যে দেশে ৩০ বছর ধরে ফুটবল প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল, তারা আজ ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপে অংশ নেবার স্বপ্ন দেখছে – এবং সঙ্গত কারণেই৷ হ্যাঁ আফগানিস্তান, ২০১৩ সালে দক্ষিণ এশিয়া চ্যাম্পিয়ন হয় দেশটি৷
বিজ্ঞাপন
এশিয়ায় বিশ্বকাপ৷ সে বিশ্বকাপে এশিয়ার একটি দেশ – আফগানিস্তান – অংশগ্রহণ করবে, সেই ‘‘অসম্ভব স্বপ্ন''-ই দেখছেন আফগানিস্তান ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলি রেজা আঘাজাদা: ‘‘আমাদের ক্ষমতায় না কুলোতে পারে৷ আমরা হয়ত তা ঘটাতে পারব না৷ কিন্তু আমরা যে সে'বিষয়ে আদৌ কথা বলতে পারছি, তা থেকেই প্রমাণিত হয়, আমরা অতি স্বল্প সময়ে কতটা পথ এসেছি৷ আমরা যদি বিশ্বকাপ ফাইনালে না-ও যেতে পারি, বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং-এ অংশ নেওয়া, দেখা, আমাদের খেলার কিভাবে বিকাশ ঘটছে, আমাদের টেকনিক আরো ভালো হচ্ছে, সেটাই হবে আমাদের পক্ষে একটা বিরাট সাফল্য – বিশেষ করে আমাদের দেশে ফুটবলের প্রায় অকালমৃত্যু ঘটার পর৷''
আফগানিস্তানে জীবন ও যুদ্ধ
দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তানের ছবি তুলছেন ইরানের ফটোগ্রাফার মাজিদ সাঈদি৷ ছবিগুলো অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারও এনে দিয়েছে তাঁকে৷ চলুন তাঁর ক্যামেরার চোখে দেখা যাক আফগানিস্তানকে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলনা!
কাবুলে যু্দ্ধাহতদের জন্য তৈরি একটা নকল হাত নিয়ে খেলছে দুই কিশোরী৷ এমন কিছু ছবিই তেহরানের মাজিদ সাঈদিকে এনে দিয়েছে বেশ কিছু পুরস্কার৷
ছবি: Majid Saeedi
ছবিই বলে হাজার কথা
১৬ বছর বয়স থেকে ছবি তুলছেন মাজিদ৷ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কারণে মানবিক বিপর্যয়ের দিকেই তাঁর সমস্ত মনযোগ৷ জার্মানির ডেয়ার স্পিগেল, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের মতো ম্যাগাজিন এবং আন্তর্জাতিক পত্রিকায় ছাপা হয় তাঁর তোলা ছবি৷
ছবি: Majid Saeedi
আফগানিস্তানের শিশুরা
ডিডাব্লিউকে সরবরাহ করা মাজিদের ছবির অনেকগুলোতেই ফুটে উঠেছে আফগান শিশুদের জীবনে যুদ্ধের প্রভাব৷ এ ছবিটি যুদ্ধের কারণে হাত হারানো এক আফগান শিশুর৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদকের অভিশাপ
আফগানিস্তানের খুব বড় এক সমস্যা মাদক৷ বলা হয়ে থাকে বিশ্বের শতকরা ৯০ ভাগ মাদকদ্রব্যই নাকি উৎপন্ন হয় আফগানিস্তানে৷ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম হয় দেশটিতে৷ দেশের অনেক নাগরিক আফিমসেবী৷ জাতিসংঘের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আফগানিস্তানের অন্তত তিন লক্ষ শিশু নিয়মিত আফিম সেবন করে৷
ছবি: Majid Saeedi
রোল কল
কাবুলের এক অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ শুরুর আগে ক্যাডেটদের রোল কল চলছে৷ জার্মান সেনাবাহিনী ‘বুন্ডেসভেয়ার’ আফগান নিরাপত্তাকর্মীদের অনেক আগে থেকেই প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল৷ প্রশিক্ষণের লক্ষ্য, আফগান সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় আত্মনির্ভরশীল করে তোলা৷ ২০১৪ সালের শেষেই অবশ্য আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে জার্মানি৷
ছবি: Majid Saeedi
ভয়ংকর শৈশব
স্কুলে লেখাপড়া করতে যাওয়ার সুযোগ শিশুদের কমই মেলে৷ স্কুলে গেলে নগণ্য কারণেও হতে হয় শিক্ষকের কঠোর শাসনের শিকার৷ তা সহ্য করেও পুরো সময় থাকা হয়না, পরিবারের জন্য টাকা রোজগার করতে আগেভাগেই স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়তে হয় তাদের৷ আফগানিস্তানে শিক্ষার হার খুবই কম৷ ২০১১ সালে জার্মান সরকারের উদ্যোগে একটি তথ্যবিবরণী প্রকাশ করা হয়েছিল৷ তখন আফগানিস্তানের শতকরা ৭২ ভাগ পুরুষ আর ৯৩ ভাগ নারীই ছিল নিরক্ষর৷
