২০১৬ সাল চিহ্নিত হয়ে থাকবে নোট বাতিলের কারণে৷ এছাড়াও ঘটনাপ্রবাহের শীর্ষে ছিল সন্ত্রাসী হামলা, কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ‘সার্জিক্যাল স্টাইক', সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত, ছাত্র বিক্ষোভ ইত্যাদি৷
বিজ্ঞাপন
সন্ত্রাসী হামলা দিয়ে শুরু
দেখতে দেখতে কেটে গেল ২০১৬ সাল৷ বছরটা শুরু হয়েছিল ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলা, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ এবং ছাত্র বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে৷ জানুয়ারি মাসের শুরুতেই পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে হানা দেয় জঙ্গিরা৷ তবে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলি বিনিময়ে নিহত হয় ছ'জন জঙ্গির সবাই৷ আর সেইসঙ্গে শহিদ হন তিনজন ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষী৷ সন্দেহ, হামলার পেছনে ছিল পাকিস্তানে ঘাঁটিগাড়া জঙ্গি গোষ্ঠী জয়স-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজার৷ জঙ্গিরা পুলিশের একটি গাড়ি ছিনতাই করে ভারতীয় সেনার পোশাকে পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল৷
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে যেন গলার ফাঁস হয়ে রয়েছে কাশ্মীর৷ তাই কাশ্মীর সংক্রান্ত ঘটনাবলী আজ নিজেরাই ইতিহাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bhat
১৯৪৭
বলা হয় দেশবিভাগের পর পাকিস্তান থেকে আগত উপজাতিক যোদ্ধারা কাশ্মীর আক্রমণ করে৷ তখন কাশ্মীরের মহারাজা ভারতের সাথে সংযোজনের চুক্তি করেন, যা থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়৷
ছবি: dapd
১৯৪৮
ভারত জাতিসংঘে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে পর, ৪৭ ক্রমিক সংখ্যক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়৷ ঐ প্রস্তাব অনুযায়ী গোটা কাশ্মীরে গণভোট অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে৷
ছবি: Keystone/Getty Images
১৯৪৮
কিন্তু পাকিস্তান প্রস্তাব অনুযায়ী, কাশ্মীর থেকে সৈন্যাপসারণ করতে অস্বীকার করে৷ অতঃপর কাশ্মীরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়৷
ছবি: Getty Images
১৯৫১
ভারতীয় কাশ্মীরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে সমর্থন করা হয়৷ অতঃপর ভারত বলে, আর গণভোট অনুষ্ঠানের কোনো প্রয়োজন নেই৷ জাতিসংঘ ও পাকিস্তানের মতে, গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৫৩
কাশ্মীরের ‘প্রধানমন্ত্রী’ শেখ আব্দুল্লাহ গণভোটের সমর্থক ছিলেন ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেন৷ ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ জম্মু-কাশ্মীরের নতুন সরকার ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের সংযোজনকে পাকা করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৬২-৬৩
১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীন আকসাই দখল করে৷ তার আগের বছর পাকিস্তান কাশ্মীরের ট্রান্স কারাকোরাম ট্র্যাক্ট এলাকাটি চীনকে প্রদান করে৷
ছবি: Getty Images
১৯৬৫
কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়৷ কিন্তু যুদ্ধশেষে উভয় দেশের সেনা তাদের পুরোনো অবস্থানে ফিরে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
১৯৭১-৭২
আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ৷ যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর সিমলা চুক্তি সম্পাদিত হয় ১৯৭২ সালে৷ যুদ্ধবিরতি রেখাকে লাইন অফ কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ রেখায় পরিণত করা হয় ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ সমাধান সম্পর্কে ঐকমত্য অর্জিত হয়৷
ছবি: AP
১৯৮৪
ভারত সিয়াচেন হিমবাহ নিজ নিয়ন্ত্রণে আনার পর পাকিস্তান তা একাধিকবার দখল করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হতে পারেনি৷
ছবি: AP
১৯৮৭
জম্মু-কাশ্মীরে বিতর্কিত নির্বাচনের পর রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়৷ ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থাকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করে, কিন্তু পাকিস্তান সে দোষারোপ চিরকাল অস্বীকার করে এসেছে৷
ছবি: AP
১৯৯০
গওকাদল সেতুর কাছে ভারতীয় সিআরপি রক্ষীবাহিনী কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালালে পর শতাধিক আন্দোলনকারী নিহত হন৷ প্রায় সমস্ত হিন্দু কাশ্মীর উপত্যকা ছেড়ে চলে যান৷ জম্মু-কাশ্মীরে সেনাবাহিনীকে আফসা বা আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/Tauseef Mustafa
১৯৯৯
কাশ্মীর ভ্যালিতে গোটা নব্বই-এর দশক ধরে অশান্তি চলে৷ ১৯৯৯ সালে আবার ভারত-পাকিস্তানের লড়াই হয়, এবার কারগিলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০১-২০০৮
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলাপ-আলোচনার যাবতীয় প্রচেষ্টা প্রথমে নতুন দিল্লির সংসদ ভবন ও পরে মুম্বই হামলার ফলে ব্যর্থ হয়৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/F. Khan
২০১০
ভারতীয় সেনার গুলি লেগে এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর পর কাশ্মীর ভ্যালি উত্তেজনায় ফেটে পড়ে৷ বিক্ষোভ চলে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে, প্রাণ হারান অন্তত ১০০ জন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/U. Asif
২০১৩
সংসদ ভবনের উপর হামলার মুখ্য অপরাধী আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হয়৷ এর পর যে বিক্ষোভ চলে, তা-তে দু’জন প্রাণ হারায়৷ এই বছরই ভারত আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় মিলিত হয়ে উত্তেজনা উপশমের কথা বলেন৷
ছবি: Reuters
২০১৪
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ উপস্থিত থাকেন৷ কিন্তু এর পর নতুন দিল্লিতে পাকিস্তানি হাই কমিশনার কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ায় ভারত আলাপ-আলোচনা স্থগিত রাখে৷
ছবি: Reuters
২০১৬
আজাদ কাশ্মীর ভিত্তিক হিজবুল মুজাহিদীন-এর অধিনায়ক বুরহান ওয়ানি-র মৃত্যুর পর কাশ্মীরে স্বাধীনতা সমর্থকরা আবার পথে নেমেছেন৷ এই আন্দোলনে এ পর্যন্ত অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে ও বিক্ষোভ অব্যাহত আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.S.Hussain
২০১৯
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর গাড়িবহরে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ এতে ৪২ জওয়ান নিহত হন৷ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জৈশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/P. Kumar Verma
২০১৯
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের কাছে কিছু বিশেষ অধিকার ছিল। ৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৩৭০ ধারাটি অবসানের দাবি তোলেন৷ বিল পাস হয়। একই দিনে তাতে সই করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ৷ ফলে, কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা' বাতিল হয়। তাছাড়া মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা হারায়। জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখ নামে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।
ছবি: Reuters
19 ছবি1 | 19
ছাত্র বিক্ষোভ, দাঙ্গা, ভাঙচুর
দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বামপন্থি ছাত্র ইউনিয়নের ডাকা এক সভায় দেশবিরোধিতার কিছু ঘটনার অভিযোগে পুলিশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট কানাইয়া কুমারসহ কিছু ছাত্র নেতাকে গ্রেপ্তার করে৷ সরকারের অভিযোগ ঐ সভায় সংসদে সন্ত্রাসী হামলার প্রধান অপরাধী আফজল গুরুর ফাঁসির প্রতিবাদ করে তাঁকে শহিদের সম্মান দেওয়া হয়৷ এরপর হায়দ্রাবাদের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দলিত গবেষক-ছাত্র রোহিত ভেমুলারের আত্মহত্যার ঘটনায় দেশ জুড়ে শুরু হয় ছাত্র বিক্ষোভ৷ অভিযোগ, জাতপাতের ভিত্তিতে রোহিতের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করায় সে আত্মহত্যা করেছিল৷ উত্তরবঙ্গের মালদা জেলার কালিয়াচকে মৌলবাদী হিন্দু মহাসভা মহানবি হজরত মহম্মদ সম্পর্কে অবমাননাকর কিছু মন্তব্য করেছে – এই অভিযোগে হাজার হাজার মুসলিম পথে নামে৷ প্রতিবাদ মিছিল সহিংস হয়ে ওঠায় আধা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে শুরু হয় সংঘর্ষ৷ ক্রুদ্ধ জনতা পুলিশ থানা, বিডিও অফিস ও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে৷ পরবর্তি পাঁচ মাসে ঘটে আরও ২৭৮টি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হিসেবে এইসব দাঙ্গায় প্রাণ হারায় ৩৮ জন এবং জখম হয় প্রায় ৯০০ মানুষ৷
অর্থনীতি আর রাজনীতির খেলা
মার্চ মাসে যথারীতি ২০১৬-২০১৭ সালের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি৷ বাজেটে জোর দেওয়া হয় গ্রামীন বিকাশকে৷ অগ্রাধিকার দেওয়া হয় গরিব কল্যাণ প্রকল্প, কৃষি বিমা, গ্রামে গ্রামে রান্নার গ্যাস সরবরাহ করার ওপর৷ অধিক অর্থ বরাদ্দ করা হয় ১০০ দিনের কাজের জন্য৷ কর কাঠামো থাকে মোটামুটি অপরিবর্তিত৷ মে-জুন মাসে পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতা বদল হয় কংগ্রেস শাসনাধীন আসামে৷ সরকার গঠন করে বিজেপি৷ পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস আরও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতা ধরে রাখে৷ তামিলনাড়ুতে আবারও ক্ষমতায় ফিরে আসে জয়ললিতার এআইএডিএমকে দল৷ আর কেরালায় সরকার গঠন করে সংযুক্ত বাম গণতান্ত্রিক দল৷ সেপ্টেম্বর নাগাদ মোদী সরকারের আর্থিক সংস্কার এবং মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে কয়েক লক্ষ শ্রমজীবী ২৪ ঘণ্টার দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয়৷ বাম দলগুলির ডাকা এই হরতাল আংশিক সফল হয়৷
ভারতের কিছু বিতর্কিত আইন
ভারতে এমন কিছু কিছু আইন আছে, যা খুবই স্পর্শকাতর৷ তাই এ সব আইন নিয়ে প্রশ্ন তুললেই শুরু হয়ে যায় তুমুল বিতর্ক৷ তখন শেষ পর্যন্ত আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়, দিতে হয় সমাধান৷ এই রকমই কয়েকটি আইন তুলে ধরা হলো ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters
৩৭০ ধারা
ভারতীয় সংবিধানের এই ধারায় জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে অন্যান্য রাজ্যগুলির তুলনায় কতগুলি ক্ষেত্রে স্বশাসনের বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছে৷ রাজ্য গণপরিষদ এর সংশোধনের সুপারিশ না করায়, এটা এ মুহূর্তে স্থায়ী বিধান হয়ে আছে৷ তবে জাতীয় নিরাপত্তা, অত্যাবশ্যক পণ্য, সর্বভারতীয় নিয়োগ বিধি, কর ও শুল্ক, আদালত, মানবাধিকার ইত্যাদি ক্ষেত্রে জম্মু-কাশ্মীর অন্যান্য রাজ্য থেকে অভিন্ন৷
ছবি: Mohammadreza Davari
সোচ্চার সংঘ পরিবার
৩৭০ নম্বর ধারা রদ করার জন্য ভারতে সংঘ পরিবারের মতো কট্টর হিন্দু সংগঠনগুলি জোর আন্দোলন শুরু করেছে৷ সরকারকে তারা ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছে এ জন্য৷ তাদের মতে, এই ধারা ভারতের সংহতি ও অখণ্ডতার পরিপন্থি৷ শুধু তাই নয়, এই ধারা নাকি জম্মু-কাশ্মীরের অশান্ত পরিস্থিতির জন্য অনেকখানি দায়ী৷ সরকার অবশ্য এই বিতর্কে নিজেকে জড়াতে চাইছে না৷
ছবি: AP
এএফএসপিএ বা আফস্পা
সেনাবাহিনীর বিশেষ অধিকার আইন বা এএফএসপিএ কার্যকর হয় ১৯৫৮ সালে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্য এবং জম্মু-কাশ্মীরে৷ জঙ্গি তৎপরতা রুখতে এই আইনে সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়েছে অবাধ ক্ষমতা৷ এতে করে ইচ্ছামতো গ্রেপ্তার, যখন খুশি তল্লাসি, কোনো কারণ না দেখিয়ে আটক এবং নির্যাতন করতে পারে মিলিটারি৷ তবে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে, এ আইন অনির্দিষ্টকালের জন্য বলবত থাকতে পারে না৷ বরং ক্ষেত্রবিশেষে তদন্ত করতে হবে৷
