কয়েকদিন আগের কথা, বাংলাদেশের এক মডেল কন্যা ছেলেবন্ধুর ছোটভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়ার জের ধরে আত্মহত্যা করলেন৷ আত্মহত্যার আগে কিছুটা সময় তিনি কাটিয়েছেন ফেসবুকে৷ প্রশ্ন হচ্ছে, সেই সময়ে তাঁকে কি বাঁচানো যেত?
বিজ্ঞাপন
মডেল সাবিরার আত্মহত্যা কিছুদিন আগে বাংলাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷ আত্মহত্যার আগে তিনি প্রথমে ফেসবুকে একটি ভিডিও ‘পোস্ট' করেন, যেখানে একটি ছুরি নিয়ে বিভিন্নভাবে আত্মহত্যার চেষ্টা করতে দেখা গেছে তাঁকে৷ সেই ভিডিও ফেসবুকে ‘পোস্ট' করার পর ভিন্ন উপায়ে আত্মহত্যা করেন তিনি৷
ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা এটাই প্রথম নয়৷ পশ্চিমা বিশ্বে এধরনের ঘটনা মাঝেমাঝেই ঘটছে৷ আর তা প্রতিরোধের চেষ্টাও কম নয়৷ চলুন দেখে নেই, ফেসবুক কিভাবে আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করে৷
আপনি যা করতে পারেন
আপনি যদি দেখেন আপনার কোনো বন্ধু এমন কিছু ‘শেয়ার' করেছে যার মধ্যে হতাশা, একাকীত্ব কিংবা আত্মহত্যার প্রবণতা ফুটে উঠছে, তাহলে সেই পোস্টটি দ্রুত ফেসবুকের কাছে রিপোর্ট করতে পারেন৷ আপনি রিপোর্ট করার পর ফেসবুক চেষ্টা করবে সেই ব্যক্তিকে কোনোভাবে সহায়তা করতে, সেটা ভিন্ন কোন সংগঠন বা অন্য কোনো উপায়ে হতে পারে৷ সমস্যা হচ্ছে, ফেসবুকের এই সেবা পশ্চিমা বিশ্বে যতটা সংগঠিত বা দ্রুত, বাংলাদেশে ততটা নয়৷ এই নিয়ে লেখার শেষের অংশে থাকছে বিস্তারিত৷ আগে অন্যান্য ধাপগুলো জেনে নেই৷
আত্মহত্যার প্রবণতা দেখানো মানুষটিকে সহায়তায় আপনি নিজেও পরামর্শ দিতে পারেন৷ তাঁকে এমন কোনো নম্বর দিতে পারেন যেখানে তিনি ফোন করতে পারেন৷ কিংবা তাঁর সঙ্গে আলাপ করার চেষ্টা করতে পারেন যাতে তাঁকে ফেরানো যায়৷
যেসব দেশে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, সারা বিশ্বে গড়ে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যা করে৷ ছবিঘরে থাকছে শীর্ষ পাঁচটি দেশের কথা যেখানে আত্মহত্যার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: Fotolia/Dan Race
গায়ানা
ক্যারিবীয় দেশ গায়ানায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, ২০১২ সালে সেখানকার প্রতি এক লক্ষ মানুষের মধ্যে ৪৪.২ জন আত্মহত্যা করেছে৷ প্রচণ্ড দারিদ্র্য, মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন এর কারণ বলে জানা গেছে৷ তরল বিষ পান করেই গায়ানার মানুষ বেশি আত্মহত্যা করেছে৷
ছবি: C. Rose/Getty Images
উত্তর কোরিয়া
তালিকায় গায়ানার পরেই উত্তর কোরিয়ার অবস্থান৷ প্রতি বছর গড়ে সেখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে৷ মানবাধিকার লঙ্ঘন, আর্থিক দৈন্যতা, সরকারি নির্যাতনের ভয় থেকে সৃষ্ট চাপ – এসব কারণে সেদেশের মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দক্ষিণ কোরিয়া
চাকরির চাহিদা পূরণের চাপ এবং পড়ালেখা ও সামাজিক চাপের কারণে দক্ষিণ কোরীয়রা আত্মহত্যা করে থাকে৷ বিশেষ করে নভেম্বরে কলেজ ভর্তি পরীক্ষার আগে আত্মহত্যার হার যায় বেড়ে৷ বিষয়টি এতটাই উদ্বেগজনক যে, সরকার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর উপর নজরদারি করে সম্ভাব্য আত্মহত্যা ঠেকানোর পদক্ষেপ নিয়ে থাকে৷ জাতিসংঘের হিসেবে ২০১২ সালে সেদেশে এক লক্ষ জনের মধ্যে ২৮.৯ জন আত্মহত্যা করেছে৷
