ফেলনা বস্তুকে শিল্পে রূপান্তরিত করেন অ্যান ক্যারিংটন
১৯ মার্চ ২০২১
শিল্পসৃষ্টি করতে কি সবসময়ে দামী রং বা মূল্যবান উপাদানের প্রয়োজন? এক ব্রিটিশ শিল্পী দৈনন্দিন জীবনের অনেক তুচ্ছ, ফেলনা বস্তুকেও অসাধারণ সুন্দর করে তোলেন৷
বিজ্ঞাপন
অ্যান ক্যারিংটন পুরানো মুক্তা, ব্রোচ, লকেট এবং অন্যান্য গয়নাগাটি দিয়ে প্রাচীন আমলের অসাধারণ সব জাহাজের মূর্তি তৈরি করেন৷ এমন সূক্ষ্ম কাজ অত্যন্ত কঠিন পরিশ্রমের ফসল৷ যেমন বাতিল হ্যাঙার দিয়ে মুকুটের পালক৷ পুরানো বোতাম তার হাতে ক্যানভাসের উপর ডাকটিকিট হয়ে ওঠে৷
ক্যান ও বোতলের ছিপি দিয়ে ক্লাসিক ঐতিহ্য অনুযায়ী আবক্ষ মূর্তি৷ অ্যান ক্যারিংটন ফেলনা বস্তুকে শিল্পে পরিণত করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি এমন অবহেলিত উপকরণ ব্যবহার করে সেগুলির প্রতি মানুষের নজর আকর্ষণ করার চেষ্টা করি৷ বোতাম বা বোতলের ছিপির মতো সামান্য বস্তু চোখ এড়িয়ে গেলেও আসলে কিন্তু সুন্দর৷ এমন বস্তুকে আকর্ষণীয় করে তুলে সেগুলি সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিলে ভালোই হয় বলে আমি মনে করি৷’’
তুচ্ছ বস্তুকে অসাধারণ করে তোলেন তিনি
04:25
বাতিল ধাতু দিয়ে ফুলের তোড়াও তৈরি করেছেন ব্রিটেনের এই শিল্পী৷ পুরানো ছুরি, কাঁটা, চামচ বাঁকিয়ে অথবা ওয়েল্ডিং করে ফুলের পাপড়ি ও কাণ্ডে পরিণত করেন তিনি৷ বাতিল রুপোর বাসনের সেট ওয়েল্ডিং করে ফুলের তোড়াও তৈরি করেন৷ প্রাচীন তৈলচিত্র দেখে তিনি এই ভাস্কর্য তৈরির প্রেরণা পেয়েছিলেন৷
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অ্যান বলেন, ‘‘আমস্টারডামে রাইক্সমিউজিয়ামে একটি ফুলের তোড়া দেখে প্রেরণা পেয়ে এটি তৈরি করেছি৷ এই ‘স্টিল লাইফ’ চিত্রকর্ম থেকে প্রেরণা নিয়ে আমি একটি ভাস্কর্য তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম৷’’
এখন অ্যান ক্যারিংটনের নিজস্ব বর্ণাঢ্য ফুলের তোড়া লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হচ্ছে৷ এমন শিল্পকর্মের মূল্য এক লাখ ইউরো পর্যন্ত ছুঁতে পারে৷ অনেক বিখ্যাত মানুষের বাসায় ক্যারিংটনের শিল্পকর্ম শোভা পাচ্ছে৷ এমনকি ব্রিটেনের রাজপরিবারের রুচিও তিনি পূরণ করছেন৷
২০১২ সালে রানি এলিজাবেথের সিংহাসন আরোহনের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রায় পাঁচ লাখ সোনালি বোতাম দিয়ে অ্যান ক্যারিংটন এক বর্নাঢ্য ব্যানার সৃষ্টি করেছিলেন৷ প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে সেটির ডিজাইন স্থির করা হয়েছিল৷ রাজপরিবারের প্রমোদ তরীর পেছনদিকে সেটি মুড়ে দেওয়া হয়েছিল৷ সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে অ্যান ক্যারিংটন বলেন, ‘‘অসাধারণ দেখতে লাগছিল৷ অনেক বছর ধরে আমি বোতাম দিয়ে রানিকে নিয়ে ডাকটিকিট তৈরি করছি৷ সরাসরি তার জন্য একটি শিল্পকর্ম তৈরির সুযোগ ছিল অসাধারণ৷’’
ক্যারিংটন ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বে পছন্দের মারগেট শহরে ছোট ছোট দোকান ঘুরে নিজের কাঁচামাল সংগ্রহ করেন৷ কখনো নির্দিষ্ট কোনো বস্তু নজরে এলে সেটিকে ভিত্তি করে নতুন সৃষ্টির কাজে মেতে ওঠেন তিনি৷ অ্যান ক্যারিংটন জানান, ‘‘আমি শিল্পকর্মের জন্য প্রায় একইরকম উপাদান ব্যবহার করি৷ এমন কোনো জায়গায় এলে আমি জানি, যে বেশি সংখ্যায় পছন্দের বস্তু কিনতে পারবো৷ চাহিদা পূরণ করতে না পারলে ইবে ওয়েবসাইট থেকে কিনে নেবো৷ অথবা বাতিল জিনিসপত্রের গুদাম কিংবা নিলামে চলে যাব৷’’
