১৯৫৪, ১৯৭৪ এবং ১৯৯০ – বিশ্বকাপে এই তিনবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি৷ ইউরোপ সেরা হয়েছে ১৯৭২, ১৯৮০ এবং ১৯৯৬ সালে৷ লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে, গত ১৬ বছরে একবারও বিশ্বকাপ বা ইউরোপিয়ান কাপ জিততে পারেনি ব্রাজিল আর ইটালির পর সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ জেতা দলটি৷ বিশ্বকাপে তাদের সার্বিক অর্জনের তুলনা চলে শুধু ব্রাজিলের সঙ্গে৷ পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল শেষ চারে উঠেছে ১০ বার, জার্মানি ১২ বার৷
এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ছিল জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখ আর বোরুসিয়া ডর্টমুন্ড৷ ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে ‘ট্রেবল’ জিতেছে বায়ার্ন৷ বুন্ডেসলিগার নতুন মৌসুম শুরুর আগের দিন ফিরে তাকানো যাক বুন্ডেসলিগার ৫০ বছরে৷
ছবি: picture-alliance/dpaবুন্ডেসলিগা শুরু হয়েছিল ১৯৬৩ সালে৷ প্রথম আসরের প্রথম ম্যাচ৷ প্রথম গোলের জন্য এক মিনিটও অপেক্ষা করতে হয়নি৷ বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ফ্রিডহেল্ম ‘টিমো’ কনিয়েটস্কা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বল জালে জড়িয়ে উল্লাসে মাতলেন৷ কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, কনিয়েটস্কা-র জীবন এবং বুন্ডেসলিগার ইতিহাসের এমন স্মরণীয় মুহূর্তের ছবি কেউ কোনোদিন দেখতে পারবেন না৷ ক্যামেরা হাতে নেয়ার সময় না দিয়েই গোল করলে ছবি তোলা যায়, বলুন!
ছবি: picture-alliance/dpa১৯৬৫ সাল৷ খেলোয়াড়দের সঙ্গে লেনদেনে ঘাপলা ধরা পড়ায় লিগ থেকে বাদ দেয়া হয় হ্যার্টা বার্লিনকে৷ সুযোগ পায় বার্লিনের আরেক ক্লাব ‘তাসমানিয়া ১৯০০’৷ বড় আসরে খেলার সুযোগটাকে একটুও কাজে লাগাতে পারেনি দলটি৷ পয়েন্ট টেবিলের একেবারে নীচে ছিল তারা৷ মাত্র ৮ পয়েন্ট পেতে গোল করেছিল ১৫টি আর খেয়েছিল ১০৮টি৷ লিগ ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে দল বাছতে গেলে আজও তাই ‘তাসমানিয়া ১৯০০’-এর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া যায়না৷
ছবি: picture-alliance/dpaডর্টমুন্ড আর শালকের ১৯৬৯ সালের ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে মজার একটি কারণে৷ প্রিয় দল ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ায় রেগেমেগে মাঠে ঢুকে পড়েছিল শালকের কিছু উচ্ছৃঙ্খল সমর্থক৷ পরিস্থিতি খারাপ দেখে নিরাপত্তার দায়িত্বে রাখা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোও গেল ক্ষেপে৷ সমর্থকদের দোষে শালকের খেলোয়াড় ফ্রিডেল রাউশ আর গেয়ার্ড নয়সার-কে খেতে হলো কুকুরের কামড়৷ রাউশ-এর পশ্চাৎদেশে এখনো নাকি একটি কামড়ের দাগ বিদ্যমান!
ছবি: picture-alliance/dpaকাঠও ঢুকে পড়েছে বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে৷ এক সময় গোলপোস্টগুলো ছিল কাঠের৷ তো ১৯৭১ সালে ব্রেমেনের বিপক্ষে গোল করার আনন্দে গোলপোস্টের পেছনের জাল বেয়ে উঠছিলেন ম্যোনশেনগ্লাডবাখ-এর স্ট্রাইকার হ্যারব্যার্ট লাউমান৷ কাঠ যে পচে দুর্বল হয়ে আছে বোঝেননি৷ ফলে ভেঙে পড়ল গোলপোস্ট৷ অনেক চেষ্টা হলো, কিন্তু গোলপোস্ট আর ঠিক করা গেল না৷ মাঠের এক দিকে পোস্ট না থাকায় সেদিন খেলাই পরিত্যক্ত হয়ে গেল৷
ছবি: picture-alliance/dpaতখনো ফুটবলে এত টাকার খেলা শুরু হয়নি৷ বুন্ডেসলিগায় জার্সিতে তখনো কোনো বহুজাতিক কোম্পানির নাম ওঠা শুরু হয়নি৷ ১৯৭৩ সালে বুন্ডেসলিগায় আইনট্রাখট ব্রাউনশোয়াইগ ক্লাবের খেলোয়াড়দের জার্সিতে প্রথম আসে বিজ্ঞাপন৷ খেলোয়াড়দের জার্সিতে ‘ইয়েগারমাইস্টার’ মদের লোগো হরিণের কাটা মাথার ছবি দেখে চটে গিয়েছিল জার্মান ফুটবল ফেডারেশন৷ বুন্ডেসলিগায় জার্সি স্পন্সর করার বিষয়টি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায় ১৯৮১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpaম্যাচের ৩২ মিনিটেই প্রথমার্ধ শেষ৷ সবাই অবাক৷ জানা গেল রেফারি ভেল্ফ-ডিটমার আলেনফেলডার ম্যাচের আগে বেশি করে মদ গেলায় নিজেকে ঠিক সামলাতে পারছিলেন না বলে ১৩ মিনিট বাকি থাকতেই বাজিয়ে দিয়েছেন প্রথমার্ধ শেষের বাঁশি৷ এমন কাণ্ডের সমালোচনা করায় আলেনফেল্ডার বলেছিলেন, ‘‘আমরা পুরুষ, আমরা তো ফান্টা খাইনা৷’’ ঘটনাটি ১৯৭৫ সালের৷ ব্রেমেন শহরে অনেক বারে এখনো অনেকে মদের অর্ডার দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘আলেনফেল্ডার আছে?’’
