রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ফেসবুকের বিরুদ্ধে ১৫০ বিলিয়ন ডলার বা ১৩ লাখ কোটি টাকার মামলা করেছে৷ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো বার্তা মুছে ফেলতে ফেসবুক উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ আনা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
এডেলসন পিসি ও ফিল্ডস পিএলএলসি নামের দুটি আইনি সংস্থা মামলাটি দায়ের করে৷ এতে অভিযোগ করা হয়, ফেসবুক ঘৃণা মেশানো বার্তা না সরানোয় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার হয়েছেন৷
২০১৭ সালের আগস্টে সামরিক অভিযানের পর সাত লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যায়৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সাধারণ মানুষকে হত্যা ও গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার তথ্য নথিবদ্ধ করেছে৷
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করেছে৷ নৃশংসতা চালানোর অভিযোগও অস্বীকার করেছে তারা৷
ভুয়া তথ্য বা খবর বুঝব কীভাবে?
গবেষণা বলছে, করোনা ভাইরাস নিয়ে ছড়ানো ভুয়া তথ্যের কারণে ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসে বিশ্বে অন্তত ৮০০ জন বা তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন৷ ফলে খবর, তথ্য শেয়ারের সময় সতর্ক থাকতে হবে৷ কিন্তু কীভাবে?
ছবি: Facebook
তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন
ভুয়া তথ্য ও খবর দ্রুত খুঁজে পাবার উপায় জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট ‘ফুল ফ্যাক্ট’৷ ফেসবুকে কিছু শেয়ারের আগে নিজেকে তিনটি প্রশ্ন করার পরামর্শ দিয়েছে তারা৷
প্রথম প্রশ্ন
খবরটি কে দিয়েছে? প্রথমে নিজেকে এই প্রশ্নটিই করুন৷ সূত্র বিশ্বস্ত না হলে সেটা শেয়ার করবেন না৷ আর সূত্র নতুন হলে তার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন৷
ছবি: imago images / ZUMA Press
দ্বিতীয় প্রশ্ন
কি যেন নেই? লিংকে ঢুকে পুরো খবরটা পড়ুন৷ ছবি, ব্যবহার করা নম্বর, কারও মন্তব্য এসব খেয়াল করুন৷ অনেক সময় সূত্রের উল্লেখ না করে মন্তব্য ব্যবহার করা হয় কিংবা কনটেক্সট ছাড়াই মন্তব্য দেয়া হয়৷ খবরের সঙ্গে থাকা ছবি কিংবা ভিডিও ভুয়া হতে পারে৷ ভিডিওতে ব্যবহৃত কণ্ঠ পরিবর্তিত থাকতে পারে৷
ছবি: Facebook/G.M. Masud Rana
তৃতীয় প্রশ্ন
খবরটি পড়ার পর আপনি কেমন অনুভব করছেন? যারা ভুয়া খবর ছড়ায় তারা মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলতে চায়৷ তারা জানে আপনাকে রাগিয়ে তুলতে পারলে কিংবা চিন্তিত করতে পারলে আপনি খবরটিতে ক্লিক করবেন৷ তাই শেয়ারের আগে নিজের অনুভূতিটা জানার চেষ্টা করুন৷ ভাল অনুভব করলে শেয়ার করুন৷ আর খটকা লাগলে অন্যান্য সূত্র দেখে যাচাইয়ের চেষ্টা করুন৷ ছবিতে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের শেয়ার করা একটি ভুয়া খবর দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Facebook
ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট
ভারতের ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইট ‘বুম লাইভ’কে বাংলাদেশের ফেসবুক কমিউনিটিতে বিদ্যমান ছবি ও ভিডিওর যথার্থতা পর্যালোচনার দায়িত্ব দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ৷ ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে৷ www.boombd.com/ ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ফেসবুকেও (https://www.facebook.com/Boombangladeshnews) তাদের কাজ দেখা যায়৷
বিডি ফ্যাক্ট চেক
২০১৭ সালে কাজ শুরু করে এই ওয়েবসাইট (https://bdfactcheck.com/)৷ ফেসবুকেও তাদের একটি পাতা (https://www.facebook.com/bdfactcheck/) আছে৷ আলোচনা সভা, সংবাদ সম্মেলন, জনসভা ও গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করে বিডি ফ্যাক্ট চেক৷ এছাড়া সামাজিক মাধ্যমে যেসব ভুয়া সংবাদ, ছবি কিংবা ভিডিও ভাইরাল হয় সেগুলোরও ফ্যাক্টচেক করে তারা৷
Fact খুঁজি
এটি বাংলাদেশের আরেকটি ফ্যাক্ট-চেক করা ওয়েবসাইট৷ http://factkhuji.org/ ওয়েবসাইটের পাশাপাশি তাদের একটি ফেসবুক পাতাও (https://www.facebook.com/factkhuji/) আছে৷
সতর্ক হন
করোনা ভাইরাস নিয়ে ছড়ানো ভুয়া তথ্যের কারণে ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসেই বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ৮০০ জন বা তার চেয়েও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে ‘অ্যামেরিকান জার্নাল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন’-এ প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে৷ ফলে সামাজিক মাধ্যমে খবর বা তথ্য শেয়ারের আগে সবার একটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/SOPA Images/A. K. Sing
8 ছবি1 | 8
২০১৮ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক তদন্তকারীরা বলেছিলেন, ‘হেট স্পিচ’ ছড়িয়ে সহিংসতা সৃষ্টিতে ফেসবুকের ব্যবহার মূল ভূমিকা পালন করেছে৷
একই বছর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তদন্তে রোহিঙ্গাসহ অন্য মুসলিমদের আক্রমণ করে ফেসবুকে পোস্ট করা এক হাজারের বেশি পোস্ট, মন্তব্য ও ছবির কথা উঠে এসেছিল৷ ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতে করা মামলায় রয়টার্সের এই তদন্ত উল্লেখ করা হয়েছে৷
মামলার বিষয়ে ফেসবুক এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি৷
তবে ফেসবুক বলেছে, সেকশন ২৩০ নামে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট আইন অনুযায়ী, ব্যবহারকারীদের পোস্ট করা কন্টেন্টের জন্য ফেসবুক দায়ী নয়৷
এই আইনের অস্তিত্ব থাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের করা মামলায় প্রয়োজনে মিয়ানমারের আইন প্রয়োগ করার কথা বলা হয়েছে৷
অন্য কোনো দেশে সংঘটিত অপরাধের বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত বিদেশি আইন প্রয়োগ করতে পারে৷ তবে দুজন আইন বিশেষজ্ঞ রয়টার্সকে বলেছেন, সামাজিক মাধ্যমের বিরুদ্ধে করা কোনো মামলায় এখন পর্যন্ত বিদেশি আইন প্রয়োগ করা হয়েছে বলে তারা জানেন না৷
যুক্তরাজ্যের ফেসবুক কার্যালয়ে চিঠি
আইনি প্রতিষ্ঠান ম্যাককিউ জুরি অ্যাণ্ড পার্টনার্সের পাঠানো ঐ চিঠিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠী ও বেসামরিক সন্ত্রাসীদের চালানো গণহত্যা অভিযানের অংশ হিসেবে তাদের মক্কেল ও পরিবারের সদস্যরা ‘মারাত্মক সহিংসতা, হত্যা এবং/বা অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার’ হয়েছেন৷
যুক্তরাজ্যের রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত শরণার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে নতুন বছরে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে অভিযোগ দায়েরের আশা করছেন আইনজীবীরা৷
ম্যাককিউ ছাড়াও আরেক আইনি প্রতিষ্ঠান মিশকন ডে রেয়াও যুক্তরাজ্যে মামলা করতে কাজ করছে৷ এই মামলায় এখন পর্যন্ত ২০ জন দাবিদার আছেন৷ কোম্পানি দুটি বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বাস করা রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে আরও দাবিদার নিয়োগের আশা করছে৷
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স, গার্ডিয়ান)
দেশে ফিরতে চান না ভারতের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা
দিল্লির অদূরে হরিয়ানায় দেশের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ডয়চে ভেলের ক্যামেরায় তাদের জীবনযাপন।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
পাশাপাশি পাঁচটি ক্যাম্প
দশ কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প তৈরি হয়েছে। একেকটি ক্যাম্পে একশ থেকে দেড়শ পরিবার থাকে। সব মিলিয়ে হাজার পাঁচেক রোহিঙ্গা শরণার্থী থাকেন এই ক্যাম্পগুলিতে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
জম্মু-দিল্লি-পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে
জম্মু, পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লির ক্যাম্প ছেড়ে বহু রোহিঙ্গা হরিয়ানার ক্যাম্পে চলে এসেছেন। আরাবল্লি পর্বতের গায়ে মেওয়াতের নুহ অঞ্চলে এই ক্যাম্প।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
নির্যাতন, ভয়
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অভিযোগ, জম্মুতে বহু শরণার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের উপর মানসিক অত্যাচারও হয়েছে। সে কারণেই ওই ক্যাম্প ছেড়ে তারা হরিয়ানায় চলে এসেছেন। এখানেও তাদের ক্যাম্পের বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। ক্যাম্পে কেউ গেলে, এমনকী, সাংবাদিক গেলেও পুলিশকে জানাতে হয়।
মিয়ানমারের প্রতি মুহূর্তের খবর রাখেন শরণার্থীরা। সেনা সরকার তৈরির পর তারা আরো ভয়ে। শরমার্থীদের বক্তব্য, না খেতে পেয়ে বিদেশে মরতে রাজি তারা। কিন্তু মিয়ানমারে গিয়ে আর আক্রমণের শিকার হতে চান না।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
একটাই টয়লেট
গোটা শিবিরের জন্য মাত্র একটি টয়লেট। পাশের জঙ্গলে যেতে হয় নারী-পুরুষ সকলকেই।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
মেয়েদের নানা রোগ
মাসিকের সময়েও মেয়েদের জঙ্গলে যেতে হয়। নানারকম রোগ ধরা পড়ছে তাদের। জাতিপুঞ্জের শরণার্থী সংক্রান্ত সংস্থা ইউএনএইচসিআর তাদের সাহায্য করতে চায় না বলে অভিযোগ।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
সাহায্য করে না প্রশাসন
প্রশাসন শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখে না বলে অভিযোগ। সরকারি হাসপাতালেও অর্থের বিনিময়ে চিকিৎসা করাতে হয়।