হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে আঁকা কার্টুন ফেসবুকে পোস্ট করেছেন ডেনমার্কের অভিবাসন মন্ত্রী ইঙ্গার স্টইবার্গ৷ এক জাদুঘর কার্টুনটি প্রদর্শন করেনি৷ তার প্রতিবাদ জানাতেই কার্টুনটি ফেসবুকে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
কয়েকদিন আগে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তাঁর ও ডেনিশ সরকারের কঠোর অবস্থান ছবির মাধ্যমে প্রকাশ করেও বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন ইঙ্গার স্টইবার্গ৷ সেবার অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তাঁর মন্ত্রণালয়ের পঞ্চাশতম বিধিনিষেধ আরোপ উদযাপন করেছিলেন ‘৫০’ লেখা কেক কেটে৷ কেক কাটার সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শেয়ারও করেছিলেন ডেনমার্কের বিতর্কিত এই রাজনীতিবিদ৷
গেল মার্চে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল ডেনমার্কের নাগরিকদের উদ্দেশ্যে জানানো তাঁর একটি আহ্বান৷ ডেনমার্কে অবৈধভাবে যাঁরা পিজার দোকানে কাজ করছেন, তাঁদের ধরিয়ে দেয়ায় জনসাধারণকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি৷ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আপনার এলাকার কোনো পিৎসারিয়ায় গিয়ে যদি দেখেন যারা কাজ করছে, তারা ডেনিশ না বলে অন্য ভাষায় বেশি কথা বলছে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে খবর দেবেন৷’’ এমন আহ্বানের কারণ জানাতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘পুলিশ ডেনমার্কের প্রতিটি ঘরে গিয়ে তল্লাসি চালাবে, এমনটি আশা করা ঠিক নয়৷’’
অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত ইঙ্গার স্টইবার্গ গত বুধবার ফেসবুকে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর এমন এক ক্যারিকেচার পোস্ট করেন, যা দেখে মনে হয় নবির পাগড়িতে বোমা রয়েছে, আর সেই বোমার ফিউজটা জ্বলতে শুরু করেছে৷
কার্টুনটি অবশ্য নতুন নয়৷ ২০০৫ সালে ডেনমার্কের এক দৈনিকে এই কার্টুন প্রকাশিত হওয়ায় বিশ্ব জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল৷ প্রতিবাদ, বিক্ষোভ এবং দাঙ্গায় সারা বিশ্বে অন্তত ৫০ জন প্রাণ হারিয়েছিল৷
এমন কার্টুন কেন ফেসবুকে পোস্ট করলেন? ইঙ্গার স্টইবার্গ জানান, সম্প্রতি ডেনমার্কের একটি জাদুঘরের প্রদর্শনীতে ছবিটি রাখা হয়নি৷ জাদুঘর কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বলে জানিয়েছেন ডেনমার্কের অভিবাসন মন্ত্রী৷ তাঁর মতে, ‘‘এটি জাদুঘর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব সিদ্ধান্ত৷ এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার অবশ্যই আছে তাদের৷ তবে আমি মনে করি, এটা খুবই লজ্জাজনক কাজ হয়েছে৷ আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে, মুহাম্মদ (সা)-এর এই কার্টুনটি নিয়ে আমাদের গর্ব করা উচিত৷’’
এসিবি/জেডএইচ (ইএফই, রয়টার্স)
তুরস্কের শিল্পীদের আঁকা ব্যঙ্গচিত্র
যে দেশে সংবাদপত্রের স্বধীনতার মুখ চেপে ধরা হয়েছে, সে দেশে কার্টুনিস্টরা কতদূর যেতে সাহস করেন? জার্মানির কাসেল শহরের কারিকাটুরা গ্যালারিতে তুর্কি ব্যঙ্গচিত্রের কিছু নমুনা প্রদর্শিত হচ্ছে৷
ছবি: Caricatura/Ramize Erer
‘আমি কোথায়?’ ভাবছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল
