হংকংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি ছিন্ন করে চীনকে কড়া বার্তা দিলেন ট্রাম্প। পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে চীন।
বিজ্ঞাপন
অ্যামেরিকা-চীন বিতর্ক নতুন মাত্রা পেল। হংকংয়ের সঙ্গে অর্থনৈতিক যোগাযোগ বন্ধের কথা ঘোষণা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি হংকংয়ের আন্দোলন স্তব্ধ করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে চীন। হংকংয়ে বিশেষ নিরাপত্তা আইন জারি করা হয়েছে। তার জেরেই ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ। অ্যামেরিকার এই ঘোষণার তীব্র নিন্দা করেছে চীন। অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ট্রাম্প হংকং প্রসঙ্গে দু'টি বিষয়ের কথা জানান। এক, হংকংয়ের সঙ্গে অ্যামেরিকার যে বিশেষ বাণিজ্য চুক্তি ছিল, তা তুলে নেওয়া হচ্ছে। এবং দুই, যে সমস্ত চীনা সংস্থা, ব্যক্তি, ব্যাঙ্ক হংকংয়ের ঘটনায় চীনকে সাহায্য করেছে কিংবা মদত দিয়েছে, তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা।
২০১৯: বিক্ষোভের বছর
জাতিগত বৈষম্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধের দাবি নিয়ে এবছর সারা বিশ্বের লাখো মানুষ বিক্ষোভ করেছেন৷ ভারত থেকে হংকং বা ইরাক থেকে সুদান, দাবি আদায়ে পুরো সাল জুড়েই রাস্তায় গণআন্দোলন চলেছে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/S. Sen
ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
বছরের শেষ দিকে এসে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে পুরো ভারতে বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে৷ ধর্মীয় বৈষম্যপূর্ণ ওই আইনের বিরুদ্ধে সব ধর্মের লোকজন একত্রিত হয়ে আন্দোলন করছেন, এক সপ্তাতেই ঝরেছে অন্তত ২৩ প্রাণ৷
ছবি: Reuters/D. Sissiqui
বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে রাজধানী দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু হলে পুলিশ পাল্টা আঘাত করে; ক্যাম্পাস পরিণত হয় রণক্ষেত্রে৷
ছবি: Reuters/A. Abidi
হংকংয়ের স্থিতিশীলতায় ধাক্কা
চীনের মূলভূখণ্ডে বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে প্রস্তাবিত একটি বিল বাতিলের দাবিতে জুন থেকে হংকংয়ে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল তা এখন স্বায়ত্তশাসিত এ অঞ্চলের স্বাধিকার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে৷ গণদাবির মুখে সেপ্টেম্বরেই বিলটি বাতিল করা হলেও আন্দোলন থামেনি৷
ছবি: Reuters/T. Peter
নির্বাচনেও প্রভাব
হংকংয়ের স্বাধিকার আন্দোলনে লাখো মানুষ সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছে৷ এ আন্দোলন সাধারণ মানুষের মধ্যে এতটাই সাড়া ফেলেছে যে নভেম্বরে এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্য নগরীর স্থানীয় নির্বাচনে গণতন্ত্রপন্থিরা বিশাল জয় পেয়েছেন৷
ছবি: Reuters/T. Siu
আবারও উত্তপ্ত হচ্ছে ইরাক
সাবেক স্বৈরশাসক সাদ্দামের আমল থেকেও ‘খারাপ সময়ের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন ইরাকিরা৷ দুর্নীতি, বেকারত্ব, সরকারের উপর ইরানের প্রভাব ইত্যাদি নানা অভিযোগ নিয়ে অক্টোবর থেকে সাধারণ মানুষ সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছে৷ বিক্ষোভ দমনে সরকারের নৃংসতায় এরই মধ্যে ৪৬০ মানুষ নিহত এবং ২৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন৷
ছবি: Reuters/A. Jadallah
বৈরুতে সংহতির মুষ্টি
জ্বালানি ও তামাক পণ্যের উপর বাড়তি করারোপ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অক্টোবরে যে আন্দোলন শুরু হয় তা থামাতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান সাদ হারিরি৷ কিন্তু পদ থেকে সরে গেলেও হারিরি ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকে যাওয়ায় বিক্ষোভ চলছে৷
ছবি: Reuters/A. M. Casares
ইরানে জ্বালানি তেল নিয়ে বিক্ষোভ
বিশ্বের বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ ইরানের উপর যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে নভেম্বর থেকে দেশটিতে জ্বালানি তেলের উপর রেশনিং শুরু হয়, পেট্রোলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ যার বিরুদ্ধে ২১টি নগরীতে সহিংস বিক্ষোভ হয়৷ বিক্ষোভে হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের৷
ছবি: Getty Images/AFP
ক্ষমতার লড়াই
এপ্রিলে সুদানের ক্ষমতা থেকে ওমর আল-বশিরকে উৎখাতের পর থেকেই দেশটির সেনাবাহিনী ও গণতন্ত্রপন্থিদের মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে যাওয়ার লড়াই চলছে৷ যাতে কয়েক ডজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP
রঙিন বিক্ষোভ
চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ এবং আরো উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, অবসর ভাতা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার দাবিতে দুই মাস আগে চিলিতে বিক্ষোভ শুরু হয়৷ তবে বিক্ষোভে এখনো নৃশংসতার খবর পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Reuters/I. Alvarado
স্বাধীনতার লড়াই
স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বার্সেলোনা বহুদিন ধরেই স্বাধীনতা চাইছে৷ স্বাধীনতা প্রশ্নে গণভোটের আয়োজন হলেও কেন্দ্র সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপে তা ভণ্ডুল হয়ে যায়৷ মাদ্রিদ সরকারের দমনের বিরুদ্ধে কাতালুনিয়ায় বিক্ষোভ তাই নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷
ছবি: REUTERS/J. Nazca
10 ছবি1 | 10
১৯৯২ সালের আইন অনুযায়ী হংকংয়ের সঙ্গে বিশেষ বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল অ্যামেরিকার। হংকং চীনের ছত্রছায়াতে থাকলেও তাদের বিশেষ অধিকার ছিল। এক ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করত তারা। চীনের ছত্রছায়াতে থেকেও গণতন্ত্রের আবহ ছিল সেখানে। শুধু তাই নয়, মুক্ত বাণিজ্যের বাজার ছিল। এই বিষয়গুলি মাথায় রেখেই ১৯৯২ সালে অ্যামেরিকা হংকংয়ের সঙ্গে বিশেষ বাণিজ্য চুক্তি করেছিল। ডনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য, সম্প্রতি হংকংয়ে চীন যে কাজ করেছে, তাকে আগ্রাসন বলা হয়। এর ফলে হংকং যে স্বাধীনতা ভোগ করত, তা আর থাকবে না। বহু মানুষ হংকং ছেড়ে পালিয়ে যাবেন। এই পরিস্থিতিতে হংকংয়ের সঙ্গে অ্যামেরিকার যে সম্পর্ক ছিল, তা আর রাখা সম্ভব নয়। মার্কিন কংগ্রেসে এর আগেই বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছিল। মঙ্গলবার ট্রাম্প বিবৃতি দিয়ে নতুন নিয়ম ঘোষণা করে দেন।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে চীন। বুধবার চীন জানিয়েছে, চীনকে অপবাদ দেওয়ার জন্যই এই কাজ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। শুধু তাই নয়, অ্যামেরিকার এই কাজকে বিদ্বেষপরায়ণ বলেও মন্তব্য করেছে চীন। তারাও অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে বলে হুমকি দিয়ে রেখেছে বেজিং।
অ্যামেরিকার বড় শত্রু কারা?