ছবি: AP
প্রতিবাদী নারী শর্মিলা চানু
মানবাধিকার সংগঠনগুলি আফস্পার বিরুদ্ধে সোচ্চার৷ অভিযোগ, গত দু’দশকে মনিপুরে এ আইনকে কাজে লাগিয়ে সাজানো সংঘর্ষে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী৷ এ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার ও মনিপুর থেকে আফস্পা প্রত্যাহারের দাবিতে ১৬ বছর ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন লৌহমানবী ইরম শর্মিলা চানু৷ নাকে ১৬ ইঞ্চির টিউব লাগানো তাঁর এই প্রতিবাদী ছবি গোটা দুনিয়া চেনে৷ আত্মহত্যার মামলা দায়ের করেও তাঁকে থামানো যায়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images
৩৭৭ ধারা
ভারতীয় ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় সমকামিতা এখনও অপরাধ৷ সমলিঙ্গের দুই প্রাপ্তবয়স্ক যদি পারস্পরিক সম্মতিতে যৌনকাজে লিপ্ত হয় এবং সেটা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলেও ৩৭৭ নং ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে ১০ বছরের জেল, এমনকি যাবজ্জীবন কারাবাসও হতে পারে৷ ভারতের সমকামী গোষ্ঠীগুলি ব্যক্তিস্বাধীনতার খেলাপ মনে করে এই আইন বাতিল করার দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিীন ধরে৷ তবে বিষয়টি নিয়ে ভারতের জনমত বিভাজিত৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R. Kakade
এলজিবিটি সম্প্রদায়ের নতুন পিটিশন
সম্প্রতি ভারতীয় দণ্ডবিধির এই ৩৭৭ নম্বর অনুচ্ছেদটির বিরুদ্ধে আবারো পিটিশন দায়ের করেন এলজিবিটি সম্প্রদায়ের কয়েকজন সেলিব্রেটি৷ বের হয় মিছিলও৷ হাতের প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুনে লেখা থাকে ছিল, ‘সমকামীদের ব্যক্তিগত জীবন বেছে নেবার অধিকার দিতে হবে৷’ ঋতু ডালমিয়া, আমন নাথ এবং নৃত্যশিল্পী এনএস জোহর-এর মতো তারকারা ছিলেন সেই মিছিলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পণপ্রথা বিরোধী আইন
ভারতে আজও পণপ্রথা বিরোধী আইনের ৪৯৮-এ ধারাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কখনও কখনও ঘটে যায় বধু হত্যার মতো ঘটনা৷ এই ধারা অনুযায়ী, বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে স্ত্রী আত্মহত্যা করলে বা তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে, স্বামী বা অন্য সদস্যদের প্রমাণ করতে হবে যে তাঁরা নির্দোষ৷ তা নাহলে বধু নির্যাতনের অপরাধে তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে৷ তবে স্ত্রী যাতে এই আইনের অপব্যহার না করেন, সেদিকটাও এবার খতিয়ে দেখতে চায় আদালত৷
ছবি: Narinder Nanu/AFP/Getty Images
আত্মহত্যা না খুন?
এ বছরের জানুয়ারি মাসে দিল্লির ফতেপুর বেরিতে ২২ বছরের নববিবাহিতা বধু ববিতাকে শ্বশুরবাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়৷ বৌটির বাপেরবাড়ির লোকেদের অভিযোগ, পণের জন্য ববিতার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতো তাঁর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেরা৷ আর সে কারণেই ববিতা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয় অথবা আত্মহত্যার মোড়কে তাঁকে খুন করে শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই৷
ছবি: Getty Images/AFP
জাতিভেদ প্রথা অপরাধযোগ্য
জাতিভেদ বা অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ আইনের ১৭নং ধারায় এই আইন লঙ্ঘনে ছ’মাসের জেল ও জরিমানার কথা বলা হয়েছে৷ কারণ মানুষের ব্যক্তি অধিকার মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে৷ সামাজিক মেলামেশা, খাওয়া-দাওয়া, ওঠা-বসা, ধর্মীয় স্থানে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে নীচু জাত আর উঁচু জাতের মধ্যে বিভেদ করা অবৈধ৷ ১৯৭১ সালে আইনটি সংশোধন করে তার নাম দেওয়া হয় নাগরিক অধিকার সুরক্ষা আইন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Seelam
দলিতরা কি মানুষ নয়?
