1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফের দুর্ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী, পথ সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৫ জানুয়ারি ২০২৪

ফের পথ দুর্ঘটনার কবলে মুখ্যমন্ত্রী৷ দ্রুতগতির গাড়ি ঢুকে পড়ে তার কনভয়ে৷ সামান্য চোট পেয়েছেন তিনি৷ প্রশ্ন উঠেছে পথ নিরাপত্তা নিয়ে৷

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়
আবার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ছবি: PRABHAKAR/DW

বুধবার পূর্ব বর্ধমানে প্রশাসনিক সভা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ আবহাওয়া খারাপ থাকায় সেখান থেকে হেলিকপ্টার যাত্রা বাতিল করেন তিনি৷ তার বদলে সড়কপথে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হন৷

দুর্ঘটনায় মমতা

কলকাতায় ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী৷ একটি গাড়ি খুব দ্রুত গতিতে তার কনভয় ঢুকে পড়ে৷ তার জেরে দুর্ঘটনা৷ 

বর্ণনা দিতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘একটা গাড়ি আমার গাড়ির সামনে আচমকা চলে আসে৷ ২০০ কিলোমিটার বেগে ওই গাড়িটা যাচ্ছিল৷ আমার গাড়ি গলি দিয়ে বেরোচ্ছিল৷ আমার চালক বুদ্ধিমানের মতো জোরে ব্রেক কষে৷ পুরো ড্যাশবোর্ডটা এসে আমার মাথায় লেগেছে৷ একটু রক্তও পড়েছে৷ এখন ফুলে আছে সামান্য৷’’

মুখ্যমন্ত্রীর চোট গুরুতর নয়৷ তার কপালের বাঁদিকে একটা টেপ লাগানো ছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার গাড়ির কাচ খোলা ছিল৷ যদি কাচ বন্ধ থাকত, আমার মৃত্যু হতে পারত৷ মানুষের আশীর্বাদে বেঁচে গিয়েছি৷’’ পুলিশকে এই ঘটনার তদন্ত করার নির্দেশ দেন মমতা৷

শহরে ফিরে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা৷ রাজভবন থেকে বেরিয়ে জানান, তিনি হাসপাতালে যাবেন না৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মাথাটা এখনও টনটন করছে৷ তাই নিয়েই কাজ করলাম৷ আমার মনে হচ্ছে জ্বর আসছে৷ গা গোলাচ্ছে৷ হালকা ঠান্ডাও লাগছে৷’’

প্রশ্নে নিরাপত্তা

মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির কাছাকাছি দ্রুতগতির গাড়ি চলে আসায় ভিভিআইপি নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ কী করে একটি গাড়ি এভাবে কাছাকাছি এসে পড়ল? কে ছিলেন সেই গাড়ির চালক?

বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের কাছে যদি গাড়ি এসে পড়ে, তিনি দুর্ঘটনায় পড়েন, তা হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব তো পুলিশের৷ এই দপ্তর মুখ্যমন্ত্রী দেখেন৷’’

মুখ্যমন্ত্রীবলেন, ‘‘অনেক সময়ে অনেকে অন্য কারও গাড়ি ব্যবহার করে৷ সে বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখুুক৷ আইনের হাতে ছেড়ে দিচ্ছি৷ এটা নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না৷’’

পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, ‘‘কোন গাড়ি মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে ঢুকে পড়েছে, আমরা তদন্ত করে দেখা হছে৷’’

অতীতে মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রামে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে গাড়িতে বসেই আহত হয়েছিলেন৷ প্রচণ্ড ভিড় তার গাড়ির উপরে হামলে পড়ে৷ মমতার পায়ে গুরুতর চোট লাগে, যার চিকিৎসা চলছে দীর্ঘদিন ধরে৷ দুর্ঘটনার পর তিনি হুইলচেয়ারে বসেই ২০২১ সালের ভোটের প্রচার করেছিলেন৷

গত জুনে উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় ফেরার সময় মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টারে গোলযোগ হওয়ায় জরুরি অবতরণ করাতে হয়৷ সেই সময় হেলিকপ্টার থেকে নামতে গিয়ে পা ও কোমরে চোট পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷

মমতার চলে আসা ভিড় বা দ্রুতগতির গাড়ি কিংবা ত্রুটিযুক্ত হেলিকপ্টারে সফর, এ সবই যে কোনো ভিভিআইপির নিরাপত্তা নিয়ে গাফিলতিকে সামনে আনে৷

