ইউরোপীয় ইউনিয়নে খাদ্য নিরাপত্তাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে৷ সেই অ্যাডিটিভ পরীক্ষা বা অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় বিশেষ কোনো ফাঁক নেই, বলা চলে৷ ওদিকে সুপারমার্কেট ভরে যাচ্ছে ‘সংযোজনদ্রব্য’ যুক্ত খাদ্যে৷
বিজ্ঞাপন
ফুড অ্যাডিটিভ দিয়ে খাবারের রং ফেরানো হয়; মিষ্টত্ব যোগ করা হয়; অথবা খাবার সংরক্ষণ করা হয়৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নে এ ধরনের সব অ্যাডিটিভ খাবারের লেবেলে ঘোষণা করা বাধ্যতামূলক৷ পণ্যের লেবেলে অ্যাডিটিভ যোগ করার উদ্দেশ্য ও কোন অ্যাডিটিভ যোগ করা হচ্ছে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে৷ ইইউ-তে অনুমোদিত সব অ্যাডিটিভের আগে একটি ই- নম্বর থাকে, যেমন ই৪১৫, যা কিনা সানথাম গাম বা রবার৷ সাধারণ যে অ্যাডিটিভগুলো যোগ করা হয়ে তাকে, সেগুলি হল অ্যান্টিঅক্সিডান্ট; খাওয়া যায়, এমন রং; ইমাল্সিফায়ার; স্ট্যাবিলাইজার; জেলি করার পদার্থ; ঘন করার পদার্থ; সংরক্ষণ করার পদার্থ; মিষ্টি করার পদার্থ৷
চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় ৯ খাবার
প্রযুক্তির উন্নয়নে সময়ের সাথে তাল মেলাতে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যবলেট, মোবাইল ইত্যাদি ব্যবহারের কারণে শরীরের মহা মূল্যবান অঙ্গ চোখ দুটোর ওপর পড়ছে বাড়তি চাপ ৷ তাই চোখকে সুস্থ রাখে এমন কিছু খাবারের কথা জেনে নিন ছবিঘর-এ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চোখের স্বাস্থ্যে গাজরের তুলনা নেই
গাজরে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, যা চোখের জন্য ভালো৷ অর্থাৎ চোখের জ্যোতি বাড়ায় এবং ছানি পড়া দীর্ঘায়িত করে৷ তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুদের গাজর খাওয়ার অভ্যাস করা প্রয়োজন৷ তাছাড়া বিভিন্ন আলু নানাভাবে খাওয়া হলেও, মিষ্টি আলু সেভাবে খাওয়া হয় না৷ অথচ এই মিষ্টি আলুতেও রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন৷
ছবি: Colourbox/M. Velychko
সবুজ শাক-সবজি
আজকের যুগে স্বাস্থ্য সচেতন সকলেই কম-বেশি জানেন যে, নিজেকে সবুজ বা তরুণ রাখার মূলমন্ত্র হলো সবুজ শাক-পাতা খাওয়া৷ চোখের স্বাস্থ্যের জন্যও প্রয়োজন সবুজ শাক-সবজি, কারণ এ সবে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আর লুটিন, যা কোনো নীল আলো বা লাইটকে চোখের রেটিনার ওপর প্রভাব ফেলা থেকে বিরত করে৷
ছবি: picture alliance/C. Mohr
টমেটো
অতিরিক্ত আলোতে কাজ করার ফলে যে সমস্যা হয়, তা কমায় টমেটোয় থাকা লাইকোপিন৷ চোখের জন্য যা দরকার, যেমন আঁশ, খনিজ ক্যারোটিন – এ সবই রয়েছে রসালো টমেটোতে৷
ছবি: imago/JuNiArt
মুরগির মাংস
মুরগির মাংসে রয়েছে প্রচুর জিঙ্ক এবং ভিটামিন ‘বি’, যা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে৷ মুরগির মাংস নানাভাবে খাওয়া যেতে পারে৷ এমন কি ছোটরাও খেতে পারে এই মাংস৷
ছবি: Fotolia/Barbara Pheby
কমলালেবু
কমলালেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লুটিন এবং ভিটামিন ‘সি’, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী৷ ভিটামিন ‘সি’ চোখের দৃষ্টি নরমাল বা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে৷
ছবি: Fotolia/cut
ডিমের কুসুম
ডিমের কুসুমের গুণের কথা কম-বেশি সকলেই আমরা জানি৷ এতে রয়েছে লুটিন এবং যথেষ্ট পরিমাণে জিংক, যা চোখকে ‘মাসকুলার ডিজেনারেশন’ সমস্যা থেকে বাঁচায়৷ এ সমস্যা সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পরে দেখা দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
যেসব মাছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, সেগুলো চোখের জন্য বেশ উপকারী৷ স্যামন, সার্ডিন, ম্যাকরেল, কড, টুনা – এ সমস্ত মাছ চোখের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে এবং চোখকে নানা সমস্যা থেকে দূরে রাখে৷ শরীরে প্রোটিনের অভাব হলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ তাই মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদি খেতে হবে আর তা একেবারে ছোটবেলা থেকেই৷
ছবি: Fotolia/Printemps
রঙীন ফল ও সবজি
হলুদ, সবুজ, কমলা রঙের, অর্থাৎ গাজর, কমলা, পেঁপে, ক্যাপসিকাম, ভুট্টা ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের ফলমূল ও শাক-সবজি, যেগুলোয় ভিটামিন ‘এ’ আছে, এমন খাবার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকা উচিত৷ নিয়মিত এই কাজটি করলে চোখের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া হবে৷ এ কথা বলেন জার্মানির বন শহরের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক হলৎস৷
ছবি: BGNes
বাঁধাকপি
বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ যা চোখের জন্য ভালো৷ বাঁধাকপি দামে সস্তা এবং সব জায়গায় পাওয়া যায় তাছাড়া সহজে নষ্ট হয়না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চোখের স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিন
সুন্দর এই পৃথিবীতে আমরা সুন্দর, স্লিম আর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য কত কী-ই না করি৷ অথচ অবহেলিত হয় আমাদের চোখ দুটো৷ চোখের বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্য কসমেটিক্সের কথা যেভাবে ভাবা হয়, চোখের ভেতরের স্বাস্থ্যের কথা সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে চোখের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিনযুক্ত খাবার যথেষ্ট পরিমাণে খেলে চোখ থাকবে সুস্থ৷ দৃষ্টিশক্তি হারালে কিন্তু এই সুন্দর ভুবনের প্রায় সবই মনে হবে বৃথা, জীবনকে মনে হবে মূল্যহীন!
