1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফেরত আসা অভিবাসন-প্রত্যাশীদের কষ্টের জীবন

৭ জুলাই ২০১৯

সুখের আশায় দেশ ছাড়েন তারা৷ কিন্তু পথিমধ্যে দুর্ঘটনা-দুর্বিপাকে ধুলিসাৎ হয় তাদের সুখ-স্বপ্ন৷ ভাগ্য বিড়ম্বিত হয়ে দেশে ফিরেও কষ্টের জীবন বয়ে বেড়াতে হয় বাংলাদেশের অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে৷

Outside view of Dhaka airport in Bangladesh Flughafen
ছবি: DW/M. Zahidul Haque

এমন ভাগ্যবিড়ম্বিত দরিদ্র বাংলাদেশির একজন কমল সওদাগর৷ সুখের আশায় লিবিয়া হয়ে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালেও অনেক দুর্ভোগের পর দেশে চলে আসতে হয় তাকে৷

দালাল ধরে প্রথমে লিবিয়া পৌঁছান ৩৩ বছর বয়সি কমল৷ কিন্তু চাঁদার দাবিতে তাঁকে সেখানে বন্দি করে রাখে পাচারকারীরা৷ এরপর প্রায় ১২ লাখ টাকা (১৪ হাজার ইউএস ডলার) দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনে পরিবার৷

ঋণ করে এই টাকা জোগাড় করে তার পরিবার৷ অনেক হতাশা নিয়ে যখন দেশে ফেরেন, তখন তিনি চাকরিহীন এবং ১২ লাখ টাকার ঋণের বোঝা তাঁর কাঁধে৷

এমন পরিস্থিতি কমলকে আত্মহত্যার পর্যায়েও নিয়ে গিয়েছিল৷ ‘‘বিষন্নতা গ্রাস করেছিল আমাকে৷ কারণ, আমাকে বাঁচানোর জন্য সুদে টাকা নিয়েছিল পরিবার৷ টাকার জন্য প্রতিদিনই বাড়িতে আসতো মহাজন৷ এমন এক সময় এসেছিল, আমি ভাবতাম গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করব,'' রয়টার্সকে বলেছেন তিনি৷

প্রতিবছর এরকম কতজন মানুষ দেশে ফিরে আসেন তার সঠিক কোনো তথ্য সরকারিভাবে পাওয়া যায় না৷ অধিকারকর্মীরা বলছেন, কমলের মতো এমন হাজার হাজার ভাগ্যাহত অভিবাসন-প্রত্যাশী দেশে ফিরেও সংগ্রাম করছেন৷ বিপরীতে তেমন কোনো সহায়তার ব্যবস্থা নেই সরকারি তরফে৷

ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ৬৪ জন বাংলাদেশিকে গতমাসে তিউনিসিয়া উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়৷ মে মাসে ওই অঞ্চলেই নৌকা ডুবে মারা যান ৩৭ জন বাংলাদেশি অভিবাসন প্রত্যাশী৷

ব্র্যাকে মাইগ্রেশন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘‘ফেরত আসা ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকারি কোনো উদ্যোগ নেই৷ আমাদের সব নীতি লোক পাঠানোর উপর ভিত্তি করে৷ এমনকি ফিরে আসা অভিবাসীদের সঠিক সংখ্যা জানার উপায় পর্যন্ত নেই৷''

২০১৭ সালে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ (রামরু)-এর এক গবেষণায় দেখা যায়, ফেরত আসা অভিবাসীদের ৫১ শতাংশই বিদেশের মাটিতে প্রতারণা কিংবা খারাপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন৷ আবার বিদেশে যাওয়ার জন্য দালালদের টাকা দিলেও প্রতি পাঁচজনে একজন তাতে সফল হননি৷

ধার-দেনা করে ইটালির পথ ধরেছিলেন গার্মেন্টসকর্মী মোহাম্মদ জাকির হোসেন৷ কিন্তু ইটালি পাঠানোর পরিবর্তে তাকে লিবিয়ায় কাজ দেয় মানবপাচারকারীরা৷ সেখানে জাকিরের আয় থেকে টাকা কেটে রাখতো তারা৷

ধারের সাড়ে চার লাখ টাকা শোধের আশায় ঢাকায় ফিরে ফুটপাতে একটি ফলের দোকান দিয়েছেন তিনি৷ কিন্তু তাতে কোনো কাজ না হওয়ায় একই পথে পুনরায় বিদেশে পাড়ি জমানোর ইচ্ছা এখনো আছে তার মনে৷

‘‘হয়তো আপনি আমাকে পাগল বলতে পারেন, কিন্তু সুযোগ পেলে আবারো ধার করে আমি বিদেশের পথ ধরব৷ বৃদ্ধ মা-সহ পরিবারের পাঁচ সদস্য এখনো আমার উপর নির্ভরশীল৷ দোকান থেকে যা আয় করছি, তা দিয়ে চলছে না,'' রয়টার্সকে বলেছেন জাকির৷

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেন্টস (আইওএম)-এর মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান প্রবীণা গুরুং বলেন, ‘‘টাকা শোধ করতে মহাজনদের চাপে দেশে ফিরেও অনেক অভিবাসী বাড়িতে থাকেত পারেন না৷ অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনে ব্যর্থতা, সামাজিক অন্তর্ভূক্তি ও মানসিকভাবে ভোগান্তির কারণে পুনরায় অনিরাপদ অভিবাসনের দিকে ধাবিত হন অনেকে৷ কেউ কেউ আত্মহত্যার পথও বেছে নেন৷''

এমবি/এসিবি (রয়টার্স)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