1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ফুটবলভারত

ফুটবলের উত্তেজনা এড়াতে কলকাতার হাসপাতালে টিভি বন্ধ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৩ ডিসেম্বর ২০২২

বিশ্বকাপ ফুটবলের উত্তেজনায় হৃদরোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা। সেই কারণে রোগীদের ম্যাচ দেখা বন্ধ করে দিয়েছে কলকাতার একাধিক হাসপাতাল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্ট দুর্বল হলে টাইব্রেকার দেখবেন না।

বিশ্বকাপের ম্যাচে এত উত্তেজনা যে রোগীদের হৃদস্পন্দন বন্ধ হতে পারে এ আশঙ্কায় হাসপাতালের টেলিভিশন বন্ধ
বিশ্বকাপের ম্যাচে এত উত্তেজনা যে রোগীদের হৃদস্পন্দন বন্ধ হতে পারে এ আশঙ্কায় হাসপাতালের টেলিভিশন বন্ধছবি: Payel Samanta/DW

ফুটবল জ্বরে কাঁপছে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গ। একের পর এক ম্যাচের ফয়সলা হচ্ছে টাইব্রেকারে। তাতে বিদায় নিয়েছে ব্রাজিল, এগিয়েছে আর্জেন্টিনা। ফুটবলের উত্তেজনায় যাতে রোগীদের হার্টের ক্ষতি না হয় সেজন্য ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছে কলকাতার একাধিক হাসপাতাল।

আমরি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেবল টিভি থেকে সব ধরনের খেলার চ্যানেল সরিয়ে নিয়েছেন। গ্রুপ পর্যায় থেকে প্রি কোয়ার্টার ও কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত ভারতীয় সময় রাত সাড়ে আটটায় খেলা শুরু হয়েছে। তাই আমরি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে রাত আটটার পর একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে টেলিভিশন।

চার্নক হাসপাতালেরও কড়া নজর রয়েছে বিশ্বকাপের উপর। যারা হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ম্যাচ দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে অন্যান্য রোগীদের ক্ষেত্রে উদার চার্নক কর্তৃপক্ষ, তাদের খেলা দেখতে বাধা নেই।

ফুটবলপাগল বাঙালির জন্য আরো একটু উদার উডল্যান্ডস হাসপাতাল। কর্তৃপক্ষ রোগীদের উপরই ছেড়ে দিয়েছেন যে তারা টেলিভিশনে কী ধরনের বিনোদন চান। তবে হাসপাতাল সূত্রের খবর, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজন মতো ফুটবল দেখায় নিয়ন্ত্রণ জারি করতে বলা হয়েছে।

ফুটবল প্রীতির মধ্যে আশঙ্কার বীজ আছে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা। বি এম বিড়লা হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অঞ্জন সিয়োটিয়া বলেন, "হৃদরোগের সঙ্গে উত্তেজনার যোগ রয়েছে। ২০০৬-এর বিশ্বকাপ চলাকালীন জার্মানিতে একটি সমীক্ষা হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, হৃদরোগের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। জার্মানি যেদিন খেলেছে, সেদিন সংখ্যাটা ছিল আরো বেশি।"

ম্যাচ চলাকালীন ফুটবলারদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার নজির তো আছেই। গত বছরের জুনে ইউরো কাপের স্মৃতি এখনো টাটকা। ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচের সময় ডেনমার্কের ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন মাঠে মুখ থুবড়ে পড়েন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। পরে তার বুকে পেসমেকার বসাতে হয়। চলতি বিশ্বকাপে অংশ নেন তিনি।

‘উত্তেজনার প্রভাব শরীরের বিভিন্ন অংশে পড়ে’

This browser does not support the audio element.

মাঠের এই উত্তেজনা যেন বহুগুণে বেড়ে যায় গ্যালারিতে। ফুটবল খেলা দেখতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর মাঝেমধ্যেই দেখা যায়, বিশ্বকাপে উত্তেজনার পারদ আরো চড়ে। কলকাতার দুই বড় দল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ম্যাচের সময় সম্প্রতি এমন একটি ঘটনা ঘটে গিয়েছে।

গত অক্টোবরে বড় ম্যাচে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে পরাজিত হয় ইস্টবেঙ্গল। খেলার পর মাঠেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন ৩৮ বছরের জয়শঙ্কর সাহা। পরে হাসপাতালে মারা যান ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। সেপ্টেম্বরে বিদেশের মাঠেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। স্পেনীয় লিগে বার্সেলোনার ম্যাচ চলার সময় এক সমর্থক হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, খেলার সময় যথেষ্ট উত্তেজিত ছিলেন তিনি। যদিও পরে সুস্থ হয়ে ওঠেন ওই সমর্থক।

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ফরিদপুরের এক আর্জেন্টিনা সমর্থক ম্যাচ দেখার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হন। নেদারল্যান্ড নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে গোল শোধ করার পর মেসি ভক্ত মানবেন্দ্রকুমার সাহা অসুস্থতা বোধ করেন। তার পরই মারা যান। এটাকে ফুটবলজনিত উত্তেজনার কারণে মৃত্যু বলে মনে করা হচ্ছে।

এর শারীরবৃত্তীয় কারণ ব্যাখ্যা করে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কুণাল সরকার বলেন, "উত্তেজনার প্রভাব শরীরের বিভিন্ন অংশে পড়ে। একটা থমকে থাকা গাড়ি হঠাৎ ফোর্থ গিয়ারে চললে কী হবে? উত্তেজনার ফলে সবচেয়ে বেশি ধাক্কা লাগে হার্টে। সেটা ফুটবল কেন, অন্য কারণেও হতে পারে। তবে বিশ্বকাপের সব ম্যাচে উত্তেজনা হয় না, বোরিং খেলা দেখতে গিয়ে আমি ঘুমিয়েও পড়েছি!"

অসুস্থতা থাকলেই যে ফুটবলের আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে, এমনটা মনে করেন না অনেক চিকিৎসক। কলকাতার প্রথম সারির হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ভবতোষ বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ফুটবল দেখলে আনন্দ হয়। আনন্দ থেকে হওয়া উত্তেজনা খারাপ নয়, বরং হার্টের জন্য ভাল। কিন্তু যারা গুরুতর অসুস্থ, তাদের কথা আলাদা। ফুটবল কেন, তাদের সবকিছু থেকেই দূরে রাখতে হবে।"

অনেক হাসপাতাল আবার এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারির প্রয়োজন দেখছে না। মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের অন্যতম কর্তা ডা. কুণাল সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, আদিখ্যেতা দেখানো উচিত নয়। খেলা উপভোগ করাটাই আসল।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