ইরাকে মার্কিন সেনা ঘাঁটি লক্ষ্য করে ফের রকেট হামলা। এক মার্কিন কনট্রাক্টরের মৃত্যু।
বিজ্ঞাপন
পর পর ১৩টি রকেট আছড়ে পড়লো পশ্চিম ইরাকের আইন আল-আসাদ ঘাঁটিতে। বিপুল পরিমাণ মার্কিন বাহিনী আছে এখানে। ঘটনায় সেনা বাহিনীর কারো মৃত্যু হয়নি। তবে এক মার্কিন কনট্রাক্টরের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য পশ্চিম ইরাকের এই এয়ার বেসে বিপুল পরিমাণ মার্কিন সেনা বসবাস করে। এছাড়াও যৌথ বাহিনীর আরো বেশ কিছু দেশের সেনাও সেখানে আছে। আছে, ইরাকের সেনা। বুধবার সেই সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করেই পর পর ১৩টি রকেট ছোড়া হয়।
মার্কিন সেনার এক মুখপাত্র সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আট কিলোমিটার দূর থেকে রকেট হামলা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। কারা এই কাজ করেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রকেট হামলা শুরু হওয়ার পরে এক মার্কিন কনট্রাক্টর প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় খুঁজছিলেন। তখনই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে এই মাসেই উত্তর ইরাকে মার্কিন দূতাবাস এবং সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালানো হয়েছে। অ্যামেরিকা তার জবাবে সিরিয়ায় নির্দিষ্ট জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করেছে বলেও পেন্টাগন জানিয়েছে। তবে বুধবারের রকেট হামলা গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড়।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো
ইরাক থেকে তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি৷ আছে হাজারো সৈন্য৷ এই ঘাঁটিগুলো দিয়ে ইরানকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: imago/StockTrek Images
ইরাক
ইরাকে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৫,২০০ সৈন্য রয়েছে৷ তবে তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে পেন্টাগন৷ এর অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি ক্যাম্প থেকে এরিমধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারও করা হয়েছে৷ বর্তমানে গ্রিন জোন, বাগদাদের কূটনৈতিক এলাকা, আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে দেশটির সেনাসদস্য রয়েছে৷ গত নভেম্বরে আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে সৈন্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স৷
ছবি: imago/StockTrek Images
কুয়েত
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র কুয়েত৷ দুই দেশের মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা সহায়তা চুক্তি৷ দেশটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটি৷ যেখানে প্রায় ১৩ হাজার সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/S. Nelson
সিরিয়া
সিরিয়ার কোথায় যুক্তরাষ্ট্রের কত সংখ্যক সৈন্য রয়েছে সে বিষয়টি প্রকাশিত নয়৷ অক্টোবরে সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ তার আগ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ২০০০ সৈন্য ছিল, বর্তমানে যা ৮০০ জনে নেমে এসেছে৷ যেসব ঘাঁটি চালু আছে তার একটি সিরিয়ান-জর্ডান সীমান্তে৷ এর কাছেই রয়েছে ইরানীয় আর তাদের সমর্থিত বাহিনী৷
ছবি: -picture alliance/AP Photo/Z. Garbarino
জডার্ন
ইরাক, সিরিয়া, ইসরায়েল, আর সৌদি আরবের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে জডার্নের৷ কৌশলগত দিক থেকে তাই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থান এটি৷ দেশটির মুভাফফাক ছালটি বিমান ঘাঁটি থেকে সিরিয়ায় আইএস বিরোধী হামলা চালানো হয়েছে৷ অবশ্য কিং ফয়সাল বিমান ঘাঁটিতে ২০১৬ সালে তিন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিল জডার্নের বিমান বাহিনীর গুলিতে৷
ছবি: AP
সৌদি আরব
সৌদি আরবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের তিন হাজার সেনাসদস্য রয়েছে৷ অক্টোবরে সৌদি তেলক্ষেত্রে হামলার পর ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সংঘাতের শঙ্কায় সেখানে আরো সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
বাহরাইন
বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নৌ ঘাঁটি রয়েছে৷ দ্বীপ রাষ্ট্রটি বরাবরই সৌদি আরবের মিত্র৷ ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমর্থকও তারা৷ বর্তমানে সেখানে সাত হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: AP
ওমান
ওমানের অবস্থান হরমুজ প্রণালীর কাছে আরব উপকূলে, যা জ্বালানি পরিবহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথ৷ ২০১৯ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রেকে বিমান ও সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয় ওমান৷ বর্তমানে সেখানে ৬০০ মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Noroozi
সংযুক্ত আরব আমিরাত
হরমুজ প্রণালীর পাশে থাকা আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ তাদেরও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সাথে ভাল সম্পর্ক বিদ্যমান৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে পাঁচ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে পেন্টাগন৷
ছবি: picture-alliance/AP/K. Jebreili
কাতার
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিটি কাতারের আল উদিদে৷ এর আধুনিকায়নে ২০১৮ সালে ১৮০ কোটি ডলারে একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছে কাতার৷ বর্তমানে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ হাজার সৈন্য নিযুক্ত রয়েছে৷
ছবি: Reuters/N. Zeitoon
তুরস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য রয়েছে তুরস্কেও৷ দেশটির ইনজিরলিক বিমান ঘাঁটিসহ বেশ কিছু জায়গায় মার্কিন সেনা অবস্থান করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
10 ছবি1 | 10
জবাব দেওয়া হবে
বুধবারের ঘটনার পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং পেন্টাগন প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। বাইডেন জানিয়েছেন, যারা এ কাজ লাগাতার করে চলেছে, তাদের এবার উত্তর দেওয়া হবে। পেন্টাগনও একই কথা জানিয়েছে। পেন্টাগনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, কারা এ কাজ করেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু তথ্য হাতে এসেছে। ইরাকের প্রশাসনের দায়িত্ব আরো তথ্য দেওয়ার। সব তথ্য হাতে এলেই এর জবাব দেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ইরানের মতদপুষ্ট বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী লাগাতার এ কাজ করছে। জেনারেল সুলেইমানির হত্যার পর থেকে তারা আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। জেনারেলের হত্যার বদলা হিসেবেই এ কাজ করা হচ্ছে বলে তাদের দাবি। বস্তুত, সুলেইমানির হত্যার পরে ইরান প্রকাশ্যেই জানিয়েছিল যে, বদলার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী তাতে অংশ নেবে। সে সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের সঙ্গে কার্যত যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়েছিল অ্যামেরিকার। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। কিন্তু যে ভাবে গত কয়েকদিনে মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে, তাতে পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে।