গান্ধী পরিবার কংগ্রেসের নেতৃত্বে রয়েছে। বিহারের ফলাফল দেখে ফের সেই নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব হলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতারা।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
বিজ্ঞাপন
বিহার ভোটের পরে ফের কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরব হলেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা কপিল সিবাল। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাম না করে তিনি রাহুল গান্ধীর সমালোচনা করেছেন। সমালোচনা করেছেন কংগ্রেসের ভিতরে চলা পরিবারতন্ত্রের। এর আগেও এই বিষয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন কপিল। মাসখানেক আগে কংগ্রেসের একাধিক প্রবীণ নেতা চিঠি লিখে কংগ্রেস নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার কথা বলেছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা কার্যকরী হয়নি।
বিহার ভোটে বাম এবং আরজেডির সঙ্গে জোট করেছিল কংগ্রেস। ৭০টি আসনে তারা লড়াই করেছিল। কিন্তু ২০টি আসনও জিততে পারেনি। অন্য দিকে, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশের উপনির্বাচনেও ধরাশায়ী হয়েছে কংগ্রেস। কার্যত অস্তিত্ব সংকটে দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত জাতীয় দলটি।
কপিল সিবাল সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আত্মবিশ্লেষণের সময় আর নেই। কংগ্রেস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হারিয়ে যেতে বসেছে। এই মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা সহজেই অনুমেয়। দীর্ঘদিন ধরেই রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের ভিতরে বিদ্রোহ তৈরি হয়েছে। রাহুল ঠিকমতো নেতৃত্ব দিতে পারছেন না বলে অনেকরই অভিমত। সোনিয়া গান্ধীও এখন অসুস্থ। ফলে গান্ধী পরিবার যে ভাবে কংগ্রেসের সর্বোচ্চ আসন ধরে রেখেছে, তা নিয়ে অনেকেরই নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে। শক্তিশালী নেতাদের নেতৃত্বে নিয়ে এলে এই পরিস্থিতির বদল ঘটতে পারে বলেও অনেকে মনে করেন।
ভারত চলে বাপের নামে
বংশ নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয় ভারতে৷ কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন ভারতের বৈশিষ্ট্যই বংশপরম্পরা৷ রাজনীতি থেকে শুরু করে খেলা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সাম্রাজ্য নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: ANNE-CHRISTINE POUJOULAT/AFP/Getty Images
আম্বানির রাজত্ব
বিখ্যাত শিল্পপতি ধীরুভাই আম্বানি যে সাম্রাজ্য গড়ে গিয়েছিলেন, উত্তরাধিকারসূত্রে তার সম্রাট বনেছেন মুকেশ এবং অনীল আম্বানি৷ বাবার রাজ্য বেশ ভালোভাবেই সামলাচ্ছেন তাঁরা৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগিয়েও নিচ্ছেন বহুদূর৷
ছবি: picture-alliance/AP
বচ্চন, দ্য বচ্চন
অমিতাভ বচ্চন সম্পর্কে নতুন করে কাউকে কিছু বলার নেই৷ গত শতাব্দীর ৭০-এর দশক থেকে যে বচ্চন রাজত্ব শুরু হয় বলিউডে, এখনও তা টলাতে পারেনি কেউই৷ তাঁর নামের অংশীদার হয়েই বড় পর্দায় এসেছেন অভিষেক বচ্চন৷ অনেকেই মনে করেন, অমিতাভের ছেলে না হলে বর্তমান অবস্থানে আসা কঠিনই হতো জুনিয়র বচ্চনের৷
ছবি: ANNE-CHRISTINE POUJOULAT/AFP/Getty Images
ছোট দেওল, বড় দেওল
বলিউডের আরেক শীর্ষ অভিনেতা ধর্মেন্দ্র৷ জনপ্রিয় এই অভিনেতার বংশধরেরা অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও নাম কামিয়েছেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে৷ সানি দেওল ও ববি দেওলের কিছু ছবি হিট হলেও তুখোড় অভিনয়শিল্পীদের সাথে প্রতিযোগিতায় বেশ পিছিয়েই পড়েন তাঁরা৷ চলচ্চিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে নাম কামিয়েছেন ধর্মেন্দ্রর মেয়ে ইশা দেওলও৷
ছবি: Ambalika Misra
কাপুর খানদান
কাপুরদের রাজত্বের ইতিহাস অন্য অনেকের চেয়ে বেশ লম্বা৷ ব্রিটিশ শাসনামলে যখন নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগ ছিল, তখন হিন্দি সিনেমার পথিকৃৎদের একজন ছিলেন পৃথ্বিরাজ কাপুর৷ চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য পদ্মভূষণ দেয়া হয় তাঁকে৷ তাঁকে দিয়েই শুরু কাপুর বংশের চার প্রজন্মের রাজত্ব৷ রাজকাপুর, তাঁর ছেলে ঋষি কাপুর এবং সর্বশেষ এখন রণবীর কাপুর আনন্দ দিয়ে চলেছেন বলিউড ভক্তদের৷
ছবি: DW
প্রযোজনা, পরিচালনা, অভিনয়
বাবা মহেশ ভাট বিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং পরিচালক৷ কিন্তু মেয়ে আলিয়া ভাট সেদিকে না গিয়ে সোজা অভিনয়ে৷ শুধু নাম নয়, মেধাতেও যে বাপের চেয়ে কোন অংশে কম না, তা এখনও প্রমাণ করে চলেছেন আলিয়া ভাট৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
