ফিলিস্তিনি মিশনের মর্যাদা কমিয়ে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
৪ মার্চ ২০১৯
জেরুসালেমে মার্কিন কনস্যুলেট বন্ধ করতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এখন থেকে জেরুসালেমে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের অধীনে কাজ করবে এই কনস্যুলেট৷
বিজ্ঞাপন
গত কয়েক দশক ধরে প্যালেস্টাইন বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনৈতিক মিশন হিসেবে কাজ করে আসছিল জেরুসালেমের মার্কিন কনস্যুলেট৷ কিন্তু এখন থেকে জেরুসালেমে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের অধীনে থাকা ‘প্যালেস্টাইন অ্যাফেয়ার্স ইউনিট' কূটনৈতিক কাজগুলো পরিচালনা করবে৷
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবার্ট প্যালাডিনো এক বিবৃতিতে জানান, ‘‘বিশ্বব্যাপী আমাদের কূটনৈতিক কার্যক্রমের দক্ষতা ও কার্যকারিতা বাড়ানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ এর মানে এই নয় যে, জেরুসালেম, পশ্চিম তীর বা গাজা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তন এসেছে৷''
শান্তি প্রক্রিয়ায় বাধা
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে৷ তাদের ধারণা, ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিন সম্পর্কিত কূটনৈতিক ব্যাপারগুলোকে তেমন গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে না এবং দু'টি আলাদা রাষ্ট্রের ব্যাপারে সমাধানের পথ থেকে তারা দূরে সরে যাচ্ছে৷
প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের কিছু ছবি
১৯৬৭ সালের ছ’দিনের যুদ্ধে জয়ের পর, তথাকথিত ‘উইপিং ওয়াল’ বা ওয়েস্টার্ন ওয়ালের কাছে জড়ো হয়েছিল ইসরায়েলি সেনারা৷ ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করেন ফটো সাংবাদিক ডেভিড রুবিংগার৷ দেখুন সদ্য প্রয়াত সেই ফটোগ্রাফারের কিছু বিখ্যাত ছবি৷
ছবি: Getty Images/Newsmakers/GPO/David Rubinger
১৯৬৭ সাল: গাজা স্ট্রিপ
১৯২৪ সালে ভিয়েনায় জন্মগ্রহণ করেন ডেভিড রুবিংগার৷ কিন্তু নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচতে প্যালেস্টাইনে পালিয়ে গিয়েছিলেন৷ নিজে বাঁচলেও, মা মারা যান হলোকস্টে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলন, সে সময়ই তাঁর মধ্যে ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়, পরবর্তীতে ফটোসাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ছ’দিনের সেই যুদ্ধে ইসরায়েলি সেনারা কীভাবে মিশরের সেনা ও ফিলিস্তিনিদের আটক করছে৷
ছবি: Getty Images/GPO/David Rubinger
ওয়েস্টার্ন ওয়ালে একত্রিত প্যারাট্রুপাররা
ডেভিড রুবিংগারের সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ এটি৷ এখানে ইসরায়েলি সেনাদের জেরুজালেমের তথাকথিত ‘উইপিং ওয়াল’ বা ওয়েস্টার্ন ওয়ালের ওপর দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৬৭ সালের ছ’দিনের যুদ্ধে প্রথমবারের মতো পশ্চিম তীর এবং গাজা স্ট্রিপ দখল করতে সক্ষম হয় ইসরায়েল৷ রুবিংগার এই ছবিটি তোলেন যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে৷ ইসরায়েলি সরকার খুব কম দামে সকলের কাছে এই ছবিটি বিক্রি করে৷ ফলে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় ছবিটি৷
ছবি: Getty Images/Newsmakers/GPO/David Rubinger
যুদ্ধের সময় আরিয়েল শারন
এই ছবিটি সাবেক ইসরায়েলি সেনা প্রধান আরিয়েল শারনকে (মাঝে) দেখা যাচ্ছে অন্যান্য সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে, ১৯৬৭ সালের ১ জুন ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে৷ ছ’দিনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার দিন চারেক আগে তোলা এই ছবিটি৷ শারন পরবর্তীতে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন৷ ২০১৪ সালে মারা যান তিনি৷
ছবি: Getty Images/GPO/Newsmakers/David Rubinger
দ্বন্দ্ব সংঘাতের ইতিহাসের প্রামাণ্যচিত্র
এ ছবিতে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তের দিকে চলেছে ইসরায়েলি সেনারা৷ ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে সিরিয়া যখন গোলান উপত্যকায় হামলা চালায়৷ রুবিংগার সেসময় জীবনের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ১০টি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে গিয়ে ছবি তোলেন৷ ২০০৭ সালে নিজের বইটিতে তিনি লেখেন, ‘‘এই ছবিগুলোর দিকে তাকালে মনে হয়, আমি সত্যিই ভাগ্যবান ছিলাম৷ তাই বেঁচে ফিরতে পেরেছি৷’’ তাঁর বইটির নাম ‘ইসরায়েল থ্রু মাই লেন্স: একজন ফটোসাংবাদিক হিসেবে ৬০ বছর’৷
ছবি: Getty Images/AFP/GPO/David Rubinger
১৯৭৩ সালে ইয়ুম কিপুর যুদ্ধ
১৯৭৩ সালে ইয়ুম কিপুর যুদ্ধে সিরিয়ার সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ইসরায়েল৷ এ যুদ্ধ অক্টোবর যুদ্ধ নামেও পরিচিত৷ রুবিংগারের এই ছবিতে গোলান উপত্যকায় ইসরায়েলি ট্যাংকের বহর আর সিরীয় সেনাদের দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথমবারের মতো পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতিও ফুটে উঠেছে ছবিতে৷ আশির দশকেও এ অঞ্চলে উচ্ছ্বসিত ইসরায়েলি সেনা আর বিষাদগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের ছবি তুলেছিলেন রুবিংগার৷
ছবি: Getty Images/AFP/GPO/David Rubinger
জাতি নিমার্ণের আলোকচিত্রী
ডেভিড রুবিংগার তাঁর জীবনের দীর্ঘ ৫০ বছর ফটোসাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন৷ ইসরায়েলের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেস ডেভিডকে রুবিংগারকে ‘একটি জাতি তৈরির আলোকচিত্রী’ হিসেবে গণ্য করেছিলেন৷
ছবি: Getty Images/G. Cattermole
6 ছবি1 | 6
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও যখন গত শরতে দূতাবাস এবং কনস্যুলেট এক করার কথা বলেছিলেন, তখন ফিলিস্তিনের কর্মকর্তা সায়েব এরেকাত এই সিদ্ধান্তকে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা প্রশ্নে ‘কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয়া' হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন৷
কনস্যুলেট সরিয়ে নেয়ার এই উদ্যোগের ফলে এখন থেকে গাজা ও পশ্চিম তীর নিয়ে কূটনৈতিক আলোচনা সম্পর্কিত যাবতীয় কর্মকাণ্ড মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রিডম্যান দ্বারা পরিচালিত হবে৷ পশ্চিম তীরে নতুন বসতি নির্মাণের বিষয়টিকে দীর্ঘদিন ধরে সমর্থন দিয়ে আসছেন তিনি৷ এছাড়া ফ্রিডম্যান সবসময় ফিলিস্তিনি নেতাদের খোলাখুলি সমালোচনা করে থাকেন৷
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে অনুমোদন দিয়ে তেল আভিভ থেকে মার্কিন দূতাবাস সেখানে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