ইরানের সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে অ্যামেরিকার৷ আর চীনের সঙ্গে চলছে বাণিজ্য যুদ্ধ৷ মার্কিনিদের বিবেচনায় তাঁদের শত্রুদের চিনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Imago/UPI//Imago/Russian Look
উত্তর কোরিয়া
জরিপের মাধ্যমে অ্যামেরিকার শত্রুদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে গ্যালাপ৷ প্রতিষ্ঠানের ২০১৮ সালের জরিপে দেখা যায়, গত কয়েক বছরের মতো এবারও অ্যামেরিকার শত্রু তালিকার শীর্ষ দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার নাম আছে৷ ২০১৬ সালে ১৬ ভাগ মানুষ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক শক্তিকে হুমকি হিসাবে বিবেচনায় নিয়েছিলেন৷ ২০১৮ সালে এসে হুমকি বিশ্বাসকারীদের সংখ্যা ৫১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাশিয়া
অ্যামেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার শত্রুতার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের৷ এর মধ্যে উত্থান-পতনও দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে৷ ২০১৬ সালে ১৫ শতাংশ অ্যামেরিকান বলেছেন, রাশিয়া তাঁদের সবচেয়ে বড় শত্রু৷ ২০১৮ সালে গিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশে৷
চীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার বাণিজ্য যুদ্ধ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনীতিকেও৷ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে চীন৷ দুই দেশের সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্ত উভয়ের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে৷ ২০১৬ সালে অ্যামেরিকার ১২ শতাংশ মানুষের বিবেচনায় চীন ছিল দেশটির সবচেয়ে বড় শত্রু৷ তবে, ২০১৮ সালে দেশটিকে বড় শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ১১ শতাংশ অ্যামেরিকান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইরান
২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অ্যামেরিকানদের কাছে তাঁদের শত্রু তালিকায় শীর্ষে ছিল ইরান৷ পরের কয়েক বছর পরিস্থিতি ভালো হয় কিছুটা৷ তবে, ২০১৫ সালে ইরানকে নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ৯ শতাংশ অ্যামেরিকান৷ ২০১৮ সালে এমন চিন্তার মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ শতাংশে৷
ছবি: Imago/UPI//Imago/Russian Look
সিরিয়া
গ্যালাপের পাশাপাশি অ্যামেরিকার শত্রুদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে ক্যানাডাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন গ্লোবালাইজেশন বা সিআরজি৷ তাদের বিবেচনায় ইরান, রাশিয়া ও ফিলিস্তিনের সঙ্গে সিরিয়ায় ক্ষমতাসীনদের সখ্যের কারণে সিরিয়ার সঙ্গে অ্যামেরিকার বিরোধ হয়েছে৷ আবার অ্যামেরিকা-ইসরায়েল মৈত্রীর ক্ষেত্রে বিপরীত অবস্থানে আছে সিরিয়া৷ ভূ-রাজনৈতিক কারণে সিরিয়ার উপর আধিপত্য রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Elfiqi
ভেনেজুয়েলা
সিআরজি বলছে, ভেনেজুয়েলার তেলের মজুদ ও সামাজিক-রাজনৈতিক কারণে অ্যামেরিকার সঙ্গে তাঁদের বিরোধ দীর্ঘদিনের৷ যদিও বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভেনেজুয়েলা, তবুও সেই বিরোধ কমেনি মোটেও৷ দেশটির ক্ষমতাসীন মাদুরো সরকারকে হটাতে তৎপর অ্যামেরিকা৷ সম্প্রতি অ্যামেরিকার সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Miraflores
6 ছবি1 | 6
করোনাকালে ক্রমশই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে অ্যামেরিকার। কয়েক মাস ধরে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্য চীনকে লাগাতার দায়ী করছেন ট্রাম্প। তাঁর বক্তব্য, চীন চাইলে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া আটকাতে পারতো। চীনের উহানের একটি ল্যাব থেকেই এই ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে একাধিক বার অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প। জানিয়েছেন, তাঁর কাছে প্রমাণ আছে। শুধু তাই নয়, চীনকে সাহায্য করছে, এই অভিযোগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন ট্রাম্প। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের 'দাদাগিরি' বন্ধ করার জন্যও উঠে পড়ে লেগেছে অ্যামেরিকা।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার হংকং প্রসঙ্গে বলার সময় আসন্ন নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকেও এক হাত নেন ট্রাম্প। অভিযোগ, আবহাওয়া এবং পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্যারিস চুক্তির প্রসঙ্গ টানছেন বাইডেন। যা অ্যামেরিকাকে আরও দুর্বল করবে এবং চীনকে শক্তিশালী করবে। বাইডেন এই কথা বলে চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে সাহায্য করতে চাইছেন বলে ট্রাম্পের দাবি।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, চীনের সঙ্গে তিক্ততা বাড়িয়ে নিজের জাতীয়তাবাদী চরিত্র স্পষ্ট করতে চাইছেন ট্রাম্প। জাতীয়তাবাদের অস্ত্রেই ভোট বৈতরণী পার করতে চাইছেন তিনি। কারণ, করোনা সংকটে তাঁর জনপ্রিয়তা অনেকটাই কমেছে। ফলে জাতীয়তাবাদ ছাড়া আপাতত তাঁর হাতে আর কোনও অস্ত্র নেই।