ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলো স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড
২৯ মে ২০২৪
এই ঘোষণার সময়ে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী এ কথাও জানিয়ে দেন যে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে এমন নয় যে এটা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়৷ গত বছর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় যে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল, তা নিয়ন্ত্রণে আনতে ও আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলকে চাপে রাখতে এমন পদক্ষেপ এই তিন পশ্চিমা রাষ্ট্রের৷
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘ এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের একটা লক্ষ্য, তা হলো ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের শান্তি অর্জনে সাহায্য করা৷''
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) বলেন, সানচেস সরকার ‘ইহুদিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের উসকানি দিচ্ছে৷'
সংসদে এই সিদ্ধান্ত পাস হবার পর আইরিশ প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেন, ‘‘আমি আশা করি যে এতে ফিলিস্তিনের মানুষ আশার বার্তা পাবে, তাদের এই অন্ধকার সময়েও, যে আয়ারল্যান্ড তাদের পাশে আছে৷''
নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এসপেন বার্থ এইড একটি বিবৃতিতে বলেন, ‘‘৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পক্ষে সবচেয়ে দৃঢ়ভাবে দাবি জানিয়ে আসছে নরওয়ে৷ আজ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি দুই দেশের সম্পর্কে একটি মাইলস্টোন৷''
ইসরায়েলের স্বাধীনতা ও ফিলিস্তিনিদের জন্মভূমি হারানোর ৭৬ বছর
১৫ মে বুধবার বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিনিরা তাদের জন্মভূমি হারানোর ৭৬তম বার্ষিকী পালন করছে৷ একদিন আগে ১৪ মে স্বাধীনতা দিবস পালন করেছেন ইসরায়েলিরা৷
ছবি: ELDAN DAVID/EPA/dpa/picture-alliance
ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণা
নাৎসি জার্মানিতে হলোকস্টের অভিজ্ঞতার পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘ইউনাইটেড নেশন্সস পার্টিশন প্ল্যান ফর প্যালেস্টাইন’ গৃহীত হয়৷ আরব লিগ এটি প্রত্যাখ্যান করলেও ‘জুইশ এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন’ এটি গ্রহণ করে৷ এরপর ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়৷ প্রতিবছর এই দিনে ইসরায়েলে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়৷
ছবি: Debbie Hill/UPI Photo/IMAGO
যুদ্ধের শুরু
ইসরায়েলি রাষ্ট্রের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় একদিন পর ১৫ মে পাঁচটি আরব রাষ্ট্র যুদ্ধ ঘোষণা করে৷ তবে ১৯৪৯ সালে ইসরায়েলের কাছে তারা পরাজিত হয়৷
ছবি: CPA Media Co. Ltd/picture alliance
নাকবা দিবস
১৯৯৮ সালে ফিলিস্তিনের তৎকালীন নেতা ইয়াসির আরাফাত ১৫ মে নাকবা দিবসের প্রচলন করেন৷ আরবি ‘নাকবা’ শব্দের অর্থ বিপর্যয়৷ আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের পর জন্মভূমি হারানো ফিলিস্তিনিদের বোঝাতে নাকবা শব্দটি ব্যবহার করা হয়৷ ধারনা করা হয়, বর্তমানে যেখানে ইসরায়েল, সেখান থেকে প্রায় সাত লাখ মানুষ পালিয়ে গিয়েছিলেন বা তারা ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন৷
ছবি: Eldan David/Pressebüro der Regierung Israels/picture alliance /dpa
নিয়মিত বিক্ষোভ
অনেকদিন ধরেই ফিলিস্তিনিরা নাকবা দিবসে বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছে৷ তারা ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে, আগের ঘরের চাবি নিয়ে কিংবা চাবির প্রতীক আঁকা ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ করেন৷ এর মাধ্যমে কোনো একদিন ঘরে ফেরার আশার কথা তুলে ধরেন ফিলিস্তিনিরা৷
ছবি: Nasser Nasser/AP Photo/picture alliance
রাষ্ট্রহীন
যুদ্ধ শেষে বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রহীন শরণার্থী হিসেবে গাজা, দখলকৃত পশ্চিম তীর ও পাশের আরব দেশগুলোতে চলে গিয়েছিলেন৷ এখন পর্যন্ত পরবর্তী প্রজন্মের ফিলিস্তিনিদের খুব ছোট একটি অংশ অন্য দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন বা পেয়েছেন৷ ফলে মধ্যপ্রাচ্যের ৬২ লাখ ফিলিস্তিনির একটি বড় অংশ এখনও রাষ্ট্রহীন অবস্থায় আছেন৷
ছবি: ANWAR AMRO/AFP/Getty Images
অধিকার
১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজোলিউশন ১৯৪, ১৯৭৪ সালের জাতিসংঘের রেজোলিউশন ৩২৩৬ এবং ১৯৫১ সালের কনভেনশন অন দ্য স্ট্যাটাস অফ রিফিউজিস অনুসারে ফিলিস্তিনি শরণার্থী হিসাবে বিবেচিত ফিলিস্তিনিদের ‘ফেরার অধিকার’ রয়েছে৷ ইসরায়েল অবশ্য ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘ফেরার অধিকার’ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এটি ইহুদি রাষ্ট্র হিসাবে ইসরায়েলের পরিচয়ের অবসান ঘটাবে৷
ছবি: CPA Media/picture alliance
অস্বীকার
ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতির দায় অস্বীকার করে বলেছে ১৯৪৮ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত প্রায় আট লাখ ইহুদিকে মরক্কো, ইরাক, মিশর, টিউনিশিয়া এবং ইয়েমেনের মতো আরব দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল বা পালিয়ে যেতে হয়েছিল৷
ছবি: ELDAN DAVID/EPA/dpa/picture-alliance
7 ছবি1 | 7
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে আরো যেসব রাষ্ট্র
জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ফিলিস্তিনকে আগেই রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়৷
স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট গ্লব সোমবার বলেন, তাদের সরকার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত তারা বৃহস্পতিবার নেবে৷ তার আগে দেশটির সংসদে আলোচিত হবে বিষয়টি৷
ফিনল্যান্ডের সরকারি সম্প্রচার সংস্থা ওয়াইএলই মঙ্গলবার সে দেশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবকে উদ্ধৃত করে বলে নরওয়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবার বিষয়টি ‘ভবিষ্যতে বিবেচিত হবে৷'
ইসরায়েলের অস্তিত্ব মেনে নিয়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবার ধারণাকে সমর্থন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য৷ কিন্তু তার নিষ্পত্তি আলোচনার মাধ্যমেই হওয়া উচিত বলে মনে করে এই রাষ্ট্র দুটি৷ নেতানিয়াহুর মতে, সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেই এই সংঘাতের সমাধান সম্ভব৷
মঙ্গলবারের বক্তব্যে সানচেস বলেন যে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবার এই সিদ্ধান্ত ‘কারো বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তো কোনোমতেই নয়৷ কারণ, তারা বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষ, যাদের আমরা সম্মান করি, প্রশংসা করি, যাদের সাথে সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই৷''
এসএস/এসিবি (এপি, রয়টার্স)
তিন ইউরোপীয় দেশের স্বীকৃতির খবরে আশাবাদী ফিলিস্তিনিরা