ছবি: picture alliance/Yonhap
শ্রীলঙ্কা
দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কাতেই সবচেয়ে বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে৷ ২০১২ সালে সে দেশে প্রতি এক লক্ষের মধ্যে ২৮.৮ জন আত্মহত্যা করে৷ দারিদ্র্য ও বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা এর কারণ বলে জানা গেছে৷
ছবি: Reuters/Dinuka Liyanawatte
লিথুয়েনিয়া
ইউরোপের মধ্যে এই দেশটিতেই আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, ২০১২ সালে লিথুয়েনিয়ার এক লক্ষ মানুষের মধ্যে ২৮.২ জন আত্মহত্যা করেছে৷ সামাজিক ও আর্থিক সমস্যাই সেখানকার মানুষের আত্মহত্যার মূল কারণ৷ গত শতকের নব্বইয়ের দশকে দেশটিতে আত্মহত্যার হার আরও বেশি ছিল৷
ছবি: DW/M. Griebeler
বাংলাদেশের অবস্থান?
জাতিসংঘের হিসেবে ২০১২ সালে বাংলাদেশের প্রতি এক লক্ষ মানুষের মধ্যে গড়ে ৭.৮ জন আত্মহত্যা করেছে৷ এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৬.৮, আর নারীর সংখ্যা ৮.৭৷ অর্থাৎ নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি সংখ্যায় আত্মহত্যা করেছে৷ যদিও জাতিসংঘের হিসেবে ২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী পুরুষদের আত্মহত্যার সংখ্যা মেয়েদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি ছিল৷
ছবি: DW/M. Mamun
6 ছবি1 | 6
তবে এক্ষেত্রে সরাসরি আত্মহত্যা না করতে বলার চেয়ে তাঁর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা, তাঁর আবেগকে বোঝার চেষ্টা করে সেভাবে উত্তর দেয়া এবং ক্রমশ তাঁকে আত্মহত্যার ইচ্ছা থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করা বেশি কার্যকর৷ পাশাপাশি তাঁর পরিবার, ঘনিষ্ঠ বন্ধু, শিক্ষক কিংবা অন্য কাউকে যদি সম্ভব হয় দ্রুত জানান আপনার উদ্বেগের কথা৷
আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে ওঠা ব্যক্তিটি যা করতে পারেন
ফেসবুকের হেল্প সেন্টারে আত্মহত্যা প্রবণতা রোধের বিভিন্ন উপায়ের কথা জানানো হয়েছে৷ যে ব্যক্তির মধ্যে এ ধরনের মানসিকতা গড়ে উঠেছে তাঁর জন্য পরামর্শ হিসেবে বলা হয়েছে তিনটি উপায়ের কথা৷ প্রথমত, কোনো হেল্পলাইনে ফোন করে কারো সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে৷ দ্বিতীয়ত, বিশ্বস্ত কোনো বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করা৷ আর তৃতীয়ত, একটা ‘ব্রেক' নিয়ে এমন কিছু করা যা ভালো লাগে৷
এ সব উপায়ের বিস্তারিতও রয়েছে হেল্পসেন্টারে৷ সেগুলো পড়ে নিতে পারেন এখানে৷ তবে মূল কথা হচ্ছে, আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগলে সেই ইচ্ছা অবদমনে করতে অন্য কিছুর দিকে মনোযোগ দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ আর এটা অসম্ভব নয়৷
পঁচিশেই চলে গেলেন বলিউড নায়িকা জিয়া খান
মাত্র ২৫ বছর বয়সেই চির বিদায় নেন এই তারকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পঁচিশেই বিদায়
১৯৮৮ সালের বিশ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে জন্ম তাঁর৷ নাম নাফিসা খান, তবে বলিউডে পরিচিত জিয়া খান নামে৷ এই নায়িকার মরদেহ সোমবার তাঁর মুম্বইয়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দিল সে...
