ফিলিস্তিনের পুনর্গঠন এবং উন্নয়নের জন্য প্রতি বছর ৭৫ লাখ ডলারের অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছিল অস্ট্রেলিয়া৷ কিন্তু সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, ফিলিস্তিনকে আর সেই অর্থ সরাসরি দেয়া হবে না৷
বিজ্ঞাপন
গত মার্চেই আইন পাশ করে ফিলিস্তিনকে কিছু আর্থিক সহায়তা দেয়া বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার৷ যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ওই অর্থ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে যারা নিহত বা কারাবন্দি হয়েছেন, তাদের পরিবারের পেছনে ব্যয় করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ৷ ফিলিস্তিনও তা অস্বীকার করেনি৷ বরং তারা বলেছে, নিরীহ মানুষদের পাশে দাঁড়ানো তাদের দায়িত্ব৷ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইতিমধ্যে কিছু অর্থ সহায়তা বন্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা করেছেন৷
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আরো জানিয়েছে, ইসরায়েলে কারাবন্দি ফিলিস্তিনিদের জন্য ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে যে আর্থিক সহায়তা দেয়া হতো, তা বন্ধ করার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে৷
ঠিক এই পরিস্থিতিতেই অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ দিয়েছেন একই রকমের ঘোষণা৷ সোমবার তিনি জানান, তাঁর দেশ মনে করে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সহিংসতায় অংশ নিচ্ছে এমন মানুষদের জন্য আর্থিক সহায়তার অর্থ ব্যয় করছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ৷ গত ২৯ মে এ বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দাবি করে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছিলেন বলেও জানান তিনি৷ তারপরই এই সিদ্ধান্ত – অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে আর সরাসরি কোনো আর্থিক সহায়তা দেবে না৷
ফিলিস্তিনের পাথর ছোঁড়া তরুণেরা
জেরুসালেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইসরায়েলি সেনাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে প্রতিবাদ জানায় ফিলিস্তিনি তরুণরা৷ নাম প্রকাশ না করে তাঁরা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন৷
ছবি: REUTERS
সম্বল গুলতি
গাজা শহরের পূর্বে ইসরায়েল সীমান্তের কাছে গুলতি হাতে এক ফিলিস্তিনিকে দেখা যাচ্ছে৷ তিনি বলছেন, ‘‘জেরুসালেম নিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন রুখতে আমি যা করতে পারি তা হচ্ছে এই গুলতি দিয়ে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ইসরায়েলি সেনাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারতে৷ আমি স্বপ্ন দেখি যে, আমাদের পবিত্র ভূমি ফিরে পাওয়ার যুদ্ধে সব আরব ও মুসলিম এক হয়েছে৷’’
ছবি: REUTERS
জেরুসালেম যেন শরীরেরই অংশ
এই বিক্ষোভকারী তরুণের বক্তব্য, ‘‘আমরা ট্রাম্পকে বলতে চাই যে, জেরুসালেম আমাদের শরীরের অংশ, যা ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না৷ আমরা জেরুসালেমকে ভালোবাসি এবং একে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে রক্ষার জন্য সবকিছু, এমনকি আমাদের প্রাণও উৎসর্গ করে পারি৷ বিশ্ব যদি সদয় হয়ে থাকে, তাহলে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের কারণে আমাদের জন্য যে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা শেষ করার উদ্যোগ নেয়া উচিত৷’’
ছবি: REUTERS
‘‘গুলতি হাতে মানুষ’’
এই নামেই পরিচিত ছবির এই তরুণ৷ তাঁর কথা, ‘‘আমি কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত নই৷ আমার সংশ্লিষ্টতা জেরুসালেমের সঙ্গে৷ আমি একটা বিষয় জানি, যারা আমাকে গাজায় অবরুদ্ধ করে রেখেছে, যারা আমাকে গাজার বাইরে গিয়ে আমার স্বপ্ন পূরণের পথে দাঁড়িয়ে আছে, তারা ঐ বেড়ার পেছনে রয়েছে, তারা হচ্ছে ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী৷’’
