বিখ্যাত ভাস্কর্যের পেছনে দক্ষতা, প্রতিভা, পরিশ্রম ও দামি উপকরণের যে অবদান রয়েছে, তা অজানা নয়৷ ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র সংগ্রহ করে তা দিয়েই নজর কাড়া শিল্পকীর্তি সৃষ্টি করে চলেছেন এক গ্রিক ভাস্কর৷
বিজ্ঞাপন
গ্রিক ডিজাইনার কস্টাস লামব্রিডিস আসবাবপত্র দিয়ে যে ভাস্কর্য গড়ে তোলেন, আকার-আকৃতি ও উপকরণের বিচারে সেগুলি সত্যি প্রথাবিরোধী৷ হাতে যা পান, তাই দিয়েই তিনি সামগ্রিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ শিল্পকীর্তি সৃষ্টি করেন৷ নিজের কর্মপদ্ধতি ব্যাখ্যা করে কস্টাস বলেন, ‘‘আমি নির্দিষ্ট কোনো উপকরণের বিশেষজ্ঞ হবার চেষ্টা করি না, বরং সব সময় উপকরণ বদল করি৷ নানা ধরনের উপকরণ ঘেঁটে নতুন উদ্যম নিয়ে নতুন বস্তু তৈরি করি, পরীক্ষা করি, ভুলও করি৷’’
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে ৩৩ বছর বয়সি শিল্পীর স্টুডিওতে জটিল সব সৃষ্টি রূপ পায়৷ বর্তমানে তিনি একটি ফোয়ারা তৈরির কাজে ব্যস্ত৷ কস্টাস বলেন, ‘‘মাথায় একটা আইডিয়া থাকে৷ তারপর সেটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়৷ কিন্তু উপকরণেরও নিজস্ব চরিত্র ও পদার্থ রয়েছে, যার নিজস্ব অভিব্যক্তি বোঝা যায়৷ কখনো সেই জবাব পছন্দ নাও হতে পারে৷ ফলে শিল্পী হিসেবে হয় সংঘাত, কিংবা সহযোগিতার পথ বেছে নিতে হয়৷ সেগুলি একত্র করাই হলো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ যেমন এক টুকরো সেরামিকের সঙ্গে এক টুকরো মার্বেল কীভাবে জোড়া সম্ভব? অথবা ইস্পাতের সঙ্গে কাচ?’’
আসবাবপত্র দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি
04:29
তাঁর উপকরণ বোঝাই শিল্পকীর্তিগুলি বারোকের মতো শিল্পের একাধিক শৈলির প্রতিফলন ঘটায়৷ তাঁর ‘এলিমেন্টাল ক্যাবিনেট' নামের সৃষ্টি শিল্পের ইতিহাসের এক মাস্টারপিসের আদলে তৈরি, যেটির নাম ‘ব্যাডমিন্টন ক্যাবিনেট’৷ অষ্টাদশ শতাব্দীর বারোক শৈলির এই আলমারি নিলামে রেকর্ড তিন কোটি ইউরো দামে বিক্রি হয়েছে৷ বিশ্বের সবচেয়ে দামী আসবাব হিসেবে সেটি পরিচিত৷ কস্টাস লামব্রিডিস মনে করেন, ‘‘ব্যাডমিন্টন ক্যাবিনেটের মতো এত দামী কোনো বস্তুর সঙ্গে আমার সংগ্রহ করা অতি সাধারণ, মূল্যহীন, এমনকি কখনো জঞ্জাল হিসেবে বিবেচিত উপকরণের বৈপরিত্য আমি তুলে ধরতে চেয়েছিলাম৷’’
কস্টাস লামব্রিডিস নেদারল্যান্ডসের আইন্ডহোফেন শহরে ডিজাইন নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে পুরস্কারও পেয়েছেন৷ নিজেই সব কাজ করতে ভালবাসেন৷ সোল্ডারিং, টাইলস বসানো অথবা কাচের বুদবুদ সৃষ্টির মতো কোনো কাজেই তিনি পিছপা হন না৷ কস্টাস বলেন, ‘‘আমার মতে, আমরা সবাই সব কিছু করতে পারি৷ অন্য কিছু আমাদের থামিয়ে দেয়৷ আমার কাছে দক্ষতাই সবকিছু নয়, বরং ইচ্ছাই আসল কথা৷ আমার কাছে সবকিছুই ইন্টারেস্টিং৷ একই সঙ্গে সবকিছুর মধ্যে ঝাঁপিয়ে না পড়লে আমার চলে না৷’’
স্টুডিওতে উপকরণের অভাব নেই৷ বাকিরা যা ফেলে দেয় বা হাটে বেচে দেয়, সেগুলি তাঁর কাছে বড় সম্পদ৷ কস্টাস লামব্রিডিস বলেন, ‘‘পথঘাট থেকে এই সব আমি সংগ্রহ করি, যেমন পুরানো প্লাস্টিকের খেলনা বা ছাদের টালি৷ কেউ বাসার মেরামতি করানোর সময় সেগুলি ফেলে দিয়েছিল৷ আমার কাছে এ সব সোনার মতো৷ কুড়িয়ে পাওয়া ভাঙা মার্বেলের বস্তু আমার অত্যন্ত পছন্দের৷ ভীষণ ভারি বলে আমি ছাড়া কেউ সে সব চায় না৷’’
