ডেনিশ শিল্পী টোমাস ডাম্বো ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র থেকে স্ট্রিট আর্ট সৃষ্টি করেন৷ কোপেনহাগেনের কেন্দ্রে তাঁর হ্যাপি ওয়াল, কিংবা সারা শহরের দেয়ালে তাঁর সৃষ্ট অসংখ্য ‘পাখির বাড়ি', এ সবই একাধারে আর্ট এবং হ্যাপেনিং৷
বিজ্ঞাপন
ইনস্টলেশনগুলো বিশাল – রংচংয়ে৷ ভালো করে দেখলে চোখে পড়ে: এই ভাস্কর্য এমন সব বস্তু দিয়ে সৃষ্টি, মানুষজন যা ফেলে দিয়ে থাকে৷ অন্যদের কাছে যা আবর্জনা, টোমাস ডাম্বোর কাছে তা হলো কাজের জিনিস৷ কেননা সেই ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র থেকেই তিনি শিল্পকলা সৃষ্টি করে থাকেন টোমাস ডাম্বো৷
টোমাস বলেন, ‘‘আমি সারা জীবন ধরে রিসাইকলড মেটিরিয়াল ঘাঁটছি৷ যখন বড় হচ্ছি, তখনও শিল্পী হতে চেয়েছিলাম, অনেক কিছু গড়তে চেয়েছিলাম, কিন্তু তখন আমার কাছে অতো পয়সা ছিল না৷ কাজেই আমি শিখলাম যে, কোনো জিনিস যদি এমনিতেই খুঁজে পাওয়া যায়, তবে তা কেনার কোনো মানে হয় না৷''
আজ টোমাস ডাম্বো তাঁর সদ্য খুঁজে পাওয়া জিনিসপত্র আলাদা করছেন: তাঁবু, ম্যাট্রেস, একটি মিউজিক ফেস্টিভালের পর যা সব পড়ে থাকে – এবং যা তাঁর পরের প্রকল্পের জন্য কাজে লাগতে পারে৷ টোমাসের কথায়, ‘‘আমরা এমন ধরনের ওয়ার্কশপ করবো যেখানে লোকে এই সব ম্যাট-এর টুকরো কেটে টুপি কিংবা সুপারম্যানের মুখোশ তৈরি করতে পারবেন৷ আমি এখানে দাঁড়িয়ে এগুলো গোছাচ্ছি আর নানা ধারণা পাচ্ছি: হয়ত এটার সাথে এটা লাগানো যেতে পারে; তাহলে এটা পাওয়া যাবে...৷''
সিঁড়ি বেয়ে শিল্প, শিল্পময় সিঁড়ি
কলকাতার জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে এক অভিনব রীতিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী হচ্ছে৷ বাড়িটির মূল যে সিঁড়ি, সেটাই ব্যবহার হচ্ছে প্রদর্শনশালা হিসেবে৷ ফলে প্রথাগত প্রদর্শনীকক্ষের থেকে অনেক বেশি মানুষ দেখতে পাচ্ছেন এই প্রদর্শনী৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বছরভর প্রদর্শনী
কলকাতার জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মানে গ্যোটে ইন্সটিটিউট বা মাক্স ম্যুলার ভবনে সারা বছর ধরেই নানা ধরনের প্রদর্শনী হয়৷ এর মূল উদ্দেশ্য চলতি জার্মান শিল্পকর্মের সঙ্গে এই শহরের পরিচয় করিয়ে দেওয়া৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
সিঁড়িতে প্রদর্শনী
এই প্রদর্শনীর স্থান নির্বাচনটি বেশ অভিনব৷ বাড়িটির দোতলায় যাওয়ার মূল যে সিঁড়িটি, তার পাশের দেওয়াল এটা৷ আর এই দেওয়াল জুড়েই ঝোলানো হয়েছে ছবিগুলো৷ এ কারণেই এই প্রদর্শশালার নাম, ‘দ্য স্টেয়ার্স’৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
...এবং অন্যত্র
শুধু সিঁড়িটিই অবশ্য নয়, যে হলঘর থেকে এর শুরু, এবং দোতলার যে বসার জায়গায় গিয়ে সিঁড়ির শেষ, ছবি সাজানো হয়েছে তার দেওয়ালেও৷ গোটা জায়গাটা জুড়েই চালু রয়েছে এই প্রদর্শনী৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
আসা-যাওয়ার পথে