গান্ধী বংশ
ভারতের রাজনীতি, নেহেরুর গড়ে যাওয়া রাজত্ব এবং কংগ্রেস দায়িত্ব এখন রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ কংগ্রেস পরবর্তীতে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলে রাহুলই হতে পারেন প্রধানমন্ত্রী৷
ছবি: UNI
উত্তর প্রদেশের যাদব
মুলায়েম সিং যাদবের ‘বংশের সুনাম রক্ষা’ করছেন অখিলেশ যাদব৷ সভাপতি হিসেবে বাবার সমাজবাদী দলের হাল তো ধরেছেনই, বাবার মতো হয়েছেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
বিহারের যাদব
বিহার প্রদেশের আরেক যাদব, রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের ছোট ছেলে তেজস্বী যাদব৷ জোট সরকারের সময় উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Imago/Hindustan Times/A. Yadav
কাশ্মিরের মুফতি
জম্মু ও কাশ্মীরের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি৷ সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ সাঈদের মেয়ে মেহবুবা৷ রাজ্যটিতে তিনিই প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী৷ সমর্থকরা তাঁকে সম্মান করে ‘বাজি’ বলে ডাকেন, উর্দুতে যার অর্থ ‘বড় বোন’৷
ছবি: Imago/Hindustan Times/N. Kanotra
জম্মুর আবদুল্লাহ
জম্মু ও কাশ্মীরের আরেক নেতা ফারুক আবদুল্লাহর ছেলে ওমর আব্দুল্লাহ৷ তিনিও বাবার কাছ থেকে শুধু রাজনীতিই নয়, পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর পদও৷
ছবি: picture-alliance/epa/F. Khan
আল্লা রাখার উত্তরাধিকার
শুধু উপমহাদেশ নয়, তবলায় জাদু দেখিয়ে পুরো বিশ্বকেই তাক লাগিয়েছিলেন আল্লা রাখা৷ তাঁর সন্তান ওস্তাদ জাকির হোসেন ধরে রেখেছেন সেই বংশপরম্পরা, ছড়িয়ে যাচ্ছেন তবলার ম্যাজিক৷
ছবি: AP
বাপ কা বেটি
উপমহাদেশের আরেক গর্ব পণ্ডিত রবিশংকর৷ এই সিতার মায়েস্ত্রোর যোগ্য কন্যা আনুশকা শংকর৷ বিশ্বের নামকরা সিতারবাদকদের মধ্যে অন্যতম স্থান দখলে নিয়েছেন আনুশকা৷
ছবি: AP
গীতা ফোগাট
আমির খানের চলচ্চিত্র দঙ্গল-এর সৌজন্যে মোটামোটি সবাই এখন জানেন গীতা ফোগাটের নাম৷ বিখ্যাত কুস্তিগীর মহাবীর ফোগাটের মেয়ে গীতা ভারতের হয়ে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কুস্তিতে স্বর্ণপদক পাওয়া নারী৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
বিচারক চন্দ্রচূড়
ওয়াই ভি চন্দ্রচূড় ছিলেন ভারতে প্রখ্যাত প্রধান বিচারপতি৷ তাঁর ছেলে ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড়ও আইনজ্ঞ হিসেবে ধরে রেখেছেন সুনাম৷ ধনঞ্জয়ও এখন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
14 ছবি1 | 14
২০১৪ সাল থেকে কংগ্রেসের মুখ রাহুল গান্ধী। একের পর এক জাতীয় এবং আঞ্চলিক নির্বাচনে তিনি বিজেপির কাছে পরাজিত হয়েছেন। তার পরেও তাঁর নেতৃত্বে থাকা উচিত কি না, এ নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন কপিলরা। কিন্তু মুশকিল হলো, কংগ্রেসেরই একাংশ গান্ধী পরিবারের বাইরে অন্য কাউকে নেতৃত্বে দেখতে চান না। ফলে গান্ধী পরিবার নিয়ে কংগ্রেসের ভিতরেই একাধিক লবি তৈরি হয়েছে।
অন্য দিকে কংগ্রেসের যুব নেতৃত্বের বহু নেতাই দল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। রাহুল গান্ধীর এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া দলের সঙ্গে তীব্র বিতর্কে জড়িয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। রাহুলের আরেক বন্ধু শচীন পাইলট রাজস্থানে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করে বসেছিলেন। বিভিন্ন রাজ্যের শক্তিশালী নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। গোষ্ঠী সংঘাত চূড়ান্ত। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসকে রক্ষা করতে পারেন একজন শক্তিশালী নেতা। সকলে যাঁকে মানতে বাধ্য হবেন। কপিল সিবালরা আগেও বলেছেন, রাহুল গান্ধী সেই কাজটি করে উঠতে পারছেন না।
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''কংগ্রেসের মধ্যে বয়স্ক বনাম তরুণ নেতাদের লড়াই বেশ কিছুদিন ধরে চলছে। এর আগে ২৮ জন নেতা সই করে সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখেছিলেন। এই প্রবীণ নেতাদের রাহুল আবার কোণঠাসা করার চেষ্টা করছেন। আর তাঁরাও প্রাসঙ্গিক থাকার জন্য বিদ্রোহের ধ্বজা তুলেছেন।'' শরদের মতে, ''তাঁরা যা বলছেন, তা মিথ্যা নয়। তবে এ কথাও সত্য যে, দলের এই ভরাডুবিতে এই ধারভারহীন নেতাদের অবদানও যথেষ্ট।''
প্রশ্ন হলো, বিহারের ভরাডুবির পরে কংগ্রেস কি নিজেদের সমস্যা বুঝতে পারবে? কপিল বলেছেন, আত্মসমীক্ষা করার আর সময় নেই। কংগ্রেস নেতৃত্ব কি তা বুঝতে পারছে? সেইটেই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।