ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড ও স্পেন
২২ মে ২০২৪
নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ইয়োনাস গার স্টোরে বুধবার বলেছেন, তার দেশ ২৮ মে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে৷ স্পেন ও আয়ারল্যান্ডও একই ঘোষণা দিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
স্পেন ২৮ মে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে বলে বুধবার সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেস৷
আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে বলে জানান৷
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী স্টোরে বলেন, ‘‘চলমান যুদ্ধের মধ্যে আমাদের অবশ্যই একটি বিষয় টিকিয়ে রাখতে হবে, যেটা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের নিরাপদ আবাস দিতে পারে: দুটি রাষ্ট্র, যেখানে মানুষ একে অপরের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে৷’’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য স্লোভেনিয়া ও মাল্টাও সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার আভাস দিয়েছে৷ তাদের বক্তব্য, ঐ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তির জন্য দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান প্রয়োজন৷
প্রতিক্রিয়া
ঐ তিন দেশের ঘোষণার সমালোচনা করে ইসরায়েল ঐসব দেশ থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের সরিয়ে নিয়েছে৷ ইসরায়েল বলছে, এভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে ‘আরও সন্ত্রাসবাদ ও অস্থিরতা’ বাড়বে৷ একে ‘সন্ত্রাসবাদের পুরস্কার’ বলেও মন্তব্য করেছে ইসরায়েল৷ এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের একজন প্রসিকিউটার বলেছেন, তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ও হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইবেন৷
এদিকে, ইউরোপের তিনটি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে বলে ঘোষণা দেওয়ায় লেবাননের বৈরুতে শরণার্থী শিবিরে বাস করা ফিলিস্তিনিরা আনন্দ প্রকাশ করেছেন৷ ‘‘আমরা আশা করছি, পুরো বিশ্ব ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে, আর আমরা এই ঘোষণা শুনে খুশি... দারুণ অনুভূতি,’’ বলে জানান ২৬ বছর বয়সি আলা গোজলান৷
ফ্রান্স বলেছে, স্বীকৃতি দেওয়ার এটি সঠিক সময় নয়৷
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন পিএলও এই ঘোষণাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে আখ্যায়িত করেছে৷ হামাস একে ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছে৷ ফিলিস্তিনিদের ‘সাহসী প্রতিরোধের’ কারণে এটি সম্ভব হয়েছে বলেও মনে করছে হামাস৷
নরওয়ের ঘোষণার আগে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৩টি রাষ্ট্র স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছিল৷
সুইডেন প্রায় এক দশক আগে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়৷ ফ্রান্স এখনও এমনটি করার পরিকল্পনা করছে না৷
ইসরায়েলের স্বাধীনতা ও ফিলিস্তিনিদের জন্মভূমি হারানোর ৭৬ বছর
১৫ মে বুধবার বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিনিরা তাদের জন্মভূমি হারানোর ৭৬তম বার্ষিকী পালন করছে৷ একদিন আগে ১৪ মে স্বাধীনতা দিবস পালন করেছেন ইসরায়েলিরা৷
ছবি: ELDAN DAVID/EPA/dpa/picture-alliance
ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণা
নাৎসি জার্মানিতে হলোকস্টের অভিজ্ঞতার পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘ইউনাইটেড নেশন্সস পার্টিশন প্ল্যান ফর প্যালেস্টাইন’ গৃহীত হয়৷ আরব লিগ এটি প্রত্যাখ্যান করলেও ‘জুইশ এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন’ এটি গ্রহণ করে৷ এরপর ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়৷ প্রতিবছর এই দিনে ইসরায়েলে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়৷
ছবি: Debbie Hill/UPI Photo/IMAGO
যুদ্ধের শুরু
ইসরায়েলি রাষ্ট্রের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় একদিন পর ১৫ মে পাঁচটি আরব রাষ্ট্র যুদ্ধ ঘোষণা করে৷ তবে ১৯৪৯ সালে ইসরায়েলের কাছে তারা পরাজিত হয়৷
ছবি: CPA Media Co. Ltd/picture alliance
নাকবা দিবস
১৯৯৮ সালে ফিলিস্তিনের তৎকালীন নেতা ইয়াসির আরাফাত ১৫ মে নাকবা দিবসের প্রচলন করেন৷ আরবি ‘নাকবা’ শব্দের অর্থ বিপর্যয়৷ আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের পর জন্মভূমি হারানো ফিলিস্তিনিদের বোঝাতে নাকবা শব্দটি ব্যবহার করা হয়৷ ধারনা করা হয়, বর্তমানে যেখানে ইসরায়েল, সেখান থেকে প্রায় সাত লাখ মানুষ পালিয়ে গিয়েছিলেন বা তারা ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন৷
ছবি: Eldan David/Pressebüro der Regierung Israels/picture alliance /dpa
নিয়মিত বিক্ষোভ
অনেকদিন ধরেই ফিলিস্তিনিরা নাকবা দিবসে বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছে৷ তারা ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে, আগের ঘরের চাবি নিয়ে কিংবা চাবির প্রতীক আঁকা ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ করেন৷ এর মাধ্যমে কোনো একদিন ঘরে ফেরার আশার কথা তুলে ধরেন ফিলিস্তিনিরা৷
ছবি: Nasser Nasser/AP Photo/picture alliance
রাষ্ট্রহীন
যুদ্ধ শেষে বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রহীন শরণার্থী হিসেবে গাজা, দখলকৃত পশ্চিম তীর ও পাশের আরব দেশগুলোতে চলে গিয়েছিলেন৷ এখন পর্যন্ত পরবর্তী প্রজন্মের ফিলিস্তিনিদের খুব ছোট একটি অংশ অন্য দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন বা পেয়েছেন৷ ফলে মধ্যপ্রাচ্যের ৬২ লাখ ফিলিস্তিনির একটি বড় অংশ এখনও রাষ্ট্রহীন অবস্থায় আছেন৷
ছবি: ANWAR AMRO/AFP/Getty Images
অধিকার
১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজোলিউশন ১৯৪, ১৯৭৪ সালের জাতিসংঘের রেজোলিউশন ৩২৩৬ এবং ১৯৫১ সালের কনভেনশন অন দ্য স্ট্যাটাস অফ রিফিউজিস অনুসারে ফিলিস্তিনি শরণার্থী হিসাবে বিবেচিত ফিলিস্তিনিদের ‘ফেরার অধিকার’ রয়েছে৷ ইসরায়েল অবশ্য ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘ফেরার অধিকার’ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এটি ইহুদি রাষ্ট্র হিসাবে ইসরায়েলের পরিচয়ের অবসান ঘটাবে৷
ছবি: CPA Media/picture alliance
অস্বীকার
ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতির দায় অস্বীকার করে বলেছে ১৯৪৮ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত প্রায় আট লাখ ইহুদিকে মরক্কো, ইরাক, মিশর, টিউনিশিয়া এবং ইয়েমেনের মতো আরব দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল বা পালিয়ে যেতে হয়েছিল৷