ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা এক মানসিক ভারসাম্যহীন এক কিশোরীর গর্ভপাত ঘটাতে রাজি হয়নি দুটি হাসপাতাল। এ ঘটনা পর ফের আলোচনায় এসেছে পোল্যান্ডের গর্ভপাত আইন।
বিজ্ঞাপন
পোল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পোডালস্কি এলাকায় সম্প্রতি এই ঘটনা ঘটে। নিজের চাচার ধর্ষণের শিকার ১৪ বছর বয়সি মেয়েটি মানসিক স্থিতি না থাকায় কাউকে কিছু বলতে পারেনি। গর্ভবতী হয়ে পড়ার পর বিষয়টি তার চাচি জানতে পারেন। মেয়েটিকে নিয়ে হাসপাতালে যান গর্ভপাত করাতে। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। আইনের কথা বলে গর্ভপাত করাতে রাজি হয়নি দুটি হাসপাতালের কোনো চিকিৎসক। এই ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে দেশটির গণমাধ্যম ও রাজনীতিবিদরা।
২০২০ সালে পোল্যান্ডে সাংবিধানিক আদালত গর্ভপাত নিষিদ্ধ করে রায় দেয়। গতবছর তা আইনে পরিণত হয়। এর ফলে সেখানে এখন সব ধরনের গর্ভপাত নিষিদ্ধ। তবে ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হলে বা গর্ভবতীর জীবন শঙ্কায় পড়লে গর্ভপাত করার অনুমতি দেওয়া হয় আইনে। আইন লঙ্ঘন করে গর্ভপাত করলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। আইনটি পাসের পর এর সমালোচনা হয় এবং প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন হাজারো মানুষ।
গর্ভপাত বন্ধ পোল্যান্ডে, প্রবল প্রতিবাদ
নতুন গর্ভপাত আইন চালু হয়েছে পোল্যান্ডে। আর তারপরেই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন হাজারো মানুষ।
ছবি: Omar Marques/Getty Images
বন্ধ গর্ভপাত, পথে মানুষ
পোল্যান্ডে গর্ভপাত কার্যত নিষিদ্ধ করে নতুন আইন চালু করা হয়েছে। ধর্ষণ বা মায়ের জীবন সংশয় হলেই শুধু গর্ভপাত করা যাবে। এই আইনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। ওয়ারশতে প্রতিবাদের ছবি।
ছবি: Omar Marques/Getty Images
'আই থিংক, আই ফিল, আই ডিসাইড'
প্রতিবাদকারীদের স্লোগান ছিল, 'আই থিংক, আই ফিল, আই ডিসাইড', সহজ বাংলায় 'আমিই ভাবব, আমিই অনুভব করব, আমিই সিদ্ধান্ত নেব'। অর্থাৎ, গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট মানুষ নেবে, রাষ্ট্র নয়।
ছবি: Omar Marques/Getty Images
লাল মশাল নিয়ে
ওয়ারশ-র রাস্তায় হাতে মশাল নিয়ে নেমেছিলেন প্রতিবাদকারীরা। লাল মশাল। রাতে রাস্তা জুড়ে হাঁটছিলেন তাঁরা। ফলে গাড়ি চলাচল করতে পারেনি।
ছবি: Omar Marques/Getty Images
নারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে বলা হচ্ছে, নারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ। পোল্যান্ডের বাম দলের নেত্রী ওয়ান্ডা নাওয়িকা বলেছেন, ক্ষমতাসীন দল নারীর বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে জিততে পারবে না।
ছবি: Omar Marques/Getty Images
মানবাধিকার কমিশনের বিরোধ
পোল্যান্ডের মানবাধিকার কমিশনও গর্ভপাত আইনের বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে, সরকার নারীবিরোধী। এটা এক ধরনের অত্যাচার। প্রতিবাদে সামিল ছিলেন প্রচুর নারী। ওয়ারশর কনস্টিটিউশনাল কোর্টের সামনে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন এই নারী।
ছবি: Omar Marques/Getty Images
অভিনব প্রতিবাদ
গর্ভপাত আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছিল অভিনব। লাল মশাল তো ছিলই, সেই সঙ্গে ছিল নানা ধরনের পোস্টার ও বাহারি জিনিস।
ছবি: Omar Marques/Getty Images
রাতভর প্রতিবাদ
বুধবার প্রায় সারা রাত প্রতিবাদ হয়। গত বছর পোল্যান্ডে দুই হাজারেরও কম গর্ভপাত হয়েছে। ধর্মীয় কারণে অনেক চিকিৎসক গর্ভপাত করাতে চান না। এখন তো আইন করেই তা কার্যত নিষিদ্ধ করা হলো। তারই প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখিয়েছেন হাজারো মানুষ।
ছবি: Omar Marques/Getty Images
7 ছবি1 | 7
আইনটির কারণে জটিলতা তৈরি হয়েছে। পোডালস্কির ওই কিশোরীর গর্ভপাতের বিষয়ে আইনজীবী লিখিত অনুমতি দিয়েছেন। এরপরও চিকিৎসকরা আপত্তি জানিয়েছেন, কারণ, আইনের এক বিধানে বলা আছে, নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিপন্থি মনে করলে বা বিবেকের দায়বদ্ধতার কারণ দেখিয়ে যে কোনো চিকিৎসক গর্ভপাতে অসম্মতি জানাতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে যিনি অসম্মতি জানাবেন, তিনি এমন অন্য কোনো চিকিৎসকের নাম বলে দেবেন, যিনি গর্ভপাত করাতে পারবেন।
স্থানীয় সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন 'পলিটিকা'র প্রতিবেদনে বলা হয়, কিশোরী ও তার চাচিকে ওই দুই হাসপাতাল কোনো ধরনের সহায়তাই করেনি। ‘এটা আমাদের সমস্যা নয়’ বলে তাদের চলে যেতে বাধ্য করে তারা। আইন অনুযায়ী কোনো চিকিৎসক ব্যক্তিগতভাবে গর্ভপাতে অসম্মতি জানাতে পারলেও পুরো হাসপাতালের এরকম আচরণ আইনানুগ নয়।
