তথ্য গোপন রাখার বিষয়ে ফেসবুক কী পদক্ষেপ করছে, তা খোলাখুলি জানাতে হবে৷ ফেসবুক কর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ দাবিই রেখেছেন জার্মানির বিচারমন্ত্রী কাটারিনা বার্লে৷
বিজ্ঞাপন
কেবল মুখের কথায় কাজ হবে না, ফেসবুককে প্রমাণ করতে হবে যে, তারা জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখবে৷ শুধু তাই নয়, যে ৫ কোটি মানুষের তথ্য ফাঁস করেছে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা, তার মধ্যে জার্মানির কোনো নাগরিক থাকলে তা-ও জানাতে হবে৷ ফেসবুক কর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকেএমনই কড়া বার্তা দিলেন জার্মান বিচারমন্ত্রী কাটারিনা বার্লে৷ বস্তুত, বার্লের সঙ্গে বৈঠক করতে তাঁর দফতরে এসেছিলেন ফেসবুকের উচ্চপদস্থ কর্তারা৷ তাঁদের মধ্যে ছিলেন পাবলিক পলিসির প্রধান রিচার্ড অ্যালেন৷
সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং অজারভারে একটি খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন পড়ে যায়৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন নির্বাচনের আগে একটি অ্যাপের সাহায্যে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের একটি সংস্থা ফেসবুকের ৫ লক্ষ গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে৷ সেই তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের দফতরে, যা ব্যবহার করে ট্রাম্পের দফতর প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে নির্দিষ্ট নির্বাচনী প্রচার চালায়৷ ফেসবুক কীভাবে ব্যক্তিগত তথ্য এভাবে প্রকাশ করে দিলো তা নিয়ে সরব হন অনেকেই৷ ভারত থেকে জার্মানি সর্বত্রই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়৷ এরপরেই কড়া পদক্ষেপের কথা জানান জার্মান বিচারমন্ত্রী বার্লে৷ তিনি বলেন, ফেসবুক এবং তার অধিকর্তা সাকারবার্গকে এ বিষয়ে জবাবদিহি করতে হবে৷
বস্তুত, বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সাকারবার্গও প্রকাশ্যে ক্ষমা চান৷ সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাকারবার্গ বলেন, বিষয়টি অবাঞ্ছিত৷ ভবিষ্যতে ফেসবুক তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে আরো সতর্ক হবে৷
ফেসবুকের সঙ্গে বার্লের বৈঠকে ফেসবুক কর্তারাও একই কথা জানান৷ তাঁরা বলেন, ভবিষ্যতে তথ্য গোপন রাখার ক্ষেত্রে আরো সচেতন হবে ফেসবুক৷ কিন্তু বার্লে জানান, কেবলমাত্র মুখের কথা কাজ হবে না৷ ফেসবুককে তাদের বক্তব্য প্রমাণ করতে হবে৷ তথ্য গোপন রাখার বিষয়ে তারা কী পদক্ষেপ করছেন তা সকলকে জানাতে হবে৷ এবং যে ৫ লক্ষ গ্রাহকের তথ্য ফাঁস হয়েছে তার মধ্যে কোনো জার্মান থাকলে সে বিষয়েও জার্মান প্রশাসনকে জানাতে হবে এবং ওই ব্যক্তিকে অবহিত করতে হবে৷
এসজি/এসিবি (রয়টার্স)
ফেসবুকের সঙ্গ ছাড়লো যারা
তথ্য নিরাপত্তা নিয়ে ফেসবুকের সাম্প্রতিক কেলেংকারির ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে #ডিলিটফেসবুক শীর্ষক একটি প্রচারণা চলছে৷ অনেকে তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দিচ্ছেন৷
ছবি: Colourbox/Maxx-Studio
স্পেসএক্স ও টেসলা
ইলেক্ট্রিক গাড়ি নির্মাতা টেসলা ও রকেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এর উদ্যোক্তা এলোন মাস্ক টুইটারে জানিয়েছিলেন, তিনি এই দুই কোম্পানির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দেবেন৷ এরপর সেগুলো মুছে দেয়া হয়৷ প্রত্যেকটি অ্যাকাউন্টে প্রায় ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন অনুসারী ছিল৷
ছবি: Reuters/T. Baur
মজিলা
জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার ফায়ারফক্সের কোম্পানি মজিলা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়া কিছুদিনের জন্য স্থগিত রাখবেন৷ আর তারা ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করার কথা না বললেও সেখানে নিয়মিত পোস্ট দেয়া স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছে৷
ছবি: LEON NEAL/AFP/Getty Images
কমার্ৎসবাঙ্ক
জার্মানির অন্যতম বড় এই ব্যাংকও ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়া কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখবে বলে জানিয়েছে৷ ব্যাংকের ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্টের প্রধান জার্মান এক পত্রিকাকে বলেন, ‘‘তথ্য নিরাপত্তা ও ব্র্যান্ডের সুনাম রক্ষা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ৷’’
ছবি: Daniel Roland/AFP/Getty Images
হোয়াটসঅ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান অ্যাকটন
২০০৯ সালে ফেসবুকে চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন৷ এরপর তিনি হোয়াটসঅ্যাপ তৈরি করেন৷ সেই হোয়াটসঅ্যাপ ২০১৪ সালে ফেসবুক কিনে নিয়ে বিলিওনেয়ার হয়ে যান ব্রায়ান অ্যাকটন৷ এরপর ২০১৭ সালে হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে দিয়ে সিগন্যাল নামে আরেকটি অ্যাপে বিনিয়োগ করেন৷ ২০ মার্চ তিনি টুইটারে লেখেন, ‘‘এখন সময়৷ #ডিলিটফেসবুক৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gerten
সোনোস
স্পিকার তৈরির মার্কিন এই প্রতিষ্ঠান ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়া বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে৷ তবে কোম্পানিটি ফেসবুককে একেবার ‘পরিত্যাগ’ করবে না, কারণ, এটি ‘খুবই কার্যকর’ একটি সেবা বলে মনে করে তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Sonos
ড. ওয়েটকার
জার্মানির খাদ্য বিষয়ক এই কোম্পানি ২১ মার্চ টুইটারে একটি পোস্ট দিয়ে বলেছিল, পোস্টটি এক হাজারবার রিটুইট হলে কোম্পানির ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দেয়া হবে৷ এক হাজারবার রিটুইট হতে সময় বেশি লাগেনি৷ তারপর কথা অনুযায়ী ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে দেয় ড. ওয়েটকার৷ কিন্তু একদিন পর আবার ফেসবুকে ফিরে আসে তারা৷ কারণ হিসেবে বলে, ফেসবুক ছাড়া ‘থাকতে পারেনি’ তারা৷
ছবি: Dr. Oetker
ফেসবুকের উত্তর
কিছু কোম্পানির ফেসবুক ছেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ফেসবুক বলেছে, ‘‘যত কোম্পানির সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তাদের বেশিরভাগই আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে৷ তারা আশ্বস্ত হয়েছে যে, আমরা বর্তমান চ্যালেঞ্জ ভালোভাবে গ্রহণ করব এবং আরও ভালো কোম্পানি হয়ে উঠবো৷’’