মন্দির তো দূরের কথা, সম্প্রতি গুজরাট, উত্তর প্রদেশ এবং দক্ষিণ ভারতের কিছু গ্রামে দলিত ও হরিজনদের কুঁয়ো থেকে জল নিতে বাধা দেওয়া হয় গ্রামের মোড়লদের নির্দেশে৷ এ নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিলে, পুলিশ পাহারা বসাতে হয়৷ শেষে দলিতরা নিজেদের জন্য আলাদা কুঁয়ো খুঁড়ে নেন৷ প্রচণ্ড খরা সত্ত্বেও গুজরাটের মেহসানা জেলার ডজন খানেক মহিলা কাকুতি-মিনতি করলেও তঁদের কুঁয়ো থেকে জল নিতে দেওয়া হয়নি৷
ছবি: Reuters/Danish Siddiqui
লিঙ্গ বৈষম্য নিরোধক আইন
দেব-দেবীর মন্দিরে নারীদের প্রবেশাধিকার না থাকায়, তার বিরুদ্ধে নারীবাদী সংগঠনগুলি সোচ্চার সর্বদাই৷ কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষের মন এতে টলেনি৷ ধর্মগুরুদের মতে, প্রাচীনকাল থেকেই মাসিকের সময় মেয়েদের ‘অশুচি’ বলে গণ্য করা হয়৷ তাই তাদের ঢুকতে দেওয়া হয় না৷ এ নিয়ে আন্দোলনকারীরা আদালতের দ্বারস্থ হলে মুম্বই হাইকোর্ট মন্দির প্রবেশাধিকার আইন ১৯৪৭ অনুসারে রায় দেয় যে, মন্দিরে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য করা যাবে না৷
ছবি: Reuters/Anindito Mukherjee
মন্দিরে প্রবেশাধিকার নিয়ে আবারো আপিল
তৃপ্তি দেশাইয়ের নেতৃত্বেই একদল মহিলা মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরে একটি শনি মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করেন৷ মন্দির কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তাঁদের বাধা দিলে, তাঁরা সেখানেই ধর্ণা দেন৷ মুম্বইয়ের রাস্তায় মন্দিরে মেয়েদের অবাধ প্রবেশাধিকারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়৷ এরপর কিছু কিছু মন্দিরে নারীরা প্রবেশাধিকার পেলেও, কেরালার সবরিমালা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি মন্দির কর্তৃপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
মুসলিম শরিয়ত বিধি ১৯৩৭
‘মুসলিম পার্সোনাল ল’ নিয়ে সরকার দোটানায়৷ সংবিধানে নারী-পুরুষকে সমানাধিকার দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু মুসলমানদের জন্য সামাজিক বা পারিবারিক বিবাদে কোরান-ভিত্তিক শরিয়ত আইনই শেষ কথা৷ তবে মুসলিম নারীরা বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে পুরুষদের এক তরফা তিন তালাকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে৷ আওয়াজ তুলেছে বহুবিবাহ, তালাক ও খোরপোষের দাবিতে৷ একদিকে সংবিধান, অন্যদিকে মুসলিম পুরুষ সমাজ৷ বিযয়টি তাই আদালতের ওপর ছেড়ে দিয়েছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শাহ বানুর পর সায়রা বানু
ভারতের দেরাদনের ৩৫ বছরের সায়রা বানু সম্ভবত প্রথম মুসলিম মহিলা, যিনি সুপ্রিম কোর্টে তিন তালাক প্রথা রদ করার আর্জি জানিয়েছেন৷ সায়রা বানু উত্তরাখণ্ডে বাপের বাড়িতে গেলে তাঁর স্বামী রিজওয়ান আহমেদ এলাহাবাদ থেকে তালাকনামা পাঠিয়ে ১৫ বছরের দাম্পত্যজীবনের ইতি টানতে চান৷ বিয়ের পরে বহবার গর্ভপাতে আজ অসুস্থ সায়রা৷ তারপরও এই অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে মরিয়া সায়রা বানু৷
ছবি: Reuters
14 ছবি1 | 14
ভারত-বাংলাদেশ ‘সু-সম্পর্ক'
আগস্ট মাসে আকাশবাণী থেকে, বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য মৈত্রী বেতার চ্যানেলের শুভারম্ভ করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ সেইসঙ্গে চালু করা হয় বাংলা ভাষায় মাল্টি-মিডিয়া সার্ভিস৷ তবে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি হয়নি৷ অন্যদিকে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর পিছিয়ে দেওয়া হয় অজ্ঞাত কারণে৷ অবশ্য বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জুমান খান ভারতে আসেন মোদী সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে৷ মূলত গুলশন সন্ত্রাসী কাণ্ডের সঙ্গে ইসলামি ধর্ম প্রচারক জাকির নায়েকের পিস টিভিতে প্রচারিত মৌলবাদী ইসলামি অনুষ্ঠানের যোগসূত্র তুলে ধরতে এবং মুম্বই-এর ইসলামি রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে যে এনজিওটি চলে নায়েকের নামে, তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে দিল্লিকে অনুরোধ জানান খান৷ এরপর ভারত ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনে বিদেশি অর্থ সাহায্য নিষিদ্ধ ঘোষণ করে৷
