ঝাপোরিজ্ঝিয়ার আরো পূর্বে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরমাণু কেন্দ্রের সামনে মিসাইল আক্রমণ চালালো রাশিয়া। মাইকোলাইভের ওই পরমাণু কেন্দ্রটিতে তিনটি পরমাণু চুল্লি আছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পরমাণুচুল্লিগুলি অক্ষত আছে। সবকটি সক্রিয়। তবে পরমাণুচুল্লি থেকে মাত্র এক হাজার ফুট দূরে মিসাইলটি এসে পড়ে বলে অভিযোগ। মিসাইল যেখানে এসে পড়েছে, সেখানে একটি বিরাট গর্ত তৈরি হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।
খারকিভের রাস্তায় শিম্পাঞ্জি
01:16
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সামাজিক মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, রাশিয়া অঘটন ঘটানোর পথে আরো এক ধাপ এগিয়েছে। গোটা পৃথিবীকে রাশিয়া সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে। তবে একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, মিসাইল আক্রমণে কারো মৃত্যু হয়নি। কেউ আহতও হননি। প্রতিটি চুল্লি পরাীক্ষা করে দেখা হয়েছে। সেখানে কোনোরকম সস্যা হয়নি।
এর আগে ঝাপোরিজ্ঝিয়াতেও একইরকম আক্রমণ চালিয়েছিল রাশিয়া। সেখানে একটি চুল্লি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। ওই প্রকল্পের ভিতর থেকে লড়াই চালাচ্ছিল রাশিয়ার সেনা। পরে পরমাণু বিশেষজ্ঞদের একটি দল সেখানে পৌঁছায় এবং সবকটি চুল্লি বন্ধ করে দেয়া হয়।
রুশ গোলায় লাগা আগুন যেভাবে নেভান ইউক্রেনীয় দমকলকর্মীরা
আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কাজের অভিজ্ঞতা ছিল ইউক্রেনের দমকলকর্মীদের। অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলার জিনিসপত্র থাকতো তাদের কাছে। কিন্তু রুশ আগ্রাসন কঠিন কাজকে আরো কঠিন করে দিয়েছে।
ছবি: Leah Millis/Reuters
জ্বলছে ঘর, পুড়ছে বাড়ি
সুবিশাল এক অ্যাপার্টমেন্টে রাশিয়ার গোলাবর্ষণের ফলে আগুন লাগে। খারকিভের আশেপাশের এলাকাগুলিতেও গোলাবর্ষণ চলে। যুদ্ধপীড়িত ইউক্রেনের দমকলকর্মীরা এখন জানেন, একাধিক বাড়িতে আগুন লাগলে কোনটিকে আগে বাঁচাতে হবে, কাদের প্রথমে উদ্ধার করতে হবে এবং একই সময়ে কিলোমিটার দূরে কারখানায় আগুন লাগলে, তা কীভাবে সামলাতে হবে।
ছবি: Leah Millis/Reuters
একযোগে হার না মানা লড়াই
ইউক্রেনের খারকিভ শহরের একটি দমকলকেন্দ্রের প্রধান রোমান কাশানভ রয়টার্সকে বলেন, "একই সময়ে ছয় বা সাতটি অ্যাপার্টমেন্ট জ্বলতে দেখছেন। অথচ আপনি জানেন না কিছু লোক আদৌ কোথায় রয়েছে। এদিকে আপনার কাছে মাত্র তিনটি ট্রাক আছে। এটা একটা লটারির মতো।"
ছবি: Leah Millis/Reuters
পরিবারকে কবে দেখবেন
গোলাবর্ষণের মাঝেই রোমান কাশানভদের মনে পড়ে পরিবারকে। তার সাত বছরের শিশুকন্যা ভিওলেত্তা, স্ত্রী মারিনা জার্মানিতে রয়েছেন। জীবন মৃত্যুর মধ্যে লড়াই করতে করতে ভিডিও কলে প্রিয়জনের মুখ দেখেন কাশানভ। তার কথায়, "পরিস্থিতি ইরাক, আফগানিস্তানের মতো। কোথায় কখন বোমা হামলা হবে কেউ জানে না।"
ছবি: Leah Millis/Reuters
লড়ছেন নারী কর্মীরাও
মার্গারিটা এবং অন্যান্য দমকল কর্মীরা কাজের মাঝে কখনো সখনো জানলার বাইরে চোখ রাখেন। কিন্তু কালো পর্দায় ঢাকা তাদের কার্যালয় ভবনটি। যাতে সহজে সেটি লক্ষ্য করে শত্রুশিবির আক্রমণ করতে না পারে। উদাস চোখে চেয়ে থাকেন মার্গারিটা।
ছবি: Leah Millis/Reuters
মাঝরাতে কাজের ডাক
ঝুঁকি নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ পান দমকলকর্মীরা। কাজের ধরন বদলে যায়, কর্মীরা যাতে সবাই একটু বিশ্রাম নিতে পারেন, সে কথাও মাথায় রাখা হয়। কিন্তু মাঝরাতে ডাক এলেই আলেকজান্ডারের মতো কর্মীরা মানুষকে বাঁচাতে বেরিয়ে পড়েন। কাজের মাঝে প্রশিক্ষণ নেন, ব্যায়াম করেন কারণ সুস্থ থাকতেই হবে।