ছবি: Majid Saeedi
বোরখা এবং পুতুল
আফগান নারীরা পুতুল বানাতে শেখার ক্লাসে৷ মালয়েশিয়ার একটি বেসরকারি সংস্থার অর্থায়নে এখানে পুতুল বানাতে শেখানো হয় তাঁদের৷ আফগান নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্যই এ উদ্যোগ৷
ছবি: Majid Saeedi
তালেবানের প্রতিশোধ
২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করার পরই আফগানিস্তানে হামলা চালায় তালেবান৷ প্রতিশোধমূলক সে হামলায় প্রাণ যায় চারজনের, আহত হয়েছিলেন ৩৬ জন৷ ছবিতে দু’জন আহতকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Majid Saeedi
খেলাধুলা
হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে একটু বিশ্রাম৷ আফগানিস্তানে শরীর চর্চা খুব জনপ্রিয়৷
ছবি: Majid Saeedi
যুদ্ধের আবাদ
গত ৩০টি বছর ভীষণ প্রভাব ফেলেছে আফগানদের জীবনে৷ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় যুদ্ধের প্রভাব৷
ছবি: Majid Saeedi
মাদ্রাসা
কান্দাহারের মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিশুরা৷
ছবি: Majid Saeedi
হত্যার প্রশিক্ষণ
কুকুরের লড়াইও আফগানিস্তানে খুব জনপ্রিয়৷ কুকুরদের এমনভাবে লড়াই করতে শেখানো হয় যাতে তারা প্রতিপক্ষকে একেবারে মেরে ফেলে৷ কুকুরের জীবনেও যুদ্ধের প্রভাব!
ছবি: Majid Saeedi
12 ছবি1 | 12
ফুটবলের প্রত্যাবর্তন
বলতে কি, আফগানিস্তানে পাক্কা ৩০ বছর ধরে ফুটবল প্রায় উঠে গিয়েছিল৷ জাতীয় দল ১৯৮৪ থেকে ২০০২ সাল অবধি কোনো ম্যাচ খেলেনি৷ আজ কিন্তু রাষ্ট্র পর্যায়ে চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজিত হয় – তা-তে অংশ নেয় দেশের ৩৪টি প্রদেশের সব ক'টি থেকে আগত দল৷ মরশুমের শেষে রাজধানী কাবুলে অনুষ্ঠিত হয় আটটি দলের একটি টুর্নামেন্ট – সে টুর্নামেন্ট চলে ৪৫ দিন ধরে৷ গাজি এবং কাবুল স্টেডিয়াম দু'টি ভরে যায় দর্শকে৷
২০১১ সালের প্রথম সিজনে আমন্ত্রণকর্তা টেলিভিশন সংস্থা একটি এক্স-ফ্যাক্টর গোত্রীয় টিভি শো সৃষ্টি করে৷ কোন প্লেয়ার কোন দলে খেলবে, শো'র দর্শকরা ভোট দিয়ে তা নির্ধারণ করেন৷ ফরম্যাটটি খুবই জনপ্রিয় হয়৷ সে'বছরই আফগানিস্তান দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশন কাপ টুর্নামেন্টে রানার-আপ হয় – এবং ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন! বিজয়ের পথে আফগানিস্তান ছ'বারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে হারায় ২-০ গোল: নেপালের কাঠমান্ডুতে সেই বিজয়ের দৃশ্য আফগানিস্তানের মানুষ ভুলে যাননি, যেমন তারা ভোলেননি কাবুলের রাজপথে আনন্দের জোয়ার, যুদ্ধ সত্ত্বেও, তালেবান সত্ত্বেও৷
আফগানিস্তানের ফুটবল সমিতি কিন্তু তৈরি হয় ১৯২২ সালে; আফগানিস্তান ফিফা-তে যোগ দেয় ১৯৪৮ সালে৷ ৩০ বছর অনুপস্থিতির পর তাদের বিশ্ব ফুটবল পরিবারে প্রত্যাবর্তনের পিছনে সবচেয়ে বড় দান সম্ভবত প্রিমিয়ার লিগের৷ বিভিন্ন প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব আফগানিস্তানের কোচ ও প্লেয়ারদের প্রশিক্ষণের জন্য দুবাইতে কোচিং কোর্সের ব্যবস্থা করেছে৷ আজ আফগানিস্তান ফিফা তথা এশীয় ফুটবল বিকাশ নিধির অর্থানুকুল্য পাচ্ছে বটে – কিন্তু কাবুলের গাজি স্টেডিয়ামে তালেবানের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরি করার বিভীষিকা পুরোপুরি মিলিয়ে যেতে আরো কিছুটা সময় লাগবে৷