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে ফাটল
বিগত বছরে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের দ্রুত অবনতি হতে থাকে৷ জুলাই মাসে হিজবুল মুজাহিদিনের জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হবার পর, কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লাগাতার প্রতিবাদ আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে৷ অচল হতে থাকে জনজীবন৷ স্কুল-শিক্ষায়তন বন্ধ থাকে৷ বিক্ষোভকারীরা পুড়িয়ে দেয় ২০টি স্কুল৷ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এবং পাকিস্তান সরকার তাকে শহিদের সম্মান দিলে, তাই নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাদ-প্রতিবাদ ওঠে চরমে৷ এই পরিস্থিতিতে ঘৃতাহুতি দেয় ১৮ই সেপ্টেম্বরে জম্মু-কাশ্মীরের উরি সেনা শিবিরে সন্ত্রাসী হামলা৷ তাতে নিহত হন ১৯ জন ভারতীয় সেনা৷ ২৯শে সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে ভারতীয় সেনা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' চালায়৷ গুঁড়িয়ে দেয় বেশ কিছু জঙ্গি ঘাঁটি৷ পাকিস্তানের দিক থেকে অবশ্য তা অস্বীকার করা হয়৷ তারপরও নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সন্ত্রাসী হানা চলতেই থাকে৷ ডিসেম্বরে রাজ্যের নাগ্রোটা সেনা শিবিরে জঙ্গি হানায় নিহত হন সাতজন সেনা৷ জঙ্গি হামলায় ২০১৬ সালে শহিদ হন ৬৪ জন ভারতীয় সেনা, যা কিনা গত দু'বছরের চেয়ে অনেক বেশি৷ এছাড়াও নিহত হয় শতাধিক অসামরিক ব্যক্তি, জখম হয় প্রায় হাজার দশেক৷ কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যের পিডিপি-বিজেপি জোট সরকার বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়াত নেতাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ অঙ্কুরেই ব্যর্থ হয়৷
ভারতে পাকিস্তানি যে ৭ তারকাকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনা চলছে, এর জের ধরে এবার সাতজন পাকিস্তানি তারকাকে ভারতে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা৷ অবিলম্বে তাঁদের ভারত ছাড়ার হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
ফাওয়াদ খান
বর্তমানে বলিউডে সবচেয়ে জনপ্রিয় পাকিস্তানি তারকা ফাওয়াদ খান৷ ২০১৪ সালে ‘খুবসুরত’ মুভির মাধ্যমে তিনি বলিউডে ঘাঁটি গাড়েন৷
ছবি: STRDEL/AFP/Getty Images
মীরা
পাকিস্তানি অভিনেত্রী মীরা যখন বলিউডে পদার্পণ করলেন, তখন তাঁকে নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল৷ বলিউডে তাঁর সবশেষ মুভি ‘ভড়াস’, যা ২০১৩ সালে মুক্তি পায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
বীণা মালিক
বীণা মালিক বিগ বস-এর মাধ্যমে ভারতীয় মিডিয়ায় আলোচনায় আসেন৷ এরপর তিনি বলিউডে প্রবেশ করেন৷ ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’ তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি৷ কিন্তু দর্শক তাঁকে ভালোভাবে নেয়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
আতিফ আসলাম
গায়ক অভিজিতসহ বলিউডের বেশ কিছু ব্যক্তি বরাবরই আতিফ আসলামের বিরোধিতা করে আসছেন৷ কিন্তু এরপরই বলিউডের বেশ কিছু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের সুপারহিট গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আতিফ আসলাম৷
ছবি: Getty Images/AFP/STRDEL
জাবেদ শেখ
‘জান্নাত’, ‘যুবরাজ, ‘তামাশা’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় হিন্দি চলচ্চিত্রের অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউডে জায়গা করে নিয়েছেন জাবেদ শেখ৷
ছবি: DW/T. Saeed
আলী জাফর
‘তেরে বিন লাদেন’ ছবির মাধ্যমে দর্শকদের নজর কেড়েছিলেন আলী জাফর৷ এরপর বেশ কিছু হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি৷
ছবি: Imago/Hindustan Times/W. Gashroo
রাহাত ফাতেহ আলী খান
‘তুঝে দেখ দেখ সোনা’ রাহাত ফাতেহ আলী খানের অন্যতম জনপ্রিয় গান৷ এরপরও বহু হিন্দি চলচিত্রে অনেক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি শ্রোতাদের৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Dunham
7 ছবি1 | 7
‘সন্ত্রাসের মদতদাতা' পাকিস্তান?
