ফুটবল খেলার উত্তেজনাই আলাদা৷ মাঠে কখন যে কী ঘটবে, তা আন্দাজ করা কঠিন৷ কিন্তু সেই আনন্দে প্রায়ই বিঘ্ন ঘটায় রেফারির ভুল সিদ্ধান্ত৷ জার্মানির একটি প্রযুক্তি এবার এই সমস্যার সমাধান করতে কাজে লাগানো হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
সেটা ছিল জার্মান ফুটবল লিগ ‘বুন্ডেসলিগা'-র ইতিহাসে চাঞ্চল্যকর এক ঘটনা৷ লেভারকুজেন দলের স্টেফান কিসলিং হফেনহাইম-এর বিরুদ্ধে ম্যাচে হেড করলেন, সেটা গোলপোস্টের বাইরে দিয়ে চলে গেল৷ কিন্তু নেটে ফুটো ছিল, তা দিয়ে বল ঢুকে গেল৷ রেফারি সেটা না দেখতে পাওয়ায় হফেনহাইম শেষ পর্যন্ত হেরে যায়৷
ডিয়ার্ক ব্রখহাউসেন ও তাঁর কোম্পানি ‘গোল-কন্ট্রোল' এমন সমস্যার সমাধানে ‘গোল-কন্ট্রোল ফোর-ডি' নামের প্রযুক্তির সাহায্যে গোলপোস্টের উপর কড়া নজর রাখার ব্যবস্থা করেছে৷ কোম্পানির প্রধান ডিয়ার্ক ব্রখহাউসেন বলেন, ‘‘এই ব্যবস্থায় ৫ মিলিমিটার বা তার থেকেও কম অংশের উপর নজর রাখা সম্ভব৷ গোলপোস্টের সীমানা পাহারা দেবার এর থেকে নিখুঁত ব্যবস্থা আর বোধহয় নেই৷''
বিশেষ প্রযুক্তির সাতটি ক্যামেরা প্রতি সেকেন্ডে বলের ৫০০ ছবি তোলে৷ বল গোলে প্রবেশ করলে রেফারির ঘড়িতে একটা সিগনাল পাঠানো হয়৷
বুন্ডেসলিগার সাবেক তারকারা
বুন্ডেসলিগার গত ৫০ বছরের তারকারা
ছবি: picture-alliance/Pressefoto UL
উভে জেলার
১৯৬৩ সালে জার্মান ফুটবল লিগ বুন্ডেসলিগার খেলা শুরু হওয়ার আগেই হামবুর্গ দলের ফরোয়ার্ড উভে জেলার খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷ তখন তাঁকে সবাই আদর করে ডাকতেন ‘আমাদেরই উভে’ বলে৷ ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি জাতীয় দলে খেলতেন৷ বুন্ডেসলিগার ২৩৯ ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ১৩৭টি গোল করেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্যার্ড ম্যুলার এবং ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার
গ্যার্ড ম্যুলার (বাঁয়ে) বুন্ডেসলিগার ৪২৭ খেলায় ৪৬৫ গোল করেন৷ তাঁর এই অবিশ্বাস্য গোল করার ক্ষমতার জন্য তাঁকে ‘বোম্বার’ বলা হতো৷ ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার (ডানে) ও গোল জেপ মায়াযের সাথে মিলে ১৯৬৫ থেকে সত্তরের দশকের শেষ পর্যন্ত তিনি বায়ার্ন মিউনিখ দলের হয়ে বহু শিরোপা জেতেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গ্যুন্টার নেৎসার এবং ভল্ফগাং ওবারাথ
জার্মান জাতীয় দলে ভল্ফগাং ওবারাথ (ডানে) গ্যুন্টার নেৎসারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন৷ তবে নেৎসার এফসি কোলন দলের ওবারাথের চেয়ে বোরুসিয়া ম্যোয়েনশেনগ্লাডবাখের হয়ে বুন্ডেসলিগায় একটি শিরোপা বেশি জেতেন৷ ১৯৭৩ সালে নেৎসার স্পেনের রেয়াল মাদ্রিদ এবং পরে সুইজারল্যান্ডের ফুটবল লিগে যোগদান করেন৷ কিন্তু ওবাররাথ বুন্ডেসলিগার কোলন দলেই থেকে যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্লাউস ফিশার