১৯৯৮ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে বলিউডে অভিষেক ঘটে জিয়া খানের৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিলেও লন্ডনে বেড়ে ওঠেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিঃশব্দ
নায়িকা হিসেবে বলিউডে জিয়ার যাত্রা শুরু ‘নিঃশব্দ’ ছবির মাধ্যমে৷ অসম বয়সি দুই নরনারীর প্রেমের কাহিনী নিয়ে নির্মিত এই ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন শক্তিমান অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘কী! জিয়া খান?’
জিয়ার মৃত্যুর খবরের প্রতিক্রিয়া অমিতাভ টুইটারে লিখেছেন, ‘কী! জিয়া খান? খবরটা কি সত্যি? অবিশ্বাস্য!’ নিঃশব্দ ছবিটি নানা বিতর্কের জন্ম দিলেও জিয়ার অভিনয় ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সম্মাননা
নিঃশব্দ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ২০০৭ সালে ‘ফিল্মফেয়ার বেস্ট ফিমেল ডেব্যু অ্যাওয়ার্ড’ জয় করেন জিয়া৷ তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সোনম কাপুর, অক্ষয় কুমার, বিপাশা বসুসহ অনেক তারকা৷ ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নামজাদা তারকাদের সঙ্গে জিয়া
নিঃশব্দ ছবির পর ‘গজনি’ ছবিতে অভিনয় করেন জিয়া খান৷ এই ছবিতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন আমির খান৷ সর্বশেষ হাউসফুল ছবিতে তাঁকে দেখা গেছে অক্ষয় কুমারের বিপরীতে৷ আরো কয়েকটি ছবির জন্য চুক্তিবদ্ধ হন তিনি৷
ছবি: Twitter
সুবিধা জনক অবস্থান
অল্প সময়ে বলিউডের একাধিক নামী নায়ক, অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান জিয়া৷ এর ফলে বলিউডে দ্রুত সুবিধাজনক অবস্থান তৈরিতে সক্ষম হন তিনি৷ তবে ক্যারিয়ারে ধারাবাহিকতার ঘাটতি ছিল তাঁর৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
কেন এই মৃত্যু?
পুলিশের ধারণা, সম্ভবত আত্মহত্যা করেছেন জিয়া খান৷ তাঁর নিকটজনদের বরাতে গণমাধ্যম জানাচ্ছে, ব্যক্তিগত বিভিন্ন কারণে হতাশায় ভুগছিলেন জিয়া৷ উল্লেখ্য, এর আগে মাত্র ১৯ বছর বয়সে মারা যান বলিউড অভিনেত্রী দিব্যা ভারতী৷ তাঁর মৃত্যুর কারণ এখনো রহস্যে ঘেরা৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
বাংলাদেশে হটলাইন
ফেসবুকের হেল্পসেন্টারে আত্মহত্যা প্রতিরোধে বিভিন্ন দেশের হটলাইনের নম্বর দেয়া আছে৷ বাংলাদেশের কোনো সংস্থার নাম কিংবা নম্বর সেখানে সরাসরি না থাকলেও তালিকায় থাকা একটি ওয়েবসাইট থেকে বাংলাদেশের একটি সংস্থার নাম পাওয়া গেছে৷ ‘কান পেতে রই' নামক সংস্থাটি নিঃসঙ্গ, বিপর্যস্ত কিংবা আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে ওঠা মানুষদের টেলিফোনে সহায়তা দিয়ে থাকে৷ তাদের হটলাইন নম্বরগুলো হচ্ছে: ০১৭৭৯৫৫৪৩৯১, ০১৬৮৮৭০৯৯৬৬ এবং ০১৯৮৫২৭৫২৮৬৷ তবে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় এ সব নম্বরে ফোন করে সহায়তা পাওয়া যায়৷
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২০ মিলিয়ন৷ এত বিশাল জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দিতে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন প্রয়োজন৷ সেক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি বড় উদ্যোগের দরকার৷ সেটা যত দ্রুত হবে, ততই মঙ্গল৷
মানসিক চাপ থেকে আপনি নিজেকে কীভাবে মুক্ত রাখেন লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