সপ্তাহান্তে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড গোলশূন্য ড্র করল বার্নলের বিরুদ্ধে তাদের ১০ কোটি ডলার মূল্যে কেনা দি মারিয়া মাঠে থাকা সত্ত্বেও৷ ওদিকে বার্সা ভিয়ারেয়ালকে এক গোলে হারাল তাদের লা মাসিয়া অ্যাকাডেমির কল্যাণে৷
বার্সা ভিয়ারেয়ালকে এক গোলে হারাল তাদের লা মাসিয়া অ্যাকাডেমির কল্যাণেছবি: Getty Images
বিজ্ঞাপন
আলোচনাটা তত্ত্বগত মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে বোধহয় তা নয়৷ শনিবার বার্নলের বিরুদ্ধে খেলাটা ছিল আনখেল দি মারিয়ার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-এর হয়ে প্রথমবার মাঠে নামা৷ ৭০ মিনিট মাঠে ছিলেন ব্রিটিশ ফুটবলে রেকর্ড ট্রান্সফার ফি-র এই খেলোয়াড়টি৷ কিন্তু খেলার ফল দাঁড়ায় ০-০৷
ধনি-দরিদ্রের ব্যবধান ফুটবলে, বিশেষ করে ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যে, আরো বিশেষ করে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর মধ্যে যে'রকম, সে'রকম বোধহয় আর কোথাও নয়৷ যেমন ম্যানইউ চলতি মরশুমে প্লেয়ার কেনায় এ যাবৎ ব্যয় করেছে ১৩ কোটি ২০ লক্ষ পাউন্ড৷ সে তুলনায় বার্নলের খরচ হলো ৪০ লাখ পাউন্ড৷ বলতে কি, বার্নলে তাদের ১৩২ বছরের ইতিহাসে প্লেয়ার কেনায় যা খরচা করেছে, দি মারিয়াকে কিনতে ম্যানইউ-এর খরচ পড়েছে তার বেশি৷
মুনির এল হাদ্দাদিছবি: picture-alliance/dpa
ডেভিড আর গোলিয়াথ
ইউনাইটেড-এর ওল্ড স্ট্র্যাফোর্ড স্টেডিয়াম থেকে বার্নলের টার্ফ মুর স্টেডিয়ামের দূরত্ব হল ঠিক ৩৫ মাইল৷ নয়তো দু'টি ক্লাবের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ৷ ম্যানইউ হলো বিশ্বায়িত প্রিমিয়ার লিগের মাল্টিন্যাশনাল ব্র্যান্ড, পৃথিবার কোণায় কোণায় তাদের অফিস রয়েছে, ফ্যানেরা আছেন৷ সে তুলনায় বার্নলে হলো ৮৭ হাজার বাসিন্দার একটি ছোট্ট শহর, এককালে যেখানে নানা কাপড়ের কল ছিল৷ বার্নলের টার্ফ মুর স্টেডিয়ামে এখনও সব কাঠের সিট৷
তা বলে বার্নলের অতীত গরিমা ভুললে চলবে না৷ ফুটবল লিগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিল এই বার্নলে৷ শুধু তাই নয়, বার্নলে হলো ক্ষুদ্রতম শহর, যারা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে – ১৯৬০ সালে৷ সবচেয়ে বড় কথা, বার্নলে আজও ঠিক তাই রয়ে গেছে, ইংল্যন্ডের অধিকাংশ ফুটবল ক্লাব এককালে যা ছিল: স্থানীয় ফুটবলমোদী ব্যবসায়ীদের মালিকানার একটি স্থানীয় ক্লাব, যাদের ম্যানেজার একজন ইংলিশম্যান এবং খেলোয়াড়রা সবাই হান্ড্রেড পার্সেন্ট ব্রিটিশ!