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘ভারতের রাস্তায় পথ দুর্ঘটনা অনেকটাই বেড়েছে৷ সারা দেশেই হচ্ছে৷ ভারতে প্রতি ঘন্টায় ৩০-৩৫ জন পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন৷ মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও সেটা ঘটেছে৷ তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন৷’’

বুধবারের দুর্ঘটনার পর এআইসিসি নেতা জয়রাম রমেশ মুখ্যমন্ত্রীর সুস্থতা কামনা করে টুইট করেন৷ আজ, বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধীর ‘ন্যায় যাত্রা’ উত্তরবঙ্গে প্রবেশ করেছে৷ তার পদযাত্রায় নিরাপত্তার আয়োজন করেছে রাজ্য পুলিশ৷ মুখ্যমন্ত্রী দুর্ঘটনায় পড়ায় রাহুলের যাত্রা নিয়ে কংগ্রেসে উদ্বেগ রয়েছে৷

যদিও ২০০ কিলোমিটার গতিবেগে ছুটে আসা যে গাড়ির কথা মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সে ব্যাপারে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাসের মত, "২০০ কিলোমিটার গতিতে এখানে গাড়ি চলে না৷ দেশের খুব কম রাস্তাতেই এত জোরে গাড়ি চালানোর পরিকাঠামো আছে বলে আমার অনুমান৷ মুখ্যমন্ত্রী সেভাবে বলতে চাননি হয়তো৷ উনি সম্ভবত খুব দ্রুত গতি বোঝাতেই ২০০ কিলোমিটার বলেছেন৷"

দ্রুত সফর মানে নিরাপত্তার সঙ্গে আপস নয়: পার্থপ্রতিম বিশ্বাস

This browser does not support the audio element.

কতটা সুরক্ষিত গাড়ি?

প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর মত ভিভিআইপিরা উন্নত মানের যে গাড়ি ব্যবহার করেন, তা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে চালক ও আরোহীদের অনেকটাই রক্ষা করার গ্যারান্টি দেয়৷ কিন্তু বিভিন্ন ঘটনায় বার বার এই সুরক্ষা প্রশ্নের মুখে পড়েছে৷

বুধবার যে গাড়িতে করে মমতা বর্ধমান থেকে কলকাতায় ফিরছিলেন, সেই গাড়ি অনেক ভিভিআইপি ব্যবহার করেন৷ ৫০ লক্ষ টাকা দামের এই গাড়ি তার সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য ফাইভ স্টার রেটিং প্রাপ্ত৷ শুধু রাজনীতিক নয়, উচ্চবিত্ত ও সম্ভ্রান্ত মানুষজনের কাছে পছন্দের বিশেষ ব্র্যান্ডের গাড়িটি৷

তাহলে মুখ্যমন্ত্রী সেই গাড়ির সওয়ার হয়ে সরাসরি সংঘর্ষ বা অন্য কোনো বিপদ ছাড়াই আহত হলেন কী করে? শুধু তার গাড়ির চালক বিপদ এড়াতে সজোরে ব্রেক কষাতেই এমন পরিস্থিতি হল যে, সামনের আসনে বসা মুখ্যমন্ত্রীর গুরুতর চোট লাগতে পারতো!

এ ধরনের বহুমূল্য গাড়িতে এয়ারব্যাগ থাকে৷ এছাড়া জানলার কাচে থাকে বিশেষ প্রযুক্তি৷ সামনে বা পাশ থেকে আঘাত এলে এর সাহায্যে যাত্রী রক্ষা পেতে পারেন৷ তবে যাত্রীকে সিট বেল্ট পরা-সহ অন্যান্য বিধি মেনে চলতে হবে৷

কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে ভারতে পথ দুর্ঘটনায় এক লক্ষ ৬৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ মোট দুর্ঘটনার সংখ্যা চার লক্ষ ৬১ হাজার, যা ২০২১-এর তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেশি৷

অধ্যাপক বিশ্বাস বলেন, "রাস্তা চওড়া হচ্ছে, মসৃণ ও উন্নত হচ্ছে৷ সফরের সময় কমানোর জন্য সেটা জরুরি৷ কিন্তু চালকদের সচেতন হতে হবে৷ যানের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে৷ দ্রুত সফর মানে নিরাপত্তার সঙ্গে আপস নয়৷ এই সচেতনতার অভাবেই আমাদের দেশে বেশিরভাগ পথ দুর্ঘটনা হয়৷"

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