ হচ্ছে যেখানে একইসঙ্গে আউটডোর এবং ইনডোর সুইমিংয়ের সুযোগ আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S.Kahnert
সঙ্গে কয়েন নিতে ভুলবেন না
অধিকাংশ সুইমিং পুলে তালা নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই, কেননা, সেগুলোতে কাপড় বদলের স্থানে লকার থাকে৷ সেসব লকার ব্যবহার করতে অবশ্য এক ইউরো ডিপোজিট করতে হয়৷ তাই কিছু কয়েন সঙ্গে থাকলে ভালো হয়৷ কিছু স্থানে আবার হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করতে ৫ বা দশ সেন্ট দরকার হয়৷ সেটাও মাথায় রাখবেন৷
ছবি: Imago Images/Deutzmann
সাঁতারের আগে এবং পরে গোসল জরুরি
সুইমিং পুলে লাফ দেয়ার আগে শরীরে জমে থাকা ঘাম, বাড়তি সানস্ক্রিন এবং অন্যান্য আবর্জনা দূর করতে গোসল করে নেয়া উচিত৷ আর সাঁতারের পর অধিকাংশ সাঁতারুই সাবান এবং শ্যাম্পু ব্যবহার করে দ্বিতীয়বার গোসল করেন৷ সুইমিং পুলের পানি পরিষ্কার রাখতে নানারকমের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়৷ দ্বিতীয়বারের গোসল সেই কেমিক্যাল দূর করে৷ গোসল খানাগুলোতে কেউ কেউ পুরোপুরি বিবস্ত্র হয়ে গোসল করেন৷ এটা স্বাভাবিক ব্যাপার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
সঙ্গে স্যান্ডেল রাখতে পারেন
অধিকাংশ জার্মান সুইমিং পুলে পানিতে ভেজানো যায় এমন স্যান্ডেল ব্যবহার করেন৷ যদিও এটা অপরিহার্য নয়, তারপরও খালি পায়ে পুলের আশেপাশে হাঁটতে না চাইলে স্যান্ডেল পরতে পারেন৷ তবে সেখানে জুতা পরে হাঁটলে বাধার মুখে পড়তে পারেন৷
ছবি: Imago Images/blickwinkel
লাফ দিন, তবে যেখানে-সেখানে নয়
পুলের কোণা থেকে যেখানে-সেখানে লাফ দেয়ার নিয়ম নেই৷ এটা বুঝতে চাইলে সেখানে থাকা সংকেতগুলোর দিকে নজর রাখুন৷ ‘ফ্রাইবাডে’ সাধারণত ডাইভিং এবং স্প্রিংবোর্ড-এর স্থান চিহ্নিত করা আছে৷ আর সেগুলো দেখভালের জন্য লাইফগার্ড থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Schmidt
রাশভারী সাঁতারুরা হতাশ হতে পারেন
গ্রীষ্মের গরমের দিনে জার্মানিতে কোনো আউটডোর সুইমিং পুল খালি পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার৷ সুতরাং আপনি যদি খুব মনোযোগী সাঁতারু হন, তাহলে কিছুটা হতাশ হতে পারেন৷ বিশেষ করে যেসব বিদেশি নিজেদের দেশে সাঁতারুদের জন্য আলাদা লেন দেখে অভ্যস্ত, তাঁরা জার্মানিতে তা না পেয়ে ব্যথিত হতে পারেন৷ তবে একান্তই যদি কিছুটা নিরিবিলি সুইমিং পুল পেতে চান, তাহলে গরমের সময় ইনডোর পুলে যেতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
শিশুদের যেখানে যাওয়া নিষেধ
যে শিশুরা এখনো সাঁতার শেখার উপকরণ ব্যবহার করছে, তাদের গভীর পুলে যাওয়া নিষেধ৷ শিশুদের সাঁতারু হিসেবে বিবেচনা করা হয় তখনই, যখন তারা ‘সীপ্ফ্যার্ডশেন’ পরীক্ষা পাস করে৷ তবে এই পরীক্ষা পাস করার অর্থ এ নয় যে, শিশুদেরকে সুইমিং পুলে অবাধভাবে ঘুরতে দিতে হবে৷ জার্মান লাইফগার্ডরা কিছুটা উদাসীন হিসেবে পরিচিত৷ তাই নিজের সন্তানকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখাই ভালো৷
ছবি: picture alliance/dpa/H. Christian Dittrich
খেলনা নেয়া যাবে, তবে...
জার্মানির সুইমিং পুলগুলোতে সাধারণত পানিতে ব্যবহারউপযোগী বিভিন্ন খেলনা সঙ্গে নেয়া যায়৷ তবে, কী নেয়া যাবে কী যাবে না সেটা অঞ্চলভেদে ভিন্ন হতে পারে৷ বিশেষ করে পুল যখন পুরোপুরি ভর্তি থাকে, তখন কোনো খেলনা ব্যবহার করা হলে কেউ কেউ বিরক্ত হতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Arnold
সুইমস্যুট বাধ্যতামূলক
যদিও কিছু জার্মান লেকে নগ্ন সাঁতরাতে ভালোবাসেন, পাবলিক সুইমিং পুলগুলোতে সেটা নিষিদ্ধ৷ আবার শুধু অন্তর্বাস পরে পানিতে ঝাঁপ দেয়া যাবে না৷ পানিতে নামার উপযুক্ত সুইমস্যুট ব্যবহার করে পুলে যেতে হবে৷ মুসলমান নারীরা চাইলে সারা শরীর ঢাকা সাঁতারের পোশাক বুর্কিনিও পরতে পারেন৷ তবে বুর্কিনি পরা নারীরা সুইমিং পুলে বর্ণবাদী মন্তব্যের শিকার হতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Pilick
বিশ্রামের জন্য কম্বল নিতে পারেন
আগেই লিখেছি, ‘ফ্রাইবাড’ বলতে আউটডোর সুইমং পুল বোঝানো হয়৷ এই পুলের চারপাশে বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকে৷ সাঁতারের মাঝখানে তাই বিরতি নিতে সেসব স্থানে কম্বল বিছিয়ে শুয়ে, বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারেন৷ খেয়াল রাখবেন, কিছু মেয়েকে সেখানে উর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত্ত রেখে শুয়ে থাকতে দেখতে পারেন৷ এটা স্বাভাবিক ব্যাপার৷ তবে তাঁদের ছবি তোলা নিষিদ্ধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gollnow
খাবারও লাগবে
যাঁরা সারাদিন সুইমিং পুলে থাকতে চান, তাঁরা সঙ্গে খাবার এবং পানীয় নিয়ে যেতে পারেন৷ তবে সেগুলো কাঁচের বোতল বা বক্সে না নিলেই ভালো৷ আর যদি একান্তই ঘর থেকে খাবার বা পানীয় নিতে মন না চায়, তাহলে পুলের পাশেই স্ন্যাক বার থেকে কিনতে পারেন৷