1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফিলিপাইন্সে বন্যা থেকে সুরক্ষার উদ্যোগ

১৩ নভেম্বর ২০১৯

নিয়মিত বন্যার কবলে পড়লে মানুষের পক্ষে টিকে থাকাই কঠিন৷ ফিলিপাইন্সের সরকার ম্যানিলার দরিদ্র মানুষদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিলেও রুজিরুটি নিয়ে তাঁদের মনে আশঙ্কা রয়েছে৷ বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তাঁদের সামনে বিকল্প বড় কম৷

ছবি: Getty Images/J. Aznar

জলোচ্ছ্বাসের বিপদ

ম্যানিলার বন্দর এলাকার বাসেকো পাড়ায় চারিদিকে দারিদ্র্যের ছাপ৷ সমুদ্রের ধারে থামের উপর গায়ে গা লাগানো একগুচ্ছ ঘরবাড়ি চোখে পড়ে৷ সেখানকার মানুষ পানির উপর বসবাস করেন৷ তাঁদের পেশাও পানির উপর নির্ভরশীল৷ ঘূর্ণিঝড়ের ফলে দৈত্যাকার ঢেউয়ের কারণে পানি তাঁদের আতঙ্কের কারণ হয়ে ওঠে৷

১৫ বছর আগে লাভলি সুয়ারেস কাজের খোঁজে সেখানে এসেছিলেন৷ তারপর পাকাপাকিভাবে সেখানেই থেকে গেলেন৷ তিনি জাহাজের নাবিকদের কাছে ফল বিক্রি করেন৷ ঝড়ে ও বন্যার কারণে তিন-তিনবার তাঁর ঝুপড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে৷ প্রথমবার পালানোর আগে তিনি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিলেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লাভলি বলেন, ‘‘যখন দেখলাম পানি উঠে এসে মেঝে ডুবিয়ে দিচ্ছে, আমি তখন আমার সন্তানদের হাত ধরে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলাম৷ জামাকাপড়সহ সবকিছু পেছনে পড়ে রইলো৷ শুধু সন্তানদের সঙ্গে নিলাম৷ আমার দ্বিতীয় সন্তান তখন খুবই ছোট৷ বেরিয়ে যেতেই স্রোতের টানে আমাদের বাসা ভেসে গেল৷’’

ম্যানিলার ভাসমান বাড়ি

05:37

This browser does not support the video element.

পুনর্বাসনের পরিণতি

২১টি পরিবার এই ফ্ল্যাটবাড়িতে বাসা বেঁধেছে৷ লাভলি সুয়ারেসের মতো তাঁরা সবাই তিন বছর আগে ঝুপড়িতে বসবাস করতেন৷ রাষ্ট্রীয় ভরতুকির ভিত্তিতে মারাত্মক বন্যার হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে নতুন আবাসন নির্মাণ করা হয়েছে৷

ফিলোমেনা সিংকোর ডাকনাম কা মেনা৷ তিনি ২১ বর্গমিটারের বন্যারোধী ফ্ল্যাটে বসবাস করেন৷ তাঁর পুরানো বাসার আয়তন ছিল মাত্র ৪ বর্গমিটার৷ এখানে এসে তাঁর জীবন বদলে গেছে৷ ফিলোমেনা বলেন, ‘‘এখানে বসবাস করতে পেরে নিজেকে বাসার মালিক মনে হয়, সেটাই হলো পার্থক্য৷ ভদ্রভাবে থাকতে পেরে মানবিক মর্যাদা ফিরে পেয়েছি৷’’

পাশের বাসায় মানুষ এখনো এমনভাবে বসবাস করে, কা মেনা আগে যেভাবে থাকতেন৷ কাছেই এক নিকাশি খাল রয়েছে৷ জঞ্জাল ভরে গেলে সেটি উপচে পড়ে৷ কখনো বছরে বেশ কয়েকবার এমন পরিস্থিতি দেখা যায়৷

নতুন আবাসনেও বিপদের আশঙ্কা

কা মেনা-র ভবনের বাসিন্দারা নিজস্ব আয়ের একটা অংশ দিয়ে ফ্ল্যাটের মূল্যের কিছু অংশ পরিশোধ করে চলেছেন৷ নিকাশি খাল যাতে বুজে না যায়, তা নিশ্চিত করতে তাঁরা প্রতি সপ্তাহে উদ্যোগ নেন৷ ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি আজও তাঁর মনে থেকে গেছে৷ ফিলোমেনা সিংকো বলেন, ‘‘সে সময়ে আমাদের অন্যতম দুশ্চিন্তা ছিল, বন্যা হলে আমাদের বাড়ির কোনো তল ভেঙে পড়লে কী হবে৷ এমন সময়ে মনে একেবারেই শান্তি থাকে না৷’’

