ব্রাজিলে ফুটবল বিশ্বকাপ, যার উন্মাদনার ছাপ পড়বে দেশে-দেশে, মহাদেশে-মহাদেশে৷ শুধু মানুষের চেতনাতেই নয়, বিশ্বকাপ তার ছাপ রাখবে আমাদের জলবায়ু সংক্রান্ত হিসাবনিকাশেও৷
বিজ্ঞাপন
ডার্বানে যদি ২৬ লাখ টন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়ে থাকে, তো ব্রাজিলে সেটা বেড়ে দাঁড়াবে ২৭ বা ২৯ লাখ টনে৷ অর্থাৎ বিশ্বকাপ বা অলিম্পিকের মতো বড় অনুষ্ঠানেও এখন ‘কার্বন ফুটপ্রিন্টের' উপর নজর রাখার সময় এসেছে৷ ফুটবল বিশ্বকাপ মানে উৎসাহ-উদ্দীপনার জোয়ার৷ তা সত্ত্বেও ভোলা উচিত নয় যে, বিশ্বকাপ শেষ হবার পর-পরই বিজ্ঞানীদের মাথা ঘামাতে হবে, জলবায়ুর উপর বিশ্বকাপের কতটা প্রভাব পড়ল৷
প্রশ্নটা অন্যভাবে করা যেতে পারে: আমন্ত্রণকারী দেশের সামগ্রিক কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমনের উপর ফুটবল বিশ্বকাপ কিংবা অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মতো বড় অনুষ্ঠানের কতোটা প্রভাব পড়ে? কোলোন শহরের ক্যাটালিসিস ইনস্টিটিউটের সাস্টেনেবিলিটি ডায়ালগ বা টেকসই উন্নয়ন বিভাগের প্রধান স্ভেন্ড উলমার বলেন, ‘‘প্রভাবটা চমকে দেবার মতো: ঠিক একই প্রভাব৷ ডার্বানে প্রায় ২৬ লক্ষ টন কার্বন ডাইঅক্সাইড বা তার অনুরূপ গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন হয়েছিল৷ ব্রাজিলের ক্ষেত্রে ২৭ থেকে ২৯ লাখ টন গ্যাস উৎপন্ন হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷''
বিশ্বকাপের প্রস্তুতি চলেছে জোরকদমে৷ স্টেডিয়ামগুলোতে ২৪ ঘণ্টা ধরে কাজ হচ্ছে৷ সে কাজে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য পরিবেশ হানিকর গ্যাস নির্গত হচ্ছে৷ স্টেডিয়াম নির্মাণ কিন্তু জলবায়ু সংক্রান্ত একমাত্র সমস্যা নয়৷
২০১৪ বিশ্বকাপে যাঁদের জ্বলে ওঠার সম্ভাবনা
২০১৪ সালের বিশ্বকাপকে সেরা টুর্নামেন্টে পরিণত করায় রোনাল্ডো আর মেসির ভূমিকা থাকতেই পারে৷ কিন্তু আরো ১০ লুকানো রত্ন রয়েছে, যাঁরা সুযোগ পেলেই দেখাতে পারেন তাঁদের কেরামতি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খোয়াদভো আসামোয়া (ঘানা)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে অসাধারণ দক্ষতা ঘানার এই ফুটবলারের৷ ২৫ বছর বয়সি এই খেলোয়াড় তাই মাঠে হয়ে উঠতে পারেন প্রতিপক্ষের বিভীষিকা৷ ২০১০ সালের মতো ঘানা যদি তাদের সেরাটা দিতে পারে, এক্ষেত্রে অবশ্যই ভূমিকা রাখবেন আসামোয়া৷
ছবি: Marco Bertorello/AFP/Getty Images
পল পগবা (ফ্রান্স)
অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ফুটবলে পল পগবা অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন৷ স্যার আলেকজান্ডার ফার্গুসনের মুখেও এই ফুটবলারের প্রতি প্রশংসা উচ্চারিত হয়েছে৷ তাঁর সিদ্ধান্তেই এই কিশোর ফুটবলার বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছেন৷ শক্তিশালী এই খেলোয়াড় যে বিশ্বকাপে মাঠ মাতাবে, তা বোধহয় বলাই যায়৷
ছবি: Marco Bertorello/AFP/Getty Images
অ্যাডাম লালানা (ইংল্যান্ড)
এবার বিশ্বকাপে ইংলিশ শিবিরের শিরোপা জেতার আশা অনেকটাই বেশি৷ ২০১৩/১৪ মৌসুমে লালানা যে আভিজাত্য এবং দক্ষতার সাথে খেলেছেন, তা এককথায় অসাধারণ৷ তাই এই মিডফিল্ডারের পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবেন অনেকেই৷
ছবি: Getty Images
মিরালেম পিয়ানিচ(বসনিয়া)
কিশোর এই ফুটবলারকে নিয়ে ইটালির মিডিয়ায় বরাবরই মতামাতি৷ বসনিয়ায় এই ফুটবলারকে বলা যায় স্বভাবজাত ফুটবলার৷ অসাধারণ পাস, দূর দৃষ্টি এবং ফুটবল নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে তাঁর৷
ছবি: Getty Images
ইয়োইচিরো কাকিতানি (জাপান)
জাপানের অন্যতম আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার কাকিতানি৷ তাঁর পেস, গতি এবং লিঙ্ক আপের দক্ষতা অসাধারণ৷ ২৪ বছর বয়সি কাকিতানি ব্রাজিল বিশ্বকাপে তাঁর সেরাটা দিয়ে সামুরাই ব্লুদের অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images
কেভিন দে ব্রয়না (বেলজিয়াম)
বেলজিয়ামের স্বর্ণ প্রজন্মের অন্যতম অংশীদার কেভিন দে ব্রয়না৷ বুন্ডেসলিগায় তাঁর অসাধারণ অভিষেক এখনো মনের মধ্যে গেঁথে আছে ফুটবল ভক্তদের৷ মাত্র ২৩ বছর বয়সি এই শক্তিশালী ফুটবলারের পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবেন বিশ্ববাসী৷
ছবি: Getty Images
লুকাস মুরা (ব্রাজিল)
২১ বছর বয়সি এই ফুটবলার ব্রাজিল শিবিরে কয়েক বছর আগে প্রবেশ করেছে৷ ফরাসি ফুটবল ক্লাব পিএসজি-র গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়ারে পরিণত হয়েছেন তিনি৷ আর বিশ্বকাপে ব্রাজিলের আক্রমণ ভাগেও এই প্রতিভাবান ফুটবলারের খেলা দেখার অপেক্ষায় থাকবেন ভক্তরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জেমস রোদ্রিগেজ (কলম্বিয়া)
এ বছর বিশ্বকাপে সবার চোখ থাকবে কলম্বিয়ার দিকে৷ কেননা দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই দলটি এখন দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে৷ মোনাকো তারকা রোদ্রিগেজ কাঁধে রয়েছে দলের সব চাপ৷ ২২ বছর বয়সি এই ফুটবলারের গতি এবং খেলার ধরণ অসাধারণ৷ তিনি এই দলের একটি রত্নে পরিণত হয়েছেন৷
ছবি: Getty Images
এদুয়ার্দো ভার্গাস (চিলি)
