1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফেলানী হত্যা: ন্যায়বিচার মেলেনি, থামেনি সীমান্ত হত্যাও

সমীর কুমার দে ঢাকা
৭ জানুয়ারি ২০২৩

হত্যাকাণ্ডের এক যুগ পেরুলেও কাঙ্খিত ন্যায়বিচার পায়নি ফেলানীর পরিবার৷ দুই দেশের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের পরও সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো বন্ধ করেনি ভারতীয় বাহিনী৷

হত্যাকাণ্ডের এক যুগ পেরুলেও কাঙ্খিত ন্যায়বিচার পায়নি ফেলানীর পরিবার৷ দুই দেশের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের পরও সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো বন্ধ করেনি ভারতীয় বাহিনী৷    
(ফাইল ছবি) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত ফেলানীর কবরের সামনে তার বাবা-মা৷ছবি: bdnews24.com

কুড়িগ্রাম সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকা কিশোরী ফেলানীর লাশের ছবি আলোড়ন তুলেছিল দেশে-বিদেশে৷ ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের আশ্বাস দিয়েছিল৷ কিন্তু তাদের বিশেষ আদালতে অভিযুক্ত অমিয় ঘোষ দোষ স্বীকার করলেও বেকসুর খালাশ পেয়েছেন৷ পরে ভারতীয় মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) মাধ্যমে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন৷ কয়েক দফা শুনানির দিন পিছিয়ে এখনও আদালতেই ঝুলে আছে পিটিশনটি৷ বিচারিক কাজ বিলম্বিত হলেও শেষ পর্যন্ত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সীমান্ত হত্যা বন্ধের প্রত্যাশা বিশিষ্টজনদের৷

ফেলানীর বাবা মো. নুরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ফেলানীকে সঙ্গে করে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় আমার চোখের সামনে বিএসএফ আমার মেয়েকে হত্যা করেছে৷ পরে আমি জেনেছি, অমিয় ঘোষ নামে একজন বিএসএফ সদস্য ফেলানীকে গুলি করার কথা স্বীকার করেছে৷ অথচ আদালত তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছে৷ আমি দুই বার ভারতে গিয়ে স্বাক্ষ্য দিয়েছি, ন্যায় বিচার চেয়েছি, অথচ তারা সঠিক বিচার করেনি৷ আমি অমিয় ঘোষের ফাঁসি চাই৷ আমি চাই ভারত সরকার যেন আমার মেয়ের সঠিক বিচারটা করে৷ কারণ আমার মেয়ে হত্যার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমি মরলেও আমার আত্মা শান্তি পাবে না৷’’

ফেলানীর ঘটনা মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন: ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের নুরুল ইসলাম পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতে দিল্লিতে৷ মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে৷ বিয়ে দিতে ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি মেয়েকে সঙ্গে করে আসেন অনন্তপুর সীমান্তে৷ ৭ জানুয়ারি ভোরে দালালের মাধ্যমে ফুলবাড়ী অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতারের ওপর মই বেয়ে নামার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ফেলানীর৷ দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে তার মরদেহ৷ আলোচিত এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও বিচার পায়নি তার পরিবার৷ 

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ফেলানীর ঘটনাটা মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন৷ আমাদেরও প্রত্যাশা ছিল, ন্যায় বিচার হবে৷ কিন্তু তাদের বিশেষ আদালত অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে খালাস দিয়ে দিয়েছে৷ সীমান্তে এই যে অবৈধ চোরাচালান হয়, এর জন্য তো শুধু এক পক্ষ নয়, উভয় পক্ষের দায় রয়েছে৷ কিন্তু বাংলাদেশের বিজিবি কাউকে গুলি করে মারার খরব আমরা শুনিনি৷ বাংলাদেশের সরকার তো এই হত্যাকাণ্ড বন্ধে অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করে আসছে৷ কিন্তু ভারত সরকার উদ্যোগী না হলে আসলে কিছুই হবে না৷ আমরা প্রত্যাশা করি, দ্রুতই তারা এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন৷’’