ম্যানিলার প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ অস্থায়ী বসতিতে বসবাস করেন৷ ক্রান্তিমণ্ডলীয় ঝড়ের জের ধরে পানির উচ্চতা বাড়লে তাদেরই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়তে হয়৷

ঝড়ের ধাক্কা সামলানোর উদ্যোগ

প্রবল বৃষ্টির ফলেও বন্যা হতে পারে৷ বিশ্বব্যাংকের সাহায্য নিয়ে ম্যানিলা শহর কর্তৃপক্ষ পাম্পিং স্টেশনগুলির আধুনিকীকরণের মাধ্যমে ঝড়ের কুপ্রভাব কমানোর চেষ্টা করছে৷ বিশ্বব্যাংকের উপদেষ্টা রোনাল্ড মুয়ানিয়া বলেন, ‘‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে এখানে বিশাল এক পুকুর দেখতে পাচ্ছেন৷ অর্থাৎ সব দিক থেকে আসা বন্যার পানি এখানে জমা হয়৷ এখানে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে জঞ্জাল আলাদা করা হয়, যাতে পাম্পের পথ আটকে না যায়৷ তাছাড়া ভেতরে বড় পাম্পের মাধ্যমে পুকুরের পানি নদীর দিকে চালনা করা হয়, যা এই ভবনের পেছনে রয়েছে৷’’

ফিলিপাইন্সের সরকার ও বিশ্বব্যাংকের বন্যা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনার আওতায় এমন সব নিকাশি এলাকা স্থির করা হয়েছে৷ রোনাল্ড মুয়ানিয়া উপদেষ্টা হিসেবে সেখানে সক্রিয় রয়েছেন৷ রোনাল্ড মুয়ানিয়া বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তন ম্যানিলা মেট্রো এলাকার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিয়েছে৷ ১৮০০ সালেও এই এলাকা বন্যাপ্রবণ ছিল৷ কিন্তু সে সময়ে জনসংখ্যা ছিল অত্যন্ত কম৷ এখন মেট্রো ম্যানিলার বিশাল জনসংখ্যার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রবল বৃষ্টিপাতের হার বাড়িয়ে তুলেছে৷ ফলে আরও বেশি মানুষ বন্যার ঝুঁকির বিপদের মুখে পড়ছে৷’’

যে সব বাসিন্দা পানির কাছাকাছি থাকেন, না জেনেই তাঁরা এই সমস্যাকে আরও কঠিন করে তোলেন৷ তাঁদের অস্থায়ী বসতি ও বর্জ্যের ফলে বন্যার পানির ঠিকমতো নিকাশ হয় না৷

রুজিরুটির চাপ

সে কারণে সরকার এখন লাভলি সুয়ারেস ও অন্যান্যদের ভিন্ন এলাকায় পুনর্বাসন চাইছে৷ কিন্তু এমন স্থানান্তরের ঝুঁকি সম্পর্কে তিনি চিন্তিত৷ লাভলি সুয়ারেস বলেন, ‘‘ওরা আমাদের এখান থেকে সরাতে চাইলে আমরা চলে যেতে প্রস্তুত৷ কারণ আমরা জানি এটা বিপজ্জনক এলাকা৷ তবে আমরা চাই, বাজেট থাকলে যেন কাছাকাছি কোথাও থাকা যায়৷ আমরা এখানেই থাকতে চাই৷ এমন কোনো জায়গায় যেতে চাই না, যেখানে আমরা বেকার ও অভুক্ত থাকবো৷''

লাভলি সুয়ারেস ও তাঁর প্রতিবেশীরা এখনো মনে ভয় নিয়ে বসবাস করছেন৷ শুধু আশেপাশের পানির ধ্বংসাত্মক শক্তির কারণে নয়, এমন কোনো জায়গায় চলে যেতে হবে বলে তাঁদের আশঙ্কা রয়েছে, যেখানে বেঁচে থাকা আরও কঠিন হবে৷

গ্যোনা কেটেল্স/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