কয়লা কেলেঙ্কারি মামলায় আবার অভিষেককে শমন পাঠিয়েছে ইডি। শমন পাঠানো হয়েছে তার শ্যালিকাকেও।
বিজ্ঞাপন
সোমবার তিনি নিজেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, মঙ্গলবার সকালে কয়লা কেলেঙ্কারি মামলায় ইডির শমন পেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ২ এপ্রিলের মধ্যে, অর্থাৎ, শুক্রবারের মধ্যে তাকে কলকাতায় সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি-র অফিসে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। শমন পাঠানো হয়েছে অভিষেকের শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরকেও। বস্তুত, শমন পেয়েই কলকাতা হাইকোর্টে ইডি-র বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করেছেন মেনকা। এদিন দুপুরেই তার শুনানি হওয়ার কথা বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যের একক বেঞ্চে।
কয়লা পাচার কাণ্ডে এর আগেও অভিষেককে শমন পাঠিয়েছে ইডি। তবে এবার দিল্লির অফিসাররা কলকাতায় গিয়ে অভিষেককে জেরা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। ইডি-র একটি সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, অভিষেক এবং তার পরিবারের সম্পত্তি নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ইডি-র হাতে আছে। সে বিষয়ে অভিষেক প্রশ্ন করা হতে পারে।
এসএসসি কেলেঙ্কারিতে মন্ত্রী গ্রেপ্তার, বান্ধবীর বাড়ি থেকে ২২ কোটি
দীর্ঘ জেরার পর গ্রেপ্তার করা হলো পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। এসএসএসি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত অভিযোগে। পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতার বাড়ি থেকে ২২ কোটি উদ্ধার। তার দাবি, পার্থই টাকা রাখতে বলেছিলেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শুক্রবার সকাল থেকে জেরা
শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র অফিসাররা পৌঁছে যান পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে। পার্থ তখন ঘুমাচ্ছিলেন। তাকে ঘুম থেকে তুলে শুরু হয় জেরা ও তল্লাশি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
২৭ ঘণ্টা ধরে জেরা
গ্রেপ্তার করার আগে ২৭ ঘণ্টা ধরে জেরা করে ইডির অফিসাররা। শুধু পার্থের বাড়ি নয়, মোট ২০টি জায়গা তল্লাশি চালান ইডি-র কর্মকর্তারা। প্রায় ৯০ জন ইডি কর্মী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাতে থাকেন। উপরের ছবিতে কলকাতার নাকতলায় পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের বাড়ি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বান্ধবীর বাড়ি থেকে ২২ কোটি উদ্ধার
তল্লাশির সময় অভিনেত্রী ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়ের ফ্ল্যাট থেকে ২২ কোটি টাকা উদ্ধার করে ইডি। টাকা অর্পিতার শোয়ার ঘরের আলমারিতে চটের বস্তায় রাখা ছিল। অর্পিতা ইডি-র অফিসারদের জানিয়েছেন, পার্থই তার কাছে টাকা রেখেছিলেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাতভর টাকার হিসাব
ইডি-র অফিসাররা ব্যাংক থেকে দশটি টাকা গোনার মেশিন ও কর্মীদের নিয়ে আসেন। সারারাত ধরে টাকা গোনা হয়। দেখা যায়, ২২ কোটি টাকা আছে। তাছাড়া ৫০ লাখ টাকার সোনার গয়না ও প্রচুর ডলার পাওয়া যায়। বেশ কিছু নথিপত্রও নিয়ে গেছে ইডি। অর্পিতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। উপরের ছবিতে অর্পিতার দক্ষিণ কলকাতার আবাসনের ফ্ল্যাটের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কীসের টাকা
আদালতে ইডি জানিয়েছে, অর্পিতা এসএসসি-তে বেআইনি নিয়োগের সঙ্গে জড়িত। তিনি অন্যতম চক্রান্তকারী। তার বাড়িই ছিল নিয়োগের আখড়া। সেই নথিপত্র ইডি পেয়েছে। মন্ত্রীর নামের সরকারি খামও পাওয়া গেছে। অর্পিতা ইডিকে জানিয়েছে, টাকাটা পার্থ চট্টোপাধ্যায তাকে রাখতে দিয়েছিলেন। তিনি এনিয়ে কিছুই জানেন না। ইডি এখন অর্পিতার বাড়ি থেকে পাওয়া বিদেশি মুদ্রা নিয়েও আলাদা মামলা করতে পারে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কে এই অর্পিতা?
অর্পিতা মুখোপাধ্যায় অভিনেত্রী। তিনি বাংলা ও ওড়িয়া ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাছাড়া তিনি নেল আর্ট করতেন। পার্থর সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট ফোনে অর্পিতা সারাদিন কথা বলতেন বলে অভিযোগ। তিনি দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী দুর্গাপুজোর সঙ্গেও জড়িত। এই পুজোর সঙ্গে পার্থও য়ুক্ত।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কী বলছেন অর্পিতার মা
মেয়ের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে তার মা মিনতি বলেন, ‘‘বাবা-মা যা চাইবে ছেলেমেয়ে কি সেটাই করবে? সেরকম হলে তো মেয়ের বিয়ে দিতে পারতাম। ওর কথা খবরে শুনেছি। তবে অর্পিতা এই কাজ করেছে কি না, সেই সত্যাসত্যও বিচার করা হবে।’’
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পার্থ হাসপাতালে
গ্রেপ্তার করার পর পার্থকে নিজেদের হেফাজতে রাখে ইডি। তারপর আদালতে পার্থ জানান, তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। তখন আদালত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বলে। এসএসকেএম হাসাপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। ইডি অবশ্য আপত্তি জানিয়েছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ইডির দাবি মেনে
ইডি পরে কলকাতা হাইকোর্টে জানায়, পার্থকে কল্যাণীর এইমসের চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখুন। কিন্তু বিচারপতি বলেন, কল্যাণীর এইমসের উপর তার ভরসা নেই। পরে তিনি নির্দেশ দেন, ভুবনেশ্বরের এইমসে পার্থর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শান্তিনিকেতনে পার্থর বাড়ি?