প্রায় ৩০ বছর আগে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সময়ও অ্যান দৈনন্দিন জীবনের বস্তু নিয়ে কাজ করতেন৷ এমনকি টিনের মতো নানা তুচ্ছ উপকরণও তিনি কাজে লাগাতেন৷ একটি বস্তু আজও তাকে হাতছানি দেয়৷ অ্যান বলেন, ‘‘আমি আসলে কাচ নিয়ে কাজ করতে চাই৷ তাই সম্প্রতি আমি কাচ নিয়ে কাজের প্রশিক্ষণ নিয়েছি৷ কাচ ফুলিয়ে বুদবুদ তৈরি করতে পারি বটে, কিন্তু এখনো বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠি নি৷ এমন সব বস্তুর খোঁজ করে ভাবছি ক্রিস্টাল দিয়ে ফুল অথবা পারফিউমের বোতল দিয়ে বিল্ডিং ব্লক করতে পারলে দারুণ হবে৷’’
হাতে যাই পান না কেন, তিনি সৃষ্টির কাজে মেতে ওঠেন৷ অ্যান ক্যারিংটন তুচ্ছ ফেলনা বস্তুকেও সুন্দর শিল্পে পরিণত করেন৷
ফিলিপ ক্রেচমার/এসবি
বিশ্বের দামি কিছু শিল্পকর্ম
বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি ও ভাষ্কর্যের জন্য সংগ্রাহকরা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকেন – ৪০ কোটি ডলারের বেশি দাম ওঠাও আশ্চর্যের কিছু নয়৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
সালভাদর মুন্ডি
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ২০টি অক্ষত ছবির একটি এটি৷ ধারণা করা হয়, ১৫০০ সালে এ ছবিটি আঁকা হয়৷ ১৯৫৮ সালে ছবিটিকে অনুলিপি ভেবে নিলামে মাত্র ৬০ মার্কিন ডলারে এটি বিক্রি হয়৷ যিশুখ্রিষ্টের এ ছবিটি ২০১৭ সালে ১০ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হবে ধারণা করা হলেও অজ্ঞাত এক ক্রেতা ৪৫ কোটি ডলার দিয়ে কেনেন এটি৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
ইন্টারচেঞ্জ
ডাচ-অ্যামেরিকান শিল্পী উইলেম ডে কুনিং-এর আঁকা ইন্টারচেঞ্জ নামে একটি তৈলচিত্র ২০১৫ সালে ৩০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তাস খেলায় মগ্ন
উত্তর অভিব্যাক্তিবাদ ঘরানার ফরাসি শিল্পী পল সেজানের আঁকা এ ছবিটির নাম ‘দ্যা কার্ড প্লেয়ার’৷ ২০১১ সালে ২৫ কোটি ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
‘যখন তুমি বিয়ে করবে’
এ ছবিটি আঁকা হয়েছিল ১৮৯২ সালে৷ শিল্পী ফ্রান্সের পল গগাঁ৷ ‘হোয়েন উইল ইউ মেরি’ শিরোনামের এ ছবিটির দাম ২১ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/E. Lessing
‘নাম্বার ১৭এ’
অ্যামেরিকান শিল্পী জ্যাকসন পোলোকের আঁকা ‘নাম্বার ১৭এ’ নামের একটি চিত্রকর্ম ২০১৫ সালে ২০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷ উপরের ছবিটি পোলোকের আঁকা, যার নাম নাম্বার ৭৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিয়ের ছবি’
নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত মার্টেন ও ওপইয়েন এর ১৬৩৪ সালের অনুষ্ঠিত বিয়ের ছবি এটি৷ চিত্রকর ডাচ শিল্পী রেমব্রান্ট হারমেনসুন ফান রিন৷ ২০১৫ সালে বিক্রি হওয়া এ ছবিটির দাম পড়েছে ১৮ কোটি ডলার৷
ছবি: gemeinfrei/DW Montage
আলজিয়ার্সের মহিলারা
লেডি অব আলজিয়ার্স শিরোনামে ছবিটি স্পেনের জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর পাবলো পিকাসোর ১৯৫৫ সালে আঁকা৷ নিলামে ছবিটির দাম উঠে ১৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে৷
ছবি: Reuters
‘ন্যু কুশে’
