1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফেসবুকে তারুণ্যের ভালো-মন্দ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৭ মার্চ ২০১৭

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফেসবুকই বেশি জনপ্রিয়৷ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের বড় একটি অংশ বয়সে তরুণ৷ তারা প্রধানত এটাকে পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করলেও এর বাইরে এর নেতিবাচক ব্যবহারও কম নয়৷

ছবি: DW/A. Islam

এখন বাংলাদেশে ফেসবুকে লাইভ ভিডিওর সুযোগ দেয়ায় কেউ কেউ ফেসবুকে লাইভ করেও হয়ে উঠছেন সেলিব্রেটি৷ ফেসবুকে কার কত ফলোয়ার তা নিয়েও আছে প্রতিযোগিতা৷

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নিয়ে কাজ করে কনটেন্ট ম্যাটার্স৷ ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান মূলত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারকারী, বিশেষ করে তরুণরা এখানে কী  করেন, কী ধরনের পোস্ট দেন, কী শেয়ার করেন – এ সব পর্যকেক্ষণ করে৷ এ সব তথ্য তারা নানা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে৷ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী রফিকুল্লাহ রোমেল ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, যারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করেন, বিশেষ করে তরুণরা, তাদের  শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগই ব্যাক্তিগত তথ্য, ছবি বা অনুভূতি শেয়ার করেন৷ শেয়ার করে তারা তাদের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটাতে চান, অবস্থার জানান দিতে চান৷ তবে এটা করতে গিয়ে কেউ কেউ ভাষার ব্যবহার বা ছবি ও কনটেন্ট ব্যবহারে অসতর্কতার পরিচয় দেন, অথবা অসততা করেন৷''

রফিকুল্লাহ আরো জানান, ‘‘তবে নতুন একটি প্রবণতা গড়ে উঠছে৷ আর তা হলো, ফেসবুক ব্লগিং৷ রাজনীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য এবং সামাজিক বিষয় নিয়ে আগে তরুণরা যা ব্লগে লিখতেন, তা এখন ফেসবুক স্ট্যাটাসেই লিখেন৷ সেখানে মন্তব্য আসে৷ পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক হয়৷''

তরুণদের কাছে নিজেদের ভাবনা-চিন্তা তুলে ধরার জন্য এখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম একটি সহজ প্ল্যাটফর্ম৷ প্রতিদিন তারা কোন ইস্যুকে প্রধান্য দিচ্ছে তা-ও বোঝা যায় এই মাধ্যম থেকে৷ তাদের কোনো মন্তব্য বা প্রচারণা ভাইরাল হয়, কোনো ভিডিও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে৷

নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামলকান্তির অবমাননার প্রতিবাদ তরুণরাই প্রধম করেছে ফেসবুকে৷ তারপর সেই অবমাননার ভিডিও এবং ছবি ভাইরাল হলে সক্রিয় হয় মেইন স্ট্রিম মিডিয়া৷ অ্যাকশনে যায় রাষ্ট্র, সরকার৷

সিলেটে শিশু রাজন হত্যার বিচারও সম্ভব হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের তরুণ অ্যাক্টিভিস্টদের কারণে৷ আর শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের কথা তো সবারই জানা৷ ফেসবুক ব্যবহারকারী তরুণরাই এই আদোলন গড়ে তুলোছিলেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে৷

Solaiman Sukhon - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

সোলায়মান সুখন একজন ফেসবুক সেলিব্রেটি৷ ফেসবুকে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা এখন প্রায় দুই লাখ৷ ফলোয়ারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ সুখন কিভাবে ব্যবহার করেন তার ফেসবুক? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ফেসবুক এখন আমার ব্যক্তিগত সম্প্রচার মাধ্যম৷ এটা আমার রেডিও, টেলিভিশন, আমার প্রচার মাধ্যম৷ আমি এখানে যা চাই বলতে পারি, স্বাধীনভাবে করতে পারি৷''

ফেসবুকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণ জানাতে গিয়ে সুখন বলেন, ‘‘ফেসবুকে ইতিবাচক ধারণা নিয়ে কাজ করি৷ জীবনকে সুন্দর করি যেভাবে, তা বলি এবং দেখাই৷ আর তাতে আকৃষ্ট হন আমার ফলোয়াররা, ফেসবুক বন্ধুরা৷ আমি নিজে ভালো চিন্তা করি এবং ভালো চিন্তা শেয়ার করি৷ তবে তা অবশ্যই মজাদার এবং হাল্কাভাবে৷ ভারী করে তুলি না কোনো কিছু৷''

সুখন মনে করেন, ‘‘সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এখন সিটিজেন জার্নালিজমের বড় মাধ্যম৷ আমি চাইলেও দ্রুত কোনো মেইন স্ট্রিম সংবাদমাধ্যমে কিছু প্রচার করতে পারিনা, দেখাতে পারিনা৷ এখানে পারি৷ এটা আমাকে দিয়েছে স্থান, কাল ও পাত্রের স্বাধীনতা৷''

