মানহানি মামলায় অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম .ব্যাপলারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক মারিয়া রেসা এক মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন৷ এই রায়কে দেশটির সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর ‘বড় আঘাত’ বলে মনে করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
এক ব্যবসায়ীর করা এই মানহানির মামলার রায় হয় সোমবার৷ রায়ে বলা হয়, ‘‘বাক স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার অধিকার কখনো দায়বদ্ধতার উর্ধে যেতে পারে না এবং যাওয়া উচিত নয়৷’’
রেসার সহকর্মী রে সান্তোস জুনিয়র ২০১২ সালে সাবেক এক প্রধান বিচারপতি ও এক ব্যবসায়ীর মধ্যকার ‘গভীর সম্পর্ক’ নিয়ে প্রতিবেদন করেন৷ ঐ প্রতিবেদনে উইলফ্রেডো কেং নামের সেই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার ইঙ্গিত দেয়া হয়৷ ২০১৭ সালে রেসা ও সান্তোসের বিরুদ্ধে মামলা করেন কেং৷ যেই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন করা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি৷
রায়ে বলা হয়, ‘‘যেহেতু এই আদালতের লক্ষ্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা, তাই শুধু রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বাক ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাই শুধু নয়, সমানভাবে কেংয়ের মতো প্রত্যেক নাগরিকের স্বার্থ রক্ষাও এর দায়িত্ব৷’’
‘ভয়ঙ্কর ঘটনা’
তবে রেসার .ব্যাপলারের সহকর্মীরা দাবি করেছেন যে, এই রায় ন্যায়ের বিপক্ষে গেছে৷
একটি আনুষ্ঠানিক বার্তায় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘‘এই সিদ্ধান্তে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়নি, বরং আইনের শাসনকে কোনো কোনো ব্যক্তি ও রাজনৈতিক অভিসন্ধির স্বার্থে ভিন্নধারায় প্রবাহিত করা হয়েছে৷ আজকের রায় শুধু সাংবাদিকদের জন্য নয়, অনলাইনে থাকা প্রত্যেক মানুষের জন্য একটা ভয়ংকর উদাহরণ হয়ে থাকল৷’’
রেসা ও সান্তোস জুনিয়রের ছয় বছর পর্যন্ত সাজার ঘোষণা হয়েছে৷ তবে তারা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারবেন৷ ততদিন পর্যন্ত তাদের সাজা খাটতে হবে না৷
শুনানির আগে প্রেসিডেন্ট দুতের্তের নানা সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনাকারী .ব্যাপলারের প্রধান রেসা বলেছিলেন, এই রায় শুধু ফিলিপাইন্স নয়, পুরো বিশ্বের সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য হুমকি৷ ২০১৮ সালে রেসা টাইম ম্যাগাজিনের পারসন্স অফ দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন৷
জেডএ/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
গত শুক্রবারের ছবিঘরটি দেখুন...
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রতিবাদে উত্তাল ফিলিপাইন্স
নতুন সন্ত্রাসবিরোধী বিলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে রাজধানী ম্যানিলাসহ ফিলিপাইন্সের বেশ কয়েকটি শহরে৷ করোনা মহামারির মধ্যেই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার আন্দোলনকারী৷ কী আছে এই বিলে?
ছবি: Reuters/E. Lopez
নতুন আইন
২০০৭ সালের হিউম্যান সিকিউরিটি অ্যাক্টের উন্নত সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে ২০২০ সালের অ্যান্টি টেররিজম বিলটিকে৷ ফিলিপাইন্সের সেনাবাহিনী বলছে, পুরোনো আইনের অধীনে আধুনিক যুগের সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়েছে৷ ফলে অনলাইনে নতুন সদস্য রিক্রুটমেন্ট ও সন্ত্রাসী পরিকল্পনার মতো অপরাধকে এর আওতায় আনা যাচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/E. Acayan
কী আছে নতুন আইনে?
নতুন আইনে নিরাপত্তা বাহিনী কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে৷ কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের না করে বা আদালতে হাজির না করে দীর্ঘসময় হেফাজতে রাখতে পারবে, এমনকি ৯০ দিন নজরদারিও চালাতে পারবে৷ এছাড়া এই আইনে একটি সন্ত্রাসবাদবিরোধী কাউন্সিল গঠনের কথাও বলা হয়েছে৷ এই কাউন্সিলই সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করবে৷
ছবি: Getty Images/E. Acayan
বিতর্ক কেন?