শালকে দলের ফরোয়ার্ড ফিশারও গোল করায় পারদর্শী ছিলেন৷ কিন্তু গ্যার্ড ম্যুলারের সময়ে সক্রিয় থাকায় সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় তাঁকে সবসময় দ্বিতীয় স্থানেই থাকতে হয়েছে৷ বুন্ডেসলিগায় তিনি ৫৩৫ খেলায় অংশ নিয়ে ২৬৮টি গোল করেন৷
ছবি: picture-alliance/WEREK
কেভিন কেগেন
ছোটোখাটো মানুষটি ১৯৭৭ সালে হামবুর্গ দলে যোগ দেন এবং খুব তাড়াতাড়িই দর্শকদের নজর কাড়েন৷ ‘মাইটি মাউস’ হিসেবে পরিচিত কেগেন ৯০ খেলায় অংশ নিয়ে ৩২টি গোল করেন৷ সংগীত জগতেও তিনি অবদান রেখেছেন৷ সে সময় তাঁর গাওয়া ‘হেড ওভার হিলস ফর লাভ’ গানটি জার্মানির হিট গানের তালিকায় দশম স্থান অধিকার করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
হারাল্ড ‘টনি’ শুমাখার
১৫ বছর ধরে এফসি কোলন দলের গোলরক্ষক ছিলেন শুমাখার৷ এরপর ‘আনফিফ’ বা ‘হুইসেল’ নামে তাঁর একটি বিতর্কিত বই প্রকাশিত হওয়ার পর ১৯৮৭ সালে তাঁকে খেলোয়াড় হিসেবে সাসপেন্ড করা হয়৷ তবে পরে তিনি শালকে, ইস্তাম্বুল, মিউনিখ এবং ডর্টমুন্ডে খেলেন৷ শুমাখার বুন্ডেসলিগার মোট ৪৬৪ টি খেলায় অংশগ্রহণ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লোথার মাথিউস
জার্মান জাতীয় দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড মাথিউসের৷ বুন্ডেসলিগায়ও তিনি দীর্ঘ ২১ বছর ধরে খেলেছেন৷ ১৯৭৯ সালে বুন্ডেসলিগায় প্রথম খেলা শুরু করার পর তিনি বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দেন৷ বুন্ডেসলিগায় তিনি ৪৬৪ খেলায় অংশ নিয়ে ১২১ গোল করেন৷
ছবি: imago/Uwe Kraft
রুডি ফ্যোলার
১৯৮২ সালে তিনি ভের্ডার ব্রেমেন দলের হয়ে খেলা শুরু করেন৷ অল্পদিনের মধ্যেই তিনি তারকা হয়ে ওঠেন৷ পরে রোম এবং ফ্রান্সের মার্সেই দলেও খেলেছেন তিনি৷ এরপর আবারও বুন্ডেসলিগায় ফিরে বায়ার লিভারকুজেন দলের ক্রীড়া পরিচালক হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইয়োর্গেন ক্লিসমান
ক্লিসমান জার্মানির স্টুর্টগার্ট, বায়ার্ন মিউনিখ, ইটালির মিলান, মোনাকো, ইংল্যান্ডের টটেনহ্যাম, জেনুয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া দলে খেলেছেন৷ বুন্ডেসলিগায় ২২১টি খেলায় ক্লিসমানের গোল সংখ্যা ১১০টি৷ বর্তমানে তিনি মার্কিন জাতীয় দলের কোচ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অলিভার কান
