1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফেঁসে যাচ্ছে ইউনাইটেড হাসপাতাল!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ জুন ২০২০

ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুনে করোনা আইসোলেশন সেন্টারে পাঁচ রোগীর মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছে পুলিশের তদন্ত কমিটি৷ রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার কারণেই রোগীদের মৃত্যু হয়েছে৷

Bangladesch Brand in einem Krankenhaus in Dhaka
ছবি: Reuters

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, ওই হাসপাতালের একটি রুম এবং বাইরে সংলগ্ন এলাকায় তাবু দিয়ে আইসোলেশন সেন্টার করা হয়েছিলো৷ রুমে পাঁচটি বেডে ছিলেন পাঁচজন রোগী আর বারান্দার তাবুতে বসতেন চিকিৎসক ও নার্সরা৷ তাবুর এসিতে ‘স্পার্ক’ হয়ে আগুন লাগে৷ এতে এসির নীচে একটি বেডেও আগুন লাগে৷ সেখান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে৷ আগুন লাগার পর চিকিৎসক ও নার্স থাকলেও তারা বের হয়ে যান৷ কেউ রোগীদের রক্ষার চেষ্টা করেননি৷ সেখানে ছিল না আগুন নেভানোর কোন ব্যবস্থা৷

গত ২৭ মে রাতে গুলশানে বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালের মূল ভবনের বাইরে নির্মিত করোনা ইউনিটে আগুন লাগে৷ আর সেই আগুনে সেখানে চিকিৎসাধীন পাঁচজন রোগীই মারা যান৷

‘‘তাবুতে একজন ডাক্তার ও দুইজন নার্স ছিলেন৷ কিন্তু আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তার চলে যান৷ এরপর নার্সরাও চলে যান,’’ ডয়চে ভেলেকে বলেন তদন্তের সুপারভাইজিং কর্মকর্তা গুলশান জোনের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী৷ ‘‘একজন ক্লিনার ইয়াসিন আরাফাত শুধু তার ফ্লোর পরিস্কার করার ‘মপ' দিয়ে এসির আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন৷ এসি আগুনে গলে গলে বেডের উপর পড়লে সে তা সরানোর চেষ্টা করেন৷ কিন্তু ভেতরের রুমে পাঁচ জন রোগীকে বের করে আনা বা উদ্ধারের কেউই কোনো চেষ্টা করেনি,’’ যোগ করেন তিনি৷

সুদীপ কুমার চক্রবর্তী

This browser does not support the audio element.

কর্তৃপক্ষের গাফিলতির প্রমাণ মিলেছে

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগুন লাগার দুই আড়াই মিনিটের মধ্যে তাবু ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়৷ রোগীদের কক্ষেও সেই ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে৷ এই ধোঁয়া হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী৷ কারণ সেখানে এসি পুড়ছিল, স্যানিটাইজার ছিল, অনেক ধরনের দাহ্য ও ধাতব পদার্থ ছিল৷ আর এই গ্যাসেই পাঁচজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে৷

করোনা আইসোলেশন সেন্টারে আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা ছিল না৷ এমনকি ছিল না অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার, যা থাকলে আগুন নেভানো সম্ভব হতো৷ কোনো ফায়ার হাইড্রেন্ট, হোস পাইপ, বালতি বা বালুও ছিল না৷ ছিল না হাসপাতালের কোনো অগ্নি নির্বাপক দলও৷

ইউনাইটেড হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন সেন্টার এবং মূল ভবনের বাইরে যে তাবু নির্মাণ করা হয় তারও কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি৷

করোনা আইসোলেশন সেন্টারে আগুন লাগে রাত ৯টা ২০ মিনিটে৷ ফায়ার সার্ভিস খবর পায় আরো ৩৫ মিনিট পর৷ তারা ১০ মিনিটের মধ্যেই চলে আসে৷ রাত নয়টা ৫৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে৷ এরপর তারা পাঁচ রোগীর মৃতদেহ উদ্ধার করে৷

সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ফায়ার সার্ভিস আসার আগে আগুন নেভানো বা ওই পাঁচজন রোগীকে উদ্ধারের কোনো চেষ্টাই করা হয়নি৷ আমরা এই ঘটনায় চরম দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার প্রমাণ পেয়েছি, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷’’

‘ফায়ার সার্ভিসেকেও অন্য রোগীরা খবর দিয়েছেন’
ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে আগুন লাগার সময় সেখানে ছিলেন ওই সেন্টারে ভর্তি রোগী ভেরন অ্যান্থনী পলের (৭৪) মেয়ে জামাই রোনাল্ড নিকি গোমেজ৷ তিনি সেন্টারের বাইরে ছিলেন৷ ওইদিনই বিকেলে পরীক্ষায় তার শ্বশুরের করোনা নেগেটিভ আসায় তাকে করোনা সেন্টার থেকে হাসপাতালের বেডে নেয়া বা ছেড়ে দেয়ার কথা ছিল৷ সেজন্যই তিনি গিয়েছিলেন৷ কিন্তু মূল ডাক্তার না থাকায় তিনি অপেক্ষা করছিলেন৷

তিনি বলেন, ‘‘আমার সামনেই আগুন লাগে৷ কিন্তু কেউ রোগীদের উদ্ধার বা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেনি৷ আমি বারবার হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে অনুরোধ করলেও কাজ হয়নি৷ এমনকি ফায়ার সার্ভিসেকেও হাসপাতালের অন্য রোগীরা খবর দিয়েছেন৷ আমি চেষ্টা করেও আমার শ্বশুরকে বাঁচাতে পারিনি৷’’

তিনি বলেন, ‘‘পাঁচজন রোগী হাসাপতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায়ই মারা গেছেন৷’’ এ কারণে তিনি গুলশান থানায় ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে মামলা করেছেন৷ মামলায় ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিচালক, চিকিৎসক, নার্স ও করোনা ইউনিটের অন্য কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে৷

রোনাল্ড নিকি গোমেজ

This browser does not support the audio element.

তদন্ত প্রতিবেদন যাবে হাইকোর্টে
আগামীকাল (১৪ জুন) তদন্ত প্রতিবেদনটি হাইকোর্টে উপস্থাপন করা হবে৷ হাইকোর্ট ২ জুন এ নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদনের পাশাপাশি ইউনাইটেড হাসপাতালকেও ব্যাখ্যা দিতে বলেছে৷ ১৪ জুন এইসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আইনি ব্যবস্থার নির্দেশ দেবেন আদালত৷ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘নতুন করে মামলার দরকার নাই৷ স্বজনদের দায়ের করা মামলার তদন্ত চলছে৷ দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে৷ মামলার সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনটিও সংযুক্ত করা হবে৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেনোভাবেই এই মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না৷’’

মামলার তদন্তকারীরা জানান, এরইমধ্যে এই ঘটনার জন্য যারা সরাসরি দায়ী তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে৷ তাদের গ্রেপ্তার করে আরো যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করা হবে৷ মামলার তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের টেকনিক্যাল রিপোর্টও যুক্ত করা হবে৷

ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ এখন চুপ

তবে এই তদন্ত প্রতিবেদন ও মামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি ইউনাইটেড হাসপাতালের যোগাযোগ ও ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ডা. শাগুফা আনোয়ার৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন যেহেতু বিষয়টি একটি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাই কোনো মন্তব্য করতে চাই না৷ বিষয়টি আমাদের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার দেখছেন৷’’

কিন্তু আগুনে পাঁচ রোগীর মৃত্যুর পর তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের কোনো অবহেলা নেই দাবি করে বলেছিলেন, ‘‘আমরা রোগীদের বাঁচাতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছি৷’’

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