প্রস্তাবিত আইনটিতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে ব্যাপক ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ করছেন বিরোধীরা৷ তাদের দাবি, এর ফলে সরকারের বিরোধিতা করলেই হেনস্থার সুযোগ তৈরি হবে৷ আইনটির বিভিন্ন ধারায় মত প্রকাশের অধিকারও ক্ষুণ্ণ হবে বলে অভিযোগ তাদের৷
ছবি: Getty Images/E. Acayan
পক্ষের কথা
বিলটির সমর্থকেরা বলছেন, মত প্রকাশের অধিকার রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ধারা রাখা হয়েছে আইনটিতে৷ দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব ডেলফিন লরেঞ্জানা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘যারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করবে, তারা সন্ত্রাসী নয়৷ আমাদের সংবিধানই শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করে৷’’
ছবি: Getty Images/E. Acayan
বিপক্ষের মন্তব্য
দেশটির মানবাধিকারকর্মীরা অবশ্য আইনটি মানতে নারাজ৷ তাদের দাবি, প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের প্রশাসনের বিরুদ্ধে এমনিতেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে৷ এমনকি আন্তর্জাতিক মহলও প্রায়ই এ নিয়ে সমালোচনা করেছে৷ এই আইনের ফলে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের সুযোগ আরো বাড়বে বলে দাবি তাদের৷
ছবি: Getty Images/E. Acayan
মুসলিমবিদ্বেষ বাড়ার শঙ্কা
দক্ষিণের মিন্দানাও প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কর্মকাণ্ড সবচেয়ে বেশি৷ প্রদেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদেরও বাস৷ প্রদেশের আইনপ্রণেতারাও মনে করছেন, নতুন আইন পাস হলে তা সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্যের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে৷
ছবি: Getty Images/E. Acayan
বিক্ষোভ-আন্দোলন
বিলটিতে শিগগিরই সই করার কথা প্রেসিডেন্ট দুতার্তের৷ এরপরই আইনে পরিণত হবে সেটি৷ তবে এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ারও সুযোগ থাকছে৷ কিন্তু আইন পাসের আগেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছেন বিরোধীরা৷ করোনা সংক্রমণের মধ্যেও রাজধানী ম্যানিলায় জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ৷
ছবি: Getty Images/A. Ayacan
স্বাধীনতা দিবস
শুক্রবার স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের আয়োজনেই বিক্ষোভের ডাক দেন বিরোধীরা৷ দেশটির আইনে সমকামীদের অধিকার স্বীকৃত হলেও সরকারের বিরুদ্ধে নানা সময়েই অভিযোগ উঠেছে সমকামী অধিকারকর্মীদের হেনস্তা করার৷ নতুন আইনে তাদেরও হয়রানির সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে৷
ছবি: Reuters/E. Lopez
হংকংয়ের চেয়েও জটিল পরিস্থিতি
অধিকারকর্মীরা বলছেন, হংকং নিয়ে চীনের পাস করা নতুন আইনের চেয়েও বেশি ‘নির্যাতনমূলক’ হতে পারে ফিলিপাইন্সের এই আইন৷
ছবি: Reuters/E. Lopez
মহামারিতে বিক্ষোভ
বিক্ষোভের ঘোষণার পর ম্যানিলা পুলিশ ঘোষণা দেয় সামাজিক দূরত্ব না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার৷ তাই বলে বিক্ষোভ বন্ধ রাখেননি আন্দোলনকারীরা৷ বরং মাস্ক পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজেদের মধ্যে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা রেখে মিছিল বের করেছেন তারা৷
ছবি: Getty Images/E. Acayan
পোষা কুকুরও সঙ্গী
ছবিতে এক আন্দোলনকারী তার প্রিয় পোষা কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভে এসেছেন৷ কুকুরের গায়েও ঝুলছে প্ল্যাকার্ড, দাবি জানানো হয়েছে বিতর্কিত বিল বাতিলের৷
ছবি: Getty Images/E. Acayan
আন্দোলনে সৃষ্টিশীলতা
প্রেসিডেন্ট দুতার্তের বিরুদ্ধে মাদকবিরোধী অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের৷ এই অভিযানে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন বলে ধারণা বিভিন্ন অধিকার গ্রুপের৷ এছাড়া বিরোধীমত দমনেও দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ ছবিতে এক আন্দোলনকারীকে মরদেহের ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে৷ তার পাশের কাগজে লেখা, ‘‘দুতার্তেকে উচ্ছেদ করো৷’’