ডিজাইনার হিসেবে তিনি প্যারিসের বিখ্যাত ‘কার্পেন্টার্স ওয়ার্কশপ গ্যালারি’-র প্রতিনিধিত্ব করেন৷ সেখানে অভিনব আসবাবের কোলাজ চড়া দামে বিক্রি হয়৷ কস্টাস বলেন, ‘‘আমার কাছে কাজ জীবন্ত কোনো প্রাণীর মতো৷ অর্থাৎ প্রথমে একটা আইডিয়া আসে, একটা বীজ থাকে যা স্টুডিওতে বপন করা হয়, যা মাটির মতো৷ আমাদের ভালোবাসা ও যত্ন পেলে, আমাদের শক্তি ও সময় উজাড় করে দিলে তখন সেটি বাড়তে শুরু করে৷’’
কস্টাস লামব্রিডিস একই সঙ্গে ডিজাইনার ও কিছুটা দার্শনিকও বটে৷ তিনি প্রকৃত অর্থে নিজেকেও ছাপিয়ে যাবার ক্ষমতা রাখেন৷
ক্রিস্টিনে লেবার্ট/এসবি
বিশ্বের দামি কিছু শিল্পকর্ম
বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি ও ভাষ্কর্যের জন্য সংগ্রাহকরা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকেন – ৪০ কোটি ডলারের বেশি দাম ওঠাও আশ্চর্যের কিছু নয়৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
সালভাদর মুন্ডি
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ২০টি অক্ষত ছবির একটি এটি৷ ধারণা করা হয়, ১৫০০ সালে এ ছবিটি আঁকা হয়৷ ১৯৫৮ সালে ছবিটিকে অনুলিপি ভেবে নিলামে মাত্র ৬০ মার্কিন ডলারে এটি বিক্রি হয়৷ যিশুখ্রিষ্টের এ ছবিটি ২০১৭ সালে ১০ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হবে ধারণা করা হলেও অজ্ঞাত এক ক্রেতা ৪৫ কোটি ডলার দিয়ে কেনেন এটি৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
ইন্টারচেঞ্জ
ডাচ-অ্যামেরিকান শিল্পী উইলেম ডে কুনিং-এর আঁকা ইন্টারচেঞ্জ নামে একটি তৈলচিত্র ২০১৫ সালে ৩০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তাস খেলায় মগ্ন
উত্তর অভিব্যাক্তিবাদ ঘরানার ফরাসি শিল্পী পল সেজানের আঁকা এ ছবিটির নাম ‘দ্যা কার্ড প্লেয়ার’৷ ২০১১ সালে ২৫ কোটি ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
‘যখন তুমি বিয়ে করবে’
এ ছবিটি আঁকা হয়েছিল ১৮৯২ সালে৷ শিল্পী ফ্রান্সের পল গগাঁ৷ ‘হোয়েন উইল ইউ মেরি’ শিরোনামের এ ছবিটির দাম ২১ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/E. Lessing
‘নাম্বার ১৭এ’
অ্যামেরিকান শিল্পী জ্যাকসন পোলোকের আঁকা ‘নাম্বার ১৭এ’ নামের একটি চিত্রকর্ম ২০১৫ সালে ২০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷ উপরের ছবিটি পোলোকের আঁকা, যার নাম নাম্বার ৭৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিয়ের ছবি’
নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত মার্টেন ও ওপইয়েন এর ১৬৩৪ সালের অনুষ্ঠিত বিয়ের ছবি এটি৷ চিত্রকর ডাচ শিল্পী রেমব্রান্ট হারমেনসুন ফান রিন৷ ২০১৫ সালে বিক্রি হওয়া এ ছবিটির দাম পড়েছে ১৮ কোটি ডলার৷
ছবি: gemeinfrei/DW Montage
আলজিয়ার্সের মহিলারা
লেডি অব আলজিয়ার্স শিরোনামে ছবিটি স্পেনের জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর পাবলো পিকাসোর ১৯৫৫ সালে আঁকা৷ নিলামে ছবিটির দাম উঠে ১৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে৷
ছবি: Reuters
‘ন্যু কুশে’