ছবি: REUTERS
ইহুদিদের বিরুদ্ধ লড়াই
মুখে মাস্ক পরা এই ফিলিস্তিনি তরুণ বলছেন, ‘‘বিশ্বের অবশ্যই বোঝা উচিত যে, বেকারত্ব আমাদের যোদ্ধা হওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ আমরা হামাস কিংবা ফাতাহর বিরুদ্ধে লড়বো না, আমরা শুধু ইহুদিদের বিরুদ্ধে লড়বো৷ হামাস আর ফাতাহর মধ্যে বিভাজনের সমাপ্তি ও আরও বিদ্যুতের দাবিতে ডাকা সমাবেশে আমরা অংশ নিয়েছি৷ কিন্তু আমরা হামাস কিংবা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দিকে পাথর ছুড়তে রাস্তায় নামবো না৷’’
ছবি: REUTERS
বঞ্চনার শিকার
‘‘একজন তরুণ হিসেবে আমি একটি সম্মানজনক জীবন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি৷ আমার এই অবস্থার জন্য যেটা দায়ী সেই ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমি বিদ্রোহ করতে পারি৷ অ্যামেরিকার সহায়তা নিয়ে দখলদাররা আমাদের মাতৃভূমিকে অবরোধ করে রেখেছে৷’’
ছবি: REUTERS
স্বপ্নের কথা
‘‘আমি আশা করছি, আমি আমার স্বপ্ন নিয়ে বাঁচবো৷ আমি সবসময় চাকরি আর চলাফেরার স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছি৷’’
ছবি: REUTERS
দুর্ভোগের প্রতিবাদ
আহত বন্ধুর শরীরের রক্ত আবু জাবেরের হাতে লেগে রয়েছে৷ সে বলছে, ‘‘জেরুসালেম নিয়ে ট্রাম্প যে উন্মাদের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার প্রতিবাদ জানাই আমরা৷ ইসরায়েলের অবরোধের কারণে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছি৷ আমার হাতে যে রক্ত দেখছেন তা আরব ও মুসলিম বিশ্বকে ইসরায়েল ও অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উৎসাহ দেবে বলে আমি আশা করি৷’’
ছবি: REUTERS
অন্য উপায় নেই
‘‘আমরা ক্ষুধার্ত৷ ঘরে আমাদের বিদ্যুৎ নেই, আমাদের বাবাদের চাকরি নেই৷ এই পরিস্থিতি প্রতিবাদ ছাড়া আর কিছু আনতে পারে না৷’’
ছবি: REUTERS
অবরোধের প্রতিবাদ
‘‘গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছি আমরা৷ অবরোধের কারণে আমাদের আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে৷ আশা করছি, শিগগিরই অবরোধ তুলে নেয়া হবে৷’’
ছবি: REUTERS
শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভ
‘‘ইসরায়েল ও আমাদের মধ্যে অনেকদিন ধরে যুদ্ধ চলছে৷ আমাদের ভূমিতে একজন ইসরায়েলি দখলদারি থাকা পর্যন্ত আমরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাব৷ ট্রাম্প বা অন্য কেউ আমাদের ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না৷’’
ছবি: REUTERS
10 ছবি1 | 10
তবে ফিলিস্তিনের দিক থেকে সহায়তার হাত কিন্তু একেবারে সরিয়ে নিচ্ছে না অস্ট্রেলিয়া৷ জুলি বিশপ জানিয়েছেন, এখন থেকে জাতিসংঘের মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে সহায়তা করবে তাঁর দেশ৷ অর্থাৎ আগের মতোই বছরে ফিলিস্তিনকে ৭৫ লাখ ডলারই দেয়া হবে, কিন্তু পুরো অর্থ পাঠিয়ে দেয়া হবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা তহবিলে৷ অস্ট্রেলিয়া মনে করছে, জাতিসংঘের মাধ্যমে যখন এই অর্থ ব্যয় হবে, তখন আর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতায় অংশগ্রহণকারীরা এর সুবিধা ভোগ করবে না৷ এ বিষয়ে অস্ট্রেলীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য খুব স্পষ্ট, ‘‘আমি নিশ্চিত যে, অতীতে বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে দেয়া অস্ট্রেলিয়ার আর্থিক সহায়তা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ উদ্দেশ্যমূলকভাবে খরচ করেছে৷'' তিনি মনে করেন, ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতায় অংশ নেয়া লোকদের প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগ্যানাইজেশন যে রকমের সহায়তাই দিক, তা অস্ট্রেলিয়ার মূল্যবোধের পরিপন্থি৷''