1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফের বিস্ফোরণ, প্রশ্নে পুলিশের ভূমিকা

পায়েল সামন্ত পশ্চিমবঙ্গ
২৯ আগস্ট ২০২৩

সাড়ে তিন মাসের মাথায় আবার বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ। আবারো কয়েকজনের মৃত্যু। পুলিশ-প্রশাসনের ব্যর্থতার জন্যই কি এই পরিণতি?

বাজি কারখানা
দত্তপুকুরে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণছবি: Satyajit Shaw/DW

প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ। ছিন্নভিন্ন মানুষের দেহ। বাজি-বারুদের পোড়া গন্ধ। বারবার এমন অভিজ্ঞতাই হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। একের পর এক বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। পুলিশ-প্রশাসন থাকা সত্ত্বেও কেন এই ঘটনা ঘটছে?

গত ১৬ মে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় বিস্ফোরণে মারা যান ১১ জন। এই ঘটনার পর এগরা থানার ওসি গণবিক্ষোভের মুখে পড়েন। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুঃখপ্রকাশ করেন। বলেন, বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধে পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেবে, আরো কঠোর হবে নজরদারি।

কিন্তু সাড়ে তিন মাসের মাথায় রবিবার সকাল ১০টায় ফের জোরালো বিস্ফোরণ। উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের নীলগঞ্জে ৯ জনের মৃত্যু প্রমাণ করেছে, প্রতিশ্রুতি রয়ে গিয়েছে কাগজে-কলমে। তৃণমূল শাসনের গত এক দশকে বাজি কারখানায় মৃত্যু হয়েছে ৭৬ জনের। ৩৬ জনের অঙ্গহানি হয়েছে। শুধু চলতি বছরে মারা গিয়েছেন ২৫ জন।

স্থানীয়দের অভিযোগ

দত্তপুকুরের বিস্ফোরণের পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সাধারণ মানুষজন। এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, শাসক দল এবং পুলিশের যোগসাজশে বেআইনি বাজি কারখানা চলতো। বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এগরার বিস্ফোরণের পরও একই ধরনের অভিযোগ সামনে এসেছিল।

স্থানীয়দের দাবি, থানাকে ৫০ হাজার টাকা প্রতি মাসে দেয়া হতো বাজি কারখানার জন্য। তাই পুলিশ হাত গুটিয়ে থাকতো। তৃণমূল নেতাদের বলা হলে তারা পাল্টা গারদে পুরে দেওয়ার হুমকি দিতেন বলে অভিযোগ। মন্ত্রী রথীন ঘোষও বিষয়টি জানতেন বলে এলাকাবাসীর দাবি।

যদিও মন্ত্রী বলেছেন, এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনো যোগ নেই। মন্ত্রী ও বারাসাতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার অভিযোগ করেছেন, বাজি কারখানা চালাচ্ছিল আইএসএফ। এই দাবি খারিজ করে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জুড়েছেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী।

বেআইনি বাজি কারখানা

পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, যে কোনো ধরনের বাজি কারখানা অবৈধ। সাবেক পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, "সবুজ বাজি কারখানা ছাড়া সবই বেআইনি। তা হলে কারখানা কীভাবে চলছে? মুখ্যমন্ত্রী বলার পরও কেন পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি? তাই পঞ্চায়েত ভোটে ভাঙর-সহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক বোমাবাজি হয়েছে। এতদিনে সব বাজি-বোমার কারখানা বন্ধ করে দেয়া উচিত ছিল।"

এসপি স্তরে সাসপেনশন বা অন্য ব্যবস্থা নিলে একটা বার্তা দেয়া যাবে: দীপাঞ্জন চক্রবর্তী

This browser does not support the audio element.

গত মে মাসে পরিবেশকর্মীরা এ নিয়ে চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রীকে। 'সবুজ মঞ্চ'-এর সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত বলেন, "২০১৫ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালত সব বাজি কারখানা ভেঙে দিতে বললেও সে কাজ করা হয়নি। সবুজ বাজির ক্লাস্টার এখনো তৈরি হয়নি। তাহলে এগরা, পিংলা, বজবজ, দত্তপুকুরে কীভাবে বাজির কারখানা চলছে? পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? বেআইনি বাজির ব্যবসায়ীরা সরকারকে ব্যবহার করছে।"

পুলিশের ভূমিকা

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তিনি। নিচুতলার পুলিশকর্মী থেকে দলীয় নেতৃত্ব সম্পর্কেও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। তাহলে কি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও পুলিশ-প্রশাসন বাজি কারখানা বন্ধে যথেষ্ট তৎপর হচ্ছে না?

তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, "গত কয়েক মাসে একের পর এক বেআইনি বাজি কারখানা চিহ্নিত হয়েছে। সেগুলি বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এতোটা তৎপর?"

এজন্য শুধু পুলিশকে দায়ী করতে রাজি নন সাবেক পুলিশকর্তা পঙ্কজ দত্ত। তিনি বলেন, "বারাসাতের পুলিশ সুপার বলেছেন, আইএসএফের একজনকে ধরা হয়েছে। এ কথা তৃণমূল নেতারাও বলছেন। অর্থাৎ পুলিশ ও শাসক দলের নেতারা একসুরে কথা বলছেন। ওসি, এসপি-রা হচ্ছেন পুলিশ বাহিনীর ক্যাপ্টেন। তারা দলদাস হয়ে পড়ছেন।"

শাস্তিতে সমাধান?

সবুজ বাজি বা সাধারণ আতশবাজি নয়, দত্তপুকুরের কারখানায় বোমা তৈরি হতো বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন। একাধিক রাসায়নিকের খোঁজ মিলেছে যা বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। কারখানার অদূরে পাওয়া গিয়েছে পুরোদস্তুর 'গবেষণাগার'। গ্রামবাসীর দাবি, সাদা পোশাক পরে বহিরাগতরা এই গবেষণাগারে আসতেন। কয়েক ঘণ্টা পর চলে যেতেন। সবই কি হয়েছে পুলিশের অগোচরে?

পুলিশের ভূমিকায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী অখুশি বলে সূত্রের খবর। তা হলে কি গাফিলতির দায়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে? এনএসজি-র সাবেক অফিসার দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, " ওসি, এসআই-এর মতো নিচুতলার পুলিশকর্মীদের কিছুদিন 'ক্লোজ' করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা বেতন ঠিকঠাকই পাবেন। হইচই থেমে গেলে তারা ফের কাজেও ফিরে আসবেন। তাদের সার্ভিস বুকে কিছু লেখা হবে কি না কে দেখবে? একমাত্র এসপি স্তরে সাসপেনশন বা অন্য ব্যবস্থা নিলে একটা বার্তা দেয়া যাবে। নিচু স্তরে ব্যবস্থা নিলে সেটা হবে চোখে ধুলো দেয়া।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