ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্টের কারনে ঝুঁকিতে পড়ছে আরবের এলজিবিটি প্লাস কমিউনিটি৷ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের৷ যদিও এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতির কথা বলেছে ফেসবুক৷
বিজ্ঞাপন
জুলাই মাসের শুরুর দিকে মিশরের আলেক্সান্দ্রিয়ার রাস্তায় মারধরের শিকার হন রামি৷ সমকামী হওয়ায় ফেসবুকে তাকে ঐ ব্যক্তি আগে থেকেই হুমকি দিয়ে আসছিলেন৷ পরে রামিকে খুঁজেও বের করেন সেই হুমকিদাতা৷
একটি টিকটক ভিডিওতে রংধনু পতাকার সামনে দাঁড়ানো রামির ছবি তার অজান্তেই ফেসবুকে পোস্ট করা হয়৷ এরপর থেকেই মূলত হয়রানির শিকার হচ্ছেন রামি৷ একের পর এক হুমকিমূলক বার্তা পাচ্ছেন তিনি৷
পোস্টটি সরাতে একাধিকবার অনুরোধ জানানোর পরও ফেসবকু কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানান রামি৷ শুধু তিনিই নন এ ধরনের অনলাইন হুমকির ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ফেসবুককে চাপ দিয়ে আসছে মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ‘এলজিবিটি প্লাস’ কমিউনিটি৷
রামির বিষয়ে নির্দিষ্ট করে ফেসবুক কোন জবাব না দিলেও তাদের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এই ধরনের ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্যের ক্ষেত্রে তারা ‘জিরো টলারেন্স' নীতি অবলম্বন করেন৷ এই ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়াতে উদ্যোগও নেয়া হয়েছে৷ তবে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে রামি জানিয়েছেন একেরে এক হুমকি পেয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে৷ ‘‘কেউ একজন হুমকি দিয়ে আমাকে ভিডিও পাঠিয়ে বলেছেন, ‘তোমাকে যদি খুঁজে পাই তাহলে মেরে ফেলব এবং দর্জায় ঝুলিয়ে রাখব'৷’’
মিশরের আইন অনুযায়ী কারো ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা লঙ্ঘন হয় এমন কোন অনলানইন কর্মকাণ্ড চালানো যাবে না৷ এই বিষয়ে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি৷
সমকামী বিয়ে বৈধ যে সব দেশে
এ পর্যন্ত কোন কোন দেশের জনগণ সমকামীদের মধ্যে বিয়ের পক্ষে মত দিয়েছেন বা কোন দেশে সমকামী বিয়ে বৈধতা পেয়েছে, সে তথ্যই তুলে ধরা হলো ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Becerra
নেদারল্যান্ডস
বিশ্বে সর্বপ্রথম সমকামী বিয়ে বৈধ হয় এই দেশে৷ ২০০০ সালে বৈধতা পাওয়ার পর ২০০১ সালে সমকামী বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় দেশটিতে৷
ছবি: picture-alliance/DUMONT Bildarchiv/T. Linkel
কলম্বিয়া
২০১৬ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Rubio
আয়ারল্যান্ড
২০১৫ সালে গণভোটের মাধ্যমে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায় এই দেশে৷
ছবি: picture-alliance/empics/N. Carson
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে সমকামী বিয়ে বৈধ হয় ২০১৫ সালে৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
স্কটল্যান্ড
২০১৪ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধ হয়৷
ছবি: Reuters/R. Cheyne
ফিনল্যান্ড
২০১৫ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধ হয়৷
ছবি: dapd
লুক্সেমব্যর্গ
২০১৪ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Pigozne
গ্রিনল্যান্ড
২০১৫ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Reuters/L. Jackson
ফ্রান্স
২০১৩ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Reuters/R. Duvignau
ইংল্যান্ড, ওয়ালস
২০১৩ সালে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায় এখানে৷
ছবি: Getty Images
ব্রাজিল
২০১৩ সালে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: AFP/Getty Images
উরুগুয়ে
২০১৩ সালে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায় এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. I. Mazzoni
ডেনমার্ক
২০১২ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Reuters/A. Kelly
আইসল্যান্ড
২০১০ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/K. Irlmeier
পর্তুগাল
২০১০ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/J.M. Ribeiro
আর্জেন্টিনা
২০১০ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Imago/Agencia EFE/M. Arduin
সুইডেন
২০০৯ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/robertharding
নরওয়ে
২০০৮ সালে এখানে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: AFP/Getty Images/O. Morin
দক্ষিণ আফ্রিকা
২০০৬ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: DW
স্পেন
২০০৫ সালে এখানে সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিউজিল্যান্ড
২০১৩ সালে এখানে সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/Air New Zealand
বেলজিয়াম
২০০৩ সালে এখানে সমলিঙ্গের বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Ghirda