২০১৫ সালে তুরস্কের ‘লেমান’ ব্যঙ্গপত্রিকার প্রচ্ছদে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে দেখানো হয় ‘সুলতান’ এর্দোয়ানের পাশে বসা অবস্থায়৷ ‘এ আমি কোথায় এসে পড়লাম?’ ভাবছেন ম্যার্কেল; তাঁর পরনেও মধ্যযুগীয় অভিজাত জার্মান মহিলাদের বাস৷ ইস্তানবুলের তিনটি নেতৃস্থানীয় ব্যঙ্গপত্রিকার মধ্যে ‘লেমান’ অন্যতম৷ তুর্কি প্রধানমন্ত্রী দাভুতোগলু একবার পত্রিকাটিকে ‘‘নীতিবিগর্হিত’’ বলে অভিহিত করেছিলেন৷
ছবি: LeMan/Caricatura
বুদ্ধিমানেরা সবাই জেলে
২০১৬ সালের জুলাই মাসের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে দেড় লাখ মানুষকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে ও ৪০ হাজার মানুষকে জেলে পোরা হয়েছে – তাদের মধ্যে বহু সাংবাদিক, লেখক ও আন্দোলনকারী৷ ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে আঁকা এই কার্টুনটিতে ৬৬ বছর বয়সি কার্টুনিস্ট ইজেল রোজেনটাল দেখাচ্ছেন, বন্দিরা কীভাবে একটি অশোভন মুদ্রা প্রদর্শন করছে আর প্রহরীরা বলছে, তারা এই ‘বেজন্মা’ বুদ্ধিজীবীদের কি পরিমাণ ঘৃণা করে৷
ছবি: Rozental/Caricatura
গুলেন সর্বত্র
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনরত ফেতুল্লাহ গুলেন ও তাঁর সমর্থকরা জুলাইয়ের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী, বলে এর্দোয়ানের অভিযোগ এবং বহু তুর্কি নাগরিক সত্যিই তা বিশ্বাস করেন৷ কার্টুনিস্ট ইগিট ওয়েজগুর-র ব্যঙ্গচিত্রে এক তুর্কি বলছেন: ‘‘৯০ শতাংশ তরমুজ নাকি গুলেনের শিষ্য৷’’ সঙ্গের তুর্কিটি বলছেন: ‘‘হতেই পারে৷’’
ছবি: Özgür/Caricatura
এর্দোয়ানের বিপক্ষে গেলেই বিপদ
গত এপ্রিল মাসের গণভোটে ৫১ দশমিক তিন শতাংশ ‘হ্যাঁ’ ভোটে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবটি গৃহীত হয় ও প্রেসিডেন্টের প্রভূত ক্ষমতা বাড়ে৷ ভোটের আগে মিডিয়াকে বিরোধীদের হয়ে ‘হায়ির’ বা ‘না’ ভোটের সপক্ষে আন্দোলনের খবর খোলাখুলিভাবে প্রচার করতে দেওয়া হয়নি৷ তাই মার্চ মাসে ইপেক ওয়েজসুসলু এই কার্টুনটি আঁকেন: জলের মিস্ত্রির পশ্চাদ্দেশে ‘হায়ির’ উল্কিটা বেরিয়ে পড়েছে৷
ছবি: Özsüslu/Caricatura
ট্রাম্পও বাদ যাননি
এর্দোয়ানই তুর্কি ব্যঙ্গচিত্রশিল্পীদের একমাত্র লক্ষ্য নন৷ বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্র যাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে কার্টুনিস্টদের বিরাগভাজন হয়েছেন৷ ছবির কার্টুনটিতে বন্দুকধারী মার্কিন সৈন্যের পিছনে একটি ছেলে তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘ওদের আমরা শেষমেষ কবে তাড়াব, বাবা?’ বাবা বলছেন, ‘আমাদের তেল ফুরোলে৷’
ছবি: Karabulat/Caricatura
সেক্স যেখানে টাবু
তুরস্কে যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্যে আলাপ-আলোচনা চলে না – বিশেষ করে মহিলাদের যৌনতা নিয়ে তো নয়ই৷ মহিলা কার্টুনিস্ট রামিজে এরার-এর মোটাসোটা ‘ব্যাড গার্ল’ রক্ষণশীল সমাজের ধার ধারে না৷ ছবিতে সেই ব্যাড গার্ল পরপুরুষের সঙ্গে রাত কাটানোর পর সেল্ফি তুলছে; প্রেমিক বেচারা ভয়ে জড়োসড়ো: তার গিন্নি যদি ঐ ছবি ফেসবুকে দেখে ফেলেন?
ছবি: Caricatura/Ramize Erer
দুনিয়াদারি
কার্টুনিস্ট মেহমেত চাগচাগ-এর দৃষ্টিতে দুনিয়ার অবস্থা আজ একটি ছবি দিয়েই বোঝানো যায়: বাগদাদ থেকে এথেন্স, বার্লিন থেকে প্যারিস অবধি এক পর্যায় ঘড়ি, আবহাওয়া অফিসে, পত্রিকার নিউজরুমে, হোটেল অথবা এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে যেরকম থাকে – প্রতিটি ঘড়ি আসলে একটি টাইম বোমা, প্রত্যেকটির পিছনে ডায়নামাইট বাঁধা রয়েছে৷ শুধু কোনটা যে কখন ফাটবে, সেটা জানা নেই৷