ছবি: Leah Millis/Reuters
অন্ধকারে কাজ
অগ্নিদগ্ধ বাড়িগুলিতে কাজ করতে হয় তাদের। অন্ধকার, সামান্য টর্চের আলো ভরসা। তারা খতিয়ে দেখেন, গোলার আঘাতের ফলে ভাগ্যজোরে কেউ বেঁচে রয়েছেন কিনা। কাশানভ বলেন, তিনি খুশি স্ত্রী এবং সন্তান নিরাপদে রয়েছে। প্রতি রাতে মেয়েকে গল্প বলে ঘুম পাড়িয়ে দেয়ার কথা মনে পড়ে তার।
ছবি: Leah Millis/Reuters
লক্ষ্যে অবিচল
বুলেটরোধক পোশাক, জ্যাকেট সবমিলিয়ে নিজের ওজনের থেকে প্রায় ২০ কেজি বেশি ওজন সমেত চলাফেরা করতে হয় তাদের। খারকিভের আপৎকালীন পরিষেবা বিভাগের গণণাধ্যম সচিব ইভজেনি ভাসিলেঙ্কো আগস্টে বলেছিলেন, যুদ্ধের শুরু থেকে, দমকলকর্মীরা ১৭০০ বার খারকিভের নানা এলাকায় গোলার হানার ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
ছবি: Leah Millis/Reuters
খবর পড়েন মোবাইলে, ক্লান্তি আসে
ডিমা আর নিকোলাই বেশ পরিশ্রান্ত। ছবি দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে। যুদ্ধ থেমে যাওয়ার আশা নিয়ে মোবাইলে খবরে চোখ রাখেন তারা। তারা জানেনা না কবে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলবে। মৃত শিশুর দেহ কিংবা অনাথ হয়ে যাওয়া শিশুর বাবা মায়ের দেহ দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন কাশানভও। মানসিকভাবে একেবারে বিধ্বস্ত তিনি, জানান কাশানভ।
ছবি: Leah Millis/Reuters
মন শান্ত রাখার চেষ্টা
সামান্যতম সুযোগ পেলে একটু মন হালকা রাখার চেষ্টা করেন কেউ কেউ। মোবাইলে গান শোনেন হয়তো কিংবা মনকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা। মৃতদেহ দেখতে দেখতে চোখে জল চলে আসে দমকলকর্মীদের।
ছবি: Leah Millis/Reuters
প্রাণের ঝুঁকি, অপেক্ষা পরিস্থিতি বদলের
এতকিছুর মাঝেও লড়াই ছাড়ছেন না তারা, আশা রাখছেন পরিস্থিতির বদল হবে, প্রিয়জনকে ফিরে পাবেন এই দমকলকর্মীরাও। এই সাইনবোর্ডটা লাগাতে ইগর তার বন্ধুদের সাহায্য করছেন। এখানে লেখা আছে, শুভ সন্ধ্যা, আমরা ইউক্রেন থেকে এসেছি।
ছবি: Leah Millis/Reuters
10 ছবি1 | 10
পোল্যান্ডের সতর্কতা
এদিকে সোমবারের ঘটনার পর পোল্যান্ডের সমস্ত দমকলকর্মীদের আয়োডিন ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। অচিরেই বেসামরিক মানুষদেরও ওই ট্যাবলেট দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। পোল্যান্ডের আইন মেনেই একাজ করা হচ্ছে বলে দাবি।
সতর্ক থাকতেই একাজ করা হচ্ছএ বলে পোল্যান্ডের প্রশাসন জানিয়েছে। পরমাণু বিক্রিয়া হলে আয়োডিন ট্যাবলেট একমাত্র রক্ষা করতে পারে। রেডিয়েশনের হাত থেকে শরীরকে সামান্য হলেও বাঁচাতে পারে এই ট্যাবলেট। পোল্যান্ডের বক্তব্য, রাশিয়া যেভাবে পরমাণু প্রকল্পের সামনে আক্রমণ করছে বার বার, তাতে যে কোনো সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
রাশিয়ার অস্বীকার
পরমাণুকেন্দ্রের সামনের আক্রমণ নিয়ে মুখ না খুললেও গণকবর নিয়ে এই প্রথম বিবৃতি দিয়েছে ক্রেমলিন। মস্কোর মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের বক্তব্য, ইজিউমে যে গণকবর উদ্ধার হয়েছে, তার সঙ্গে রাশিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। রাশিয়ার সেনা একাজ করেনি বলে তার দাবি। পেসকভ বলেছেন, এর আগে বুচাতেও একইরকম গণকবর মিলেছিল। সেখানেও রাশিয়ার কোনো হাত ছিল না। রাশিয়ার সেনা কোনোরকম যুদ্ধাপরাধ করেনি। বস্তুত, এদিনের বিবৃতিতে নাম না করেই ইউক্রেনকে এর জন্য দায়ী করেছে রাশিয়া।