শিক্ষককে কান ধরে উঠ-বস করানোর রেশ কাটতে-না- কাটতেই ফেসবুকে ‘লাইক' দিয়ে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে বগুড়ায় এক হিন্দু শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷ স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, গত সোমবার বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের কল্যাণী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিপ্লব কুমার রায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলে স্কুল প্রাঙ্গনে জড়ো হন স্থানীয় কিছু মানুষ৷ তাদের অভিযোগ অনুযায়ী, ওই শিক্ষক ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর একটি লেখায় ‘লাইক' দিয়েছেন৷
অভিযোগ জানাতে এবং প্রতিকার চাইতে আসা স্থানীয়রা জানান, ইসলাম ধর্ম নিয়ে লেখা ওই লেখাটিতে ‘কৃষ্ণ কুমার' নামের একটি আইডি থেকে ‘লাইক' দেওয়া হয়৷ তাদের ধারণা, ‘কৃষ্ণ কুমার' আসলে বিপ্লব কুমারেরই আইডি৷
সুদেব কুমার পাল
This browser does not support the audio element.
অভিযোগ তুলে শাস্তির দাবি জানানোর পর স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো তদন্ত ছাড়াই শিক্ষক বিপ্লব কুমারকে সাময়িক বরখাসস্ত করে৷ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুদেব কুমার পাল ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘স্থানীয় উত্তেজিত লোকজনকে শান্ত করতেই তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি অভিযোগ তদন্ত করে দেখছে৷ তাঁদের প্রতিবেদন পেলেই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷''
প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, ‘‘আমি ফেসবুক বুঝিনা৷ তবে শুনেছি তিনি ফেসবুকে ট্যাগ না লাইক কী যেন দিয়েছেন৷''
তাহলে না বুঝে, তদন্ত না করেই ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত কেন করা হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ‘‘আমার কিছু করার ছিলনা, ব্যবস্থাপনা কমিটি উত্তেজিত লোকজনকে সামলাতে যা করেছেন আমি তাতে সায় দিয়েছি৷''
সাময়িক বরখাস্তের পর থেকে শিক্ষক বিপ্লব কুমার রায়কে আর পাওয়া যাচ্ছেনা৷ তাঁর নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘তিনি বাসায় নেই, মোবাইল ফোনও বন্ধ৷ কোথায় গিয়েছেন কেউ জানেনা৷ নিরাপত্তা দেব কীভাবে!''' ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকেও ওই শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে, তবে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি৷
নূর খান
This browser does not support the audio element.
এদিকে বাংলাদেশ সরকার আইসিটি অ্যাক্ট-এর পরিবর্তে নতুন সাইবার আইন করতে যাচ্ছে৷ আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এই আইনে সাইবার অপরাধের ব্যাখ্যা স্পষ্ট থাকবে৷ আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারায় অপরাধের ব্যাখ্যায় যে অস্পষ্টতা আছে, তা দূর হবে৷ আর নতুন আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ১৪ বছরের কারাদন্ড৷ এখনকার আইনে তা সাত বছর৷
এ নিয়ে মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নতুন সাইবার আইনের কোনো প্রয়োজন দেখছিনা৷ পুরনো আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ করলেই আইন ঠিকমতো কাজ করবে৷ নতুন আইনে বরং আরো জটিলতা বাড়বে৷''
তিনি বলেন, ‘‘বরং এখন প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা৷ শিক্ষক শ্যামল কান্তির ঘটনার পর বগুড়ায় আরেক শিক্ষককে যে অজুহাতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মেনে নেয়া যায়না৷ সমাজ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে৷ আর একশ্রেণির মতলববাজ কথিত ধর্ম অবমাননার বিষয়টিকে ব্যবহার করছে৷ সরকারের এদিকে নজর দেয়া উচিত্৷''