ছবি: picture-alliance/dpa১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে লিগ জিতেছিল বায়ার্ন মিউনিখ৷ কিন্তু তাদের হারাতে পারলে চ্যাম্পিয়ন হতো ব্রেমেন৷ ম্যাচের ৮৯ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল তারা৷ গোল করলে জয় অবধারিত৷ কিন্তু মিশায়েল কুতসুপ বল মারলেন গোলপোস্টে৷ ব্রেমেন পারলোনা চ্যাম্পিয়ন হতে৷ কুতসুপ বুন্ডেসলিগায় মোট ৪০ বার পেনাল্টি নিয়ে গোল করেছেন ৩৯টি৷ একটা মাত্র মিসের জন্য সারা জীবন আফসোস করতে হবে তাকে!
ছবি: picture-alliance/dpaঅদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল ২০০১ সালে৷ এনারগি কটবুস মাঠে নামিয়েছিল এমন এক দল যেখানে একজনও জার্মান নেই, এগার জনের প্রত্যেকেই বিদেশি৷ অখ্যাত দলটি আজও বিখ্যাত হয়ে আছে সে কারণেই৷ পিপলিকা, হুইদুরোভিচ, মাটিয়ুস, আক্রাপোভিচ, কোবিলানস্কি, লাতাউনজি, মিরিউটা, রেগেকাম্ফ, ভাটা, ফ্রাঙ্কলিন এবং লাবাক – সেদিনের ওই এগারোজন খেলোয়াড়ের নাম তাই খুব গুরুত্ব দিয়ে লিখে রাখা হয়েছে বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে৷
ছবি: picture-alliance/dpaসেবার ১৯৫৮ সালের পর প্রথম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হবার সুযোগ পেয়েছে শালকে৷ লিগের শেষ দিন৷ নিজেদের শেষ ম্যাচটা জিতে সমর্থকদের সঙ্গে বিজয়োৎসব শুরু করে দিয়েছেন শালকের খেলোয়াড়রা৷ তাঁরা জানতেন না বায়ার্ন-হামবুর্গের ম্যাচ তখনো চলছে৷ হঠাৎ জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হলো সেই খেলার ফলাফল৷ শেষ মুহূর্তে সমতা ফিরিয়ে ২০০২ সালের আসরেরও চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন! সমর্থকদের ভিড়েই কাঁদতে শুরু করলেন শালকের খেলোয়াড়রা৷
ছবি: picture-alliance/dpa সাম্প্রতিক সময়ে ওই শেষ চার, অর্থাৎ সেমিফাইনাল পর্যন্ত কোনোরকমে উঠলেও চূড়ান্ত সাফল্য একবারও পায়নি৷ মিরোস্লাভ ক্লোসে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ২০১৮ বিশ্বকাপের মধ্যে যে জার্মানি বিশ্ব কাপ বা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জিতবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই তাঁর৷ জার্মানির ক্রীড়া বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘কিকার'-এ সোমবার প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে ৩৫ বছর বয়সি ফুটবলার বলেছেন, ‘‘আমরা অবশ্যই (প্রতিটি আসরেই) শেষ পর্যন্ত যেতে চাই৷ আমার এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে পরবর্তী কয়েকটি আসরের কোনোটিতে অবশ্যই আমরা প্রথম হবো৷''
আগামী বছর ব্রাজিলে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপেই জার্মানি চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন ক্লোসে৷ তা যদি না-ও হয়, তাহলে ২০১৮ সালের মধ্যে বিশ্বকাপ বা ইউরোপিয়ান কাপ ফিলিপ লামের দল জিতবে বলেই তাঁর ধারণা৷ ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে একটি বিশ্বকাপ এবং একটি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ হবে৷ ২০১৬ সালে ইউরোপের ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের আসর হবে ফ্রান্সে৷ দু'বছর পর রাশিয়ায় বিশ্বকাপ৷ এই তিন আসরের যে কোনো একটিতে তাঁর দেশ চ্যাম্পিয়ন হবে মনে করলেও ক্লোসে জানেন ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর তাঁর জার্মান দলে থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে৷ বয়স ৩৫ হয়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ সময়ের দিকেই এগোচ্ছেন কাইজার্সলাউটার্ন, ভ্যার্ডার ব্রেমেন এবং বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে জার্মান বুন্ডেসলিগায় খেলা ক্লোসে৷ এ মু্হূর্তে খেলছেন ইটালিয়ান লিগে, লাৎসিওর হয়ে৷ চুক্তির মেয়াদ এ বছরই শেষ৷ তারপর আবার বুন্ডেসলিগাতেই ফিরতে চান মিরোস্লাভ ক্লোসে৷
এসিবি / ডিজি (ডিপিএ)