পাশাপাশি ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে সন্ত্রাসের মদতদাতা দেশ হিসেবে পাকিস্তানকে কূটনৈতিক পন্থায় কোণঠাসা করার উদ্যোগ নেয়৷ গোয়ায় অষ্টম ‘ব্রিকস' এবং ‘বিমস্টেক' শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানকারী দেশগুলির সামনে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী দেশ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন৷ কিন্তু চীন ও রাশিয়া বেঁকে বসে৷ তাদের মতে, পাকিস্তানকে এককভাবে এ জন্য দায়ী করা অনুচিত৷ সম্মেলনে ভারত ছাড়াও ছিলেন ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষ নেতারা৷ বিমস্টেক এবং হার্ট অফ এশিয়া সম্মেলনও একই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে ভারত৷ পাশে পায়, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালকে৷ অন্যদিকে ভারতের দিক থেকে পাকিস্তানে সিন্ধু নদের জলপ্রবাহ হ্রাস করার চেষ্টা নিয়েও দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন নতুন বিতর্ক দেখা দেয়৷ পাকিস্তানের তরফে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়৷ বলা হয়, সিন্ধু নদের জলবণ্টন চুক্তি একতরফাভাবে হেরফের করা যাবে না৷
নোট বাতিলের পর ভারতের নাজেহাল অবস্থা
ভারতে ৫০০ আর ১,০০০ টাকার নোট বাতিল হয়েছে৷ কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দেবার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ কাজেই হয়রান ও অধৈর্য হচ্ছেন মানুষ, দানা বাঁধছে রাজনৈতিক প্রতিরোধ৷
ছবি: REUTERS/File Photo/A. Dave
টাকা বাতিলে আতঙ্ক সর্বত্র
৮ই নভেম্বর ২০১৬ তারিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন যে, ৯ই নভেম্বর থেকে পাঁচশ’ ও হাজার টাকার নোট বাতিল করা হচ্ছে৷ পরের বৃহস্পতিবার থেকেই ব্যাংকে ঢুকে টাকা বদল করার জন্য মানুষের ভিড় ও ধস্তাধস্তি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Altaf Qadri
লেডিজ ফার্স্ট
নতুন দিল্লির একটি ব্যাংকে নোট বদলানোর জন্য মহিলাদের আলাদা লাইন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
ব্যাংক কর্মীরাও ব্যতিব্যস্ত
আসামের গুয়াহাটির একটি ব্যাংকে এক ব্যাংক কর্মী নোট তুলে ধরে দেখছেন, তা সাচ্চা কিনা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath
অনন্ত প্রতীক্ষা
রাজধানী নতুন দিল্লির একটি ব্যাংকের সামনে সুদীর্ঘ লাইন৷ ধীরে ধীরে শৃঙ্খলা ফিরে আসছে, যদিও বাড়ছে অসন্তোষ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Das
ভুক্তভোগী
মুম্বইতেও মানুষজন লাইন করে দাঁড়িয়েছেন, টাকা বদলানোর আশায়৷ কিন্তু বয়স্ক মানুষদের জন্য কোনো আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়নি৷ চূড়ান্ত অসুবিধেয় পড়েছেন পেনশনভোগী ও ‘দিন-আনি-দিন-খাই’ সাধারণ মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kakade
প্রতিরোধ দানা বাঁধছে
সোমবার, ২৮শে নভেম্বর ভারত বনধ-এর ডাক দেয় বিরোধীরা৷ দেশ জুড়ে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়৷ ছবিতে বনধের দিনে মুম্বই৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Mukherjee
ধর্মঘটের দিনেও টাকা বদলানোর লাইন
দৃশ্যটা কলকাতার৷ ২৮শে নভেম্বর ১২ ঘণ্টা বনধের ডাক দিয়েছিল বামফ্রন্ট৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যা সমর্থন করেননি৷ জানিয়েছিলেন, জনজীবন স্বাভাবিক থাকবে৷ বস্তুত পশ্চিমবঙ্গে ছিলও তাই৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
‘দিদি’ মাঠে নামলেন
সোমবার আঠাশে নভেম্বর কলকাতার কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা অবধি মিছিল করেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ সেদিন নরেন্দ্র মোদীকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার হুমকিও দেন তিনি৷ মমতা আগামী ৬ই ডিসেম্বর অবধি এক বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
8 ছবি1 | 8
নোট বাতিল: মোদীর রাজনৈতিক ফাঁদ?