ফেলানীর ঝুলে থাকার ছবি প্রচার হওয়ার পর গণমাধ্যমসহ মানবাধিকারকর্মীদের সমালোচনায় ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারের বিএসএফ'র বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়৷ ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় আদালত৷ বিজিবির আপত্তিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনঃবিচার শুরু হলেও সেখানে খালাস দেওয়া হয় অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে৷ এরপর ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ভারতীয় মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) মাধ্যমে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন৷ পিটিশনের ভিত্তিতে কয়েক দফায় শুনানির দিন পিছিয়ে এখনও আদালতেই ঝুলে আছে পিটিশনটি৷

‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের এমন ঘটনা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকতে পারে না’

This browser does not support the audio element.

কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর ও ফেলানীর বাবার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের এমন একটি ঘটনা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকতে পারে না৷ এর সুরাহা হওয়া উচিৎ৷ আমি খুবই আশাবাদি দ্রুত এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে৷’’

তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা রিট পিটিশনের শুনানি এখনও শুরু হয়নি৷ তবে মহামারির শুরুর আগে তা একবার কার্যতালিকার উঠেছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি বিলম্ব হলেও ন্যায় বিচারের মাধ্যমে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও শান্তিপূর্ণ সীমান্ত প্রতিষ্ঠা হবে৷ কারণ বিশ্বব্যাপী ভারতের সুপ্রীম কোর্টের ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত নানাভাবে আলোচিত হয়৷ শুধু এই হত্যার বিচার নয়, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কিভাবে আরও সুশৃঙ্খল করা যায় সে বিষয়ে নির্দেশনা পাব বলে আমি আশা করি৷’’

থামেনি সীমান্ত হত্যা

বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ-ভারতের বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্তে হত্যাকাণ্ডনিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ ভারতের পক্ষ হত্যা বন্ধের আশ্বাসও দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু তা আদৌ বাস্তবায়ন হয়নি৷ তবে আগে বছরে যেখানে বিএসএফের গুলিতে বছরে অর্ধশত বাংলাদেশি মারা যেতেন এখন তা কমে এসেছে৷ বিদায়ী বছরে এই সংখ্যা ছিল ১৫ জন৷ 

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে সীমান্তে মোট ১৬৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে৷ এই সময়ে আহত হয়েছেন ১৪০ জন ৷ অপহৃত হয়েছেন ১১৯ জন৷ এর মধ্যে ২০২১ সালে হত্যা করা হয় ১৯ জনকে৷ ২০২০ সালে  ৪৯ এবং ২০১৯ সালে ৪৩ জনকে হত্যা করা হয়৷ ২০১৮ সালে ১৪ জন, ২০১৭ সালে ২৪ জন প্রাণ হারান৷

‘ব্যাটার (ছেলের) লাশ পাইলে নেড়েচেড়ে দেখতাম’

02:54

This browser does not support the video element.

সর্বশেষ ২৯ ডিসেম্বর ভোরে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা সীমান্তে দুই বাংলাদেশি নাগরিক বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন৷ তারা হলেন সাদিক হোসেন (২৩) এবং মংলু (৪০)৷ এই ঘটনায় আরো দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন৷

ভারতের মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) সচিব কিরীটি রায় কয়েকদিন আগে ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘দুই মাস আগেও বলা হয়েছে সীমান্ত হত্যা কমানো হবে৷ কিন্তু কমছে না৷ ভারতের সরকার বলছে বিএসএফ তাদের কথা শুনছে না৷ এটা কীভাবে সম্ভব! বাংলাদেশও এটা নিয়ে কিছু বলে না৷ কোনো জোরালো প্রতিবাদ করে না৷ তারা জো হজুর জি হুজুর করে৷ এভাবে করলে তো পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না৷’’

বুধবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ও ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব একটি শান্ত, স্থিতিশীল ও অপরাধমুক্ত সীমান্ত নিশ্চিতে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ তবে সীমান্ত হত্যা দু'দেশের সম্পর্ককে বিব্রত করেছে৷’’

সীমান্ত হত্যা নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে যোগাযোগ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবকে পাওয়া যায়নি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