আরে ছ্যা ছ্যা
ইস্ট ল্যাঙ্কাশায়ারে গিয়ে ম্যানইউ-এর নতুন সাত নম্বরকে বার্নলের সাপোর্টারদের কাছ থেকে শুধু আওয়াজই নয়, এ-ও শুনতে হয়েছে: আরে ছ্যা ছ্যা, এত একেবারে পয়সা নষ্ট৷ ডেভিড বেকহ্যাম কিংবা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর মতো ইউনাইটেড-এর হয়ে সাত নম্বর জার্সি পরে দি মারিয়া নিশ্চয় ভেবেছেন: একেই বলে রিয়্যালিটি চেক৷ বার্নলের অবশ্য তা-তে আপত্তি নেই, কেননা শনিবারের ড্র'টা ছিল ফার্স্ট ডিভিশনে ফেরার পর তাদের প্রথম পয়েন্ট৷
তারকা খেলোয়াড়দের দল-বদল
ইউরোপে এখন গ্রীষ্মকাল৷ ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে ইউরোপীয় ফুটবলে শুরু হয় খেলোয়াড়দের ক্লাব বদল৷ ইউরোপীয় ফুটবলের আলোচিত দল-বদল নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/P. Noble
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো: রেয়াল মাদ্রিদ থেকে জুভেন্টাস
তার না্মের সাথে জড়িয়ে ছিল ক্লাবটির নাম৷ অর্থাৎ রোনাল্ডো বললেই রেয়ালের নাম মনে পড়ত ভক্তদের৷ কিন্তু এখন থেকে জুভেন্টাসের সঙ্গে তার নাম উচ্চারিত হবে৷ ১০ কোটি ইউরো খরচ করে জুভেন্টাস দলে টেনেছে পর্তুগালের এই তারকাকে৷
ছবি: Reuters/P. Noble
নেইমার: বার্সেলোনা থেকে পিএসজি
২০১৭ সালের আগস্টে বার্সেলোনা থেকে ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইন বা পিএসজিতে যোগ দেন নেইমার৷ এজন্য ক্লাবটিকে গুণতে হয়েছে ২২ কোটি ইউরো৷ বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দামি তারকা এখন ব্রাজিলিয়ান এই তারকা৷
ছবি: imago/Contrast/O. Behrend
লুইস সুয়ারেজ: লিভারপুল থেকে বার্সেলোনা
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের হয়ে যেমন মাঠ মাতিয়েছেন, বিশ্বকাপে উরুগুয়ের হয়েও সেরকমই খেলছিলেন সুয়ারেজ৷ কিন্তু বেশি আলোচনা হয়েছে ইটালির খেলোয়াড় জর্জো কিয়েলিনিকে কামড়ানো নিয়ে৷ পিঠ কামড়ানোর অপরাধে নয়টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে তাঁকে নিষিদ্ধ করে ফিফা৷ তারপরও সুয়ারেজের কদর কমেনি৷ বছরের সর্বোচ্চ ৮১ মিলিয়ন ইউরো, অর্থাৎ ১০৮ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার খরচ করে তাঁকে লিভারপুল থেকে দলে টেনেছে বার্সেলোনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হামেস রডরিগেস: মোনাকো থেকে রেয়াল মাদ্রিদ
ব্রাজিল বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় চমক হামেস রডরিগেস৷ কলম্বিয়ার এই ফরোয়ার্ড ছয়টি গোল করে হয়েছেন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা৷ জিতে নিয়েছেন ‘গোল্ডেন বুট’ পুরস্কার৷ এসব সুবাদেই আসে ফ্রান্সের মোনাকো ক্লাব ছেড়ে স্পেনের রেয়াল মাদ্রিদে যাওায়ার সুযোগ৷ ঠিক কত খরচ করে ২২ বছরের এই তরুণকে নিয়েছে তা জানায়নি রেয়াল৷ তবে টাকার অঙ্কটা যে খুব বড় সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
টনি ক্রুস: বায়ার্ন থেকে রেয়াল মাদ্রিদ
জার্মানির নতুন প্রজন্মের অন্যতম সেরা প্রতিভা টনি বা টোনি ক্রুস এবার বায়ার্ন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ জার্মানির ইতিহাসের সফলতম ক্লাব থেকে স্পেনের সবচেয়ে সফল ক্লাব রেয়াল মাদ্রিদে যাচ্ছেন তিনি৷ ট্র্যান্সফার ফি হিসেবে মাত্র ৩০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে এমন এক ফুটবলারকে পেয়ে রেয়াল কর্মকর্তারা নিশ্চয়ই খুশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডাভিড লুইস: চেলসি থেকে পারি সাঁ জ্যার্মা
ব্রাজিলের ডাভিড লুইসকে এবার ছেড়ে দিয়েছে চেলসি৷ গত মৌসুমে ২৭ বছর বয়সি এই ডিফেন্ডারের পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল সুস্পষ্ট৷ দেশের হয়ে এবারের বিশ্বকাপেও ভালো খেলেননি ডাভিড লুইস৷ তাই ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের পারি সাঁ জ্যার্মা বা পিএসজি ক্লাব তাঁকে ৫০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে নিতে চাইলে আপত্তি করেনি চেলসি৷
ছবি: Franck Fife/AFP/Getty Images
দিয়েগো কস্তা: অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে চেলসি
