দক্ষিণ গাজায় শুরু হয়েছে রকেট আক্রমণ। তার আগে রাফা এবং খান ইউনুস ছাড়ার নির্দেশ দিলো ইসরায়েলের সেনা।
বিজ্ঞাপন
এত দিন দক্ষিণ গাজাতেই আশ্রয় নিচ্ছিলেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। উত্তর এবং মধ্য গাজা থেকে তারা দক্ষিণ গাজায় এসেছিলেন কারণ, ওই দুই জায়গা ফাঁকা করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েল। দক্ষিণ গাজায় মিশরের সীমান্তের কাছে রাফায় বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই রাফার পথ দিয়েই গাজায় ঢুকছে আন্তর্জাতিক সাহায্য। এবার সেই রাফাই খালি করার নির্দেশ দিলো ইসরায়েল। এর অর্থ, লাখ লাখ মানুষকে নতুন করে আশ্রয় শিবির খুঁজতে হবে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, রাফা এবং খান ইউনুসে রকেট আক্রমণ শুরু হয়েছে। আপাতত এই আক্রমণ চলবে। সে কারণেই সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এদিকে, বেশ কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য় গাজার সব চেয়ে বড় হাসপাতালের প্রধান।
সংঘর্ষ-বিরতির আলোচনার মধ্য়েই মধ্য় গাজায় আক্রমণ
দোহায় দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষ-বিরতির আলোচনা শুরু হয়েছে। তারই মধ্য়েই গাজায় নতুন করে আক্রমণে ইসরায়েল।
ছবি: Mostafa Alkharouf/Anadolu/picture alliance
মধ্য গাজায় আক্রমণ
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) জানিয়েছে, মধ্য় গাজায় কয়েকটি নির্দিষ্ট টার্গেটে আঘাত হানা হয়েছে। বিমান থেকে আক্রমণের পাশাপাশি স্থলবাহিনীও অভিযান শুরু করেছে।
ছবি: Dawoud Abo Alkas/AA/picture alliance
দোহায় আলোচনা
গত সপ্তাহের শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছিলেন, নতুন একটি দীর্ঘমেয়াদি সংঘর্ষ-বিরতির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ওই প্রস্তাব নিয়ে দোহায় অ্যামেরিকা, কাতার এবং মিশরের মধ্যস্থতাকারীরা ইসরায়েল এবং হামাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
ছবি: Dawoud Abo Alkas/AA/picture alliance
সংঘর্ষ-বিরতির প্রস্তাব
নতুন সংঘর্ষ-বিরতির প্রস্তাবে তিনটি ধাপ আছে। দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষ-বিরতির কথা বলা হয়েছে সেখানে। প্রস্তাব হলো, ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা সরিয়ে নেবে, বদলে হামাসকে সমস্ত বন্দিকে ছেড়ে দিতে হবে। পরবর্তী ধাপে রাজনৈতিক আলোচনার পরিসর তৈরি করা হবে।
ছবি: Dawoud Abo Alkas/AA/picture alliance
হামাসের অভিযোগ
সংঘর্ষ-বিরতির আলোচনা চলাকালীন ইসরায়েলের এই আক্রমণের সমালোচনা করেছে হামাস। মধ্যস্থতাকারী দেশগুলিও এই আক্রমণ ভালো চোখে দেখছে না।
ছবি: Ali Jadallah/AA/picture alliance
লেবানন সীমান্তে উত্তেজনা
ইসরায়েলের অভিযোগ, উত্তর ইসরায়েলে লেবানন একটি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। বিস্ফোরক ভরা ওই ড্রোনটি একটি গ্রামে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। ঘটনায় অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনার পর ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে উত্তেজনা বেড়েছে।
ছবি: Francisco Seco/AP/picture alliance
অভিযোগ হেজবোল্লার বিরুদ্ধে
হেজবোল্লা এই আক্রমণ চালিয়েছে বলে অভিযোগ ইসরায়েলের। গাজায় অভিযান শুরু হওয়ার পর একাধিকবার হেজবোল্লা লেবানন সীমান্ত থেকে ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়েছে। ইসরায়েলও পাল্টা আক্রমণ করেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যে কোনো উপায়ে লেবানন সীমান্ত সুরক্ষিত করা হবে।
ছবি: Hassan Ammar/AP
ইউএন-এর সতর্কবার্তা
জাতিসংঘ জানিয়েছে, দ্রুত সংঘর্ষ-বিরতির প্রস্তাব গৃহীত না হলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ শুরু হবে গাজায়। জুলাই মাস থেকেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। অন্তত ১০ লাখ মানুষ খাদ্য়াভাবের সম্মুখিন হবেন। রিপোর্টে বলা হয়েছs, মার্চ মাসে গাজায় ছয় লাখেরও বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন।
ছবি: Eyad Baba/AFP
7 ছবি1 | 7
আল শিফা হাসপাতালের প্রধান ডক্টর মোহাম্মেদ আবু সালমিয়াকে সাত মাস আগে আটক করেছিল ইসরায়েল। এতদিন তাকে কোনো চার্জ ছাড়াই আটক করে রাখা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও করা হয়নি। বস্তুত, গাজার এই আল শিফা হাসপাতালটির ভিতরে ঢুকে অভিযান চালিয়েছিল ইসরায়েল। তাদের অভিযোগ ছিল, এই হাসপাতালের ভিতর এবং নিচে হামাস সদস্য়দের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সে সময়েই সালমিয়াকে আটক করা হয়েছিল। সোমবার বেশ কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল, তার মধ্যে মোহাম্মেদ আবু সালমিয়া অন্য়তম।
এদিকে রাফা এবং খান ইউনুস খালি করার নির্দেশ ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টেফানে দুজারিক বলেছেন, ''আরও একবার প্রমাণিত হলো যে গাজায় কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়। সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে আরো গুরুত্বপূর্ণ ব্য়বস্থা গ্রহণ করতে হবে।'' অন্তত ১০ লাখ মানুষ দক্ষিণ গাজায় মিশর সীমান্তে আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছেন। নতুন করে কোথায় গিয়ে তারা আশ্রয় নেবেন তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ইসরায়েলের গাজা অভিযান ঘিরে এখনো পর্যন্ত কয়েক হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্য়ু হয়েছে। তার মধ্যে বহু নারী এবং শিশু আছে।