হলিউডের অ্যাকশনধর্মী ছবি ‘টপ গান'-এর কথা মনে আছে? অনেকটা সেই ছবির অ্যাকশনের মতোই আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালালেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন৷
বিজ্ঞাপন
স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে গেল দরজা৷ গায়ে লেদারের চকচকে জ্যাকেট, চোখে সানগ্লাস আর দুই পাশে দুই সেনা কর্মকর্তা নিয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে আসলেন কিম জং উন৷ ক্ষেপণাস্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে আঙ্গুল তুলে দিলেন নির্দেশনা৷ এমনই একটি ভিডিও শুক্রবার প্রকাশ করে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল৷
টেলিভিশনে এমন ভিডিও দেখিয়ে শুক্রবার উত্তর কোরিয়া তাদের বৃহত্তম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (আইসিবিএম) সফল পরীক্ষা চালানোর ঘোষণা দেয়৷
ভিডিওতে উত্তর কোরিয়ার এই নেতায় বিশেষ স্টাইলে জমকালো উপস্থিতিকে হলিউডের ‘টপ গান' সিনেমা বা দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত গান ‘গ্যাংন্যাম স্টাইলের সাথেই তুলনা করছেন কেউ কেউ৷
ভিডিওতে দেখা যায়, সেনা কর্মকর্তাদের দুই পাশে রেখে ধীর গতিতে বেরিয়ে আসছেন কিম জং৷ এরপর কর্মকর্তারা তাদের ঘড়ির দিকে তাকান৷ অর্থাৎ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের সময়টি দেখছিলেন৷ এরপর নিজের সানগ্লাস নামিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য মাথা নেড়ে অনুমতি দিতে দেখা গেল কিমকে৷
সেনা কর্মকর্তাদের কসরত শেষে উৎক্ষেপণ হয় ক্ষেপণাস্ত্রটি৷ উৎক্ষেপণ শেষে হাত তুলে দুই সেনা কর্মকর্তার সাথে চিৎকার করে তা উদযাপন করতে দেখা গেছে কিমকে৷
পারমাণবিক শক্তিধর উত্তর কোরিয়া ২০১৭ সালের পর থেকে এবারই প্রথমবারের মতো আইসিবিএমের পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা চালালো৷ আইসিবিএম হলো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র৷ এগুলো উত্তর কোরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে সক্ষম বলে দাবি করছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ৷
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা কেসিএনএর প্রকাশ করা ছবিতে দেখা যায় সম্মুখভাবে সাদাকালো রঙের দানবীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি একটি উৎক্ষেপণ যান ছেড়ে উঠে যাচ্ছে৷
কেসিএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসং-১৭ সর্বোচ্চ ৬২৪৮.৫ কিলোমিটার উচ্চতা দিয়ে উড়ে ১০৯০ কিলোমিটার দূরে সাগরের লক্ষ্যস্থলে নির্ভুলভাবে আঘাত হেনেছে৷
আরআর/এফএস (রয়টার্স)
কার, কতগুলো পারমাণবিক বোমা আছে
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে বর্তমানে ১৩,৪০০টি আণবিক বোমা আছে৷ তবে এ সব বোমার সংখ্যা কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/KCNA
রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট সিপ্রি-র তথ্য অনুসারে রাশিয়ার কাছে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আণবিক বোমা রয়েছে৷ দেশটিতে এ ধরনের বোমার সংখ্যা ৬,৩৭৫টি৷ ১৯৪৯ সালে রাশিয়া প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা করেছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kolesnikova
দ্বিতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা বানিয়েছে এবং একমাত্র দেশ যারা যুদ্ধেও এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে৷ দেশটির কাছে এখন ৫,৮০০ টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Jamali
চীনও পিছিয়ে নেই
৩২০টি পারমাণবিক বোমা আছে চীনের৷ রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সংখ্যাটা কম হলেও দেশটি ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়াচ্ছে৷ যেমন ২০১৯ সালেই তাদের কাছে ২৯০ টি বোমা ছিল৷ স্থল, আকাশ বা সমুদ্রপথে সেগুলো ছোঁড়া সম্ভব৷
ছবি: Getty Images
সাবমেরিনে পারমাণবিক বোমা
ফ্রান্সের কাছে পারমাণবিক ওয়ারহেড আছে ২৯০টি৷ এগুলোর অধিকাংশই রয়েছে সাবমেরিনে৷ দেশটির অন্তত একটি সাবমেরিন সবসময় পারমাণবিক বোমা নিয়ে টহল দেয়৷
ছবি: AP
যুক্তরাজ্যেরও আছে পারমাণবিক বোমা
২১৫টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে যুক্তরাজ্যের কাছে৷ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এই দেশটি ১৯৫২ সালে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kaminski
দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে পাকিস্তান
ইতোমধ্যে তিনবার প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান৷ দেশটির আছে ১৬০টি আণবিক বোমা৷ সাম্প্রতিক সময়ে পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়িয়েছে দেশটি৷ অনেকে আশঙ্কা করেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে দেশটির লড়াই কোন এক সময় পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP
থেমে নেই ভারত
পারমাণবিক বোমার সংখ্যা বাড়াচ্ছে ভারতও৷ দেশটি প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ১৯৭৪ সালে৷ সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, তাদের কাছে এখন ১৫০টি বোমা রয়েছে৷ ভারত অবশ্য জানিয়েছে, তারা আগে কোনো দেশকে আঘাত করবে না, আর যেসব দেশের পারমাণবিক বোমা নেই, সেসব দেশের বিরুদ্ধে তারা এ ধরনের বোমা ব্যবহার করবে না কোনোদিন৷
ছবি: Reuters
ইসরায়েল সম্পর্কে তথ্য কম
ইসরায়েল অবশ্য নিজের দেশের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে তেমন কিছু জনসমক্ষে প্রকাশ করে না৷ যদিও দেশটির নব্বইটি পারমাণবিক ‘ওয়ারহেড’ আছে বলে উল্লেখ করেছে সিপ্রি৷
ছবি: Reuters/B. Ratner
উত্তর কোরিয়া সবার নীচে
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করে উত্তর কোরিয়াও৷ এখন দেশটির কাছে থাকা বোমার সংখ্যা আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০টি৷