শিশুকে মারলে সে অংকে খারাপ করে
ইউনিসেফ-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে শিশুকে মারধর করলে কিংবা তাকে মানসিকভাবে শাস্তি দিলে পরবর্তীতে সেটা তার লেখাপড়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷
ছবি: picture alliance/dpa
শারীরিক শাস্তি
ইউনিসেফ-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের ২ থেকে ১৪ বছর বয়সি প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে ছয়জনকে নিয়মিতভাবে শারীরিক শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়৷ শিশুদের যাঁরা দেখাশোনা করেন তাঁরাই এই শাস্তি দিয়ে থাকেন৷ শারীরিক শাস্তি বলতে ইউনিসেফ বুঝিয়েছে এমন শাস্তি যেটা দিলে শিশু শরীরে ব্যথা কিংবা অস্বস্তি অনুভব করে৷ এমন শাস্তির মধ্যে রয়েছে শিশুর হাত, পা, মুখ, মাথা, কান কিংবা নিতম্ব ধরে ঝাঁকানো বা মার দেয়া৷
ছবি: Fotolia/Firma V
মানসিক শাস্তি
কোনো অপরাধের প্রেক্ষিতে শিশুর সঙ্গে চিৎকার করে কথা বলা, তার কাছ থেকে কোনো সুযোগ কেড়ে নেয়া যেন শিশুটি মানসিকভাবে কষ্ট পায় ইত্যাদিকে মানসিক শাস্তি হিসেবে মনে করে ইউনিসেফ৷ তাদের গবেষণা বলছে, বিশ্বের ৮০ শতাংশ শিশুকে বোঝানো হয়েছে যে, তারা (শিশু) যেটা করেছে সেটা ঠিক নয়৷ ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে চিৎকার করে সেটা করা হয়েছে৷ এছাড়া ৪৮ শতাংশের ক্ষেত্রে শিশুদের কিছু সুবিধা কেড়ে নেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/ANP/R. Koole
সবচেয়ে বেশি ইয়েমেনে
বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে অভাগা বলতে হবে এই দেশের শিশুদের৷ কেননা সেখাকার প্রায় ৯৫ জন শিশুকেই তাদের অপরাধের জন্য শারীরিক ও মানসিক শাস্তি পেতে হয়৷ অভাগাদের তালিকায় এরপর ক্রমান্বয়ে আছে ঘানা, টিউনিশিয়া, টোগো, ক্যামেরুন ও ফিলিস্তিনের শিশুরা৷ এই গবেষণা সম্পর্কে আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul
বাংলাদেশ বিষয়ক তথ্য
ইউনিসেফ-এর সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১ থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশুদের দুই-তৃতীয়াংশকে মারধর করেন মা-বাবাসহ অভিভাবকেরা৷ আর ৭৪.৪ শতাংশ শিশুকে মানসিক চাপ দিয়ে শৃঙ্খলা শেখানো হয়৷ শৃঙ্খলা বলতে শিশুদের পড়াশোনায় মনোযোগী করাসহ অভিভাবকদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজকে বোঝানো হয়েছে৷ এছাড়া প্রতি তিনজন মায়ের মধ্যে একজন বিশ্বাস করেন, নিয়মকানুন শেখাতে সন্তানদের শাস্তি দেয়া প্রয়োজন৷
ছবি: picture alliance/ANP/R. Koole
অংক স্কোর কম করে!
শিশুদের উপর শারীরিক ও মানসিক শাস্তির প্রভাব নিয়ে আরেকটি গবেষণা করেছে ইউনিসেফ৷ তাতে দেখা গেছে, ৮ বছর বয়সে যেসব শিশু এ ধরণের শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে তারা ১২ বছর বয়সে গিয়ে স্কুলে অংকে খারাপ স্কোর করেছে৷ শব্দভাণ্ডার গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও তাদের অনীহা দেখা গেছে৷ শিশুকে শাস্তি দেয়ার এটি একটি নেতিবাচক প্রভাব বলে উল্লেখ করেছে ইউনিসেফ৷ আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture alliance/dpa
ইউনিসেফ-এর উদ্যোগ
শিশুদের শারীরিক শাস্তি দেয়া নিষিদ্ধ করতে জাতিসংঘের এই সংস্থাটির ‘কনভেনশন অন দ্য রাইটস অফ দ্য চাইল্ড’ রয়েছে৷ এখন পর্যন্ত ১৪০টি দেশ এতে স্বাক্ষর করেছে৷ তবে এর মাধ্যমে বিশ্বের মাত্র ৮ শতাংশ শিশুকে শারীরিক শাস্তির হাত থেকে রক্ষা করা গেছে বলে জানিয়েছেন ইউনিসেফ এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডেল রুটস্টাইন৷ ১৯৮৯ সালে গৃহীত এই কনভেনশনে ১৯৯০ সালে সই করে বাংলাদেশ৷