ফেসবুকের ভালো, সুন্দর, গুরুত্বপূর্ণ দিক যেমন রয়েছে, তেমনি বিপত্তিও কম নয়৷ মাঝেমাঝেই দেখা যায়, আপনার কোনো বন্ধু জানাচ্ছেন, অমুক নায়িকার তমুক ভিডিও দেখা যাচ্ছে এই লিংকে৷ কখনো থাকছে ওজন কমানোর টিপস৷ এসব আসলে ফাঁদ৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুককে ঘিরে আরো কয়েকটি ওয়েবসাইট রয়েছে৷ এসব সাইটের একটি হচ্ছে অলফেসবুক ডটকম৷ বলা হয়, অনানুষ্ঠানিক ফেসবুক ব্লগ এটি৷ এই সাইটে ফেসবুক সম্পর্কিত নিত্য নতুন বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করা হয়৷ ২৭ মে সাইটটি স্ক্যামবুকের নিজস্ব লেখক মিরান্ডা পেরির সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ এতে ফেসবুক স্ক্যাম বা আপদ থেকে বাঁচার বিভিন্ন উপায় জানানো হয়েছে৷ সেখান থেকে অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো এখানে:
সোর্স সম্পর্কে নিশ্চিত হন
মাঝে মাঝেই দেখা যায় কোনো একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর প্রোফাইল থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিভিন্ন সন্দেহজনক লিংক শেয়ার হচ্ছে৷ এ ধরনের লিংকে যিনি ক্লিক করবেন, তার কম্পিউটারেও মেলওয়্যার ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং তিনিও একইভাবে তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে নিজের অজান্তে সেই লিংক শেয়ার করতে পারেন৷
তথ্যকল্যাণী, শিক্ষক ডটকমসহ বিজয়ী যারা
ডয়চে ভেলের সেরা অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ড দ্য বব্স-এর ২০১৩ সালের বিজয়ীদের নিয়ে বিশেষ ছবিঘর এটি৷ এই আসরে বাংলাদেশের তথ্যকল্যাণী প্রকল্প জিতেছে ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’, শিক্ষক ডট কম পেয়েছে ‘ইউজার প্রাইজ’৷
ছবি: D.net/Amirul Rajiv
সেরা ব্লগ: লি চেনপেং
চীনা লেখক ও সাংবাদিক লি চেনপেং সেরা ব্লগ পুরস্কার জিতে নিলেন৷ ‘গোটা বিশ্ব জানে’ নামের একটি বই লিখে চীনা কর্তৃপক্ষের রোষের মুখে পড়েছেন তিনি৷ বইয়ের প্রচারের সময় মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল তাঁকে৷ প্রতিবাদে তিনি নিজের লেখা থেকে অংশবিশেষ পাঠের সময়ে পরে নিলেন একটি অক্সিজেন মুখোশ৷ ‘নীরব পাঠ’-এর সেই অনুষ্ঠানে তাঁর পরনে ছিল একটি টি-শার্ট, যাতে লেখা ‘আমি তোমাদের সবাইকে ভালোবাসি’৷
ছবি: Li Ruihe
সেরা উদ্ভাবন: ফ্রিওয়াইবো ডট কম
‘ফ্রিওয়াইবো ডট কম’ নামের মাইক্রোব্লগিং সাইট চীনের সরকারের সেন্সরশিপ প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটা ধারণা দিচ্ছে৷ এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চীনের অন্যতম প্রধান সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ‘সিনাওইবো ডটকম’-এর সেন্সরমুক্ত সংস্করণে ঢুঁ মারা যায়৷ ফলে ব্যবহারকারীরা জানতে পারেন, কর্তৃপক্ষ কোনো প্রতিবেদন মুছে ফেলে৷
ছবি: freeweibo.com
সেরা উদ্ভাবন: শিক্ষক ডটকম
বাংলাভাষার পক্ষে শিক্ষক ডটকম এই বিভাগে ‘ইউজার প্রাইজ’ জয় করেছে৷ মূলত বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বাংলায় অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে শিক্ষক ডট কম৷ এই সাইটটি গড়ে তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ রাগিব হাসান৷ ডয়চে ভেলের প্রতিযোগিতা চলাকালে শিক্ষক ডটকমের পক্ষে ভোট পড়েছে ৫৬ শতাংশ৷
সেরা সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজম: ৪৭৫