ফার্গাস এখন ভ্যালেন্সিয়ায় রয়েছেন৷ তবে খুব শিগগিরই স্টুটগার্ডে জার্মান ভক্তরা প্রীতি ম্যাচে তাঁর দেখা পাবেন৷ তবে ২৪ বছর বয়সি প্রতিভাবান এই ফুটবলারের জন্য ব্রাজিল বিশ্বকাপ একটি নতুন দ্বার খুলে দিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইয়োর্দি ক্লাসি (নেদারল্যান্ডস)
ইয়োর্দি ক্লাসির মধ্যে লুকিয়ে আছে সহজাত ফুটবলার৷ নেদারল্যান্ডসের জাতীয় দলের পুরো দায়িত্ব এখন এই মিডফিল্ডার এ কাঁধে৷ মাত্র ২২ বছর বয়সেই ১০০ ম্যাচ খেলার মাইল ফলক ছুঁয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির নির্গমনের জন্য আসলে দায়ী হলেন বহিরাগত ফুটবল ফ্যানরা: সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ছ'লাখ দর্শক এই গ্রীষ্মে ব্রাজিলে পাড়ি জমাবেন বিশ্বকাপের টানে৷ তাদের মধ্যে প্রায় চল্লিশ লাখ দর্শককে বিমানযোগে এক স্টেডিয়াম থেকে আরেক স্টেডিয়ামে পৌঁছে দিতে হবে৷ বিমানে মানাউস থেকে রিও ডি জানিরো যেতেই সময় লাগে চার ঘণ্টা৷ কাজেই এটা পরিবেশের পক্ষে হানিকর৷ স্ভেন্ড উলমার বলেন, ‘‘ওটা ভাগাভাগি করে নিলে দেখা যায় যে, যে সব ফুটবল ফ্যানরা প্লেনে চড়ে ঘুরছেন, স্বভাবতই কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের একটি বড় অংশের জন্য তারাই দায়ী, কেননা প্লেনগুলো এভিয়েশন ফুয়েল বা তেল পোড়ায়৷ তার পরেই আসে স্টেডিয়াম নির্মাণ ইত্যাদি৷ তবুও আমি বলতে বাধ্য যে, সাস্টেনেবিলিটি বা টেকসই নীতিরও স্থান আছে৷''
ফিফা-র পরিকল্পনা অনুযায়ী বিশ্বকাপ খেলার প্রতিটি স্টেডিয়ামে সোলার মডিউল রেখে সৌরশক্তির ব্যবস্থা করা হবে৷ এছাড়া স্টেডিয়ামের প্রশাসকদের সাস্টেনেবিলিটি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে৷ অর্থাৎ করার মতো তো অনেক কিছুই আছে৷
বিশ্বকাপে থাকছেন না যে তারকারা
আগামী জুন মাসেই ব্রাজিলে শুরু হচ্ছে বহু প্রতীক্ষার ফুটবল বিশ্বকাপ৷ এবার যেমন অনেক তারকার দেখা মিলবে বিশ্বকাপে, তেমনি দেশ চূড়ান্ত পর্বে উঠতে ব্যর্থ হওয়ায় কিছু তারার দেখা পাবেন না ফুটবলপ্রেমীরা৷
ছবি: Getty Images
স্লাতান ইব্রাহিমোভিচ
সুইডেন বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে উঠতে পারেনি৷ তাই ব্রাজিলে থাকছেন না ইউরোপীয় ফুটবলের অন্যতম বড় তারকা ইব্রাহিমোভিচ৷ বর্তমানে ফ্রান্সের পিএসজি ক্লাবের হয়ে খেলা ইব্রাহিমোভিচের সুইডেন বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের প্লে-অফে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালের কাছে হেরে যায়৷ অবশ্য ফলাফল উল্টো হলে রোনাল্ডোহীন বিশ্বকাপ দেখতে হতো ফুটবলপ্রেমীদের!
