ইসরায়েলে নির্বাচন৷ ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন দিকে যাবে? ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন, শান্তিময় রাষ্ট্র কি স্বপ্নই থেকে যাবে? বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর দল কিন্তু দুটি প্রশ্নেই বড় হুমকি৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ নেসেটের ভোট হয়ে গেল ইসরায়েলে৷ ১২০টি আসনের নির্বাচনে কি নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি জিততে পারবে? আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন নেতানিয়াহু? জনমত জরিপ বলছে, এ নির্বাচনে মধ্য-বামপন্থি দল জিওনিস্ট ইউনিয়নের চেয়ে তিন থেকে চারটি আসন কম পাবে লিকুদ পার্টি৷ কিন্তু জরিপই তো শেষ কথা নয়৷ নির্বাচনের ঠিক আগের মুহূর্তের কিছু বিষয়ও মাঝে মাঝে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে৷ নেতানিয়াহু সেই চেষ্টাই করেছেন৷
নির্বাচনের আগে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে মত দিলেও এখন তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অস্তিত্বই মানতে নারাজ৷ ‘এনআরজি' নামের একটি ওয়েবসাইট এ বিষয়ে সরাসরি প্রশ্ন করেছিল তাঁকে৷ নেতানিয়াহুও সরাসরিই বলেছেন, ‘‘হ্যাঁ, আমি পুনর্নিবাচিত হলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে দেবো না৷'' ছ'বছর আগে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে সহাবস্থানের পক্ষে কথা বলে এখন কেন সম্পূর্ণ উল্টো অবস্থানে নেতানিয়াহু? কারণটা তিনি সরাসরিই বলেছেন৷ তাঁর মতে, এখন স্বাধীন ফিলিস্তিন হলে সেই রাষ্ট্র শাসন করবে ইসলামি জঙ্গিরা৷ এমন একটি কারণ দেখিয়েই ‘ফিলিস্তিনের সঘোষিত শত্রু' হয়ে নির্বাচনে ভোট প্রার্থনা করছেন লিকুদ পার্টির শীর্ষ নেতা৷
গাজাবাসীর ‘লাইফলাইন’ টানেল নেটওয়ার্ক
গাজায় ইসরায়েলের হামলার অন্যতম উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হচ্ছে টানেলের কথা, যেগুলো হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে প্রবেশের জন্য ব্যবহার করছে৷ এগুলো ধ্বংস করতে চায় ইসরায়েল৷ তবে এসব টানেল অন্য অনেক কাজেও ব্যবহার হচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/landov
‘লাইফলাইন’ এবং চোরাচালানের পথ
ফিলিস্তিনিরা টানেল বা সুড়ঙ্গগুলোকে তাদের লাইফলাইন মনে করে, যদিও ইসরায়েল এগুলোকে বিবেচনা করে অস্ত্র চোরাচালান এবং চোরাগোপ্তা হামলার পথ হিসেবে৷ চারপাশ থেকে আবদ্ধ গাজার সঙ্গে বিশ্বের সংযোগের অন্যতম পথ এসব টানেল৷ এগুলো ব্যবহার করে এমনকি পশুও গাজায় নেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images
নিজেদের ভূমিতে কারাবন্দি
গাজায় প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষের বাস৷ প্রতিবেশী দেশ ইসরায়েল এবং মিশর থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে উঁচু দেয়াল দিয়ে৷ সীমান্ত চেকপোস্টগুলোতে রয়েছে কড়া পাহারা৷ একসময় মিশরের রাফা সীমান্ত ব্যবহার করে গাজার বাইরে যেতে পারতো ফিলিস্তিনিরা৷ কিন্তু ২০০৭ সালের জুনে হামাস গাজার ক্ষমতা নেয়ার পর বন্ধ হয়ে গেছে সেই সীমান্তও৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ঝুঁকিপূর্ণ নির্মাণকাজ
আর তখন থেকে গাজাবাসী বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে একমাত্র টানেল বা সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে৷ এগুলো অধিকাংশক্ষেত্রে তৈরি করা হয় অনিরাপদ এবং সাধাসিধে উপায়ে৷ নির্মাণকাজে ব্যবহার হয় বেলচা এবং কাঠ৷ তরুণ ফিলিস্তিনিদের জন্য অর্থ উপায়ের অল্প কিছু মাধ্যমের একটি এই সুড়ঙ্গ খনন৷ তবে এই কাজে মৃত্যু ঝুঁকিও আছে৷
ছবি: Getty Images
গোপন প্রবেশপথ
টানেলে প্রবেশের পথ অধিকাংশক্ষেত্রে সাধারণ বাসাবাড়ির মধ্যে থাকে৷ মূলত বাইরে থেকে যাতে বোঝা না যায়, সেজন্য এই ব্যবস্থা৷ যারা এসব টানেল ব্যবহার করতে চান, তাদের এজন্য টাকা খরচ করতে হয়৷ ইসরায়েল মনে করে, গাজাবাসী টানেল ব্যবহারের জন্য যে টাকা খরচ করেন, তা অন্যান্য চাহিদা মেটাতে আরো ভালো কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images
নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র আনার পথ
ফিলিস্তিনিরা এসব টানেল ব্যবহার করে নির্মাণকাজের জন্য সিমেন্ট এবং অন্যান্য উপাদান গাজায় আনেন৷ ঘরবাড়ি তৈরি কিংবা সংস্কারে এগুলো দরকার হয়৷ এছাড়া ভোগ্যপণ্য, কাপড় এমনকি রকেট এবং বিস্ফোরকও টানেল দিয়েই গাজায় আসে৷
ছবি: DW/T. Krämer
সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে
গত ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় টানেল রয়েছে৷ ১৯৭৯ সালে ইসরায়েল এবং মিশরের মধ্যে শান্তি চুক্তির পর রাফা শহরটি বিভক্ত হয়ে যায়৷ এর অর্ধেক চলে যায় মিশরের দখলে বাকিটা গাজার৷ তখন থেকেই শহরটির দুই অংশের মধ্যে যোগাযোগ এবং মালামাল পরিবহণের উপায় হয়ে ওঠে সুড়ঙ্গ পথ৷
ছবি: Getty Images
মিসাইল থেকে বাঁচার উপায়
এখন অনেক সাধারণ টানেলেও যোগাযোগের আধুনিক সরঞ্জাম রয়েছে৷ বিশেষ করে বিদ্যুৎ এবং টেলিফোনের কথা বলা যায়৷ সুড়ঙ্গ খননের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা মাটির উপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন টেলিফোনের মাধ্যমে৷ আর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী যখন আক্রমণ করে, তখন অনেক ফিলিস্তিনি জীবন বাঁচাতে বা লুকিয়ে থাকতে টানেলে আশ্রয় নেন৷
ছবি: Getty Images
মিশরও ধ্বংস করছে সুড়ঙ্গ
শুধুমাত্র ইসরায়েলই গাজার সুরক্ষা নেটওয়ার্ক ধ্বংসের চেষ্টা করছে না৷ মিশরও এগুলোর বিরোধী৷ সেদেশের সিনাই উপত্যকায়ও হামাসের হামলার অভিযোগ রয়েছে৷ তাই মিশরের সেনারাও বছরের পর বছর তাদের ভূখণ্ডের নীচে থাকা টানেল ধ্বংসের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: DW/S.Al Farra
মাটির নীচে বিপদ
শুধুমাত্র ইসরায়েলি সেনাদের হত্যার উদ্দেশ্যেও অনেক সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছে৷ ২০০৪ সালে হামাসের প্রকাশিত এই ছবিতে কিছু বিস্ফোরক দেখানো হয়েছে যা ব্যবহার করে সেবছরের ডিসেম্বরে ইসরায়েলের একটি সেনা ঘাঁটির নীচে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল৷ এতে পাঁচ ইসরায়েলি সেনা নিহত এবং দশজন আহত হন৷
ছবি: Getty Images
সুড়ঙ্গে মন্ত্রী
গাজা থেকে ইসরায়েলে প্রবেশের জন্য তৈরি এই সুড়ঙ্গটি ২০১৩ সালে প্রদর্শন করেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোসা ইয়ালন৷ ইসরায়েলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, হামেস এই টানেল দিয়ে ইসরায়েলে হামলা এবং ইসরায়েলিদের অপহরণ করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আক্রমণ চলছেই
ইসরায়েল দাবি করেছে, গাজায় কয়েক ডজন টানেল ধ্বংসে সক্ষম হয়েছে তাদের সেনাবাহিনী৷ গত আট জুলাই থেকে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল৷ এতে বুধবার (৩০.০৭.১৪) পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে বারোশ’র বেশি মানুষ, যাদের অধিকাংশই নিরীহ ফিলিস্তিনি৷
ছবি: picture alliance/landov
11 ছবি1 | 11
কিন্তু ইসরায়েলের সাধারণ মানুষ কি নেতানিয়াহুর ফিলিস্তিনবিরোধী মনোভাবকে খুব ভালোভাবে নিয়েছে? উত্তরটা হয়ত নির্বাচনের ফলাফলেই সবচেয়ে বেশি প্রতিফলিত হবে৷
সম্প্রতি রিপাবলিকান দলের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে কংগ্রেসে ভাষণ দিয়েছেন নেতানিয়াহু৷ দু'দেশের সম্পর্কের ক্ষতিই হয়েছে তাতে৷ মঙ্গলবারের নির্বাচনে ইসরায়েলের জনগণ যে দল বা জোটকে দেশ শাসনের ভার দেবে সেই দল বা জোটকে দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যও কাজ করতে হবে৷
এবারের নির্বাচনে ২৫টি দল অংশ নিচ্ছে৷ সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুযায়ী, এর মধ্যে ১১টি দল ক্নেসেটে প্রতিনিধি পাঠাতে পারবে৷ ইসরায়েলের নির্বাচনে ৩ দশমিক ২৫ ভাগ ভোট পেলে যে কোনো দলই সংসদে যেতে পারে৷