কারো জন্য স্বতন্ত্র নকশার পোশাক তৈরির বিষয়টি ‘ওট কুটুয়র' নামে পরিচিত৷ এসব পোশাক সাধারণত অত্যন্ত দামি হয়ে থাকে৷
ডিজাইনার কেভিন জার্মানিয়ে, প্যারিস অলিম্পিকের সমাপনী অনুষ্ঠানের জন্য ১২০টি পোশাক তৈরির দায়িত্ব পেয়েছিল
ছবি: DW
বিজ্ঞাপন
সুইস ডিজাইনার কেভিন জার্মানিয়ে ফেলে দেওয়া উপাদান দিয়ে এসব পোশাক তৈরি করেন৷ তারপরও এগুলো অনেক দামে বিক্রি হয়৷ টেলর সুইফটের মতো সুপারস্টারেরা তার ডিজাইন করা পোশাক পরেন৷
জার্মানিয়ে বলেন, ‘‘এটা আমার মূল্যবোধ প্রকাশ করে৷ আমি আর অন্য কোনোভাবে এগুলো তৈরি করতে পারতাম না৷''
কিন্তু কীভাবে করেন? ‘‘সমাধান পেতে ইনোভেটিভ হওয়ার চেষ্টা করে৷ এই কালেকশনের সব উপকরণ পুনর্ব্যবহারযোগ্য৷ এবার আমি রাফিয়া পাম গাছ নিয়ে কাজ করেছি৷ পোশাক তৈরির আগে আমি উপকরণ সংগ্রহ করি৷ অর্থাৎ, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার বিপরীতে কাজ করি আমি৷ নকশা তৈরির পর উপকরণ কিনি না৷ আমি এমন উপকরণ খুঁজি, যা পুনর্ব্যবহার করতে পারবো এবং যা পাই, তাই দিয়েই পোশাক ডিজাইন করি,'' বলেন জার্মানিয়ে৷
১৯৯২ সালে হংকংয়ে যাওয়ার পর জার্মানিয়ের মাথায় প্রথম বর্জ্য পদার্থ দিয়ে ফ্যাশন তৈরির ধারণা জন্ম নেয়৷
জার্মানিয়ে জানান, ‘‘ডিওর এর জন গালিয়ানু আর জিভোনচির রিকার্ডো টিশির কাজ দেখে আমি বড় হয়েছি৷ মুক্তা দিয়ে তৈরি তাদের সৃষ্টিগুলো দারুণ ছিল৷ এরপর যখন আমি হংকং যাই, তখন এমন সব পুঁতি দেখেছি যেগুলোকে বর্জ্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল৷ তখন মনে মনে ভাবলাম, লিনেন আর পুরনো চাদরের মতো কাপড় ছাড়াও অন্য কিছুও পুনর্ব্যবহার করা যায় - আসলে সবকিছুই পুনর্ব্যবহার করা যায়৷ বর্তমানে আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি যেখানে সবকিছুই ফেলে দেওয়া হয়৷''
নেদারল্যান্ডসে ইতিবাচক বাংলাদেশের ছবি
বাংলাদেশের শিল্পখাতের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরতে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে দুই দিনের বেস্ট অব বাংলাদেশ নজর কেড়েছে ইউরোপীয় উদ্যোক্তাদের৷ কী ছিল সেখানে দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Faisal Ahmed/DW
রপ্তানি বাজার
বাংলাদেশের রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ গত অর্থবছরে এই দেশগুলোতে ১৩৭৩ কোটি ডলার রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি৷ এই বাজারে অবস্থান আরো শক্তিশালী করতেই সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বেস্ট অব বাংলাদেশের আয়োজন৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
তৈরি পোশাক
ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানির সিংহভাগই আসে তৈরি পোশাক থেকে৷ সম্প্রতি এই রপ্তানি পরিমাণের দিক থেকে চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে৷ বেস্ট অব বাংলাদেশের প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো তাই বেশিরভাগই ছিল পোশাক শিল্পের৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
কৃষি ও খাদ্য
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানির তালিকায় খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প জায়গা করে নিয়েছে৷ বাংলাদেশের ৩৫ টি রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে৷ তার মধ্যে রয়েছে খাদ্য শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী কয়েকটি কোম্পানি৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
টেকসই পণ্য
ইউরোপের বাজারে পরিবেশবান্ধব সুতা ও কাপড়ের চাহিদা বাড়ছে৷ বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো সেদিকেও নজর দিচ্ছে৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
হ্যান্ডিক্রাফট
টেকসই ও প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ইউরোপের বাজারে হ্যান্ডিক্রাফট পন্যও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷ বাংলাদেশের এমন পণ্যের রপ্তানি সীমিত হলেও ভবিষ্যতে তা সম্ভাবনাময় হয়ে উঠতে পারে৷ একটি প্রতিষ্ঠান তাদের হাতের কাজ তুলে ধরেছে আগ্রহীদের কাছে৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
জামদানি
একসময় বাংলাদেশের মসলিনের খ্যাতি ছিল বিশ্বজোড়া৷ মসলিন না থাকলেও জামদানি বাংলাদেশের উচ্চমানের কাপড়ের সেই ঐতিহ্য বহন করে৷ ইউরোপে বাজারে জামদানি রপ্তানির সম্ভাবনা কতটা তা খতিয়ে দেখছে একটি প্রতিষ্ঠান৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
বাংলাদেশের ঐতিহ্য