যাঁরা কোনো কাজে গ্যোটে ইন্সটিটিউটে আসেন, তাঁরা সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামার সময়েই দেখে নিতে পারেন প্রদর্শনীটি৷ অথবা বসার জায়গায় যখন কারও জন্য অপেক্ষা করছেন, তখনও সময় কাটাতে পারেন ছবি দেখে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
নতুনদের সুযোগ
নতুন ধরনের কী কী কাজ হচ্ছে জার্মানিতে – তা জানার এক বড় সুযোগ করে দিচ্ছে মাক্স ম্যুলার ভবনের এই প্রদর্শনী৷ এই যেমন, নবীনা আলোকচিত্রী ইয়ানা ভেরনিকে৷ তিনি তো বেজায় খুশি নিজের ছবির প্রদর্শনী দেখে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
অচেনাকে চেনা
শুধু যে নবীন জার্মানদের কাজ দেখার সুযোগ পাচ্ছে কলকাতার মানুষ, তা কিন্তু নয়৷ ইয়ানার মতো আলোকচিত্রীরাও সুযোগ পাচ্ছেন নতুন দেশ, অন্য শহর আর অচেনা সংস্কৃতি পরখ করার৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
উত্তরণের সিঁড়ি
সব মিলিয়ে কলকাতার গ্যোটে ইন্সটিটিউটের এই সিঁড়ির প্রদর্শনী শুধু যে নতুন শিল্পের আধার হয়ে উঠেছে – তাই নয়, নবীন শিল্পীদের উত্তরণের একটা সিঁড়ি হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে প্রদর্শনীটি৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
7 ছবি1 | 7
সুখী প্রাচীর
প্রথমে সব জমিয়ে একত্র করা, তারপর সঠিক প্রকল্পটি সৃষ্টি করা৷ সেইরকম ছিল টোমাস ডাম্বোর ‘হ্যাপি ওয়াল' বা সুখী প্রাচীর প্রকল্প৷ দেয়ালটি যেন দু'হাজার ‘পিক্সেল' দিয়ে তৈরি, যদিও পিক্সেলগুলি কাঠ দিয়ে বানানো৷ রসকিল্ডে ফেস্টিভালের মঞ্চ থেকে এই টুকরোগুলো বেঁচেছিল৷ টোমাস ডাম্বো সেগুলো দিয়ে কোপেনহাগেনের মাঝখানে এই ইন্টারঅ্যাকটিভ দেয়ালটি সৃষ্টি করেন ২০১৩ সালে৷ টোমাস বলেন, ‘‘হ্যাপি ওয়ালের ধারণাটা হলো, মানুষজন যাতে একটি প্রকাশ্য স্থানে তাঁদের ধ্যানধারণা বড় আকারে, জোরালোভাবে পেশ করতে পারেন৷''
এছাড়া তাদের সেই সব বার্তা ও ‘বাণী'-র ছবি তুলে হ্যাশট্যাগ হ্যাপি ওয়াল-এর মাধ্যমে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে প্রকাশ করার অনুরোধ ছিল৷ এভাবে এক বছরে সাত হাজার ছবি প্রকাশিত হয়৷ টোমাস-এর ভাষ্যে, ‘‘আপনি যদি এমন কিছু লেখেন যা সাধারণ লোকের পছন্দ নয়, তাহলে সাধারণ জনতা গিয়ে সেই বোর্ডগুলো উলটে দেবে৷ এভাবে দেয়ালে কোন লেখা দেখা যাবে, তা নির্ধারিত হবে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে – বিজ্ঞাপনের মতো নয়, যা শুধু টাকার অঙ্ক দিয়ে নির্ধারিত হয়৷''
সহজ জীবনযাপনের শিল্প
প্রতি বছরের মতো এবারও জার্মানির কোলন শহরে বসেছে ইন্টারনাৎসোনালে ম্যোবেল মেসে (আইএমএম) বা আন্তর্জাতিক ফার্নিচার মেলা৷ ছবিঘরে দেখে নিন এই মেলায় প্রদর্শিত কিছু অভিনব ডিজাইন৷
ছবি: DW/B. Görtz
গল্প বলা তাঁবু
দূরের কোনো দেশের কথা মনে করিয়ে দেয়া, কোনো ইচ্ছে পূরণের প্রতীক, কোনো স্বপ্ন, কোনো সংস্কৃতিকে তুলে ধরে – এমন তাঁবুতে বাস করা মন্দ কী! আলেকসান্ডার সাইফ্রাইড অসম্ভব সুন্দর এই ‘কারগাহ তাঁবু’ তৈরি করেছেন উত্তর আফগানিস্তানের এক ধরণের ঘরের আদলে৷ জার্মান কোম্পানি রিচার্ড লাম্প্যার্টের জন্য নির্মাণ করা এই অভিনব ঘরটির পেছনের ভাবনাটা হলো, যেখানে তাঁবু ফেলা যায়, সেখানেই বাস করতে পারেন আপনি৷
ছবি: DW/B. Görtz
যেন স্বপ্ন দেখছি...