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্যারেথ বেল
চলতি মরসুম শুরুর আগে বেলকে যখন সর্বোচ্চ ট্রান্সফার ফি দিয়ে কিনে নিয়েছিল রেয়াল মাদ্রিদ, তখন সবাই চমকে গিয়েছিল৷ অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছিল, কে এই বেল? অবশ্য মরসুম শেষ হওয়ার আগে তাঁদের সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছেন বেল৷ কদিন আগে দুর্দান্ত এক গোল করে গ্যারেথ ‘বোল্ট’ নামেই খ্যাতি পেয়ে গেছেন৷ তবে বেলের দেশ ওয়েলশ বিশ্বকাপে উঠতে না পারায় তাঁকেও এবার দেখা যাবে না ব্রাজিলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রবার্ট লেভান্ডোভস্কি
গত মরসুমে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে রেয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চার গোল করে সমর্থকদের নজর কেড়েছিলেন লেভান্ডোভস্কি৷ ডর্টমুন্ডের এই ফুটবলারের দেশ পোল্যান্ড বিশ্বকাপে নেই৷ তাই চলতি মরসুম শেষে বায়ার্নে চলে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা লেভান্ডোভস্কিকে ছাড়াই চলবে বিশ্বকাপ৷
ছবি: AFP/GettyImages
ডেভিড আলাবা
বায়ার্ন মিউনিখের সাফল্যের অংশীদার আলাবা অস্ট্রিয়ার নাগরিক৷ ১৯৯৮ সালের পর আর বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে উঠতে পারেনি তাঁর দেশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেত্র চেশ
চেলসির হয়ে ২০১২ সালে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জেতা গোলরক্ষক পেত্র চেশ চেক প্রজাতন্ত্রের হয়ে ২০০৬ সালে বিশ্বকাপ খেলেছিলেন৷ কিন্তু এবার তাঁর দেশ চূড়ান্ত পর্বে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে৷
ছবি: AFP/GettyImages
পিয়ের-এমরিক ওবামেইয়াং
ডর্টমুন্ডের হয়ে এ বছর চমক দেখানো আফ্রিকার গ্যাবনের ফুটবলার ওবামেইয়াং থাকছেন না ব্রাজিল বিশ্বকাপে৷ ছবিতে ডর্টমুন্ডের জার্সি গায়ে ওবামেইয়াংকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ইরিকসেন
২২ বছর বয়সি ডেনিশ এই মিডফিল্ডার ২০১২-১৩ মরসুমে আয়াক্সের হয়ে দারুণ খেলা দেখিয়েছিলেন৷ ঐ সময় মিডফিল্ডার হিসেবে তিনি সবচেয়ে বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন৷ এ ব্যাপারে তিনি ইউরোপের বাঘা বাঘা সব ফুটবলারকে পেছনে ফেলেছিলেন৷
ছবি: dapd
ব্রানিস্লাভ ইভানোভিচ
চেলসির এই ডিফেন্ডারকে এবার ঘরে বসেই বিশ্বকাপ দেখতে হবে৷ কারণ তাঁর দেশ সার্বিয়া বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্লে-অফে ক্রোয়েশিয়ার বাধা পেরোতে পারেনি৷
ছবি: Getty Images
8 ছবি1 | 8
বিশ্বকাপে যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে, তা হবে ছ'হাজারটি রকেট লঞ্চের সমান৷ আপাতদৃষ্টিতে সেটা খুব বেশি নয়, কেননা ব্রাজিল বছরে দু'হাজার ন'শো কোটি টন গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন করে থাকে৷ সেই সঙ্গে রয়েছে অ্যামাজন রেনফরেস্টের বিনাশ, যে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্যকে পৃথিবীর সবুজ ফুসফুস বলে বর্ণনা করা হয়ে থাকে৷ তবে বিশ্বের সর্বত্রই গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমানো প্রয়োজন, বলছেন গবেষকরা৷ খেলাধুলার ক্ষেত্রে বড় বড় অনুষ্ঠানগুলি তার ব্যতিক্রম হতে পারে না৷ স্ভেন্ড উলমার বলেন, ‘‘কেননা ওগুলো আমাদের সমাজজীবনের অঙ্গ৷ আমরা যখন দেখি, গ্রিনহাউস গ্যাসের ফলে কীভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে – তখন আমাদের স্বভাবতই প্রতিটি দিকই বিবেচনা করব৷ বড় বড় ক্রীড়া অনুষ্ঠানগুলি অবশ্যই কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন হ্রাসে সাহায্য করতে পারে৷''
ব্রাজিলে সূচনা; কিন্তু মনুষ্যসমাজকে শিখতে হবে, ভবিষ্যতে বৃহৎ ক্রীড়া অনুষ্ঠানগুলিকে কী ভাবে আরো পরিবেশবান্ধব করে তোলা যায়৷