প্রদর্শনীতে আয়োজকেরা বাংলাদেশের শিল্প ও সংস্কৃতির সাথে ইউরোপীয়দের পরিচিতি করিয়ে দিতে চেয়েছে৷ তার অংশ হিসেবে নকশি কাঁথা সহ নানা কারুশিল্প রাখা হয়েছে৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
প্যানেল আলোচনা
বাংলাদেশের শিল্পের নানা দিক নিয়ে ছয়টি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই দিনের এই আয়োজনে৷ দেশের শিল্প খাতের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি, ইউরোপের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞরা এসব আলোচনায় অংশ নেন৷ টেকসই শিল্পের পাশাপাশি শ্রমিকদের সংগঠন করার স্বাধীনতা, দর কষাকষির ক্ষমতার দিকগুলোর উপর জোর দেন কোনো কোনো বক্তা৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
নিজস্ব ডিজাইন
তৈরি পোশাক শিল্পে ভবিষ্যৎ বাজার ধরতে প্রয়োজন নিজস্ব উদ্ভাবনী পোশাক৷ বেস্ট অব বাংলাদেশে দেশি কোম্পানিগুলোর তৈরি ডেনিম পণ্যের ফ্যাশন শো ছিল অন্যতম আকর্ষণ৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
বাংলাদেশের সিনেমা
প্রদর্শনীর প্রথম দিনে দেখানো হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম কুড়ানো বাংলাদেশের পাঁচটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র৷ ছবিতে নুহাশ হুমায়ূন পরিচালিত মশারি চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর একটি মুহূর্ত৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
নিয়মিত আয়োজন
বেস্ট অব বাংলাদেশের মূল আয়োজক বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ৷ সহযোগিতা করেছে নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো৷ আগামী বছরের ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর একই স্থানে এর দ্বিতীয় সংস্করণ করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
ছিল প্রতিবাদও
উদ্বোধনী দিনে ভেন্যুর বাইরে ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন নামে একটি বৈশ্বিক শ্রমিক সংস্থার প্রতিনিধিরা প্রতিবাদে অংশ নেন৷ তারা বাংলাদেশের শ্রমিক নেতা শহীদুল হত্যার বিচারসহ, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ২৩ হাজার টাকা মজুরির দাবি তোলেন৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির হয়েও তারা তাদের এসব দাবি তুলে ধরেন৷ বাংলাদেশের সরকারের প্রতিনিধিরা তার উত্তর দেন৷
ছবি: Faisal Ahmed/DW
12 ছবি1 | 12
কিন্তু ক্রেতারা কি পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ দিয়ে তৈরি এসব পোশাকের জন্য অনেক অর্থ খরচ করতে আগ্রহী?
ফ্যাশন সাংবাদিক গডফ্রে ডিনি বলেন, ‘‘আজকাল সবাই পলিটিক্যালি কারেক্ট হতে চায়৷ হয়তো সব কোটিপতির ক্ষেত্রে এই কথাটা সত্য নয়৷ তবে আমি রিসাইক্লিং, আপসাইক্লিং আর সাসটেনেবিলিটির সঙ্গে আছি, আমার এমন পোশাক আছে- এই কথা বলতে পারাটা এখন ফ্যাশন জগতে অনন্য বিবৃতি হিসেবে দেখা হচ্ছে৷''
জার্মানিয়ের ক্রেতাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সুপারস্টারের নাম আছে৷ যেমন মার্কিন গায়িকা টেলর সুইফট, জার্মান মডেল হাইডি ক্লুম আর ব্রাজিলিয়ান অভিনেত্রী জেসিকা কায়ান৷ ‘‘এটা প্রমাণ করে যে, ওট কুটুয়র টেকসই হতে পারে এবং এতে বিভিন্ন ধরণের উপকরণ ব্যবহার করা যেতে পারে৷ এটা বিশ্ব ও আমাদের গ্রহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ জার্মানিয়ে এই পোশাকগুলো নিখুঁতভাবে তৈরি করেন,'' বলেন কায়ান৷
প্যারিসের ফ্যাশন জগতে হালের প্রিয় ব্যক্তিত্ব হলেন কেভিন জার্মানিয়ে৷ গতবছর প্যারিস অলিম্পিকের সমাপনী অনুষ্ঠানের জন্য ১২০টি পোশাক তৈরির দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু, ঠিক কোন বিষয়টি তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে?
গডফ্রে ডিনি বলেন, ‘‘আপসাইক্লিং, রিসাইক্লিং এবং পুরো কাপড় নতুন করে তৈরি- ডিজাইনাররাএখন পর্যন্ত সস্তা আর তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে বর্জ্য উপকরণ ব্যবহার করেছেন৷ কুটুয়রের ক্ষেত্রে কেউ এমনটা করেননি৷ সে কারণে জার্মানিয়ে অনন্য৷ দ্বিতীয়ত, অনেকদিন ধরে কোনো সুইস কুটুয়র ডিজাইনার দেখা যায়নি৷ জার্মানিয়ে অনেকটা নিজস্ব অর্থায়নে কাজ করে গেছেন৷ কোনো বড় বিনিয়োগকারী কিংবা সম্পদশালী পিতা তার পেছনে নেই৷''
তাইতো ফ্যাশন লেবেল ‘জার্মানিয়ে' এখনো একটি সুইস পারিবারিক ব্যবসা৷ তার অনেক আত্মীয় এতে সাহায্য করেন৷ এমনকি তার দাদিও পোশাক বুনেন৷কেভিন জার্মানিয়ের দাদি তার প্রথম ওট কুটুয়র শোতে বুননের কাজ করেছিলেন৷ডাস্টবিন থেকে পাওয়া জিনিস দিয়ে তৈরি অত্যাধুনিক ফ্যাশন: অরিজিনাল, টেকসই আর সফল৷