ফিলিপাইন্সে দুই জার্মান জিম্মিকে হত্যার হুমকি দিয়েছে ‘আবু সায়াফ’ নামের একটি জঙ্গি সংগঠন৷ সংগঠনটি জানিয়েছে, জার্মানিকে যত শীঘ্র সম্ভব ইরাকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে হবে৷ নইলে জিম্মিদের হত্যা করা হবে৷
বিজ্ঞাপন
গত এপ্রিল মাসে ফিলিপাইন্স থেকে দুই জার্মান নাগরিককে ধরে নিয়ে যায় ‘আবু সায়াফ' নামের ঐ জঙ্গি সংগঠনটি৷ আবু সায়াফ আল-কায়েদার অনুসারী৷ রবিবার আলজেরিয়ায় এক ফরাসি নাগরিককে জিম্মি করে হত্যার হুমকি দেয় সে দেশের ইসলামি জঙ্গি সংগঠন জুন্দ আল-খালিফা৷ আলজেরীয় সংগঠনটি বলেছে, ফ্রান্স ইরাকে ইসলামিক স্টেট (আইএস বা আইসিস)-এর বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধ না করলে ফরাসি ওই জিম্মিকে হত্যা করা হবে৷ প্রায় ছয় মাস আগে জার্মানির এক পুরুষ আর এক নারীকে ধরে নিয়ে যাওয়া আবু সায়াফ (তলোয়ারের কারিগর)-ও বলছে, জার্মানিকে আইএস বিরোধী যুদ্ধে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে হবে, অন্যথায় আটক দুই জার্মানের মৃত্যু অবধারিত৷
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
চরমপন্থি ইসলামি সংগঠন আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে ইরাকে৷ সন্ত্রাসবাদী এ সংগঠনটির সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশেও তৎপরতা রয়েছে৷ দেখুন ইরাকে আইএস-বিরোধী যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
ছবি: Reuters
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
ছবি: Reuters
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: Reuters
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
ছবি: Atta Kanare/AFP/Getty Images
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
ছবি: Reuters
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
ছবি: Getty Images
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
আইএস বা জুন্দ আল-খালিফা (খেলাফতের সৈনিক)-এর মতো আবু সায়াফ অবশ্য জিম্মিদের কোনো ভিডিও চিত্র প্রকাশ করেনি৷ এক টুইটার বার্তায় জিম্মিদের হত্যার হুমকি দিয়েছে তারা৷ জার্মানির প্রতি ইরাকি কুর্দিদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের আহ্বান তাদের নতুন দাবি৷ দুই জার্মানকে জিম্মি করার পর তারা শুধু ৫৬ লাখ ডলারের মুক্তিপণ দাবি করেছিল৷
জার্মান দুই জিম্মিকে আবু সায়াফের হত্যার হুমকি দেয়ার খবরটি জানিয়েছে ‘সাইট' নামের এক ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ৷ সাইট বিশ্বের সব ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের যাবতীয় তৎপরতার দিকে নজর রাখে৷
ফিলিপাইন্সের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জার্মান জিম্মিদের হত্যার হুমকির খবরটি সত্য কিনা – তা তাঁরা খতিয়ে দেখছেন৷ তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, হুমকির খবরটি তাঁরা জানেন, তবে আবু সায়াফ হুমকি অনুযায়ী জিম্মিদের হত্যা করবে বলে তাঁরা বিশ্বাস করেন না৷ নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘সব হুমকিকেই আমরা গুরুত্ব দেই৷ কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি, এই সংগঠনটি (আবু সায়াফ) নিছকই গুন্ডাদের দল, এরা টাকার লোভেই সবকিছু করে৷'' ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার ধারণা, মুক্তিপণ নিয়ে জার্মান সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করার জন্যই জিম্মিদের হত্যার হুমকি দিয়েছে আবু সায়াফ৷