ইটালির চিত্রকর আমেদেও মোদিগলিয়ানি এই ছবিটি আঁকেন ১৯১৭ সালে, তার মৃত্যুর তিন বছর আগে৷ ১৭কোটি চার লাখ ডলারে ২০১৫ সালে বিক্রি হয় ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
‘মাস্টারপিস’
অ্যামেরিকান পপ আর্টিস্ট রয় লিচটেনস্টাইনের ১৯৬২ সালে একেছিলেন বিখ্যাত এ ছবিটি৷ ২০১৭ সালে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: Dan Kitwood/Getty Images
লুসিয়ান ফ্রয়েডের তিনটি প্রতিকৃতি
আইরিশ চিত্রকর ফ্রান্সিস বেকন এই তিন খণ্ডের ছবিটি আঁকেন ১৯৬৯ সালে৷ ছবিতে যার আলেখ্য, তিনি হলেন ব্রিটিশ চিত্রকর লুসিয়ান ফ্রয়েড, পক্ষান্তরে মনস্তত্বের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের পৌত্র৷ ২০১৩ সালে ক্রিস্টি’স-এর নিলামে ছবিটির দাম ওঠে ১৪ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার৷ রয়েছে মার্কিন শিল্পকলা সংগ্রাহক এলেইন ওয়াইনের সংগ্রহে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অঙ্গুলিনির্দেশ
সুইস ভাস্কর আলবের্তো জাকোমেত্তির সৃষ্টি এই মানুষ-সমান ব্রোঞ্জ মূর্তিটি নিউ ইয়র্কে ক্রিস্টি’স-এ নিলাম করা হয় ২০১৫ সালে, কেনেন স্টিভ কোহেন নামের এক হেজফান্ড ম্যানেজার৷ মূর্তিটি আজ বিশ্বের সবচেয়ে দামি ক্রয়যোগ্য ভাস্কর্য বলে গণ্য৷ এটি বিক্রি হয়েছেল ১৪ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Hatfield/Christies
সোনার আডেলে
অস্ট্রিয়ার চিত্রকর গুস্তাফ ক্লিম্ট আডেলে ব্লখ-বাউয়ারের এই প্রতিকৃতিটি আঁকেন ১৯০৭ সালে৷ ম্যানহ্যাটানের ‘নয়ে গ্যালেরি’ নামের সংগ্রহশালার জন্য ২০০৬ সালে ছবিটি কেনেন মার্কিন ব্যবসায়ী রোনাল্ড লডার৷ ছবিটি ১৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারে কেনার ব্যবস্থা করে ক্রিস্টি’স সংস্থা৷
ছবি: AUSSCHNITT: picture-alliance/Heritage Images
চিৎকার
নরওয়েজীয় চিত্রকর এডভার্ড মুঞ্চ ‘চিৎকার’ ছবিটি এঁকেছেন একাধিক বার ৷ দা ভিঞ্চির মোনালিসা ও ফান গখ-এর সূর্যমুখি ফুলের পরেই মুঞ্চের এই ছবিটিকে বিশ্বের খ্যাততম চিত্রকর্ম বলে গণ্য করা হয়৷ ছবিটির প্যাস্টেল রঙে আঁকা এই সংস্করণ নিলাম করা হয় ২০১২ সালে, নিউ ইয়র্কের সথেবি সংস্থায়৷ মার্কিন শিল্পপতি লিয়ন ব্ল্যাক ১১ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলারে কিনেন এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নগ্নমূর্তি, সবুজ পাতা, আবক্ষ
পাবলো পিকাসো এই তেলরঙের ছবিটি এঁকেছিলেন মাত্র একদিনে – দিনটা ছিল ৮ই মার্চ, ১৯৩২৷ প্রায় অজ্ঞাত ছবিটি নিউ ইয়র্কের নিলামে বিক্রি হয় ১০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যে, কেনেন এক অজ্ঞাত ক্রেতা৷ ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকলেও, ছবিটি লন্ডনের টেট মডার্ন গ্যালারিকে ধার দেওয়া হয়েছে ২০১১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রুপোলি গাড়ি দুর্ঘটনা
মার্কিন চিত্রকর অ্যান্ডি ওয়ারহল ১৯৬৩ সালে এই সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্টটি সৃষ্টি করেন – যার বিষয়বস্তু হল একটি গাড়ি দুর্ঘটনা৷ ২০ বছর ধরে ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকার পর ২০১৩ সালে সথেবি-তে ছবিটি নিলাম করা হয়৷ ক্রেতা অজ্ঞাতই থাকেন; তবে ছবিটি পপ আর্ট শিল্পী ওয়ারহলের সবচেয়ে দামী ছবি বলে গণ্য করা হয়৷