মরক্কোর তরুণ প্রজন্মের এক উদ্যোগের নাম ‘৪৭৫’৷ মরক্কোর আইনের ৪৭৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনো ধর্ষক ধর্ষিতাকে বিয়ে করলেই শাস্তি এড়াতে পারে৷ এই ধারার কারণে ২০১২ সালে ১৬ বছরের কিশোরী আমিনা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিল৷ সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে ‘৪৭৫’ নামের একটি চলচ্চিত্র এবং ফেসবুক ও ফ্লিকার-এ সোশ্যাল মিডিয়া অভিযান৷
ছবি: Naji Tbel
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স: ফাবি কুয়াসি
প্রতি বছরের মতো এবারও রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স সংগঠনের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এমন এক প্রতিযোগীকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, যিনি বা যাঁরা মত প্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন৷ এ বছর সেই পুরস্কার পাচ্ছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ টোগো-র মানবাধিকার কর্মী ফাবি কুয়াসি৷ দেশের স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থায় পুলিশ সাংবাদিকদের উপর যে নিপীড়ন চালাচ্ছে, ফাবি সেই সব ঘটনা তুলে ধরছেন তাঁর ওয়েবসাইটে৷
ছবি: fabbikouassi.wordpress.com
গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম পুরস্কার: তথ্যকল্যাণী
২০১৩ সালে ডয়চে ভেলে আয়োজিত গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের বিষয় হলো ‘বৈশ্বিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ’৷ বব্স প্রতিযোগিতায়ও বিষয়টিকে আলাদা বিভাগের মর্যাদা দিচ্ছে৷ বাংলাদেশের ‘তথ্যকল্যাণী’ প্রকল্প এবার এই বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে নিয়েছে৷ জুরিমণ্ডলীর কাছে এটা এমন এক ‘বৈপ্লবিক প্রকল্প যার মাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাংলাদেশের অতি দরিদ্র মানুষের নাগালে চলে আসছে৷’
ছবি: D.net/Amirul Rajiv
সবচেয়ে সৃজনশীল ও মৌলিক উদ্যোগ: আমি ও আমার ছায়া
ইন্টারনেটে আমাদের গতিবিধির চিহ্ন কতটা থেকে যায়? এই প্রশ্ন নিয়েই কাজ করছে ‘মি অ্যান্ড মাই শ্যাডো’ বা ‘আমি ও আমার ছায়া’৷ ইন্টারনেটে কীভাবে নিরাপদে বিচরণ করা যায় ও তা করতে কী কী জানতে হয়, খেলাচ্ছলে ব্রাউজারের সেটিং বদলানোর মতো সেই সব পথ বাতলে দিচ্ছে এই ওয়েবসাইট৷ এই উদ্যোগের পিছনে রয়েছে ‘ট্যাকটিক্যাল টেকনোলজি কালেক্টিভ’ নামের এক আন্তর্জাতিক সংগঠন৷
ছবি: myshadow.org
সেরা বাংলা ব্লগ: শৈলী
সেরা বাংলা ব্লগ বিভাগে ইউজার প্রাইজ জয় করেছে শৈলী ব্লগ৷ এই জয়ের পর ডয়চে ভেলেকে জানানো প্রতিক্রিয়ায় শৈলী ব্লগের কর্ণধার রিপন কুমার দে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘এটা শুধু আমি না, সকল শৈলার এবং শৈলীর পাঠকদের জন্য খুব আনন্দের খবর৷ শৈলার এবং পাঠকদের ভালোবাসা ছাড়া এই স্বীকৃতি কোনোভাবেই আসত না৷ তাই তাদের সকলের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা৷ সকলের ভালোবাসা নিয়ে শৈলী আরো অনেকদূর এগিয়ে যাবে এটাই আমার প্রত্যাশা৷’’
ছবি: http://shoily.com/
বাংলা সেরা অনুসরণযোগ্য: সাইফ সামির
‘বাংলা: সেরা অনুসরণযোগ্য’ বিভাগে বিজয়ী সাইফ সামির৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সরকার কর্তৃক লেখক-ব্লগার-সাংবাদিকদের ওপর যে দমন-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে ডয়চে ভেলের মাধ্যমে আমি তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি৷ একজন লেখককে তাঁর ব্যক্তিগত মত প্রকাশের জন্য আটক করা হবে, রিমান্ডে নেয়া হবে – এটা কি ধরনের কথা?’’
