২০১১ সালে সুনামি ও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় ১৩ লাখ টন দূষিত পানি সাগরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান৷ চীন একে ‘একেবারে দায়িত্বহীন' সিদ্ধান্ত আখ্যা দিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সাগরে ফেলার আগে পানিতে থাকা বিভিন্ন আইসোটোপ দূর করা হবে৷ তবে ট্রিটিয়াম নামের যে আইসোটোপ পানি থেকে আলাদা করা যায় না সেটিকে পাতলা করে বিপজ্জনক মাত্রার নীচে নামানো হবে৷ এরপর সাগরে ছাড়া হবে৷
জাপান বলছে, পরমাণু কেন্দ্রের দূষিত পানি এভাবে সাগরে ফেলার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী চালু আছে৷
ফুকুশিমা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করার অংশ হিসেবে পানি ফেলা দরকার বলে জানিয়েছে জাপান৷
সাগরে পানি ছাড়ার প্রথম ধাপ শুরু হতে দুই বছর লাগতে পারে৷ এর মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী সংস্থা টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার পানি বিশুদ্ধ করার কাজ করবে, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলবে এবং নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা থেকে অনুমোদন নেয়ার কাজ করবে৷
পরমাণু বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ কী?
১৯৮৬ সালে চেরনোবিল এবং ২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমায় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনার পর পরমাণু শক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলছে৷
ছবি: Kerry Skyring
সবচেয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা
১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল চেরনোবিল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিস্ফোরণের পর ইউক্রেন, বেলারুশ ও রাশিয়ার বাতাসে ব্যাপক তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশেও চিন্তিত হওয়ার মতো তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া গিয়েছিল৷ দুর্ঘটনাস্থলের আশেপাশে এখনও ‘এক্সক্লুশন জোন’ আছে, যেখানে মানুষজনকে বসতি স্থাপন করার অনুমতি দেয়া হয় না৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
পরের শিকার জাপান
২০১১ সালের মার্চে জাপানে প্রথমে নয় মাত্রার ভূমিকম্প ও তারপর সুনামির কারণে ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি রিঅ্যাক্টর দুর্ঘটনায় পড়ে৷ ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমায় নিউক্লিয়ার বোমা ফেলার কারণে যে পরিমাণ সিজিয়াম-১৩৭ বের হয়েছিল, ফুকুশিমার ঘটনায় তার চেয়ে প্রায় ৫০০ গুন বেশি তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব
চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর হাজার হাজার মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ জাপানেও একই অবস্থা তৈরি হয়েছে৷ ঐ অঞ্চলের শিশুদের টাইফয়েড ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা জাপানের অন্যান্য অঞ্চলের শিশুদের তুলনায় প্রায় ২০ গুন বেশি৷
ছবি: Reuters
৩০ থেকে ১ শতাংশ
ফুকুশিমায় দুর্ঘটনার আগে জাপানের বিদ্যুৎ চাহিদার ৩০ শতাংশ আসত পরমাণু শক্তি থেকে৷ তবে ২০১১ সালের পর সেটি নেমে এসেছে মাত্র এক শতাংশে৷
ছবি: REUTERS
সংকটে পরমাণু শক্তি শিল্প
বর্তমানে এই শিল্প আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ক্ষতি গুনছে৷ আর নতুন করে রিঅ্যাক্টর তৈরির কাজও স্থগিত আছে৷
ছবি: Reuters
ফ্রান্সে বাধা
‘প্রেসারাইজড ওয়াটার রিঅ্যাক্টর’ বা পিডাব্লিউআর নামে দেশটির সর্বাধুনিক নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর নিয়ে ফ্রান্সের অনেক আশা ছিল৷ প্রকল্পটি বেশ নিরাপদ বলেই তারা মনে করেছিল৷ কিন্তু ২০১২ সালে এটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে সেই তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে৷ ২০১৮ সালে সেটি চালু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে৷ ব্যয় হচ্ছে ১০ বিলিয়ন ইউরো - প্রকৃত খরচের চেয়ে প্রায় তিন গুন বেশি৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Triballeau
নতুন রিঅ্যাক্টর তৈরি করবে ব্রিটেন
অনেক বছর ধরে দেশটি দুটি নতুন পিডাব্লিউআর নির্মাণের পরিকল্পনা করছে৷ এতে খরচ হতে পারে ৩৩ বিলিয়ন ইউরো৷ তবে আর্থিকভাবে এটি লাভজনক হবে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক আছে৷ কারণ, ঐ রিঅ্যাক্টরগুলো থেকে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে তার দাম সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের চেয়ে বেশি হবে৷ ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ভর্তুকি দিতে হতে পারে৷
ছবি: Getty Images/J. Tallis
দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা
২০২২ সালের মধ্যে সব পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করতে একটি আইন পাস করেছিল জার্মানি৷ তবে বর্তমান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ২০০৫ সালে ক্ষমতায় এসে সেই আইন থেকে সরে এসেছিলেন৷ তবে ২০১১ সালে জাপানে দুর্ঘটনার পর ম্যার্কেল তাঁর সিদ্ধান্ত বদল করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Ebener