জেন ভরথিংটন ডাচ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান লেওলুক্সের জন্য তৈরি করেছেন সোফার মতো এই দোলনাটি৷ তাঁর এই ডিজাইন কোলনের আন্তর্জাতিক ফার্নিচার মেলায় ‘ইন্টেরিয়র ইনোভেশন’ অ্যাওয়ার্ড জিতেছে৷ মেলায় পুরো জানুয়ারি মাস জেনের এই স্বপ্নের ঘোর লাগানো সোফা প্রদর্শিত হবে৷
ছবি: DW/B. Görtz
সময় পেরিয়ে...
এমন চেয়ারের আদি ডিজাইনার চার্লস এমেস এবং তাঁর স্ত্রী রে৷ ডিজাইন কবে করা হয়েছিল ৬০ বছরেরও বেশি আগে! পরবর্তীতে অন্য ডিজাইনাররা নিজেদের কল্পনার তুলির আঁচড়ে চার্লস আর রে দম্পতির সৃষ্টিকে নতুন জীবন দিয়েছেন বহুবার৷ তার দিয়ে তৈরি ছবির এই চেয়ারগুলোও চার্লস-রে দম্পতির কাজ থেকে প্রেরণা নিয়েই করা৷ ফার্নিচার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ভিত্রা-র জন্য দেখতে সহজ অথচ চমৎকার ডিজাইনটি করেছেন ডিটার থীল৷
ছবি: DW/B. Görtz
ডেনিশ আকর্ষণ
মেলার গত আসরে তাঁরা ছিলেন না৷ সবাই খুব মিস করেছেন তাঁদের৷ তবে এবার স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ডিজাইন নিয়ে পূর্ণ মহিমায় ফিরে এসেছেন গুবি, মুটো, নরমান কোপেনহাগেনের মতো অনেকে৷ ওসব দেশের ফার্নিচারের বিশেষ একটা বিশেষত্ত হলো, সাধারণভাবে খুব সুন্দর আসবাবগুলো ছোট কোনো ঘরেও ব্যবহার করা যায়৷ এই সোফাগুলোই দেখুন, কাঠ আর অন্য কিছু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা সোফাগুলোকে আকারে একেবারেই বড় বলা যাবে না৷
ছবি: DW/B. Görtz
আলোর মজা
ঘটনাক্রমে এই আসবাবপত্রের ডিজাইনারও ডেনিশ এবং এটিও খুব পুরোনো৷ ডিজাইনারের নাম ভ্যার্নার পান্টন৷ গত প্রায় ৫০ বছর ধরে কোলন আন্তর্জাতিক ফার্নিচার মেলায় বেশ নাম করেছেন তিনি৷ তাঁর ডিজাইন করা ‘ফান’ বা ‘মজা’ নামের ল্যাম্পটি আজও ‘বেস্ট সেলার’৷
ছবি: DW/B. Görtz
সবুজ বাস
লতানো গাছের আদলে বাতি৷ সবুজ লতা-পাতার পাশে সাদা ফুল, ফল হয়ে জ্বলন্ত এই বাতি এবারের আন্তর্জাতিক ফার্নিচার মেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে৷ আলোর সঙ্গে ক্যানাডিয়ান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বোচির নামও ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র৷
ছবি: DW/B. Görtz
সবুজ নিদ্রা
ইটালিয়ান ডিজাইনার কাপো ডি’অপেরার ডিজাইন করা এই বিছানা দেখলে কি মনে হয়, প্রচুর টাকা খরচ করে চোখধাঁধানো কোনো শয্যা তৈরির কোনো মানে আছে? কাপো আসলে বুনো পরিবেশের ছিমছাম একটা শয্যাও যে মুগ্ধ করতে পারে, তা-ই দেখাতে চেয়েছেন৷ বিছানার চাদর এলোমেলো৷ দেখে মনে হয় এই বুঝি কেউ কয়েক মুহূর্তের জন্য বিছানা ছেড়ে গেলেন, এক্ষুনি আবার ফিরে আসবেন৷
ছবি: DW/B. Görtz
একই উৎস থেকে
সার্বিয়ার ডিজাইনাররা এলইডি প্রযুক্তিকে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে এমন এক লাইট তৈরি করেছেন যার অভাব মেটাতে গেলে হয়ত একই ঘরে অনেকগুলো লাইট ব্যবহার করতে হবে৷ এই বাতির উৎস একটাই৷ এক জায়গা থেকেই বেরিয়েছে অনেকগুলো বাতি৷ দামও কিন্তু অনেক৷ ৫০ হাজার ইউরো!