পোল্যানে্ড এফইডিইআরএ ফাউন্ডেশন ফর উইম্যান অ্যান্ড ফ্যামিলি প্ল্যানিং অবশেষে ওই কিশোরীর সহায়তায় এগিয়ে আসে। তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীটিকে রাজধানী ওয়ারশতে এনে গর্ভপাত করানো হয়।
সংগঠনটি জানায়, ২০২০ সালে পোল্যান্ডে ১০৭৬টি গর্ভপাতের ঘটনা ঘটলেও আইন পাসের পরের বছর তা ১০৭-এ নেমে আসে। তবে এফইডিইআরএ জানায়, এখনো অগোচরে বছরে দেড় লাখের মতো গর্ভপাত হচ্ছে দেশটিতে। গত নভেম্বরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গতবছর ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরও গর্ভপাত করাতে না পেরে ছয় নারী মারা যায়।
পোডলস্কির ওই কিশোরীর সঙ্গে হাসপাতালগুলোর আচরণকে ‘অগ্রহণযোগ্য' বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী এডাম নেইডজিলস্কি। এ বিষয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এদিকে বিরোধী রাজনীতিবিদরা বলছেন, ‘বিবেকের দায়বদ্ধতার' বিধানটির বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে প্রস্তাব আনবেন তারা।
১৯৭৩ সালে এক মামলার রায়ে যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা পেয়েছিলেন গর্ভপাতের অধিকার৷ সেই অধিকার এখন আইনত নিষিদ্ধ৷ গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ...
ছবি: Evelyn Hockstein/REUTERS
৪৯ বছর পর…
১৯৭৩ সালের রো বনাম ওয়েড মামলা এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে নারী অধিকার ইতিহাসের মাইলফলক মামলার মর্যাদা পেয়েছে৷সম্প্রতি ডবস বনাম নারীদের স্বাস্থ্য সংস্থার গর্ভপাত বিষয়ক এক মামলায় ৪৯ বছর আগে দেয়া গর্ভপাতের অধিকার আইনত নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট৷ সর্বোচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চলছে বিক্ষোভ৷ ওপরের ছবিতে নিউইয়র্কের বিক্ষোভ মিছিল৷
ছবি: CAITLIN OCHS/REUTERS
নারীরা ভীত
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানানো এক নারীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘ (এই রায়ে) আমাদের সবারই ভয় পাওয়া উচিত৷’’ বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নিলে অনেক নারীর জীবন সংকটে পড়বে৷
ছবি: Caitlin Ochs/REUTERS
এ রায় গর্ভধারণ বাধ্যতামূলক করার নামান্তর...
অনেকেই মনে করছেন গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নেয়া মানে অনেক নারীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে গর্ভধারণে বাধ্য করা৷ তাই ছবির প্ল্যাকার্ডে ‘‘কোনো বাধ্যতামূলক গর্ভধারণ নয়’’ লিখে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাচ্ছেন এক নারী৷ ওহাইয়োর কলম্বাস শহরের ছবি৷
ছবি: Megan Jelinger/REUTERS
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও গর্ভপাত
এক নারীর (মাঝখানে) হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘অ্যাবরশন ইজ হেল্থকেয়ার৷’’ তার মতো অনেকেই মনে করেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীর সুস্থ জীবনের স্বার্থেই গর্ভপাতের অধিকার থাকা প্রয়োজন৷ ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মায়ামির ছবি৷
ছবি: Marco Bello/REUTERS
‘শরীর আমার, সিদ্ধান্তও আমার...’
মায়ামির বিক্ষোভ সমাবেশের ছবি৷এক বিক্ষোভকারীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘নট ইয়োর বডি, নট ইওর লাইফ, নট ইয়োর চয়েস৷’’ এর মাধ্যমে আদালতকে তিনি বলতে চাইছেন, শরীর যেহেতু নারীর, জীবন নারীর, তাই গর্ভপাত করাবেন কি করাবেন না তা ঠিক করার অধিকারও নারীরই থাকা উচিত৷
ছবি: Marco Bello/REUTERS
‘শরীর থেকে দূরে রাখুন’
নিউিয়র্কের রাস্তায় এক নারী আদালতকে বলছেন, ‘‘আইনগুলো আমার শরীর থেকে দূরে রাখো৷’’
ছবি: Brendan McDermid/REUTERS
নারীদের বাঁচান!
ওয়াশিংটনের এক বিক্ষোভকারী প্ল্যাকার্ডে লিখেছেন, ‘‘নারীরা মারা যাবেন৷’’ অর্থাৎ, তিনি মনে করেন গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নেয়ার কারণে অনেক নারীর অকালমৃত্যু হবে৷ তাই নারীদের জীবন রক্ষার স্বার্থেই গর্ভপাতের অধিকারের দাবি জানাচ্ছেন তিনি৷
ছবি: Evelyn Hockstein/REUTERS
নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নাও!
ম্যাসাচুসেটসের এক বিক্ষোভকারীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘ আমাদের শরীর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নাও!’’
ছবি: Brian Snyder/REUTERS
পুরুষদের হুমকি...
নিউইয়র্কের এই নারী জানাচ্ছেন, রো বনাম ওয়েড মামলার রায়ে দেয়া গর্ভপাতের অধিকার ফিরে না আসা পর্যন্ত তিনি পুরুষদের সঙ্গে যৌনমিলনে বিরত থাকবেন৷