একে একে বন্ধ হচ্ছে
এখন পর্যন্ত জার্মানির নয়টি রিঅ্যাক্টর বন্ধ হয়েছে৷ বাকি আছে আটটি৷ সেগুলোও ২০২২ সালের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Ebener
দুর্ঘটনার আশঙ্কা
ইউরোপীয় ইউনিয়নে এখনও ১৩২টি রিঅ্যাক্টর চালু আছে৷ ৩০ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত এগুলো কার্যকর থাকার কথা৷ এদের গড় বয়স এখন ৩২৷ ফলে মাঝেমধ্যেই ত্রুটি ধরা পড়ছে৷ দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে বিক্ষোভকারীরা এগুলো এখনই বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন৷
ছবি: DW/G. Rueter
চীন এখনও পরমাণু বিদ্যুৎ চায়
ফুকুশিমায় দুর্ঘটনার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও রাশিয়ায় এখনও নতুন কোনো পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়নি৷ তবে চীন এখনও এর থেকে সরে আসেনি৷ বরং কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিকল্প হিসেবে পরমাণু শক্তির কথা চিন্তা করছে তারা৷ পাশাপাশি সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের প্রসার ঘটানোরও পরিকল্পনা আছে তাদের৷
ছবি: Imago/China Foto Press
11 ছবি1 | 11
অলিম্পিক আয়োজনে ব্যবহার হয় এমন প্রায় পাঁচশ সুইমিংপুলের সমান পানি সাগরে ফেলা হবে৷
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, জাপান বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি মেনে কাজটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে৷
তবে জাপানের সিদ্ধান্তকে ‘একেবারে দায়িত্বহীন' বলছে চীন৷ এটি আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হবে বলে এক বিবৃতিতে বলেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ এই পরিকল্পনা নিয়ে আরও আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে চীন৷
জাপানের আরেক প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়াও সাগরে পানি ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়ে আরও আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে৷ এটি দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ ও আশেপাশের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করছে তারা৷
ফুকুশিমা এখনো ধুঁকছে
ভূমিকম্প, সুনামি আর পারমাণবিক কেন্দ্র বিস্ফোরণের ক্ষতি সামলে ওঠার জন্য এখনো লড়ছে জাপান৷ পাঁচ বছর আগে ত্রিমুখী আক্রমণে বিপর্যয় নেমে এসেছিল৷ ফিরে দেখা যাক সেই দিনটি, দেখা যাক এখন কী অবস্থায় আছে ফুকুশিমা৷
ছবি: Reuters/T. Hanai
১৮ হাজারেরও বেশি মানুষের ঘাতক
২০১১ সালের ১১ই মার্চ ২টা ৪৬ মিনিটে যেন প্রলয় শুরু হয়েছিল জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে৷ প্রথমে প্রচণ্ড ভূমিকম্প৷ রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার সেই ভূমিকম্পের কারণে শুরু হলো সুনামি৷ তাতে মারাত্মক ক্ষতি হলো ফুকুশিমার পারমাণবিক কেন্দ্রটির৷ পারমাণবিক চুল্লি ছিদ্র হয়ে চারপাশে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ল৷ সুনামিতে ধ্বংস হয় অনেক বাড়ি-ঘর৷ এক হিসেবে মোট ১৮ হাজার ৫শ’ মানুষ মারা যায় সেদিন৷ নিখোঁজ হয় ২ হাজার মানুষ৷
ছবি: Bertram Schiller
এখনো ভুগছে মানুষ
ফুকুশিমার বিপর্যয়ে যে শুধু ১৮ হাজার মানুষ মারা গেছে তা নয়, অসংখ্য মানুষকে এখনো ভোগ করতে হচ্ছে বিপর্যয়ের পরিণাম৷ দায়িচি পারমানবিক চুল্লির আশপাশের এলাকায় এখনো তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে আছে৷ অনেকেই এখনো নিজের ঘরে ফিরতে পারেননি৷
ছবি: Bertram Schiller
শূন্য স্কুল
দাইচির কাছের এই স্কুলটি এখনো খালি পড়ে আছে৷
ছবি: Getty Images/C.Furlong
এখনো চলতে হয় সাবধানে
এখনো তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে আছে৷ তাই সংবাদ সম্মেলনেও সাংবাদিককে বসতে হয় এই পোশাকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/T.Hanai
প্রার্থনা
এখানেই একসময় ছিল নিজের বাড়ি৷ ছবির এই নারী ২০১১ সালের ১১ই মার্চ বাড়ি হারিয়েছেন, সঙ্গে হারিয়েছেন স্বজনদেরও৷ তাই ফুল দিয়ে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের জন্য প্রার্থনা করছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.Kamoshida
স্বজনদের স্মরণ
প্রতিবছর এই দিনে ২০১১ সালের ১১ই মার্চের দুর্যোগে হারানো মানুষদের স্মরণ করে জাপান৷ চিরতরে হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন এক বৌদ্ধ ভিক্ষু৷
ছবি: TORU YAMANAKA/AFP/Getty Images
জাতীয় শোক
প্রতি বছর শোকের পরিবেশেই পাঁচ বছর আগের দিনটিকে স্মরণ করে জাপান৷ ১০ মার্চ জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে যখন সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন তখন কালো ফিতা দেখা গেল জাতীয় পতাকায়৷ ফুকুশিমায় নিহতদের স্মরণ করতেই পতাকায় লাগানো হয় কালো ফিতা৷