ইটালির চিত্রকর আমেদেও মোদিগলিয়ানি এই ছবিটি আঁকেন ১৯১৭ সালে, তার মৃত্যুর তিন বছর আগে৷ ১৭কোটি চার লাখ ডলারে ২০১৫ সালে বিক্রি হয় ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
‘মাস্টারপিস’
অ্যামেরিকান পপ আর্টিস্ট রয় লিচটেনস্টাইনের ১৯৬২ সালে একেছিলেন বিখ্যাত এ ছবিটি৷ ২০১৭ সালে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: Dan Kitwood/Getty Images
লুসিয়ান ফ্রয়েডের তিনটি প্রতিকৃতি
আইরিশ চিত্রকর ফ্রান্সিস বেকন এই তিন খণ্ডের ছবিটি আঁকেন ১৯৬৯ সালে৷ ছবিতে যার আলেখ্য, তিনি হলেন ব্রিটিশ চিত্রকর লুসিয়ান ফ্রয়েড, পক্ষান্তরে মনস্তত্বের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের পৌত্র৷ ২০১৩ সালে ক্রিস্টি’স-এর নিলামে ছবিটির দাম ওঠে ১৪ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার৷ রয়েছে মার্কিন শিল্পকলা সংগ্রাহক এলেইন ওয়াইনের সংগ্রহে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অঙ্গুলিনির্দেশ
সুইস ভাস্কর আলবের্তো জাকোমেত্তির সৃষ্টি এই মানুষ-সমান ব্রোঞ্জ মূর্তিটি নিউ ইয়র্কে ক্রিস্টি’স-এ নিলাম করা হয় ২০১৫ সালে, কেনেন স্টিভ কোহেন নামের এক হেজফান্ড ম্যানেজার৷ মূর্তিটি আজ বিশ্বের সবচেয়ে দামি ক্রয়যোগ্য ভাস্কর্য বলে গণ্য৷ এটি বিক্রি হয়েছেল ১৪ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Hatfield/Christies
সোনার আডেলে
অস্ট্রিয়ার চিত্রকর গুস্তাফ ক্লিম্ট আডেলে ব্লখ-বাউয়ারের এই প্রতিকৃতিটি আঁকেন ১৯০৭ সালে৷ ম্যানহ্যাটানের ‘নয়ে গ্যালেরি’ নামের সংগ্রহশালার জন্য ২০০৬ সালে ছবিটি কেনেন মার্কিন ব্যবসায়ী রোনাল্ড লডার৷ ছবিটি ১৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারে কেনার ব্যবস্থা করে ক্রিস্টি’স সংস্থা৷
ছবি: AUSSCHNITT: picture-alliance/Heritage Images
চিৎকার
নরওয়েজীয় চিত্রকর এডভার্ড মুঞ্চ ‘চিৎকার’ ছবিটি এঁকেছেন একাধিক বার ৷ দা ভিঞ্চির মোনালিসা ও ফান গখ-এর সূর্যমুখি ফুলের পরেই মুঞ্চের এই ছবিটিকে বিশ্বের খ্যাততম চিত্রকর্ম বলে গণ্য করা হয়৷ ছবিটির প্যাস্টেল রঙে আঁকা এই সংস্করণ নিলাম করা হয় ২০১২ সালে, নিউ ইয়র্কের সথেবি সংস্থায়৷ মার্কিন শিল্পপতি লিয়ন ব্ল্যাক ১১ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলারে কিনেন এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নগ্নমূর্তি, সবুজ পাতা, আবক্ষ
পাবলো পিকাসো এই তেলরঙের ছবিটি এঁকেছিলেন মাত্র একদিনে – দিনটা ছিল ৮ই মার্চ, ১৯৩২৷ প্রায় অজ্ঞাত ছবিটি নিউ ইয়র্কের নিলামে বিক্রি হয় ১০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যে, কেনেন এক অজ্ঞাত ক্রেতা৷ ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকলেও, ছবিটি লন্ডনের টেট মডার্ন গ্যালারিকে ধার দেওয়া হয়েছে ২০১১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রুপোলি গাড়ি দুর্ঘটনা
মার্কিন চিত্রকর অ্যান্ডি ওয়ারহল ১৯৬৩ সালে এই সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্টটি সৃষ্টি করেন – যার বিষয়বস্তু হল একটি গাড়ি দুর্ঘটনা৷ ২০ বছর ধরে ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকার পর ২০১৩ সালে সথেবি-তে ছবিটি নিলাম করা হয়৷ ক্রেতা অজ্ঞাতই থাকেন; তবে ছবিটি পপ আর্ট শিল্পী ওয়ারহলের সবচেয়ে দামী ছবি বলে গণ্য করা হয়৷