ক্যানাডা
২০০৫ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷
ছবি: Getty Images/D.Pensinger
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ায় সমকামীদের বিয়ে বৈধতা পেয়েছে। ২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রতিনিধি পরিষদে এ-সংক্রান্ত বিল পাস হয়৷ এই প্রস্তাবের পক্ষে ১৪৬টি এবং বিপক্ষে পড়ে মাত্র ৪টি ভোট৷ এর আগে ১৫ই নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার ব্যুরো অফ স্ট্যাটিসটিকস বা এবিএস ঘোষণা করে যে, দেশটির জনগণ সমকামী বিয়ের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন৷ সমকামী বিয়ে বৈধতা আইনে গণভোটের পক্ষে ভোট দেন ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khan
অস্ট্রিয়া
২০১৭ সালে দেশটির সাংবিধানিক আদালত সমকামী বিয়ের অধিকারের পক্ষে রায় দেয়৷ ২০১৯ সাল থেকে তা কার্যকর হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Bruna
জার্মানি
২০১৭ সালের ৩০শে জুন জার্মানিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়৷ অর্থাৎ ইউরোপের ১৫তম দেশ হিসেবে জার্মানিতে সমকামী বিয়ে বৈধতা পেল৷ জার্মান পার্লামেন্টে এর পক্ষে ৩৯৩টি ভোট পড়ে আর বিপক্ষে পড়ে ২২৬টি ভোট৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের রক্ষণশীল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী পার্টি সমকামী বিয়ের বিপক্ষে থাকলেও, সংসদীয় নির্বাচনের ক’মাস আগে হঠাৎ করেই ম্যার্কেল ঘোষণা করেন যে, এ বিষয়ে ভোটাভুটি হবে৷
ছবি: Reuters/A. Schmidt
মাল্টা
২০১৭ সালের জুলাই মাসে মাল্টায় সমকামী বিয়ে বৈধতা পায়, যদিও এর বিরোধিতা করেছিল ক্যাথলিক চার্চ৷
ছবি: Reuters/D. Zammit Lupi
বলিভিয়া
২০০৯ সালে সংবিধান সংশোধন করে সমকামী বিয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল বলিভিয়া৷ কিন্তু ২০১৬ সালে তারা ট্রান্সজেন্ডারদের নানারকম অধিকার দেয়াকে সমর্থন করে৷ দুই বছরের আইনী লড়াইয়ের পর ২০২০ সালে দেশটিতে এক সমকামী যুগল বিয়ের স্বীকৃতি পায়৷
ছবি: Reuters/D. Mercado
তাইওয়ান
২০১৯ সালের ১৭ মে এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে তাইওয়ানের সংসদ সমকামী বিয়েকে আইনগত বৈধতা দিয়ে একটি বিল পাস করে৷ ফলে সে দেশের সমকামীরা এখন তাদের বিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন৷
ছবি: DW/Chung-Lan Cheng
29 ছবি1 | 29
শুধু রামি নন, ফেসবুকের কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আরব অঞ্চলের অন্য সমকামীসহ এলজিবিটি প্লাস কমিউনিটির সদস্যরাও৷ এই বিষয়ে প্রায় সাড়ে চারশো জনের উপরে এক জরিপ চালিয়েছে ‘আরব নেটওয়ার্ক ফর নলেজ অ্যাবাউট হিউম্যান রাইটস'৷ নব্বইভাগই জানিয়েছেন তারা ফেসবুকে ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্যের শিকার হয়েছেন৷
এ কারণে এমনকি ক্যানাডায় বসবাসরত মিশরীয় একজন এলজিবিটি অধিকারকর্মী আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন৷ এই সমস্য মোকাবিলায় গত জুনে মধ্যপ্রাচ্যের ২২ টি এলজিবিটি প্লাস অধিকার সংগঠন ফেসবুকের কাছে আবেদন জানিয়েছে৷ অধিকারকর্মীরা বলছেন, সমকামিতা নিয়ে আরব দেশগুলোর কট্টর সামাজিক ধ্যান ধারণার কারণে গোটা অঞ্চলেই তারা নিগৃহীত হচ্ছেন৷ সামিজকভাবে বঞ্চনার পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর জেল জুলুমের শিকারও হচ্ছেন তারা, বলছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷
আরব নেটওয়ার্ক ফর নলেজ অ্যাবাউট হিউম্যান রাইটস এর প্রতিষ্ঠাতা নিকোলাস গিলস এর মতে, ফেসবুকে না থাকা মানে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া৷ কিন্তু ফেসবুকের কারণে বিপদেও পড়ছেন তারা৷ যদিও ফেসবুকের কমিউনিটি গাইডলাইন বলছে, এলজিবিটি প্লাস কমিউনিটির কারো প্রতি সহিংস বা অমানবিক বক্তব্য বা হেয় করা বিবৃতি দেয়া যাবে না৷ এমনকি তাদেরকে বর্জন বা পৃথক করে রাখার আহবান জানানোও নিষিদ্ধ সামাজিক মাধ্যমটিতে৷
ফেসবুক বলছে, সপ্তাহে সাতদিন এবং ২৪ ঘণ্টাই আরবিসহ ৫০ টি ভাষায় ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্যের রিভিউ রিপোর্টগুলো তারা পরীক্ষা করে৷ এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধমত্তা টুলস প্রায় নব্বই ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহারকারীদের রিপোর্টের আগেই এই ধরনের বার্তা মুছে ফেলতে পারে বলে দাবি কোম্পানিটির৷
অন্যদিকে জর্ডানের এলজিবিটি প্লাস কমিউনিটির অধিকারকর্মী হাসান কিলানি জানান, সমাকামী ও এলজিবিটি বিরোধী বক্তব্য ছড়ানো নিয়ে ফেসবুককে বহু বছর ধরেই সতর্ক করা হয়েছে৷ কিন্তু ২০১৭ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত খুব কমই পরিবর্তন এসেছে৷ অনেকগুলো মেইল পাঠিয়ে সামাজিক মাধ্যমটির কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন প্রতিউত্তর পাননি বলে জানান তিনি৷ কাজ না হওয়ায় এ ধরনের পোস্টে রিপোর্ট করাও বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি৷