ছবি: Twitter
9 ছবি1 | 9
পেরি বলছেন, সামান্য একটু সতর্ক হলেই এই বিপত্তি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব৷ বিশেষ করে লিংকটি যিনি শেয়ার করেছেন এবং কি ধরনের লিংক শেয়ার করছেন সেদিকে একটু মনোযোগী হলেই এ ধরনের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে৷
উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, যদি দেখেন আপনার কোনো বন্ধু ‘রেহানার সেক্স টেপ' নামক কিছু শেয়ার করছে, তাহলে মোটামুটি নিশ্চিতভাবে ধরে নিতে পারেন লিংকটি ভুয়া এবং স্প্যামাররা আপনাকে বিপদে ফেলতেই এরকম লিংক ছড়াচ্ছে৷ এক্ষেত্রে সেই লিংকে ক্লিক না করে, যেই ব্যক্তির টাইমলাইন থেকে লিংকটি আসছে, তাঁকে অফলাইনে ফোন করাই ভালো৷ নিদেনপক্ষে তাকে ফেসবুকে একটি ম্যাসেজ পাঠিয়ে হলেও বলা যেতে পারে, আপনি যে লিংকটি শেয়ার করছেন, সেটি কি জেনেশুনে নাকি অজান্তেই?
ফেসবুক হ্যাক হওয়ার খবরও গুজব
ফেসবুকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত শক্তিশালী৷ তাই হঠাৎ করে যদি কেউ দাবি করে ফেসবুক হ্যাক হয়েছে সেটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই৷ তবে এটা সত্যি, ফেসবুক প্রতিনিয়তই বিভিন্ন সেটিংসে পরিবর্তন আনে৷ আর এই পরিবর্তনের খবর তারা উপযুক্ত চ্যানেলের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের জানিয়েও দেয়৷ ফলে হঠাৎ করে কেউ যদি দাবি করে বসে, ফেসবুকের রং নীল থেকে লাল হয়ে যাচ্ছে কিংবা এই লিংকে ক্লিক করে ফেসবুকের রং সাদা কালো করা যায়, সেসব দাবি বিশ্বাস না করাই ভালো৷ আর বিশ্বাস করে সেসবে ক্লিক করলে দেখবেন, আপনাকে দিয়ে বিভিন্ন সার্ভে করানো হচ্ছে৷ এসব সার্ভের মাধ্যমে পয়সা আয় করে স্ক্যামাররা৷ আপনি পাবেন না কিছুই৷
ভিডিও দেখলেই ক্লিক করবেন না
অনেক স্ক্যামার লোভনীয় ভিডিও-র কথা বলে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে৷ এসব ফাঁদে ক্লিক করলে আপনাকে ‘ফ্ল্যাশ প্লেয়ার' বা ‘জাভাস্ক্রিপ্ট' ডাউনলোড করতে বলা হবে৷ একবার ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করেছেন মানে ফাঁদে পড়েছেন৷ স্ক্যামাররা এভাবে ফাঁদ বসিয়ে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যাদি চুরি এবং একইসঙ্গে আপনার কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে৷
পেরির মতে, ফেসবুকে কোনো ভিডিও লিংক দেখলে প্রথমেই সেটির ডোমেইন নেম-এর দিকে তাকান৷ ইউটিউব ডটকম যদি ডোমেইন নেমে লেখা থাকে, তাহলে ধরে নিতে পারেন লিংকটি নিরাপদ৷ কিন্তু অন্য কিছু থাকলে এবং সেটা যদি অপরিচিত হয়, তাহলে ক্লিক না করাই ভালো৷ এসব ভিডিও লিংকের সঙ্গে অনেক সময় একই ধরনের লোভনীয় বার্তা জুড়ে দেওয়া হয়৷ অনেকটা, ‘‘ও মাই গড, তুমি কি এই ভিডিওটি দেখেছে? আমি ভাবতেই পারছি না কেউ একজন এসব ক্যামেরায় ধারণ করতে পারে!'' ধরনের বার্তা৷ এগুলো স্প্যাম৷
যদি আক্রান্ত হন তাহলে কি করবেন?
অনেকের মনেই এই প্রশ্নটি আসতে পারে৷ স্ক্যাম লিংকে ক্লিক করার পর যদি টের পান, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই নীচে উল্লেখিত পন্থা অনুকরণ করুন:
টাইমলাইনে গিয়ে দ্রুত লিংকটি ডিলিট করুন৷
ফেসবুক এবং অন্যান্য ওয়েবসাইটে থাকা আপনার প্রোফাইলের পাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন৷ বিশেষ করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ই-মেলের পাসওয়ার্ড দ্রুত বদলান৷
ফেসবুক বন্ধুদের জানান যে, আপনি ভুল করে একটি স্ক্যাম শেয়ার করেছেন৷
এসব উদ্যোগ গ্রহণ ছাড়াও নিরাপদ থাকতে মাঝে মাঝে ফেসবুকের ‘প্রাইভেসি সেটিংস' এবং ‘একটিভ সেশন' অপশন চেক করুন৷ কোনো কিছু সন্দেহজনক মনে হলে ভালোভাবে যাচাই করুন৷