তবে নভেম্বর মাসে মোদী সরকারের আচমকা নোট বাতিলের ঘোষণায় গোটা দেশ কেঁপে ওঠে৷ বাতিল করা হয় ৫০০ ও হাজার টাকার নোট৷ দেশের মুদ্রা ব্যবস্থায় এটাকে মোদীর আরেক সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বলে অভিহিত করা হয়৷ ব্যাংকগুলিতে এবং এটিএমে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে পুরোনো নোট জমা দিয়ে নতুন নোট তোলার৷ দীর্ঘ লাইনে ক্লান্ত হয়ে পড়ে মানুষ৷ গরিব ও ছোট ছোট বিক্রেতাদের ওঠে মাথায় হাত৷ চাষীদের হাতে টাকা না থাকায় চাষাবাদ বন্ধ হবার উপক্রম হয়৷ সংসদের ভেতরে ও বাইরে শুরু হয় এই নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে কাজিয়া৷ সংসদে এ জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর জবাবদিহির দাবিতে পণ্ড হয়ে যায় সংসদের গোটা শীতকালীন অধিবেশন৷ সবথেকে আগ্রাসী হয়ে ওঠে তৃণমূল কংগ্রেস৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোকে একজোট করতে পথে নামেন৷ বিভিন্ন রাজ্য সফর করেন এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে প্রতিবাদপত্র দেন তিনি৷ কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীও বিভিন্ন জনসভায় মোদী সরকারকে তুলোধোনা করতে থাকেন৷ শেষ অস্ত্র হিসেবে মোদীর বিরুদ্ধে ঘুস নেবার অভিযোগও তোলা হয়৷ আগামী বছর, অর্থাৎ ২০১৭ সালের প্রথম দিকেই উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবে ভোট৷ তাই মোদীর বিমুদ্রায়ন কতটা জনমুখী, তার প্রতিফলন দেখা যাবে ভোটের ফলাফলেই৷ অবশ্য মোদী সরকারের আশা, এতে কর ফাঁকি, দুর্নীতি, কালো টাকা উদ্ধার এবং সন্ত্রাসীদের অর্থ জোগানের পথ বন্ধ হবে৷
ভারতে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক
বিগত বছরের বিভিন্ন সময়ে ২১ জন বিশ্বনেতা ভারত সফরে আসেন৷ এরমধ্যে ছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ, রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিন, ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে, চীনের প্রসিডেন্ট শি জিনপিং, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেনট জুমা, আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি, মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চি প্রমুখ৷ মূলত ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক সমীকরণের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ছিল এ সব আলোচনার শীর্ষে৷
পরিবর্তন আসেনি সমাজে, জনমানসে
ভারতের দৈনন্দিন সমাজ জীবনে ধর্ষণ ও মহিলাদের শ্লীলতাহানির ধটনায় কমতি ছিল না ২০১৬ সালেও৷ বছরের প্রথমার্ধেই ধর্ষণের সংখ্যাটা ৩৪ হাজারের মতো৷ নির্ভয়া কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি হয় উত্তর প্রদেশের বুলন্দশায়ের শহরে৷ মা ও মেয়েকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ধর্ষণ করা হয় সেখানে৷ এমনকি নিস্তার পাননি ভারতে বেড়াতে আসা বিদেশি পর্যটকরাও৷ শুধুই কি ধর্ষণ? ধর্ষণের পর খুনের ঘটনাও ঘটেছে এ বছর, আকছারই৷
তারপরও ঢেলে সাজছে প্রতিরক্ষা
প্রতিরক্ষা শক্তি আরও মজবুত করতে ফ্রান্সের কাছ থেকে রাফায়েল যুদ্ধ বিমান কেনার জন্য মাল্টি-বিলিয়ান ডলারের চুক্তি সই হয় গত সেপ্টেম্বরে৷ সরাসরি কেনা হচ্ছে ১৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধ বিমান৷ অন্যগুলি ফ্রান্সের সহযোগিতায় তৈরি হবে ভারতেই৷ ডিসেম্বরের শেষে স্বদেশে তৈরি পাঁচ হাজার কিলোমিটার পাল্লার আন্তর্মহাদেশীয় পরমাণু অস্ত্র বহনক্ষম ক্ষেপাণাস্ত্রের পরীক্ষা সফল হয়৷ লক্ষ্য সম্ভবত চীনের থেকে আত্মরক্ষা৷ এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকেও কেনা হচ্ছে সেনা বাহিনীর জন্য বিভিন্ন সমর উপকরণ৷
খেলাধুলার ময়দানে ভারতের সাফল্য
রিও অলিম্পিকে তিনটি পদক পায় ভারত৷ ব্যাডমিন্টনে রুপো জেতেন পি.ভি সিন্ধু, জিমনাস্টিকে দীপা কর্মকার এবং কুস্তিতে সাক্ষী মালিক ব্রোঞ্জ৷ তবে রিও প্যারা-অলিম্পিকসে ভারতের সাফল্য উল্লেখযোগ্য৷ চারটি পদকের মধ্যে দু'টি সোনা জিতেছে ভারত৷
ডিসেম্বর মাসেই প্রয়াত হন তামিলনাড়ুর শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা৷
বন্ধু, এর মধ্যে কোন ঘটনাটি ছিল সবচেয়ে স্মরণীয়? আপনার মতামত জানান নীচের ঘরে৷