1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফুকুশিমা আর ডারবানের বছর ২০১১

৩০ ডিসেম্বর ২০১১

জাতিসংঘের আয়োজনে প্রতিবছরই হচ্ছে জলবায়ু সম্মেলন৷ এবারের আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতির খবর পাওয়া গেছে৷ এছাড়া জাপানে গত মার্চ মাসে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর সারা বছরই ছিল আলোচনায়৷

ফুকুশিমায় কাজ করছেন সেখানকার কর্মরতরাছবি: AP

জাপান

২০১১ সালের মার্চ মাসের ১১ তারিখ জাপানের ইতিহাসের অন্যতম কাল দিন হয়ে থাকবে৷ অন্যান্য দেশের মানুষও আজ থেকে বহু বছর পর ঐ দিনটার কথা স্মরণ করবে৷ কেননা সেদিনের সেই ভূমিকম্প, সঙ্গে সুনামি ও পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্ঘটনা, কয়েকটি দেশকে বিকল্প জ্বালানি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে৷ ইতিমধ্যে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করেছে জার্মানি৷ এছাড়া পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যে ধরণের যন্ত্রপাতি দরকার সেগুলো তৈরি করবে না বলে জানিয়েছে জার্মান কোম্পানি সিমেন্স৷

রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ঐ ভূমিকম্প ছিল জাপানের সবচেয়ে ভয়াবহ৷ আর বিশ্বের রেকর্ডে সেটা পাঁচটির মধ্যে একটি৷ সাগরের তলে সৃষ্ট হওয়া ভূমিকম্পটি পরে সুনামির জন্ম দেয়৷ সে থেকে যে ঢেউ তৈরি হয়েছিল কোনো কোনো সময় তার উচ্চতা ছিল প্রায় ৪১ মিটার৷ সুনামির কারণে ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি ঢুকে পড়ে৷ ফলে কেন্দ্রের তিনটি চুল্লিতে ‘মেল্টডাউন' হয়ে চারিদিকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে৷ তাই সতর্কতা হিসেবে কেন্দ্রের আশেপাশের প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকার মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়৷

তেজস্ক্রিয়তার ভয়ে জাপান থেকে সবজি আমদানি বন্ধ করে দেয় অনেক দেশ৷ অনেকদিন পর্যন্ত ফুকুশিমা কেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয়তা বের হচ্ছিল৷ অবশেষে বছরের শেষে এসে মধ্য ডিসেম্বরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিকো নোদা ঘোষণা করেন যে, পরমাণু বিকীরণ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়েছে৷

দুর্ঘটনার সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নাওতো কান৷ তিনি সে সময়টাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের সবচেয়ে কঠিন সময় বলে অভিহিত করেছিলেন৷ সরকারি হিসেবে, ঐ দুর্ঘটনায় মারা যায় ১৫,৮৪২ জন৷ আর আহত হন ৫,৮৯০ জন৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় সোয়া একলক্ষ ভবন৷

ডারবানে পরিবেশ কর্মিদের অভিনব প্রতিবাদছবি: picture-alliance/dpa

জলবায়ু সম্মেলন

শুরু হয়েছিল নভেম্বরের ২৮ তারিখে, দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে৷ শেষ হয় নির্দিষ্ট সময়ের দুইদিন পর, ১২ ডিসেম্বর৷ অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে, শেষ দিকে এসে আলোচনা বেশ জমে উঠেছিল৷ ফলে শুরুর দিকে যেমনটা মনে হচ্ছিল শেষ পর্যন্ত ততটা হতাশ করেনি ডারবান৷ না, কোনো চুক্তি হয়নি৷ তবে অন্তত একটা সময়সীমা নির্ধারণ করা গেছে, যে সময়ের মধ্যে চুক্তি হবে৷ সেটা ২০১৫ সাল৷ তবে বাস্তবায়ন শুরু হবে তারও পাঁচ বছর পর, ২০২০ সাল থেকে৷ এছাড়া প্রথমবারের মতো বিশ্বের সকল দেশ কার্বন নির্গমন হ্রাসের ক্ষেত্রে একটি আইনগত বাধ্যবাধকতার আওতায় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ আর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ও গরিব দেশগুলোর জন্য গৃহীত ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড' এর পথচলা অনুমোদন করা হয়েছে৷

তবে এসবই আশার কথা৷ যতদিন পর্যন্ত না কাগজে কলমে চুক্তি হচ্ছে ততদিন নিশ্চিত করে কোনো কিছু বলা যাচ্ছেনা৷ কেননা এই যে, চুক্তির কথা বলা হচ্ছে সেটা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল আরও দুবছর আগে, ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে৷ সেসময় প্রায় সব দেশের শীর্ষ নেতারা সমবেত হয়েছিলেন সম্মেলনস্থলে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত খালি হাতে ফিরতে হয় সবাইকে৷

তবে ডারবান সম্মেলনে আলোচনার ধরণে গুনগত পরিবর্তন আসায় খুশি বাংলাদেশের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত৷ তিনি বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় যে কিছু করা উচিত সেটা উন্নত দেশগুলো এবার আরও ভালভাবে উপলব্ধি করেছে৷ আগে তারা যেমন বিভিন্ন বিষয়ে বাধা দেয়ার চেষ্টা করতো এখন তার সেসব অনেকটা মেনে নিচ্ছে৷ এটা ভাল লক্ষণ বলে মনে করেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট জলবায়ু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর আইনুন নিশাত৷ তিনি বেশ কয়েকবছর ধরে জাতিসংঘের এসব আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন৷

তবে বাংলাদেশের পরিবেশমন্ত্রী হাসান মাহমুদ মনে করেন, ডারবান সম্মেলনে বাংলাদেশের অনেক চাওয়া পূরণ হয়নি৷ হতাশ ‘অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ'এর প্রধান ফারাহ কবীরও৷ তিনি বলছেন, উন্নত দেশগুলো গরিব মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে খামখেয়ালি করছে৷ কেননা প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দুর্যোগ হচ্ছে৷ আর তারা শুধু আলোচনা করে সময় নষ্ট করছে৷

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