দিয়েগো কস্তা জন্মসূত্রে ব্রাজিলিয়ান হলেও খেলছেন স্পেনের হয়ে৷ স্প্যানিশ লিগ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গত মৌসুমটা দারুণ কেটেছে তাঁর৷ বার্সা, রেয়ালকে হতাশ করে স্প্যানিশ লিগ জিতেছে অ্যাটলেটিকো৷ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে অবশ্য রেয়ালের কাছে হেরে গেছে৷ তবু দিয়েগো কস্তার পারফরম্যান্স সবার নজর কেড়েছে৷ সুবাদে এবার অ্যাটলেটিকো ছেড়ে চেলসিতে নাম লিখিয়েছেন কস্তা৷ তাঁকে পেতে ৩৮ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে চেলসি৷
ছবি: imago
মারিও মাঞ্জুকিচ: বায়ার্ন থেকে অ্যাটলেটিকো
দিয়েগো কস্তার শূন্যস্থান পূরণ করতে বায়ার্ন মিউনিখ থেকে মারিও মাঞ্জুকিচকে নিয়েছে অ্যাটলেটিকো৷ ক্রোয়েশিয়ার এই ফরোয়ার্ডের জন্য তাদের খরচ হয়েছে ২২ মিলিয়ন ইউরো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলেক্সিস সানচেজ: বার্সেলোনা থেকে আর্সেনাল
বিশ্বকাপে চিলির হয়ে চমৎকার খেলার পুরস্কার পেতে আলেক্সিস সানচেজের (লাল জার্সি) বেশি দেরি হয়নি৷ বার্সেলোনার চেয়ে চেলসি হয়ত বড় ক্লাব নয়, তবে নিয়মিত খেলার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনার কথা ভাবলে সানচেজের এই দলবদলকে ইতিবাচক বলতেই হবে৷ সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, চিলির এই ফরোয়ার্ডের জন্য ৩৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে চেলসি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিরো ইমোবিলে: টোরিনো থেকে ডর্টমুন্ড
এ মৌসুমে সবচেয়ে বড় অঙ্কের ট্র্যান্সফার ফি-তে বুন্ডেন্স লিগায় যোগ দেয়া খেলোয়াড় চিরো ইমোবিলে৷ ইটালির টোরিনো থেকে তাঁকে নিতে২০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে ডর্টমুন্ড৷ বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ট্র্যান্সফার ফি-র রেকর্ডটা এখনো বায়ার্ন মিউনিখের৷ ২০১২ সালে সাবি মার্তিনেসের জন্য ৪০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছিল তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নূরি শাহীন: রেয়াল মাদ্রিদ থেকে ডর্টমুন্ড
আবার ডর্টমুন্ডের হলেন নূরি শাহীন৷ বুন্ডেসলিগার এই ক্লাব থেকেই ফেইনুর্দ হয়ে রেয়ালে গিয়েছিলেন শাহীন৷ কিন্তু সেখানে খেলার সুযোগ তেমন একটা পাননি৷ ফেইনুর্দ ধারে খেলতে দিয়েছিল রেয়ালে৷ পরে লিভারপুলে খেলেছেন ধারে, এমনকি ডর্টমুন্ডও ধার হিসেবে নিয়েই খেলিয়েছে তুর্কি এই ফুটবলারকে৷ তবে এবার আর নিজের পুরোনো দলে ধারে খেলতে আসছেন না, ৭ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তাঁকে রেয়াল থেকে ফিরিয়ে এনেছে ডর্টমুন্ড৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গিলিয়ের্মো ওচোয়া: আইয়াচ্চো থেকে মালাগা
বিশ্বকাপে এবার মেক্সিকোর গোল পোস্টের নীচে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ওচোয়া৷ অনেকের মতে এ আসরের সেরা গোলরক্ষকও তিনি৷ বিশ্বকাপ মাতানো এই গোলরক্ষক এবার অচেনা ক্লাব আইয়াচ্চো থেকে যাচ্ছেন স্পেনের ক্লাব মালাগায়৷ তাঁকে পেয়ে মালাগা খুব খুশি৷ ফ্রি ট্র্যান্সফার, অর্থাৎ বিনে পয়সায় এমন এক ফুটবলারকে পেয়েছে তারা৷ খুশি তো হবেই!
ছবি: Reuters
12 ছবি1 | 12
কে হে ছোকরা?
এবার যদি আমরা নজর দিই ঠিক তার পরদিন, অর্থাৎ রবিবার ভিয়ারেয়াল-এর বিরুদ্ধে বার্সেলোনার খেলার দিকে, তাহলে দেখব বার্সা ১-০ গোলে জিতেছে তাদের আদি ও অকৃত্রিম মেসি ম্যাজিকের দরুণ নয়, বরং এক ১৯ বছর বয়সি ‘ছোকরা'-র কল্যাণে, যে বার্সার লা মাসিয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের স্নাতক: সান্দ্রো রামিরেজ৷ রামিরেজ গোলটা করেন খোদ লিওনেল মেসির সেন্টার থেকে৷ ওদিকে লা লিগায় বার্সার এবারকার অভিযানের সূচনায় বার্সা যখন এলচে-কে ৩-০ গোলে হারায়, তখন আর এক ১৯ বছর বয়সি লা মাসিয়া স্নাতক রামিরেজ-এর মতোই প্রথমবার নেমে গোল করেছিল: তার নাম হলো মুনির এল হাদ্দাদি৷
মনে রাখতে হবে, লা মাসিয়ার হয়ে ১৮ বছরের কম বয়সি প্লেয়ারদের কেনাবেচা নিয়েই বার্সা গোলযোগে পড়েছে এবং দু'টি ‘ট্রান্সফার উইন্ডো'-র জন্য তাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে৷ এই সংকটে দেখা যাচ্ছে লা মাসিয়া-ই তাদের মুশকিল আসান৷
তাই বলছিলাম: প্লেয়ার কেনা নয়, প্লেয়ার গড়াটাই বড় কথা৷