তাঁর মতে, ‘‘এই ব্যাপক এবং বহুবিধ ব্যবহারের সুবিধা স্যোশাল মিডিয়ায়৷ তাই এটা ব্যবহারে দায়িত্বশীলতাও থাকতে হয়৷ এর অপব্যবহারও করছে তরুণদের একাংশ৷''

এ প্রসঙ্গে ‘কনটেন্ট ম্যাটার্স'-এর প্রধান নির্বাহী রফিকুল্লাহ রোমেল বলেন, ‘‘তরুণদের একাংশ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে, ব্ল্যাকমেল করতে সামাজিক যোগযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে৷ এমনকি রাজনৈতিক বিতর্কে ফেসবুকে তারা চরম আপত্তিকর আচরণ করে৷''

Rafikullah Romel - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

সম্প্রতি  ঢাকার উত্তরা এলাকায় এক কিশোর হত্যার ঘটনায় তরুণদের ফেসবুক ব্যবহারের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে৷ তারা ফেসবুক পেজ খুলে গড়ে তোলো নানা সন্ত্রাসী গ্রুপ৷ আবার ধানমন্ডিতে এক কিশোরকে আরেক কিশোর গ্রুপকে মারধর করে তার ভিডিও আপলোড করে দেয় ফেসবুকে৷

গত একমাসে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অন্তত দু'টি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে তরুণরা ফেসবুক ব্যবহার করে তরুণীকে প্রেমের কথা বলে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ এবং হত্যা করেছে৷ তরুণদের বিরুদ্ধে ফেসবুক ব্যবহার করে ব্ল্যাক মেইল করা ও পর্নোগ্রাফি ছড়ানোরও অভিযোগ আছে৷

তবে এ সবের বাইরে তরুণরা এখন পড়াশোনা, সমাজ সেবা, রক্তদান, সামাজিক ক্যাম্পেইন, সৃজনশীল কাজ এবং ব্যবসার জন্যও ফেসবুক ব্যবহার করছেন৷ আর ফেসবুকে তাদের এমন গ্রুপগুলা সফলও হচ্ছে৷ কিন্তু রফিকুল্লাহ রোমেল বলেন, ‘‘রক্ত দেয়ার আহ্বানের চেয়ে একটি বিতর্কিত বা অনাকাঙ্কিত পোস্টে তরুণরা সাড়া দেয় বেশি, যা আতঙ্কের৷''

ফেসবুকে গুজব ছড়ানো, তথ্য বিকৃত করা বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তথ্য এবং ছবি প্রচার করা হয়৷ আর এই প্রচারে ধর্মীয় উন্মাদনা যেমন আছে, তেমনি অন্ধকার জগতের হাতছানিও আছে৷ সোলায়মান সুখন বলেন, ‘‘এ কারণেই আমার দায়িত্বের জায়গা আছে৷ আমি আমার ফেসবুকে দেখাতে চাই, বলতে চাই , পৃথিবী সুন্দর, জীবন সুন্দর৷ আর তাতে সাড়া পাই৷ নেগেটিভ কন্টেন্ট দিয়ে নয়, পজিটিভ কন্টেন্ট দিয়েও এখন প্রচুর লাইক ও কমেন্ট পাওয়া যায়৷ পাওয়া যায় ফলোয়ার৷''

Munir Hasan - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশে এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় সাত কোটি৷ আর মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটিরও বেশি৷ সাত কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর  ছয় কোটিই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন মোবাইল ফোনে৷ এই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রায় তিন কোটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসবে ফেসবুক ব্যবহার করে৷

তথ্য প্রযুক্তিবিদ মুনির হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ফেসবুক ব্যবহারকারী ৩০ ভাগ তরুণ অন্যকে নিয়ে মজা করে বা পচায়৷ তারা ট্রল করে৷ তবে বড় একটি অংশ আছে, যারা বেশ সিরিয়াস৷ তারা ফেসবুকের মাধ্যমে বড় ধরনের পরিবর্তণ আনতে চায়৷ এমনকি ফেসবুকে তারা বানান নিয়েও কথা বলে৷ তবে বাস্তব জীবনে তারা এতটা অ্যাকটিভ নয়৷ অল্প সংখ্যক আছেন, যারা নানা সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত৷ তারা মূলত ফেসবুকে তাদের কাজের প্রচার চালায়৷ এরা বাস্তব জীবনে বেশি অ্যাকটিভ৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘ফেসবুকে তাদের তৎপরতা বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, তরুণদের বড় একটি অংশ অস্থির৷ সে কারণেই এক-দুই লাইনের স্ট্যাটাস জনপ্রিয় হয়৷ আর অনেকেই না পড়ে লাইক দেয়৷ না বুঝেও লাইক দেয়, শেয়ার করে৷ তবে এই অস্থিরতার কারণ ফেসবুক নয়৷ আমাদের সমাজেই অস্থিরতার কারণ লুকিয়ে আছে৷''

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