বায়ার্ন মিউনিখ দলের গোলরক্ষক হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন খেলেছেন৷ জার্মান জাতীয় দলেরও একজন খ্যাতিমান গোলরক্ষক হিসেবে কান পরিচিত ছিলেন৷ বেশ কয়েকবার জার্মান লিগ শিরোপা অর্জন করেন তিনি৷একসময় তিনি জার্মান জাতীয় দলের ক্যাপ্টেনও ছিলেন৷
ছবি: AP
মিশায়েল বালাক
নামি ফুটবল খেলোয়াড় বালাকের ফুটবল জীবন কখনও পূর্ণতা পায়নি৷ তাঁকে গণ্য করা হয় দ্বিতীয় স্থান অধিকারী তারকা হিসেবে৷ কারণ তিনি বিশ্বকাপ শিরোপা বা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশীপ – কোনটাই অর্জন করতে পারেননি৷ তবে বুন্ডেসলিগায় ২৬৭টি খেলায় অংশগ্রহণ করে ৭৭টি গোল করেন৷ মিশায়েল বালাক মোট চারবার লিগ শিরোপা জেতেন৷
ছবি: picture-alliance/Pressefoto UL
11 ছবি1 | 11
আগামী গ্রীষ্মেই ফুটবল বিশ্বকাপের সময় এই গোল-লাইন প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হবে৷ দক্ষিণ আফ্রিকায় গত বিশ্বকাপে একটি ম্যাচে রেফারির ভুল সিদ্ধান্তের জের ধরে ফিফা এই পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ জার্মানির বিরুদ্ধে ম্যাচে ইংল্যান্ডের ফ্র্যাংক ল্যাম্পার্ডের শটে বলটি গোল লাইনের ভিতরেই পড়েছিল৷ কিন্তু রেফারি গোল স্বীকার করেন নি৷
জার্মানির এই কোম্পানি ব্রাজিলের ১২টি স্টেডিয়ামেই তাদের যন্ত্রপাতি বসাচ্ছে৷ অন্যান্য প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে ‘গোল-কন্ট্রোল'-কেই বেছে নেওয়া হয়েছে৷ ব্রখহাউসেন বলেন, ‘‘আমাদের সুবিধা হলো, যে কোনো বলই কাজে লাগানো যায়৷ অর্থাৎ গ্রিনকিপার যে কোনো ব্যবস্থাতেই কাজ করতে পারবে৷ ঘাসের অবস্থা যেমনই হোক না কেন, ক্যামেরা লাগানো যায়, চালানো যায়৷ এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, রক্ষণাবেক্ষণের ঝামেলা নেই৷''
আখেন শহরের স্টেডিয়ামে ‘গোলকন্ট্রোল' কোম্পানি পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছে৷ মোট ১৪টি হাই-স্পিড ক্যামেরা ও একটি কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের ব্যয় প্রায় ২ লাখ ইউরো৷
অফিসে ব্রখহাউসেন আপাতত একা, কারণ তাঁর প্রায় ২০ জন সহকর্মী ব্রাজিলে অত্যন্ত ব্যস্ত৷ বিশ্বকাপ আপাতত প্রধান লক্ষ্য৷ জার্মান ফুটবল লিগ বুন্ডেসলিগাতেও শীঘ্র এই প্রযুক্তি চালু হবে এবং ‘গোলকন্ট্রোল' তার বরাত পাবে বলে ব্রখহাউসেনের আশা৷ ব্রখহাউসেন বলেন, ‘‘এটা তো ঘরের লিগ৷ জার্মান কোম্পানি হিসেবে আমরা খুব খুশি হবো যখন আমরা বুন্ডেসলিগার জন্যও কাজ করতে পারবো৷ প্রথম ও দ্বিতীয় ডিভিশনে সক্রিয় থাকতে পারলে সেটা হবে বিশাল এক সাফল্য৷''
হফেনহাইম ক্লাবও সম্ভবত খুশি হবে৷ কারণ তাদের একটি ম্যাচে রেফারি আবার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যার ফলে টিমের পয়েন্ট কমে গেছে৷ ফলান্ড গোল দেওয়া সত্ত্বেও রেফারি তাকে স্বীকৃতি দেননি৷ একেই বলে দুর্ভাগ্য৷