ছবি: www.shalimoff.com
10 ছবি1 | 10
ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফুড অ্যাডিটিভের ওপর নজর রাখে ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটি বা এফসা৷ তাদের ফুড অ্যাডিটিভ সংক্রান্ত একটি প্যানেল আছে (এএনএস)৷ এই প্যানেল যাবতীয় সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও তার ফলাফল, ও সেই সঙ্গে পদার্থটির সম্ভাব্য বিষক্রিয়া সংক্রান্ত তথ্য ঘেঁটে দেখে তাদের মতামত দেয়৷ যেহেতু অধিকাংশ প্রচলিত অ্যাডিটিভ বা সংযোজনদ্রব্যের অনুমোদন গত শতাব্দীর আশির বা নব্বই-এর দশক থেকে – এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে সত্তরের দশক থেকে – সেহেতু এফসা আপাতত সব অনুমোদিত অ্যাডিটিভের পুনর্মূল্যায়ন করছে, যা শেষ হবে ২০২০ সালের মধ্যে৷ আর কিছু না হোক, কিছু কিছু অ্যাডিটিভ – যেমন ফুড কলর –ইত্যাদির অ্যাক্সেপ্টেবল ডেইলি ইনটেক (এডিআই) কমিয়ে দেওয়া হতে পারে৷ এডিআই বলতে বোঝায়, একজন মানুষ দিনে তার খাদ্যের সঙ্গে একটি বিশেষ অ্যাডিটিভের কতোটা, বা কী পরিমাণে গ্রহণ করতে পারে৷
ই১০৪ কুইনোলিন ইয়েলো বা ই১১০ সানসেট ইয়েলো-র মতো খাদ্যে সংযোজনীয় রঙের প্রয়োজন পড়ে যদি প্রসেসিং বা প্রক্রিয়াজাত করার সময় খাবারের আদত রং বদলে যায়৷ প্যাকেজ করা খাবারটা যা-তে আরো মুখরোচক দেখায়, সেজন্যও রং ব্যবহার করা যেতে পারে৷ যেসব খাবারের কোনো রং নেই, সেগুলোতেও রং যোগ করা হয় ঐ একই কারণে৷ রং বাদ দিলে, ক্যালসিয়াম কার্বনেট (ই১৭০), ল্যাকটিক অ্যাসিড (ই২৭০), সাইট্রিক অ্যাসিড (ই৩৩০),পেক্টিন (ই৪৪০), ফ্যাটি অ্যাসিড (ই৫৭০) বা নাইট্রোজেন (ই৯৪১) গোত্রীয় অ্যাডিটিভ আকছার যোগ করা হয়৷ চিজ আর ড্রায়েড সসেজের ওপরে যে নাটামাইসিন (ই২৩৫), অথবা নুন যা-তে দলা না পাকিয়ে যায়, তার জন্য যে সোডিয়াম ফেরোসায়ানাইড (ই৫৩৫) ব্যবহার করা হয়, তার ব্যবহার আরেকটু বেশি সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত৷
ফুড অ্যাডিটিভের সপক্ষে যে যুক্তিটি প্রায়ই ব্যবহার করা হয়, সেটি হল: বহু খাবারদাবারে এমনিতেই এই সব পদার্থ থাকে – যেমন আপেলের মধ্যে পাওয়া যাবে রিবোফ্লাভিন (ই১০১), ক্যারোটিন (ই১৬০এ), অ্যান্থোসায়ানিন (ই১৬৩), এছাড়া প্রচলিত অ্যাসেটিক অ্যাসিড, অ্যাস্কর্বিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড ইত্যাদি৷ এক্ষেত্রে যে কথাটা উহ্য থাকে, সেটি হলো এই যে, প্রকৃতিদেবী লক্ষ লক্ষ বছরের ‘গবেষণায়' তাঁর রাসায়নিক ভাঁড়ার বা রান্নাঘরে যে রেসিপিগুলি স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলেছেন, মানুষের তৈরি অ্যাডিটিভ তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে কিনা৷ দ্বিতীয়ত, মানুষের তৈরি অ্যাডিটিভের দীর্ঘমেয়াদি কুফল বা বিষক্রিয়তা নিয়েও পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি৷ বলতে কি, প্রসেসড বা প্রক্রিয়াজাত খাদ্য সম্পর্কেই – অন্তত পশ্চিমে – গভীর দ্বিধা দেখা দিয়েছে, মানুষজন ঝুঁকছেন অরগ্যানিক ফুডের দিকে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