শান্তিনেকতনে ছয়টি বাড়ি পার্থর বলে অভিযোগ উঠেছে। তারমধ্যে একটি বাড়ির কেয়ারটেকার বলেছেন, একটি বাড়িতে পার্থর আসা-যাওয়া ছিল। একটি সাত বিঘের জমিও পার্থর বলে অভিযোগ। তবে সরকারি আধিকারিকরা বলেছেন, তারা খোঁজ না করে এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পার্থর বিরুদ্ধে অভিযোগ
পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তখন এসএসসি কেলেঙ্কারি হয়। পরীক্ষা দিয়ে যারা উঁচু স্থান পেয়েছে, তাদের চাকরি না দিয়ে, পয়সা দিয়ে নিয়োগের অভিযোগ ওঠে। এই নিয়োগের বিরুদ্ধে কলকাতায় দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই এই অভিযোগের তদন্ত করছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া
পার্থ চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্যতম বরিষ্ঠ মন্ত্রী। মমতার অত্যন্ত বিশ্বস্ত সৈনিক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হামেশাই অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে রাজ্যের নেতাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু পার্থকে গ্রেপ্তার করার পর তৃণমূলের বক্তব্য, অভিযোগ প্রমাণ হলে দল ও সরকার ব্যবস্থা নেবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সিপিএমের প্রতিক্রিয়া
সিপিএম সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে এসএসসি চাকুরিপ্রার্থীদের হয়ে মামলা লড়ছেন। বিকাশরঞ্জনের প্রতিক্রিয়া হলো, ''পার্থ হচ্ছেন দাবার ঘুঁটি, ইডির উচিত হরিশ চ্যাটার্জি রোডে তল্লাশি করা। সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে।'' তার দাবি, ''ইডি যেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে ধরবে, সেদিন পুরো দুর্নীতি সামনে আসবে।'' সিপিএম কর্মীরা এখন বিভিন্ন জেলায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
ছবি: Abp Photo/Sudipta Bhowmick
বিজেপি, কংগ্রেসের অভিযোগ
বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এসএসসি নিয়ে বিক্ষোভ-মঞ্চে যান। তিনি টুইট করে পার্থ ও অর্পিতা নিয়ে সোচ্চার হন। দিলীপ ঘোষও তাই। কংগ্রেসও এসএসসি কেলেঙ্কারি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
14 ছবি1 | 14
তৃণমূল অবশ্য গোড়া থেকেই ইডি এবং সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে সরব। তাদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই দুই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করছে। সোমবার ছাত্র পরিষদের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক দুইজনেই দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। মমতা বলেছিলেন, ''অভিষেক আজ খুব ভালো বলেছে। এবার হয়তো আজ অথবা কাল কোনো সংস্থা ওকে নোটিস ধরাবে।'' মমতার বক্তব্য, ''এর আগেও ওকে দুইবার নোটিস দেওয়া হয়েছে। ওর বউকেও নোটিস দিয়েছে। এবার হয়তো ওর দুই বছরের শিশুকেও নোটিস দেওয়া হবে।''
অভিষেকও তার বক্তৃতায় বলেছিলেন, ''মঙ্গলবার কিছু ঘটবে।'' তাহলে কি অভিষেক আগেই জানতে পেরেছিলেন যে মঙ্গলবার তাকে ইডি নোটিস পাঠাবে? তৃণমূলের এক নেতা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, তৃণমূল কোনো সভা করলেই ইডি বা সিবিআই তার পরদিন তৃণমূলের নেতাদের হেনস্থা করে। ২১ জুলাইয়ের সভার পরদিনি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান হয়েছিল এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার অভিষেক কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করার পরেই মঙ্গলবার তাকে নোটিস পাঠানো হলো।
বিজেপি নেতা সৌরভ সিকদারের বক্তব্য, ''ইডি এবং সিবিআইয়ের কাছে মামলার ফাইল আছে, সে কারণেই তারা নির্দিষ্ট কিছু নেতাকে ডাকছে। যদি রাজনৈতিক কারণেই একাজ করা হতো, তাহলে তো সমস্ত বিরোধী নেতাকেই ডাকতে পারতো কেন্দ্রীয় তদন্ত কমিটি।'' সৌরভের বক্তব্য, অন্যায় করলে তার তদন্ত হবেই। তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন!
এদিকে বুধবার ফের আদালতে শুনানি হওয়ার কথা পার্থ-অর্পিতা মামলার। তারা দুইজনেই এখন জেলে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলের সাবেক মহাসচিব এবং রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে দল এবং প্রশাসনের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।