ছবি: DW/B. Görtz
ভবিষ্যতে এমন হবে?
এবারও মেলায় এক তরুণ ডিজাইনারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷ তাঁর কাজ ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে দেখানো৷ ডেনিশ-ইংলিশ ডিজাইনার লুইস ক্যাম্পবেল দারুণ কাজ দেখিয়েছেন৷ আইডিয়াটা চমৎকার৷ একটই বিশাল ঘর৷ এক ঘরেই শোবার ঘর, খাবার ঘর, রান্নাঘর – সব৷ একেক ঘরের ডিজাইন এমনভাবে করা যাতে একই ঘর অন্য ঘরের মতোও ব্যবহার করা যায়৷ এই রান্নাঘরটাই দেখুন৷ দেখে কেমন ওয়ার্কশপ ওয়ার্কশপ মনে হয় না!
ছবি: DW/B. Görtz
9 ছবি1 | 9
পাখির বাড়ি
তাঁর সর্বাধুনিক ইনস্টলেশনেও ৩৫-বছর-বয়সি শিল্পী সাধারণ জনতাকে সংশ্লিষ্ট করেছেন৷ টোমাস ডাম্বো রিসাইকলড করা কাঠের টুকরো দিয়ে ৫২টি ‘পাখির বাড়ি' বানিয়েছেন৷ এগুলো সারা কোপেনহাগেনে ঝোলানো আছে: যদি সেগুলো দেখার মতো চোখ থাকে৷ আর্কেন আধুনিক শিল্পকলা সংগ্রহশালার পরিচালক ক্রিস্টিয়ান গেয়ার্টার জানান, ‘‘আমরা টোমাস ডাম্বোকে এই প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে বেছে নিয়েছি কেননা আমাদের মিউজিয়ামের চিন্তাধারার সঙ্গে ওঁর চিন্তাধারা খুব মেলে৷ আমরা মনে করি, মিউজিয়াম আছে পাবলিকের জন্য; টোমাস ডাম্বো পাবলিককে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন৷ তিনি জনতাকে সংশ্লিষ্ট করেন, তাদের সঙ্গে আদানপ্রদান করেন৷ এর ফলে জনতা সত্যিই খুব আগ্রহ দেখায়৷''
আট বছর আগে টোমাস ডাম্বো প্রকল্পটি শুরু করেন – ইতিমধ্যে তিনি সাড়ে তিন হাজারের বেশি বার্ডস হাউস সৃষ্টি করেছেন, যেগুলো শুধু ডেনমার্কেই নয়, লেবানন পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যাবে৷ এ হলো টোমাস ডাম্বোর নিজস্ব স্ট্রিট আর্ট৷ টোমাস জানালেন, ‘‘আমার এক বন্ধু দেয়ালে গ্র্যাফিটি আঁকার জন্য জেলে যাওয়ার পর আমি এমন একটা প্রকল্প করার প্রেরণা পাই, যা দেয়ালে আঁকা যাবে কিংবা টাঙানো যাবে, কিন্তু সেজন্য লোকে পুলিশ না ডেকে, আমাকে টেলিফোন করে বলবে, ধন্যবাদ৷''
তাঁর শিল্পকলার মাধ্যমে টোমাস ডাম্বো ফেলে দেওয়া বস্তুকে আবার বাঁচিয়ে তোলেন৷ তাঁর কল্পনাশক্তিও অফুরন্ত...৷